৪. ৪. ৯. ১. আয়াত ও মুজিযা
আমরা ইতোপূর্বে দ্বিতীয় অধ্যায়ে আরকানুল ঈমান আলোচনাকালে দেখেছি যে, সকল নবী-রাসূল আয়াত বা মুজিযা প্রাপ্ত ছিলেন। মুজিযা (المعجزة) শব্দটি আরবী ‘ইজায’ (إعجاز) শব্দ থেকে গৃহীত, যার অর্থ ‘অক্ষম করা’। মুজিযা অর্থ ‘অক্ষমকারী অলৌকিক নিদর্শন’’। নবীগণ তাঁদের নুবুওয়াতের দাবি প্রমাণ করতে যে সকল অলৌকিক কর্ম বা নিদর্শন প্রদর্শন করেন সেগুলিকে মুজিযা বলা হয়।[1]
মুজিযা শব্দটি কুরআন-হাদীসে ব্যবহৃত হয় নি। কুরআন ও হাদীসে মুজিযা বুঝাতে ‘আয়াত’ (الآية) অর্থাৎ ‘চিহ্ন’ বলা হয়েছে। পরবর্তী যুগে আলিমগণ ‘মুজিযা’ পরিভাষাটি ব্যবহার করেন। যতটুকু বুঝা যায় এ পরিভাষাটির ব্যবহার ২য় হিজরী শতকেও পরিচিতি লাভ করে নি। কারণ ‘মুজিযা’ বুঝাতে ইমাম আবূ হানীফা ‘আয়াত’ শব্দটিই ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন:
والآيات ثابتة للأنبياء عليهم الصلاة والسلام، والكرامات للأولياء حق. وأما التي تكون لأعدائه مثل إبليس وفرعون والدجال مِمَّا رُوِيَ في الأخبار أنه كان ويكون لهم لا نسميها آيات ولا كرامات، ولكن نسميها قضاء حاجات لهم، وذلك لأن الله تعالى يقضي حاجات أعدائه استدراجا لهم وعقوبة لهم فيغترون به ويزدادون طغيانا وكفراً، وذلك كله جائز وممكن.
‘‘নবীগণের জন্য ‘আয়াত’ প্রমাণিত। এবং ওলীগণের কারামত সত্য। আর ইবলীস, ফিরাউন, দাজ্জাল ও তাদের মত আল্লাহর দুশমনদের দ্বারা যে সকল অলৌকিক কর্ম সাধিত হয়, যে সকল অলৌকিক কর্মের বিষয়ে কুরআন-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, তাদের দ্বারা তা সংঘটিত হয়েছিল বা হবে, সেগুলিকে আমরা আয়াত বা কারামত বলি না, বরং এগুলিকে আমরা তাদের ‘কাযায়ে হাজাত’ বা প্রয়োজন মেটানো বলি। কারণ আল্লাহ তাঁর দুশমনদের প্রয়োজন মিটিয়ে দেন ‘ইসতিদরাজ’ হিসেবে তাদেরকে ক্রমান্বয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং তাদের শাস্তি হিসেবে। এতে তারা ধোঁকগ্রস্ত হয় এবং আরো বেশি অবাধ্যতা ও অবিশ্বাসে নিপতিত হয়। এগুলি সবই সম্ভব।’’[2]
মুমিনগন বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহর নবী-রাসূলগণ আল্লাহর ওহী ও মুজিজা লাভ করেছেন। আল্লাহর ইচ্ছায় ও নির্দেশে তাঁরা অনেক মুজিজা বা অলৌকিক কার্য প্রদর্শন করেছেন ও অবিশ্বাসীদেরকে বিশ্বাসের পথে আহবান করার জন্য। এ বিষয়ে কিছু আয়াত আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি। আমরা দেখেছি যে, অবিশ্বাসিগণ সর্বদা নবী-রাসূলদেরকে ‘আমাদের মতই মানুষ, কাজেই তোমরা নবী হতে পার না’, আর যদি নবী হয়েই থাক তবে ‘আয়াত’ বা ‘সুলতান’ অর্থাৎ ক্ষমতার প্রমাণ পেশ কর। নবীগণ তাদের এ কথার উত্তরে তাদের মানবত্ব এবং আল্লাহর ইচ্ছায় আয়াত প্রদর্শনের কথা জানিয়েছেন। আমরা দেখেছি এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন:
قَالُوا إِنْ أَنْتُمْ إِلا بَشَرٌ مِثْلُنَا تُرِيدُونَ أَنْ تَصُدُّونَا عَمَّا كَانَ يَعْبُدُ آَبَاؤُنَا فَأْتُونَا بِسُلْطَانٍ مُبِينٍ. قَالَتْ لَهُمْ رُسُلُهُمْ إِنْ نَحْنُ إِلا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَمُنُّ عَلَى مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَمَا كَانَ لَنَا أَنْ نَأْتِيَكُمْ بِسُلْطَانٍ إِلا بِإِذْنِ اللَّهِ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ
‘‘তারা (কাফিরগণ) বলত: ‘তোমরা (নবীগণ) তো আমাদেরই মত মানুষ। আমাদের পিতৃপুরুষগণ যাদের ইবাদত করত তোমরা তাদের ইবাদত থেকে আমাদেরকে বিরত রাখতে চাও। অতএব তোমরা আমাদের নিকট কোনো অকাট্য প্রমাণ (অলৌকিক চিহ্ন বা মুজিযা) উপস্থিত কর। তাদের রাসূলগণ তাদেরকে বলতেন: সত্য বটে আমরা তোমাদের মত মানুষ বৈ কিছুই নই, কিন্তু আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত তোমাদের নিকট প্রমাণ (মুজিযা) উপস্থিত করা আমাদের কাজ নয়। মুমিনগণের আল্লাহরই উপর নির্ভর করা উচিত।’’[3]
আমরা দেখেছি অন্য আয়াতে বলা হয়েছে:
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً وَمَا كَانَ لِرَسُولٍ أَنْ يَأْتِيَ بِآَيَةٍ إِلا بِإِذْنِ اللَّهِ لِكُلِّ أَجَلٍ كِتَابٌ
‘‘তোমার পূর্বে রাসূলগণ প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম। আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোনো নিদর্শন (মুজিযা) উপস্থিত করা কোনো রাসূলের কাজ নয়। প্রত্যেক বিষয়ে নির্ধারিত কাল লিপিবদ্ধ।’’[4]
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে:
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلا مِنْ قَبْلِكَ مِنْهُمْ مَنْ قَصَصْنَا عَلَيْكَ وَمِنْهُمْ مَنْ لَمْ نَقْصُصْ عَلَيْكَ وَمَا كَانَ لِرَسُولٍ أَنْ يَأْتِيَ بِآَيَةٍ إِلا بِإِذْنِ اللَّهِ فَإِذَا جَاءَ أَمْرُ اللَّهِ قُضِيَ بِالْحَقِّ وَخَسِرَ هُنَالِكَ الْمُبْطِلُونَ
‘‘আপনার পূর্বে রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাদের মধ্যে কারো কথা আপনার কাছে বিবৃত করেছি, আর কারো কারো কথা আপনার কাছে বিবৃত করিনি। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো রাসূলই কোনো নিদর্শন (মু’জিযা) আনতে পারেন না। আর যখন আল্লাহর নির্দেশ এসে যায় তখন ন্যায় সঙ্গতভাবে ফয়সালা করা হয় এবং তখন মিথ্যাশ্রয়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।’’[5]
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন:
وَأَقْسَمُوا بِاللَّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ لَئِنْ جَاءَتْهُمْ آَيَةٌ لَيُؤْمِنُنَّ بِهَا قُلْ إِنَّمَا الآَيَاتُ عِنْدَ اللَّهِ
‘‘তারা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে শপথ করে বলে যে, যদি তাদেরকে অলৌকিক নিদর্শন দেখান হয় তাহলে তারা ইমান গ্রহণ করবে। আপনি বলুন: অলৌকিক নিদর্শনাবলী তো একান্তই আল্লাহর কাছে।’’[6]
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
وَقَالُوا لَوْلا نُزِّلَ عَلَيْهِ آَيَةٌ مِنْ رَبِّهِ قُلْ إِنَّ اللَّهَ قَادِرٌ عَلَى أَنْ يُنَزِّلَ آَيَةً وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لا يَعْلَمُونَ
‘‘তারা বলে, ‘তার প্রতিপালকের নিকট থেকে তার নিকট কোনো নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন?’ বল, ‘নিদর্শন নাযিল করতে আল্লাহ সক্ষম’, কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।’’[7]
অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন
وَقَالُوا لَوْلا أُنْزِلَ عَلَيْهِ آَيَاتٌ مِنْ رَبِّهِ قُلْ إِنَّمَا الآَيَاتُ عِنْدَ اللَّهِ وَإِنَّمَا أَنَا نَذِيرٌ مُبِينٌ
‘‘এবং তারা বলে: তার কাছে তার প্রভুর পক্ষ থেকে অলৌকিক নিদর্শনসমূহ প্রেরণ করা হোক। আপনি বলুন: অলৌকিক নিদর্শনাবলী তো একমাত্র আল্লাহরই কাছে এবং আমি তো শুধু একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী।’’[8]
মহান আল্লাহ আরো বলেন:
وَيَقُولُونَ لَوْلا أُنْزِلَ عَلَيْهِ آَيَةٌ مِنْ رَبِّهِ فَقُلْ إِنَّمَا الْغَيْبُ لِلَّهِ فَانْتَظِرُوا إِنِّي مَعَكُمْ مِنَ الْمُنْتَظِرِينَ
‘‘তারা বলে, ‘তার প্রতিপালকের নিকট থেকে তার নিকট কোনো নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন?’ বল, ‘গাইব (অদৃশ্যের জ্ঞান) তো কেবল আল্লাহরই আছে। সুতরাং তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমি তোমাদের সাথে প্রতীক্ষা করছি।’’[9]
তিনি আরো বলেন:
قُلْ إِنِّي عَلَى بَيِّنَةٍ مِنْ رَبِّي وَكَذَّبْتُمْ بِهِ مَا عِنْدِي مَا تَسْتَعْجِلُونَ بِهِ إِنِ الْحُكْمُ إِلا لِلَّهِ يَقُصُّ الْحَقَّ وَهُوَ خَيْرُ الْفَاصِلِينَ قُلْ لَوْ أَنَّ عِنْدِي مَا تَسْتَعْجِلُونَ بِهِ لَقُضِيَ الأَمْرُ بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِالظَّالِمِينَ
‘‘বল, ‘আমি আমার প্রতিপালকের স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত; অথচ তোমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছ, তোমরা যা সত্বর চাচ্ছ (মুজিযা, শাস্তি) তা আমার নিকট নেই। কর্তৃত্ব-হুকম তো কেবলমাত্র আল্লাহরই, তিনি সত্য বিবৃত করেন এবং ফয়সালাকারীদের মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ।’ বল, ‘তোমরা যা সত্বর চাচ্ছ (মুজিযা-শাস্তি) তা যদি আমার নিকট থাকত তবে আমার ও তোমাদের মধ্যেকার ব্যাপারে তো ফয়সালাই হয়ে যেত, এবং আল্লাহ জালিমদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।’’[10]
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন:
فَلَعَلَّكَ تَارِكٌ بَعْضَ مَا يُوحَى إِلَيْكَ وَضَائِقٌ بِهِ صَدْرُكَ أَنْ يَقُولُوا لَوْلا أُنْزِلَ عَلَيْهِ كَنْزٌ أَوْ جَاءَ مَعَهُ مَلَكٌ إِنَّمَا أَنْتَ نَذِيرٌ وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ
তবে কি তুমি তোমর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তার কিছু বর্জন করবে এবং এতে, তোমার মন সংকুচিত হবে, এজন্য যে, তারা বলে, ‘তার নিকট ধন-ভান্ডার অবতীর্ণ হয় না কেন? অথবা তার সাথে ফিরিশতা আসে না কেন?’ তুমি তো কেবল সতর্ককারী মাত্র এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ের কর্মবিধায়ক।’’[11]
এ সকল আয়াত ও অন্যান্য আয়াত বারংবার উল্লেখ করেছে যে, নবী-রাসূলগণ আল্লাহর ইচ্ছা মুজিযা প্রদর্শন করেছেন। কুরআন কারীমে নবীগণের অনেক মুজিযার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নূহ (আঃ)-এর নৌকার মুজিযা, ইবরাহীম (আঃ)-এর অগ্নিকুন্ডে নিরাপদ থাকার মুজিযা, মূসা (আঃ)-এর লাঠি ও অন্যান্য মুজিযা, ঈসা (আঃ)-এর মৃতকে জীবিত করা ও অন্যান্য মুজিযা, মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর চন্দ্র দ্বিখন্ডিত করা, ইসরা, মিরাজ ও অন্যান্য মুজিযা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন হাদীসে এ বিষয়ে অনেক কিছু বলা হয়েছে। এগুলি বিশ্বাস করা মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব।
৪. ৪. ৯. ২. কারামাতুল আওলিয়া
নবীগণের মুজিযা বা আয়াত ব্যাখ্যার প্রসঙ্গে ইমামগণ আরো দু প্রকারের ‘অলৌকিক’ কর্মের আলোচনা করেছেন: (১) ওলীগণের কারামত ও (২) কাফির বা পাপীদের ইসতিদরাজ। কারণ এগুলির বাহ্যিক প্রকাশ অনেকটা এক রকম হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলির মধ্যে পার্থক্য অনেক। যেন কোনো মুমিন অজ্ঞতার কারণে যে কোনো অলৌকিক কর্মকেই মুজিযা বা কারামত বলে মনে না করে এজন্য তারা মুজিযার ব্যাখ্যার সাথে কারামাত ও ইসতিদরাজের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
‘ওলী’ শব্দটি আরবী (الـوِلايَـة، والـوَلايَـة بكسر الواو وفتحها) বিলায়াত বা ওয়ালায়াত শব্দ থেকে গৃহীত, যার অর্থ নৈকট্য, বন্ধুুত্ব বা অভিভাবকত্ব (closeness, friendship, guardianship)। ‘বেলায়াত’ অর্জনকারীকে ‘ওলী’ বা ‘ওয়ালী’ (الولي) বলা হয়। ওলী অর্থ নিকটবর্তী, বন্ধু, সাহায্যকারী, অভিভাবক ইত্যাদি। বেলায়াত ধাতু থেকে নির্গত ‘ওলী’ অর্থেরই আরেকটি সুপরিচিত শব্দ ‘মাওলা’ (المولى)। ‘মাওলা’ অর্থও অভিভাবক, বন্ধু, সঙ্গী ইত্যাদি (master, protector, friend, companion)।
ইসলামী পরিভাষায় ‘বেলায়াত’ ‘ওলী’ ও ‘মাওলা’ শব্দের বিভিন্ন প্রকারের ব্যবহার রয়েছে। উত্তরাধিকার আইনের পরিভাষায় ও রাজনৈতিক পরিভাষায় এ সকল শব্দ বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত। তবে বেলায়াত বা ওলী শব্দদ্বয় সর্বাধিক ব্যবহৃত (ولاية الله) ‘আল্লাহর বন্ধুত্ব’ ও (ولي الله) ‘আল্লাহর বন্ধু’ অর্থে। আল্লাহর বন্ধুদের পরিচয় দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন:
أَلا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ الَّذِينَ آَمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ
‘‘জেনে রাখ! নিশ্চয় আল্লাহর ওলীগণের কোনো ভয় নেই এবং তঁরা চিন্তাগ্রস্তও হবে না- যারা ঈমান এনেছে এবং যারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে আত্মরক্ষা করে চলে বা তাকওয়া অবলম্বন করে।’’[12]
ঈমান অর্থ তাওহীদ ও রিসালাতের প্রতি বিশুদ্ধ, শিরক ও কুফর মুক্ত বিশ্বাস। ‘‘তাকওয়া’’ শব্দের অর্থ আত্মরক্ষা করা। যে কর্ম বা চিন্তা করলে মহান আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন সেই কর্ম বা চিন্তা বর্জনের নাম তাকওয়া। মূলত সকল হারাম, নিষিদ্ধ ও পাপ বর্জনকে তাকওয়া বলা হয়। এখানে আমরা দেখছি যে, দুটি গুণের মধ্যে ওলীর পরিচয় সীমাবদ্ধ। ঈমান ও তাকওয়া। এই দু’টি গুণ যার মধ্যে যত বেশি ও যত পরিপূর্ণ হবে তিনি বেলায়াতের পথে তত বেশি অগ্রসর ও আল্লাহর তত বেশি ওলী বা প্রিয় বলে বিবেচিত হবেন। এথেকে আমরা বুঝতে পারি যে, প্রত্যেক মুসলিমই আল্লাহর ওলী। ইমান ও তাকওয়ার গুণ যার মধ্যে যত বেশি থাকবে তিনি তত বেশি ওলী।
ইমাম আবূ হানীফা (রাহ), ইমাম তাহাবী (রাহ) ও অন্যান্য আলিম উল্লেখ করেছেন যে, ঈমান ও মা’রিফাতের দিক থেকে সকল মুমিনই সমান। এজন্য বেলায়াতের কমবেশি হয় মূলত নেক আমলে। যার নেক আমল ও সুন্নাতের ইত্তিবা যত বেশি তিনি তত বেশি ওলী। ইমাম তাহাবী বলেন:
المؤمنون كلهم أولياء الرحمن، وأكرمهم عند الله أطوعهم وأتبعهم للقرآن
‘‘সকল মুমিন করুণাময় আল্লাহর ওলী। তাঁদের মধ্য থেকে যে যত বেশি আল্লাহর অনুগত ও কুরআনের অনুসরণকারী সে ততবেশি আল্লাহর নিকট সম্মানিত (ততবেশি বেলায়াতের অধিকারী)।[13]
ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) বলেন:
ويستوي المؤمنون كلهم في المعرفة واليقين والتوكل والمحبة والرضا والخوف والرجاء والإيمان في ذلك ويتفاوتون فيما دون الإيمان في ذلك كله.
‘‘মারিফাত (পরিচয় লাভ), ইয়াকীন (বিশ্বাস), তাওয়াক্কুল (নির্ভরতা), মাহাববাত (ভালবাসা), রিযা (সন্তুষ্টি), খাওফ (ভয়), রাজা (আশা) এবং এ সকল বিষয়ের ঈমান-এর ক্ষেত্রে মুমিনগণ সকলেই সমান। তাদের মর্যাদার কমবেশি হয় মূল ঈমান বা বিশ্বাসের অতিরিক্ত যা কিছু আছে তার সবকিছুতে।’’[14]
ইমাম তাহাবী (রাহ) বলেন:
الإيمان واحد وأهله في أصله سواء والتفاضل بينهم بالخشية والتقي، ومخالفة الهوي وملازمة الأولى
‘‘ঈমান একই, এবং ঈমানদারগণ এর মূলে সবাই সমান। তবে, আল্লাহর ভয়, তাক্বওয়া, কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধাচারণ এবং সর্বদা উত্তম কর্ম সম্পাদনের অনুপাতে তাদের মধ্যে স্তর ও মর্যাদাগত প্রভেদ হয়ে থাকে।’’[15]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বেলায়াতের পথের কর্মকে দুভাগে ভাগ করেছেন: ফরয ও নফল। সকল ফরয পালনের সাথেসাথে অনবরত নফল ইবাদত পালনের মাধমে বান্দা বেলায়াত অর্জন করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ বলেছেন:
مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بِشَيْءٍ أَحَبَّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا وَإِنْ سَأَلَنِي لأُعْطِيَنَّهُ وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لأُعِيذَنَّهُ.
‘‘যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলীর সাথে শত্রুতা করে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার নৈকট্য অর্জন বা ওলী হওয়ার জন্য বান্দা যত কাজ করে তন্মধ্যে আমি সবচেয়ে বেশি ভালবাসি যে কাজ আমি ফরয করেছি। (ফরয পালন করাই আমার নৈকট্যে অর্জনের জন্য সবচেয়ে প্রিয় কাজ)। এবং বান্দা যখন সর্বদা নফল ইবাদত পালনের মাধ্যমে আমার বেলায়তের পথে অগ্রসর হতে থাকে তখন আমি তাকে ভালবাসি। আর যখন আমি তাকে ভালবাসি তখন আমি তার শ্রবণযন্ত্রে পরিণত হই, যা দিয়ে সে শুনতে পায়, আমি তার দর্শনেন্দ্রিয় হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখতে পায়, আমি তার হাত হয়ে যাই, যদ্দবার সে ধরে বা আঘাত করে এবং আমি তার পা হয়ে যাই, যদ্দবারা সে হাঁটে। সে যদি আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে তাহলে আমি অবশ্যই তাকে তা প্রদান করি। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় প্রদান করি।’’[16]
কারামত (الكرامة) শব্দটির অর্থ ‘ভদ্রতা’, ‘সম্মান’, ‘সম্মাননা’, ‘সম্মান-চিহ্ন’ (nobility, dignity, respect, mark of honour, token of esteem)। ঈমান ও তাকওয়ার অধিকারী ফরয ও নফল ইবাদত পালনকারী কোনো ব্যক্তি থেকে যদি কোনো অলৌকিক কর্ম প্রকাশিত হয় তবে তাকে ইসলামী পরিভাষায় ‘কারামাত’ বলা হয়।
কুরআন কারীমে এরূপ অলৌকিক কর্মকেও আয়াত বলা হয়েছে। পূর্ববর্তী যুগের একজন ‘ওলী’-র পদস্খলন সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِي آَتَيْنَاهُ آَيَاتِنَا فَانْسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِينَ
‘‘তাদেরকে সেই ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শুনাও যাকে আমি ‘আয়াত’ বা অলৌকিক নির্দশন দিয়েছিলাম, অতঃপর সে তা থেকে বিচ্যুত হয় এবং শয়তান তার পিছনে লাগে, আর সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়।’’[17]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাস্সিরগণ পূর্ববর্তী যুগের বিভিন্ন ওলীর কথা উল্লেখ করেছেন যাদের বেলায়াতের কারণে মহান আল্লাহ তাদেরকে ‘কারামাত’ বা অলৌকিক কর্ম প্রদান করেছিলেন, কিন্তু আল্লাহর নির্দেশের বিরোধিতা করায় পরে তিনি বিপথগামী হয়ে যান।
এ আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, বেলায়াত কোনো পদমর্যাদা নয় এবং কারামত স্থায়ী পদমর্যাদার দলিল নয়। একজন নেককার মানুষ বেলায়াত ও কারামাত লাভের পরেও বিভ্রান্ত হতে পারেন। ‘কারামত’ প্রকাশিত হওয়া ওলী হওয়ার প্রমাণ নয়, বরং ঈমান ও তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকাই ওলী হওয়ার প্রমান। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য, অনুসরণ ও তাকওয়ার উপর টিকে থাকা ও অনবরত ফরয ও নফল ইবাদত পালন করতে থাকই বেলায়াতের একমাত্র চিহ্ন।
দ্বিতীয়-তৃতীয় হিজরী শতাব্দী থেকে মুসলিম উম্মাহর আলিমগণ নবীগণেরর অলৌকিক কর্মকে ‘মুজিযা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, কারণ নুবুওয়াতের চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাফিরদের অক্ষমতা প্রকাশ করার জন্য আল্লাহ তাদের মাধ্যমে তা প্রকাশ করবেন। অনুরূপভাবে তাঁরা ওলীদের অলৌকিক কর্মকে ‘কারামত’ নামে আখ্যায়িত করেছেন, যেন মানুষ বুঝতে পারে যে, এরূপ অলৌকিক কর্ম ওলীর কোনো ক্ষমতা বা শক্তি নয়, বরং একান্তই আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘ইকরাম’ বা সম্মাননা মাত্র।[18]
ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) বলেছেন: ‘‘ওলীগণের কারামত সত্য।’’ এ কথা অর্থ ওলীগণ থেকে অলৌকিক কর্ম প্রকাশ পাওয়া সম্ভব। যদি কোনো বাহ্যত নেককার মুমিন মুত্তাকী মানুষ থেকে কোনো অলৌকিক কার্য প্রকাশ পায় তাহলে তাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত সম্মাননা বা কারামত বলে বুঝতে হবে। অনুরূপভাবে যদি কোনো নেককার বুযুর্গ মানুষ থেকে কোনো অলৌকিক কার্য প্রকাশিত হয়েছে বলে বিশুদ্ধ সূত্রে জানা যায় তবে তা সত্য বলে বিশ্বাস করতে হবে। তা অস্বীকার করা বা অসম্ভব বলে উড়িয়ে দেওয়া মু‘তাযিলী ও অন্যান্য বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ের আকীদা। কুরআন কারীমের বিভিন্ন স্থানে নবী ছাড়াও অন্যান্য মুমিন মুত্তাকী মানুষের অলৌকিক কর্মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন হাদীসে এরূপ অনেক কারামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইমাম তাহাবী (রাহ) বলেন:
لا يفصل أحدا من الأولياء على أحد من الأنبياء عليهم السلام، ونقول: نبي واحد أفضل من جميع الأولياء. ونؤمن بماجاء من كراماتهم وصح عن الثقات من رواياتهم.
‘‘আমরা কোনো ওলীকে কোনো নবীর উপর প্রাধান্য দেই না। বরং আমরা বলি: একজন নবী সকল ওলী থেকে শ্রেষ্ঠ। তাদের যে সকল কারামত নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত রাবীদের মাধ্যমে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে তা আমরা বিশ্বাস করি।’’[19]
৪. ৪. ৯. ৩. ইসতিদরাজ
‘ইসতিদরাজ’ শব্দটি আরবী ‘দারাজ’ (درَج) ক্রিয়ামূল থেকে গৃহীত, যার অর্থ চলা, হাঁটা, অগ্রসর হওয়া, ক্রমান্বয়ে এগোনো ইত্যাদি। ‘দারাজাহ’ (الدرجة) অর্থ ধাপ বা পর্যায়। ইসতিদরাজ (الاستدراج) অর্থ ক্রমান্বয়ে এগিয়ে নেওয়া, ক্রমান্বয়ে উপরে তোলা বা নিচে নামান, ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে দেওয়া ইত্যাদি (To make advance gradually, promote gradually, to entice, tempt, lure into destruction)।
কোনো পাপী বা অবিশ্বাসী ব্যক্তি থেকে কোনো অলৌকিক কর্ম প্রকাশিত হলে তাকে ইসলামের পরিভাষায় ‘ইসতিদরাজ’ বলা হয়। আমরা দেখেছি যে, ইসতিদরাজের ব্যখ্যায় ইমাম আবূ হানীফা বলেছেন: ‘‘বরং এগুলিকে আমরা তাদের কাযায়ে হাজাত বা প্রয়োজন মেটানো বলি। কারণ আল্লাহ তাঁর দুশমনদের প্রয়োজন মিটিয়ে দেন তাদেরকে ক্রমান্বয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং তাদের শাস্তি হিসেবে।’’
মোল্লা আলী কারী বলেন: ‘‘ফিরাসাত তিন প্রকার। (১) ঈমানী ফিরাসাত। এর কারণ আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত নূর যা আল্লাহ তার বান্দার অন্তরে নিক্ষেপ করেন। হঠাৎ অনুভূতি হিসেবে তা মানুষের অন্তরে হামলা করে, যেমন সিংহ তার শিকারের উপরে হামলা করে। .... (২) রিয়াযত বা অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জিত ফিরাসাত। এ প্রকারের ফিরাসাত অর্জিত হয় ক্ষুধা, রত্রি-জাগরণ, নির্জনবাস ইত্যাদির মাধ্যমে। কারণ মানুষের নফস যখন জাগতিক সম্পর্ক ও সৃষ্টির সাথে যোগাযোগ থেকে বিমুক্ত হয় তখন তার বিমুক্তির মাত্রা অনুসারে তার মধ্যে অন্তর্দিষ্টি ও কাশফ সৃষ্টি হয়। এ প্রকার ফিরাসাত কাফির ও মুমিন উভয়েরই হতে পারে। এ প্রকার কাশফ বা ফিরাসাত ঈমান বা বেলায়াত প্রমাণ করে না। এর দ্বারা কোনো কল্যাণ বা সঠিক পথও জানা যায় না।... (৩) সৃস্টিগত ফিরাসাত। এ হলো চিকিৎসক ও অন্যান্য পেশার মানুষের ফিরাসাত যারা সৃষ্টিগত আকৃতি থেকে প্রকৃতি ও আভ্যন্তরীন অবস্থা অনুমান করতে পারেন।’’[20]
উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, সকল অলৌকিক কর্মই কারামত নয় এবং কোনো অলৌকিক কর্ম কারো বেলায়াতের প্রমাণ নয়, কারণ একই প্রকার অলৌকিক কর্ম মুত্তাকী মুমিন থেকেও প্রকাশিত হতে পারে এবং ফাসিক বা কাফির থেকেও প্রকাশিত হতে পারে। ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো অলৌকিক কর্ম কোনো মানুষের বেলায়াত তো দূরের কথা, ঈমানেরও প্রমাণ নয়। বরং মানুষের ঈমান, তাকওয়া, আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের (ﷺ) আনুগত্য ও সদা সর্বদা ফরয ও নফল ইবাদত পালন করাই বেলায়াতের প্রমাণ। যদি এরূপ ব্যক্তি থেকে কোনো অলৌকিক কর্ম প্রকাশিত হয় তবে তাকে কারামত বলা হবে। আর যদি কোনো ব্যক্তির ঈমান, তাকওয়া বা ইত্তিবায়ে সুন্নাত না থাকে কিন্তু তিনি বিভিন্ন অলৌকিক কর্ম সম্পাদন করেন তবে তাকে ইসতিদরাজ বলা হবে।
[2] মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ. ১৩০-১৩৪।
[3] সূরা (১৪) ইবরাহীম: ১০-১১ আয়াত। আরো দেখুন: সূরা (৬) আন‘আম: ৯১ আয়াত; সূরা (২১) আম্বিয়া: ৩ আয়াত; সূরা (২৩) মুমিনূন: ২৪, ৩৩ আয়াত; সূরা (২৬) শু‘আরা: ১৫৪, ১৫৬ আয়াত; সূরা (৩৬) ইয়াসীন: ১৫ আয়াত।
[4] সূরা (১৩) রা’দ: ৩৮ আয়াত।
[5] সূরা (৪০) গাফির/মুমিন: ৭৮ আয়াত।
[6] সূরা (৬) আনআম: ১০৯ আয়াত।
[7] সূরা (৬) আন‘আম: ৩৭ আয়াত।
[8] সূরা (২৯) আনকাবূত: ৫০ আয়াত।
[9] সূরা (১০) ইউনূস: ২০ আয়াত।
[10] সূরা (৬) আন‘আম: ৫৭-৫৮ আয়াত।
[11] সূরা (১১) হূদ: ১২ আয়াত। আরো দেখুন: সূরা (৬) আন‘আম: ২৭; (১৩) রাদ: ৭, ২৭; (২৫) ফুরকান: ৭, ২১ আয়াত।
[12] সূরা ইউনূস: ৬২-৬৩।
[13] ইমাম তাহাবী, আল-আকীদাহ (শারহ সহ), পৃ: ৩৫৭-৩৬২।
[14] মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ. ১৫৪-১৫৭।
[15] আবূ জাফর তাহাবী, মাতনুল আকীদাহ আত-তাহাবিয়্যাহ, পৃ. ১৪।
[16] বুখারী, আস-সহীহ ৫/২৩৮৪।
[17] সূরা (৭) আ’রাফ: ১৭৫ আয়াত।
[18] মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ. ১৩০-১৩৩।
[19] আবূ জাফর তাহাবী, মাতনুল আকীদাহ আত-তাহাবিয়্যাহ, পৃ. ১৯।
[20] মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ. ১৩২-১৩৩।