আমরা উপরে দেখেছি যে, আল্লাহ তাঁর ওসীলা বা নৈকট্য সন্ধান করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সাহাবী, তাবিয়ী ও পরবর্তী সকল মুফাস্সির একমত যে, নেক আমল হলো ওসীলা, যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। প্রায় হাজার বৎসর যাবৎ এ বিষয়ে অন্য কোনো মতামত প্রচারিত হয় নি। এরপর কোনো কোনো আলিম উল্লেখ করেছেন যে, ‘পীর-মাশাইখ’-ও ওসীলা। মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এ কথার প্রেক্ষাপট বুঝা যায়। তাতার আক্রমনে মুসলিম বিশ্ব একেবারে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এরপর মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রীয় প্রশাসন, শিক্ষাদীক্ষার উন্নয়ন ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে স্থবিরতা আসে। বিশাল মুসলিম বিশ্বের কয়েকটি রাজধানী বাদ দিলে সর্বত্র অজ্ঞতা, কুসংস্কার, পূর্ববর্তী বা পার্শবর্তী ধর্মের প্রভাব, বাতিনী শীয়াগণের প্রভাব ইত্যাদি কারণে শিরক-কুফর প্রবল হয়ে উঠে। উম্মাতের এ দুর্দিনে সরলপ্রাণ প্রচারবিমুখ সুফী, দরবেশ ও পীর-মাশাইখ আম-জনগনের মধ্যে ইসলামের শিক্ষা বিস্তারে নিরলস চেষ্টা করে যান। তাঁদের সাহচার্যে যেয়ে মানুষ তাওহীদ, রিসালাত, ঈমান, ইসলাম ও ইসলামের হুকুম আহকাম কমবেশি শিক্ষা লাভ করত এবং আত্মশুদ্ধির চেষ্টা করত। সাধারণ মানুষদের ঈমান, ইসলাম ও আখলাক গঠনে তাদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দিকে লক্ষ্য করে কোনো কোনো আলিম মতামত পেশ করেন যে, পীর-মাশাইখের সাহচার্যও একটি বিশেষ নেক আমল যা মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন।
কিন্তু অজ্ঞতার কারণে এবং স্বার্থান্বেষীদের মিথ্যা প্রচারণার কারণে একথাটি ক্রমান্বয়ে শিরকী অর্থে ব্যবহৃত হতে থাকে। আরবের মুশরিকগণ যেমন আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য ফিরিশতা, নবী, ওলী ও অন্যান্য উপাস্যের ইবাদত করত, ঠিক তেমনি অনেকে পীর-মাশাইখের ইবাদত করাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম বলে মনে করতে থাকে। কেউ বা ওসীলা বলতে ‘মধ্যস্থতাকারী’ বা উপকরণ বলে মনে করতে থাকে। তারা মনে করতে থাকে যে, পীর-মাশাইখ আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মধ্যে মধ্যস্থতা করেন। তাদের মধ্যস্থতা ছাড়া কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি বা রহমত পেতে পারে না। এরূপ অনেক শিরকী ধারণা মুসলিম সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ক ধারণাগুলি নিম্নরূপ:
(১) পীরের সাহচর্যকে আল্লাহর নৈকট্যের একটি ওসীলা মনে করা
এ ধারণাটি মূলত ইসলাম-সম্মত। কুরআন ও হাদীসে নেককার মুমিন-মুত্তাকীগণের সাহচার্য গ্রহণে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখেছি যে, ওসীলা অর্থ নেক আমল। আর কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনা অনুসারে এরূপ মুত্তাকীগণের সাহচার্য গ্রহণ, সাক্ষাত করা এবং আল্লাহর ওয়াস্তে তাদেরকে ভালবাসা এ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেক-আমল বা ওসীলা।
তবে এখানে দুটি বিষয় লক্ষণীয়। প্রথমত, ‘পীর’ বলে কোনো বিশেষ পদমর্যাদা কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ করা হয় নি। বরং আলিম, সত্যবাদী, মুত্তাকী, নেককার, সৎকর্মশীল, ফরয ও নফল ইবাদত পালনকারী, সুন্নাতের অনুসারী ইত্যাদি বিশেষণ উল্লেখ করা হয়েছে। পীর নামধারী ব্যক্তির মধ্যে যদি এ সকল বাহ্যিক গুণ বিদ্যমান না থাকে তবে তার সাহচার্য গ্রহণ আল্লাহর নৈকট্য নয়, বরং শয়তানের নৈকট্যের অন্যতম ওসীলা, যদিও এরূপ ব্যক্তি পীর, মুরশিদ, ওলী, বা অনুরূপ কোনো নাম ধারণ করে। আর যদি কুরআন-হাদীসে উল্লেখিত উপর্যুক্ত বাহ্যিক গুণাবলি কারো মধ্যে বিদ্যমান থাকে তবে তিনি ‘পীর’ নাম ধারণ করুন আর নাই করুন তার সাহচর্য মহান আল্লাহর নৈকট্যলাভের ওসীলা বলে গণ্য।
কুরআন, হাদীস ও সাহাবী-তাবিয়ীগণের কর্মধারার আলোকে পীর-মুরিদীর গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা, সুন্নাত-সম্মত পদ্ধতি, ভুল-ধারণা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ‘এহইয়াউস সুনান’ ও ‘রাহে বেলায়াত’ গ্রন্থে। সম্মানিত পাঠককে পুস্তকদুটি পাঠ করতে সবিনয়ে অনুরোধ করছি।
দ্বিতীয়ত, মূলত মুমিনের নিজের কর্মই তাঁর অসীলা, অন্য কোনো মানুষ বা তার কর্ম নয়। এখানে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নেককার মানুষদের সাহচর্য গ্রহণই নেককর্ম ও অসীলা। ইসলামী অর্থে কোনো ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির ‘ওসীলা’ হতে পারে না, কেবলমাত্র মুমিনের নিজের কর্মই তার ওসীলা। এমনকি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কোনো ব্যক্তির জন্য ওসীলা হবেন না যতক্ষণ না সে তাঁর উপর ঈমান গ্রহণ করবে এবং তাঁর শরীয়ত পালন করবে। এক্ষেত্রে মূলত মুমিনের ঈমান ও শরীয়ত পালনই ওসীলা। এর কারণে সে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং আল্লাহ তাঁর উপর সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শাফা‘আত, জান্নাতের সাহচার্য ইত্যাদি নসীব করে দিতে পারেন।
(২) পীরের সাহচর্যকে আল্লাহর নৈকট্যের একমাত্র ওসীলা মনে করা
অসীলা বিষয়ক বিভ্রান্তিকর ধারণার একটি হলো, পীরের সাহচার্যকে আল্লাহর নৈকট্যলাভের একমাত্র ওসীলা বলে মনে করা। অগণিত নফল মুস্তাহাব নেক কর্মের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ নেক-কর্ম হলো নেককার বান্দাদের সাহচার্য গ্রহণ করা। কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনা অনুসারে ঈমান ও ইসলামের ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ইত্যাদি আহকাম মেনে চলাই মূল দীন। নেক-সাহচার্য এ সকল ইবাদত পালনে সহায়ক। সর্বদা কুরআন তিলাওয়া ও অধ্যয়ন করা, হাদীস, সীরাত, শামাইল পাঠ করা, সাহাবীগণের জীবনী পাঠ করার মাধ্যমেও প্রকৃত সাহচার্য গ্রহণ করা যায়।
(৩) পীরের কর্মকে নিজের ওসীলা বলে মনে করা
এ বিষয়ক অন্য বিভ্রান্তি হলো, পীরের বেলায়াতকে নিজের নাজাতের উপকরণ বলে বিশ্বাস করা। এরূপ বিশ্বাসের কারণে অনেকের ধারণা, আমার নিজের কর্ম যাই হোক না কেন, পীর সাহেব যেহেতু অনেক বড় ওলী, কাজেই তিনি আমাকে পার করিয়ে দিবেন। এরূপ বিশ্বাস কুরআন-হাদীসের নির্দেশের সাথে সাংঘর্ষিক। প্রথমত, কে বড় ওলী তা নিশ্চিত জানা তো দূরের কথা কে প্রকৃত ওলী বা কে জান্নাতী তাও নিশ্চিত জানার উপায় নেই। আমরা বাহ্যিক আমলের উপর নির্ভর করে ধারণা পোষণ করি এবং সাহচার্য গ্রহণ করি। দ্বিতীয়ত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বারংবার বলেছেন যে, তাঁর সন্তান, আত্মীয়-স্বজন, সাহাবী বা অন্য কাউকে তিনি আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে ত্রাণ করতে পারবেন না। প্রত্যেককে তার নিজের নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নাজাত লাভ করতে হবে। মূলত মুমিনের নিজের কর্মই তার নাজাতের ওসীলা। পীরের সাহচর্য থেকে মুমিন আল্লাহর পথে চলার কর্ম শিক্ষা করবেন, প্রেরণা লাভ করবেন এবং নিজে আমল করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবেন।
এ বিশ্বাসের ভিত্তি হলো যে, মহান আল্লাহ কাউকে শাফা‘আত করার উন্মুক্ত অনুমতি বা অধিকার দিয়েছেন বা দিবেন, তিনি নিজের ইচ্ছামত কাফির-মুশরিক, ফাসিক-খোদদ্রোহী যাকে ইচ্ছা ত্রাণ করবেন। বস্ত্তত কারো সুপারিশ আল্লাহ শুনবেনই বা আল্লাহ তাকে ইচ্ছামত সুপারিশ করা অধিকার দিয়েছেন বলে বিশ্বাস করা আল্লাহর রুবূবিয়্যাতের ক্ষমতায় শিরক করা। এ বিশ্বাসটি মূলত আরবের মুশরিকদের ‘শাফা‘আত’ বিষয়ক বিশ্বাসের মত।
(৪) ওসীলা অর্থ উপকরণ বলে মনে করা
ওসীলা বিষয়ক আরেকটি বিভ্রান্তি হলো ওসীলা অর্থ উপকরণ বলে মনে করা। আমরা ইতোপূর্বে ওসীলা শব্দটির অর্থ ও তার বিবর্তন আলোচনা করেছি। কুরআনে মুমিনকে নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আল্লাহর পথে কোনো অতিরিক্ত উপকরণ তালাশ করতে বলা হয় নি। উপকরণ দু প্রকারের: জাগতিক ও ধর্মীয়। জাগতিক উপকরণ সকলেই জাগতিক জ্ঞানের মাধ্যমে জানে। যেমন ভাত সিদ্ধ হওয়ার উপকরণ পানি ও আগুণ, বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার উপকরণ মাটি, পানি ও আলো। আর ধর্মীয় উপকরণ একমাত্র ওহীর মাধ্যমে জানা যায়। যেমন ওযূ করা সালাত কবুল হওয়ার উপকরণ, ঈমান বিশুদ্ধ হওয়া নেক আমল কবুল হওয়ার উপকরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা ও মানুষের উপকার করা রিযক বৃদ্ধির উপকরণ। পীরের সাহচর্য লাভ, মুরীদ হওয়া ইত্যাদি কোনো নেক আমল কবুল হওয়া, দু‘আ কবুল হওয়ার উপকরণ নয়। কারণ কুরআন-হাদীসে কোথাও তা বলা হয় নি। এরূপ ধারণা আল্লাহর নামে মিথ্যা বলা এবং তা পরবর্তী শিরকী বিশ্বাসগুলি পথ উন্মুক্ত করে।
(৫) পীরকে আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে মধ্যস্থতাকারী মনে করা
ওসীলা বিষয়ক শিরকী বিশ্বাসের অন্যতম হলো পীরকে আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে মধ্যস্থতাকারী বলে মনে করা। দুভাবে এ বিশ্বাস ‘প্রমাণ’ করা হয়: প্রথমত কুরআনের অর্থ বিকৃত করা এবং দ্বিতীয়ত আরবের মুশরিকদের মত ‘যুক্তি’ পেশ করা। প্রথম পর্যায়ে সরলপ্রাণ মুসলিমদের বিভ্রান্ত করতে এরা সাধারণত বলে থাকে ‘আল্লাহ কুরআনে বলেছেন ওসীলা ধরে তাঁর কাছে যেতে, কাজেই সরাসরি তাকে ডাকলে হবে না। আগে ওসীলা ধরো।’ এভাবে তারা কুরআনের আয়াতকে বিকৃত করেন। বিকৃতির মূল ভিত্তি ওসীলা শব্দের অর্থের পরিবর্তনের মধ্যে। কুরআনের ভাষায় ওসীলা অর্থ নৈকট্য এবং অসীলা সন্ধানের অর্থ মুমিনের নিজের নেক কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য সন্ধান। আর এরা বুঝান ওসীলা অর্থ মধ্যস্থতাকারী।
দ্বিতীয় পর্যায়ে এরা যুক্তি দেন যে, পৃথিবীতে যেমন রাজা-বাদশাহর দরবারে যেতে মন্ত্রী বা আমলাদের সুপারিশ, মধ্যস্থতা ও রিকমেন্ডেশন প্রয়োজন, তেমনিভাবে আল্লাহর দরবারেও পীর বা ওলীগণের রিকমেন্ডেশন প্রয়োজন। পীর, বা ওলীর সুপারিশ বা রিকমেন্ডেশন ছাড়া কোনো দু‘আ আল্লাহ কবুল করেন না। বান্দা যতই আল্লাকে ডাকুক বা ইবাদত করুক, যতক্ষণ না তা ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে’ অর্থাৎ পীরের রিকমেন্ডেশন সহ তাঁর দরবারে যাবে ততক্ষণ তা গ্রহণ করা হবে না। অথবা পৃথিবীর বিচারালয়ে যেমন উকিল-ব্যারিষ্টারের প্রয়োজন হয়, তেমনি আল্লাহর দরবারে পীর ও ওলীগণ উকিল-ব্যরিষ্টারি করে মুরিদ-ভক্তদের পার করে দিবেন। এ জাতীয় ধারণাগুলি সবই আরবের মুশরিকদের বিশ্বাসের অনুরূপ এবং সুস্পষ্ট শিরক। এ বিষয়ে কুরআন-হাদীসের নির্দেশনা ইতোপূর্বে আলোচনা করেছি। এখানে সংক্ষেপে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি:
(ক) আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি যে, এগুলি সবই আরবের মুশরিকদের বিশ্বাস। এ বিশ্বাসই ছিল তাদের সকল শিরকের মূল।
(খ) এ সকল চিন্তা সবই মহান আল্লাহর নামে মিথ্যাচার। মহান আল্লাহ কোথাও ঘুনাক্ষরেও বলেন নি যে, তাঁর কাছে যেতে বা দু‘আ কবুল হতে কখনো কারো সুপারিশ বা রিকমেন্ডেশন লাগবে। বরং বারংবার বলেছেন যে, তিনি বান্দার সবচেয়ে কাছে এবং বান্দা ডাকলেই তিনি শুনেন ও সাড়া দেন।
(গ) জাগতিক রাজা-বাদশাহর দরবারে বাইরের অপরিচিত কেউ গেলে তার জন্য সুপারিশ দরকার হয়, তার নিজের দরবারের বা চাকরদের কেউ গেলে তার জন্য সুপারিশ বা অনুমতির দরকার হয় না, কারণ তিনি নিজেই তাকে ভালভাবে চেনেন। আল্লাহর সকল বান্দাই তাঁর দরবারের আপনজন। কাজেই এক চাকরকে দরবারে যেতে আরেক চাকরের অনুমতি বা সুপারিশ লাগবে কেন?
(ঘ) জাগতিক রাজা-বাদশাহ তার দেশের সবাইকে চেনেন না। যে ব্যক্তি তার দরবারে কিছু প্রার্থনা করতে গিয়েছে সে কি প্রতারক, মিথ্যবাদী না সত্যবাদী তা তিনি জানেন না। এজন্য তাকে আমলাদের সুপারিশের উপর নির্ভর করতে হয়। মহান আল্লাহ কি এরূপ? কোনো বান্দার বিষয়ে কোনো পীর, ওলী কি মহান আল্লাহর চেয়ে বেশি জানেন?
(ঙ) জাগতিক রাজা-বাদশাহ ক্রোধ-বশত হয়ত প্রজার উপর কঠোরতা করতে পারেন, এক্ষেত্রে মন্ত্রী-আমলাদের সুপারিশ তার ক্রোধ সম্বরণ করতে সাহায্য করে। মহান আল্লাহ কি তদ্রূপ? মহান আল্লাহর দয়া বেশি না পীর-ওলীগণের দয়া বেশি?
(চ) জাগতিক বিচারালয়ে বিচারক জানেন না যে, সম্পত্তিটি কার পাওনা। উকিল-ব্যারিষ্টার সত্য বা মিথ্যা যুক্তি-তর্ক ও আইনের ধারা দেখিয়ে বিচারককে বুঝাতে চেষ্টা করেন। মহান আল্লাহ কি তদ্রূপ? উকিল সাহেবরা কি মহান আল্লাহকে অজানা কিছু জানাবেন? নাকি তাকে ভুল বুঝিয়ে মামলা খারিজ করে আনবেন? কুরআন কারীমে আল্লাহ বারংবার বলেছেন যে, উকিল হিসেবে তিনিই যথেষ্ট (كفى بالله وكيلاً)[1] এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে উকিল ধরতে নিষেধ করেছেন (ألا تتخذوا من دوني وكيلا)[2]। এরপরও কি তাঁর কাছে অন্য কাউকে উকিল ধরার দরকার আছে?
(ছ) মহান আল্লাহকে মানুষের সাথে বা মানবীয় রাজা-বাদশাদের সাথে তুলনা করা সকল শিরকের মূল। মহান আল্লাহর প্রতি কু-ধারণা ছাড়া এগুলি কিছুই নয়।
(৬) মধ্যস্ততাকারীকে উলূহিয়্যাতের হক্কদার মনে করা
আমরা দেখেছি যে, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নামে ফিরিশতা ও নবী-ওলীগণের ইবাদত করা হলো আরবের মুশরিকদের অন্যতম শিরক যা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। ইবাদত অর্থ চূড়ান্ত ও অলৌকিক ভক্তি, বিনয় ও অসহায়ত্ব প্রকাশ। এরূপ অনুভুতি নিয়ে পীর-ওলীকে সাজদা করা, তাঁর নাম যপ করা, বিপদে আপদে দূর থেকে তাঁকে ডাকা, তার কাছে ত্রাণ চাওয় ইত্যাদি এ পর্যায়ের শিরক।
[2] সূরা (১৭) ইসরা/ বানী ইসরাঈল: ২ আয়াত।