তাওহীদই কুরআনের মূল আলোচ্য এবং সকল আলোচনার মূল বিষয়। ইমাম আবূ হানীফার (রা) ‘আল-ফিকহুল আকবার’ গ্রন্থের ব্যাখ্যায়, তাওহীদের আলোচনাকালে মোল্লা আলী কারী (১০১৪ হি) বলেন:
‘‘তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ বা ইবাদতের তাওহীদ স্বীকার করলে স্বতঃসিদ্ধভাবে তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ বা সৃষ্টি ও প্রতিপালনের তাওহীদ স্বীকার করা হয়ে যায়। (তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ স্বীকার করার অর্থই তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ স্বীকার করা।) কিন্তু তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ স্বীকার করলে তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ স্বীকার করা হয় না।...
কুরআনের অধিকাংশ সূরা ও আয়াত এই দুই প্রকারের তাওহীদের বর্ণনা সম্বলিত। বরং সত্যিকার বিষয় যে, কুরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কথাই এই দুই প্রকারের তাওহীদের বিবরণ।
কারণ কুরআনে কোথাও আল্লাহর সত্তা, নামসমূহ, গুণাবলি ও কার্যাদির বর্ণনা করা হয়েছে, আর এগুলি জ্ঞান ও সংবাদের তাওহীদ। আর কোথাও শির্ক-মুক্ত ভাবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে এবং আল্লাহ ছাড়া যা কিছু ইবাদত করা হয় সব কিছু বর্জন করতে আহবান করা হয়েছে। এ হলো ‘আত-তাওহীদুল ইরাদী আত-তালাবী’ বা ‘ইচ্ছাধীন নির্দেশিত একত্ব’ (ইবাদতের তাওহীদ)।
আর কোথাও আদেশ, নিষেধ ও আল্লাহ আনুগত্য বজায় রাখার বর্ণনা রয়েছে। এগুলি তাওহীদের দাবি ও পরিপূরক। আর কোথাও তাওহীদের অনুসারীদের সম্মান-মর্যাদার কথা, দুনিয়াতে তাদের সাথে কিরূপ আচরণ করা হয়েছে এবং আখিরাতে তাদেরকে কিভাবে সম্মানিত করা হবে তা বলা হয়েছে। এ হলো তাওহীদের পুরস্কার। আর কোথাও শির্কে লিপ্ত ব্যক্তিদের কথা আলোচনা করা হয়েছে, পৃথিবীতে তাদেরকে কি লাঞ্ছনা প্রদান করা হয়েছে এবং আখিরাতে তাদের জন্য কি শাস্তি ও যন্ত্রণা অপেক্ষা করছে তা বলা হয়েছে। এ হলো তাওহীদ থেকে বাইরে যাওয়ার প্রতিফল। কাজেই কুরআনের সকল আলোচনাই তাওহীদ কেন্দ্রিক।[1]