আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি যে, শয়তানের প্ররোচনা, প্রবঞ্চনা এবং বিভিন্ন মিথ্যা অপপ্রচারের কারণে মুশরিকগণ বিশ্বাস করত যে, ফিরিশতাগণ ও আল্লাহর অন্যান্য প্রিয় বান্দা তাদের ইবাদত পেয়ে খুশি হন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করেন। স্বপ্ন, কাশফ ইত্যাদির মাধ্যমে শয়তান ফিরিশতাগণের কল্পিত রূপে বা অন্যান্য নবী, ওলী বা কল্পিত মা’বুদদের বেশ ধরে তাদেরকে এরূপ ধারণা প্রদান করত, যেমন ভারতীয় হিন্দু পূজারীদের সামনে স্বপ্নে বা জাগরণে কালী, গনেশ, মহামায়া ইত্যাদি রূপে ‘প্রকাশিত’ হয়ে তাদের শির্ককে সঠিক বলে ধারণা দেয়। মুসলিম সমাজে যারা শিরকে লিপ্ত তাদেরকেও এভাবে স্বপ্ন, কাশফ ইত্যাদির মাধ্যমে শয়তান প্রতারিত করে।
এজন্য কুরআন কারীমের বিভিন্ন স্থানে বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহর প্রকৃত প্রিয় বান্দাগণ কিয়ামতের দিন এসকল মুশরিকের প্রতি তাদের প্রকৃত বিরাগ প্রকাশ করবেন। বিভিন্নভাবে এ বিষয়টি বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কয়েকটি আয়াত ইতোপূর্বে আমার দেখেছি। মুশরিকগণ ফিরিশতা, নবী, ওলী বা কল্পিত ‘আল্লাহর প্রিয়’ বলে যাদেরকে ডাকে তারা কিয়ামতের দিন এ সকল মুশরিকের সাথে শত্রুতা করবেন এবং মুশরিকগণ মূলত শয়তানদের ইবাদত করত বলে ঘোষণা করবেন বলে আমরা দেখেছি। পরবর্তী অনুচ্ছেদে এ বিষয়ক আরো কিছু আয়াত আমরা দেখব।
অন্যত্র মহান আল্লাহ জানিয়েছেন যে, কোনো নবী-রাসূল কখনোই আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করার কথা বলতে পারেন না। আল্লাহ ছাড়া কোনো ফিরিশতা বা কোনো নবীকে ইলাহ তো দূরের কথা ‘রাবব’ বা প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণের কথাও তিনি বলতে পারেন না। আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি যে, মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করা যায় না, তবে আপেক্ষিক লালন-পালন এবং তত্ত্বাবধানের অর্থে ‘রাবব’ বলা যায়। কোনো নবী-রাসূল বা কোনো সত্যিকার ধার্মিক মানুষ কোনো ফিরিশতা বা নবীকে ইবাদত করা তো দূরের কথা তাদের তত্ত্বাবধানের বা বিশ্ব-পরিচালনার কোনোরূপ ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করতেও তারা বলতে পারেন না। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন:
مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُؤْتِيَهُ اللَّهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُوا عِبَادًا لِي مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلَكِنْ كُونُوا رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُونَ وَلا يَأْمُرَكُمْ أَنْ تَتَّخِذُوا الْمَلائِكَةَ وَالنَّبِيِّينَ أَرْبَابًا أَيَأْمُرُكُمْ بِالْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنْتُمْ مُسْلِمُونَ
‘‘কোনো ব্যক্তিকে আল্লাহ কিতাব, হিকমাত ও নুবুওয়াত প্রদান করার পর তার জন্য শোভন নয় যে, সে বলবে, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে আমার বান্দা হয়ে যাও’,বরং সে বলবে, ‘তোমরা আল্লাহওয়ালা-রাববানী হয়ে যাও, যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দান কর এবং যেহেতু তোমরা অধ্যয়ন কর। আর সে তোমাদের নির্দেশ দিবে না যে, তোমরা ফিরিশতাগণ এবং নবীগণকে আল্লাহর পরিবর্তে রাবব হিসেবে গ্রহণ কর। তোমাদের মুসলিম হওয়ার পরে কি সে তোমাদেরকে কুফরীর নির্দেশ দিবে?’’[1]
অন্যান্য স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহর প্রিয় কোনো বান্দাও যদি কোনোভাবে নিজেকে ইলাহ বলে দাবি করে বা কোনো মানুষের ইবাদত বা চূড়ান্ত ভক্তি গ্রহণে আগ্রহী হয় তবে আল্লাহ তাকে কঠোর শাস্তি প্রদান করবেন। মহান আল্লাহ বলেন:
وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَدًا سُبْحَانَهُ بَلْ عِبَادٌ مُكْرَمُونَ لا يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُمْ بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلا يَشْفَعُونَ إِلا لِمَنِ ارْتَضَى وَهُمْ مِنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ. وَمَنْ يَقُلْ مِنْهُمْ إِنِّي إِلَهٌ مِنْ دُونِهِ فَذَلِكَ نَجْزِيهِ جَهَنَّمَ كَذَلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ
‘‘তারা বলে, ‘দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তিনি পবিত্র, মহান! তারা তো তাঁর সম্মানিত বান্দা। তারা আগে বেড়ে কথা বলে না; তারা তো তাঁর আদেশ অনুসারেই কাজ করে থাকে। তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত। তিনি যাদের প্রতি সন্তুষ্ট তাদের ছাড়া আর কারো জন্য তারা সুপারিশ করে না এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত। তাদের মধ্যে যে বলবে ‘আমিই ইলাহ আল্লাহ ব্যতীত’, তাকে আমি প্রতিফল দিব জাহান্নাম; এভাবেই আমি জালিমদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি।’’[2]
[2] সূরা (২১) আম্বিয়া: ২৬-২৯ আয়াত।