সিরাত (الصراط) অর্থ রাস্তা বা পথ। আখিরাতের বিশ্বাসে সিরাত বলতে জাহান্নামের উপরে স্থাপিত রাস্তা বা সেতুকে বুঝানো হয়। মুমিনগণ বিশ্বাস করেন যে, আখিরাতে জাহান্নামের উপর দিয়ে একটি রাস্তা বা পথ স্থাপন করা হবে এবং সকল মানুষকেই সে রাস্তা দিয়ে জাহান্নাম অতিক্রম করে জান্নাতের দিকে যেতে হবে। নবীগণ, সিদ্দীকগণ, মুমিনগণ, কাফিরগণ, হিসাবকৃতগণ, হিসাব-মুক্তগণ সকলেই এ সেতু অতিক্রম করবেন। পৃথিবীতে আল্লাহর রাস্তায় যে যেভাবে চলেছেন আখিরাতের রাস্তা বা সেতুও তিনি সেভাবেই অতিক্রম করবেন।
এ বিষয়ে কুরআন কারীমে ইঙ্গিত রয়েছে এবং বিভিন্ন হাদীসে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
فَيُضْرَبُ الصِّرَاطُ بَيْنَ ظَهْرَانَيْ جَهَنَّمَ فَأَكُونُ أَوَّلَ مَنْ يَجُوزُ مِنْ الرُّسُلِ بِأُمَّتِهِ وَلا يَتَكَلَّمُ يَوْمَئِذٍ أَحَدٌ إِلا الرُّسُلُ وَكَلامُ الرُّسُلِ يَوْمَئِذٍ اللَّهُمَّ سَلِّمْ سَلِّمْ وَفِي جَهَنَّمَ كَلالِيبُ مِثْلُ شَوْكِ السَّعْدَانِ ...غَيْرَ أَنَّهُ لا يَعْلَمُ قَدْرَ عِظَمِهَا إِلا اللَّهُ تَخْطَفُ النَّاسَ بِأَعْمَالِهِمْ فَمِنْهُمْ مَنْ يُوبَقُ بِعَمَلِهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يُخَرْدَلُ ثُمَّ يَنْجُو
‘‘অতঃপর জাহান্নামের মধ্য দিয়ে রাস্তা বসানো হবে। তখন রাসূলগেণর মধ্য থেকে আমিই প্রথম আমার উম্মাত নিয়ে তা অতিক্রম করব। সেদিন রাসূলগণ ছাড়া কেউ কথা বলবেন না। আর রাসলূগণের কথা হবে: নিরাপত্তা দিন, নিরাপত্তা দিন। জাহান্নামের মধ্যে মরুভূমির ‘সা’দান’ বৃক্ষের কাটার মত দেখতে অতিকায় বিশাল বিশাল আংটা বা হূক থাকবে ... যেগুলির আকৃতির বিশালত্ব আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। সেগুলি মানুষদেরকে তাদের কর্মের অনুপাতে টেনে নিবে। তাদের মধ্যে কেউ তার কর্মের কারণে ধ্বংসগ্রস্ত হবে এবং কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হবে এবং এরপর মুক্তিলাভ করবে। ....’’[1]
অন্য হাদীসে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
ثُمَّ يُؤْتَى بِالْجَسْرِ فَيُجْعَلُ بَيْنَ ظَهْرَيْ جَهَنَّمَ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا الْجَسْرُ قَالَ مَدْحَضَةٌ مَزِلَّةٌ عَلَيْهِ خَطَاطِيفُ وَكَلالِيبُ وَحَسَكَةٌ مُفَلْطَحَةٌ لَهَا شَوْكَةٌ عُقَيْفَاءُ تَكُونُ بِنَجْدٍ يُقَالُ لَهَا السَّعْدَانُ الْمُؤْمِنُ عَلَيْهَا كَالطَّرْفِ وَكَالْبَرْقِ وَكَالرِّيحِ وَكَأَجَاوِيدِ الْخَيْلِ وَالرِّكَابِ فَنَاجٍ مُسَلَّمٌ وَنَاجٍ مَخْدُوشٌ وَمَكْدُوسٌ فِي نَارِ جَهَنَّمَ حَتَّى يَمُرَّ آخِرُهُمْ يُسْحَبُ سَحْبًا
‘‘অতঃপর সেতু আনয়ন করা হবে এবং জাহান্নামের উপরে তা স্থাপন করা হবে। আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, সেতুটি কী? তিনি বললেন: অতিপিচ্ছিল ও পতনের স্থান, যার উপরে রয়েছে টেনে নেওয়ার জন্য আংটা এবং বিশালাকৃতির বক্র কাঁটা রয়েছে সেগুলি দেখতে নাজদের সা’দান বৃক্ষের কাঁটার ন্যায়। মুমিন সে সেতুর উপর দিয়ে দৃষ্টির দ্রুততায়, কেউ বিদ্যুতের গতিতে, কেউ বাতাসের গতিতে, কেউ শক্তিশালী ঘোড়ার ন্যায়, কেউ উষ্ট্রের গতিতে পার হবে, কেউ নিরাপদে অতিক্রম করবে, কেউ আগুনের মধ্যে আহত ও কেউ আগুনের মধ্যে জমাকৃত, এভাবে সর্বশেষ ব্যক্তিকে টেনে হিচড়ে পার করা হবে।’’[2]
মহান আল্লাহ কুরআন কারীমে বলেন:
وَإِنْ مِنْكُمْ إِلا وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَقْضِيًّا ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوْا وَنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا
‘‘তোমাদের প্রত্যেকেই তথায় আগমন করবে (তা অতিক্রম করবে), এ তোমার প্রতিপালকের অনির্বার্য সিদ্ধান্ত। পরে আমি মুত্তাকীদেরকে উদ্ধার করব এবং জালিমদেরকে সেথায় নতজানু অবস্থায় রেখে দিব।’’[3]
সাহাবী-তাবিয়ী মুফাস্সিরগণ উল্লেখ করেছেন যে, এখানে সিরাত অতিক্রম করার বিষয়টিই উল্লেখ করা হয়েছে।
[2] বুখারী, আস-সহীহ ৬/২৭০৭।
[3] সূরা (১৯) মারইয়াম: ৭১-৭২ আয়াত।