ইসলামের তাকদীরে বিশ্বাস সম্পর্কে আমরা চতুর্থ অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এখানে সংক্ষেপে আমরা বলতে পারি যে, কুরআন কারীমে বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে যে মহান আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, সর্বজ্ঞ। কোনো সৃষ্টির জ্ঞানের সাথে আল্লাহর জ্ঞানের তুলনা হয়না। সৃষ্টির আগেই তিনি বিশ্বের সকল বিষয় কোথায় কিভাবে সংঘটিত হবে সবই জানেন। কুরআন কারীমে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ তাঁর অনাদি, অনন্ত, অসীম ও সর্বব্যাপী জ্ঞান ‘কিতাবে মুবীন’ (সুস্পষ্ট কিতাব) বা ‘লাওহে মাহফুজে’ (সংরক্ষিত পত্রে) লিখে রেখেছেন। কুরআন কারীম বারংবার ঘোষণা করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ সবকিছু নির্ধারণ করে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর মহান ইচ্ছার বাইরে কিছুই ঘটে না।
আবার কুরআন থেকে আমরা মানুষের নিজের কর্মের জন্য দায়বদ্ধতার কথা জানতে পারি। ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিই যে, মানুষ তার নিজের কর্মফলের জন্য দায়ী। মহান আল্লাহ করুণাময় ও ন্যায়বিচারক, তিনি কারো উপর জুলুম করবেন না। বরং প্রত্যেককে তার কর্মের পুরস্কার ও শাস্তি প্রদান করবেন।
সাহাবীগণ এ সকল আয়াত ও এ বিষয়ক সকল হাদীস সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করেছেন। এগুলির মধ্যে কোনো বৈপরীত্য তাঁরা কল্পনা করেন নি। কিন্তু দ্বিতীয় প্রজন্ম থেকে কিছু মানুষ এ বিষয়ে বৈপরীত্য কল্পনা করতে শুরু করে। প্রথম হিজরী শতকের শেষভাগ থেকে কিছু মানুষ বলতে শুরু করে যে, তাকদীর বা আল্লাহর ইলম, লিখনী বা নির্ধারণ বলে কিছু নেই। তাদের মতে তাকদীরের বিশ্বাস আল্লাহর ইনসাফ ও ন্যায়পরায়ণতার বিরোধী। ক্রমান্বয়ে এ মতটি একটি ‘দল’ বা ফিরকায় পরিণত হয়। এদের ‘কাদরীয়া’ বলা হয়। পরবর্তীকালে মুতাযিলাগণও অনুরূপ মত গ্রহণ করে।
এ মতের বিপরীতে একদল মানুষ বলতে থাকে যে, মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা বলে কিছু নেই। কলের পুতুলের মতই সে কর্ম করে। এদের ‘জাবারিয়্যাহ’ বলা হয়।