উপরের কোনো কোনো হাদীসে মুসলিম উম্মাহর ফিরকাসমূহের সংখ্যা ৭৩ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় হিজরী শতক থেকেই অনেক আলিম মুসলিম উম্মাহর ৭৩ ফিরকার নাম নির্ধারণ করতে চেষ্টা করেছেন। দ্বিতীয় হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ তাবি-তাবিয়ী আলিম ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারাক (১৮০হি) বলেন: ‘‘মুসলিম উম্মাহর ফিরকাগুলির মূল ৪টি ফিরকা: শীয়া, হারূরীয়্যাহ (খরিজী), কাদারিয়্যাহ ও মুরজিয়্যাহ। শিয়াগণ ২২ ফিরকায় বিভক্ত হয়, খারিজীগণ ২১ ফিরকায় বিভক্ত হয়, কাদারিয়্যাহ ফিরকা ১৬ ফিরকায় বিভক্ত হয় এবং মুরজিয়াগণ ১৩ ফিরকায় বিভক্ত হয়।’’[1]
তৃতীয় হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আবূ হাতিম রাযী (২৭৭ হি) বলেন: ‘‘আলিমগণ বলেছেন যে, এ উম্মাতের ইফতিরাক বা বিভক্তির শুরু হয়েছি যিনদীকগণ, কাদারিয়্যাহ, মুরজিয়্যাহ, রাফিযী (শীয়া) ও হারূরিয়্যাহ (খারিজী) এ দলগুলির মাধ্যমে। এরাই হলো সকল ফিরকার মূল। এরপর প্রত্যেক ফিরকা বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত হয়েছে। তারা একে অপরকে কাফির বলেছে এবং একে অপরকে জাহিল বলেছে। যিনদীকগণ ১১ ফিরকা, খারিজীগণ ১৮ ফিরকা, রাফিযীগণ (শীয়াগণ) ১৩ ফিরকা, কাদারিয়্যাহগণ ১৬ ফিরকা, মুরজিয়্যাহগণ ১৪ ফিরকায় বিভক্ত। মোট ৭২ ফিরকা।’’[2]
শাইখ আব্দুল কাদির জীলানী (রাহ) (৫৬১ হি) উল্লেখ করেছেন যে, ৭৩ ফিরকা মূলত ১০ ফিরকার অন্তর্ভুক্ত। এ দশ দল হল আহলু সূন্নাত, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুরজিয়া, মোশাবিবয়া, জাহ্মিয়া, জাবারিয়া, নাজারিয়া এবং কালাবিয়া। অন্যান্য ফিরকা এ দশ ফিরকার মধ্যে শামিল।[3]
অনেক আলিম মনে করেন যে, ৭৩ ফিরকা নিশ্চিতরূপে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়; কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর উম্মাতের বিষয়ে এ ভবিষ্যদ্বাণী করেছে এবং উম্মাত কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। কাজেই কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত আরো অনেক ফিরকার আবির্ভাব ঘটতে পারে। কাজেই এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বলা মূলনীতি অনুসরণ করতে হবে।
যারা ইসলামের মূল তাওহীদ, রিসালাত ও আরকানুল ঈমানে বিশ্বাস করেন বলে দাবি করেন, এর সুস্পষ্ট বিপরীত কোনো বিশ্বাস পোষণ করেন বলে দাবি না করেন, ইসলামের সর্বজন-পরিজ্ঞাত অত্যাবশ্যকীয় কোনো বিষয় অস্বীকার করেন না অথচ তাদের নিজেদের স্বীকৃত বিশ্বাস বা আকীদার মধ্যে এমন বিষয় রয়েছে যা কুরআন-হাদীসে নেই বা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে ও সাহাবীগণ থেকে সুপরিজ্ঞাত বিশ্বাসের ব্যতিক্রম, তাদেরকে বিভক্ত ও বিভ্রান্ত ফিরকা বলে গণ্য করতে হবে।
আর যারা তাদের বিশ্বাস- আকীদায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবীগণের হুবহু অনুসরণ করেন, তাঁরা যা বলেছেন তা বলেন এবং তাঁরা যা বলেন নি তা আকীদার মধ্যে সংযোগ করেন না, তাদের মুখের দাবি তাদের বাস্তব কর্ম ও স্বীকৃত আকীদা-বিশ্বাস দ্বারা প্রমাণিত হয় তাদেরকে ‘আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত বলে গণ্য করতে হবে।
[2] ইবনু বাত্তাহ, আল-ইবানাহ ১/২৯৭।
[3] শাইখ আব্দল কাদির জীলানী, গুনিয়াতুত তালেবীন, পৃ. ২১০।