কুরআন ও হাদীসের আলোকে আমরা দেখি যে, পূর্ববর্তী মুশরিক সম্প্রদায়গুলি জীবিত, মৃত ও জড় বিভিন্ন সৃষ্টির ইবাদত করত। জীবিতদের মধ্যে তারা ফিরিশতা ও জিন্নগণের ইবাদত করত। আর মৃতদের মধ্যে তারা বিভিন্ন নবী, রাসূল ও নেককার মানুষদের ইবাদত করত। মৃতদের ইবাদতের ক্ষেত্রে তারা তাঁদের স্মৃতিবিজড়িত কিছু সামনে রেখে তাঁদের ডাকত। এক্ষেত্রে তাদের প্রধান অবলম্বন ছিল, তাদের সমাধি, মূর্তি, স্মৃতিবিজড়িত দ্রব্য বা স্থান ইত্যাদি। এ সকল বস্ত্তকে সামনে রেখে এ সকল মৃতদের আত্মার জন্য তারা উৎসর্গ, ভেট, জবাই, সাজদা ইত্যাদি পেশ করত এবং তাদের সাহায্য, সুপারিশ, নেক-নজর ইত্যাদি কামনা করত। যুগের আবর্তনে সাধারণ অনেক মুশরিক এ সকল মূর্তি, পাথর, কবর, বৃক্ষ ইত্যাদিকেই ‘প্রকৃত উপাস্য’ বলে মনে করত। তবে তাদের মধ্যকার পন্ডিত ও ধর্মগুরুগণ দাবি করত যে, এ সকল দ্রব্য প্রকৃত উপাস্য নয়, বরং এগুলির সাথে জড়িত মূল ব্যক্তির আত্মাই প্রকৃত ভক্তির পাত্র। এগুলি ভক্তি প্রকাশের মাধ্যম মাত্র। এছাড়া চাঁদ, সুর্য ইত্যাদির ইবাদতও বিভিন্ন মুশরিক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত ছিল। এগুলিকে তারা স্রষ্টার শক্তির প্রকাশ বা উৎস হিসেবে এবং কেউ বা প্রকৃত মঙ্গল-অমঙ্গলের আধার হিসেবে ইবাদত করত।
এ সকল মুশরিকের অধিকাংশই পূর্ববর্তী নবীগণের শিক্ষালাভ করার পরেও বিভিন্ন কারণে কুফর-শিরকের মধ্যে নিপতিত হয়েছে। মক্কার কাফিরগণ, ইহূদীগণ, খৃস্টানগণ এবং এরূপ অন্যান্য জাতির অনেকেই আল্লাহর প্রতি ঈমান, নবীগণের প্রতি ঈমান, ফিরিশতাগণের প্রতি ঈমান, কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান, আখিরাতের প্রতি ঈমান, তাকদীরের প্রতি ঈমান ইত্যাদি দাবি করত। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা শিরকে লিপ্ত ছিল। এ সকল মুশরিক আল্লাহর প্রিয় বান্দাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করত। ঈসা (আঃ), উযাইর (আঃ), ইবরাহীম (আঃ), ইসমাঈল (আঃ) ও অন্যান্য নবীগণ ও ফিরিশতাগণের ইবাদত করত। এছাড়া কল্পিত অনেক ‘আল্লাহর প্রিয় বান্দার’ ইবাদতও তারা করত। কুরআন ও হাদীসের বর্ণনা অনুসারে তাদের এ বিভ্রান্তির কারণসমূহ নিম্নরূপ: