যারা জান্নাতে যাবেন তারা হলেন, নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও ঈমানদার সৎকর্মশীল মানুষ।

জান্নাত এমন একটি স্থান যার পাশ দিয়ে বয়ে যায় নদী। যার প্রাসাদসমূহ তৈরি হয়েছে স্বর্ণ ও রৌপ্যের ইট দিয়ে। এ প্রাসাদের অন্যান্য উপকরণসমূহের মধ্যে আছে মনি-মুক্তা, মৃগনাভী, হিরা-মানিক্য ইত্যাদি। সেখানে আছে নারী-পুরুষ সকলের জন্য পবিত্র সঙ্গী-সাথী। আছে সব ধরনের ফল-মুল। সেখানের অধিবাসীরা খাওয়া-দাওয়া আর আমোদ-ফুর্তিতে মত্ত থাকবে। থাকবে না কোনো ধরনের দু:চিন্তা ও ভয়-ভীতি। সেখানে থাকে হাসি ও আনন্দ। থাকবে না কোনো কান্না। মৃত্যু থাকবে না। থাকবে না মৃত্যুর দুঃচিন্তা। সবচেয়ে বড় নি‘আমাত হলো আমাদের মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাক্ষাত লাভ ও তার সন্তুষ্টি।

মোটকথাঃ হলো, সেখানের সুখ শান্তি, আনন্দ-ফুর্তির কোনো দৃষ্টান্ত কোনো চোখ এখনো দেখে নি। কোনো কান কখনো শুনে নি। তার সত্যিকার ধরণ সম্পর্কে কোনো হৃদয় কখনো কল্পনা করে নি।

সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

হাদীসে এসেছে: আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«آتِي بَابَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَسْتفْتِحُ، فَيَقُولُ الْخَازِنُ: مَنْ أَنْتَ؟ فَأَقُولُ: مُحَمَّدٌ، فَيَقُولُ: بِكَ أُمِرْتُ لَا أَفْتَحُ لِأَحَدٍ قَبْلَكَ»

“আমি কিয়ামতের দিন জান্নাতের গেটে এসে জান্নাত খুলে দিতে বলবো। তখন দারোয়ান প্রশ্ন করবে, আপনি কে? আমি বলবো, আমি মুহাম্মাদ। তখন সে বলবে, আমাকে নির্দেশ দেওয়া আছে যে, আপনার পূর্বে আমি যেন কারো জন্য জান্নাতের দরজা খুলে না দেই”।[1]

[1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭।

হাদীসে এসেছে: ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«عُرِضَتْ عَلَيَّ الْأُمَمُ، فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَهُ الرُّهَيْطُ، وَالنَّبِيَّ وَمَعَهُ الرَّجُلُ وَالرَّجُلَانِ، وَالنَّبِيَّ لَيْسَ مَعَهُ أَحَدٌ، إِذْ رُفِعَ لِي سَوَادٌ عَظِيمٌ، فَظَنَنْتُ أَنَّهُمْ أُمَّتِي، فَقِيلَ لِي: هَذَا مُوسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَوْمُهُ، وَلَكِنْ انْظُرْ إِلَى الْأُفُقِ، فَنَظَرْتُ فَإِذَا سَوَادٌ عَظِيمٌ، فَقِيلَ لِي: انْظُرْ إِلَى الْأُفُقِ الْآخَرِ، فَإِذَا سَوَادٌ عَظِيمٌ، فَقِيلَ لِي: هَذِهِ أُمَّتُكَ وَمَعَهُمْ سَبْعُونَ أَلْفًا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ وَلَا عَذَابٍ "، ثُمَّ نَهَضَ فَدَخَلَ مَنْزِلَهُ فَخَاضَ النَّاسُ فِي أُولَئِكَ الَّذِينَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ وَلَا عَذَابٍ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: فَلَعَلَّهُمُ الَّذِينَ صَحِبُوا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ: فَلَعَلَّهُمُ الَّذِينَ وُلِدُوا فِي الْإِسْلَامِ وَلَمْ يُشْرِكُوا بِاللهِ، وَذَكَرُوا أَشْيَاءَ فَخَرَجَ عَلَيْهِمْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «مَا الَّذِي تَخُوضُونَ فِيهِ؟» فَأَخْبَرُوهُ، فَقَالَ: «هُمُ الَّذِينَ لَا يَرْقُونَ، وَلَا يَسْتَرْقُونَ، وَلَا يَتَطَيَّرُونَ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ»، فَقَامَ عُكَّاشَةُ بْنُ مِحْصَنٍ، فَقَالَ: " ادْعُ اللهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ، فَقَالَ: «أَنْتَ مِنْهُمْ؟» ثُمَّ قَامَ رَجُلٌ آخَرُ، فَقَالَ: ادْعُ اللهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ، فَقَالَ: «سَبَقَكَ بِهَا عُكَّاشَةُ»

“কিয়ামতের দিন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মানুষদের কীভাবে হাজির করা হবে তার একটি চিত্র আমাকে দেখানো হয়েছে। আমি দেখলাম একজন নবী আসলেন তার সাথে দশ জনের কম সংখ্যক অনুসারী। আরেকজন নবী আসেলন, তার সাথে একজন বা দু’জন অনুসারী। আবার আরেকজন নবী আসলেন তার সাথে কোনো অনুসারী নেই। এরপর দেখলাম বড় একদল মানুষকে আনা হলো। আমি ধারনা করলাম এরা আমার অনুসারী হবে। কিন্তু আমাকে বলা হলো, এরা মূছা আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারী। আমাকে বলা হলো, আপনি অন্য প্রান্তে তাকান। আমি তাকালাম। দেখলাম বিশাল একদল মানুষ। আমাকে বলা হলো, এবার অন্য প্রান্তে তাকান। আমি তাকালাম। দেখলাম, সেখানেও বিশাল একদল মানুষ। আমাকে বলা হলো, এরা সকলে আপনার অনুসারী। এবং তাদের মধ্যে সত্তর হাজার মানুষ এমন আছে, যারা কোনো হিসাব-নিকাশ ও শাস্তি ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ কথাগুলো বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে তাঁর ঘরে গেলেন। উপস্থিত লোকজন এ সকল লোক কারা হবে এ নিয়ে বিতর্ক জুড়ে দিল। কেউ কেহ বললো, তারা হবে ঐ সকল মানুষ যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্য লাভ করেছে। কেউ বললো, তারা হবে ঐ সকল মানুষ যারা ইসলাম নিয়ে জন্ম গ্রহণ করেছে আর কখনো শির্ক করে নি। আবার অনেকে অন্য অনেক কথা বললো। ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে আসলেন। বললেন, তোমরা কি নিয়ে বিতর্ক করছিলে? তখন তারা বলল, ঐ সকল লোক হবে কারা এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ঐ সকল লোক হলো তারাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যারা ঝাড়-ফূঁক করে না। ঝাড়-ফূঁক করতে যায় না। যারা কুলক্ষণ শুভ লক্ষণে বিশ্বাস করে না। আর শুধু তাদের প্রতিপালকের উপর নির্ভর (তাওয়াক্কুল) করে। এ কথা শুনে উকাশা ইবন মিহসান দাড়িয়ে গেলেন আর বললেন, হে রাসূল! আপনি আল্লাহ তা‘আলার কাছে দো‘আ করুন, তিনি যেন আমাকে এ সকল লোকদের অন্তর্ভূক্ত করেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেলে। এরপর আরেকজন দাড়িয়ে বললেন, হে রাসূল! আপনি আল্লাহ তা‘আলার কাছে দো‘আ করুন, তিনি যেন আমাকেও এ সকল লোকদের অন্তর্ভূক্ত করেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, উকাশা তোমাকে ছাড়িয়ে গেছে”।[1]

হাদীসটি থেকে আমরা যা জানতে পারি:

এক. অন্যান্য নবীদের অনুসারীদের তুলনায় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারীদের সংখ্যা হবে অনেক বেশি।

দুই. মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারীদের মধ্যে সত্তর হাজার মানুষ বিনা হিসাব ও কোনো শাস্তি ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করবে।

তিন. শরী‘আত অনুমোদিত ঝাড়-ফুঁক বৈধ। আর যে সকল ঝাড়-ফুঁক শরী‘আত অনুমোদন করে না তা নিষিদ্ধ। বৈধ ঝাড়-ফুঁক করা বা করানো তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়। তবে এগুলো পরিহার করে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ তা‘আলার উপর নির্ভর করা হলো তাওয়াক্কুলের একটি শীর্ষ স্থান। যারা এ শীর্ষ স্থানের অধিকারী হতে পারবে তারা বিনা হিসাবে জান্নাত লাভের সৌভাগ্য অর্জন করবে।

চার. কোনো কিছু দেখে বা কোনো কিছু করে তার মাধ্যমে শুভ অশুভ নির্ণয় করা জায়েয নয়।

পাঁচ. কুরআন বা হাদীসের কোনো বিষয় নিয়ে বিতর্ক বা আলোচনা করা দোষের কিছু নয়। সাহাবীগন যখন এ ভাগ্যবান মানুষগুলো কারা হবেন এ বিষয় নিয়ে বিতর্ক করছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিষেধ করেন নি বা বিতর্ক করা ঠিক নয় বলে কোনো মন্তব্য করেন নি।

ছয়. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ব্যাপারে মানুষের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রবর্তন করেছেন। তার সমকালে কোনো রাজা-বাদশা বা ধর্মীয় নেতারা তাদের লোকদের এভাবে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা দেন নি। কারো মতামত ভুল হলেও তিনি তা প্রকাশ করার জন্য উৎসাহ দিতেন। কাউকে মতামত প্রকাশে বাধা প্রদান করেন নি।

সাত. কোনো বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দো‘আ করতে বলা শরীয়ত অনুমোদিত কাজ বলে স্বীকৃত ছিল যতদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত ছিলেন। যেমন, আমরা এ হাদীসে দেখলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উক্কাশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দো‘আ চেয়েছেন। এমনিভাবে জীবিত কোনো আলিম বা বুযুর্গ ব্যক্তির কাছে যে কোনো ব্যাপারে দো‘আ চাওয়া যায়। কিন্তু কোনো মৃত নবী বা অলীর কাছে কোনো ব্যাপারে দো‘আ চাওয়া যায় না।

আট. এ হাদীসটি আমাদের সকলকে যথাযথভাবে আল্লাহ তা‘আলার উপর তাওয়াক্কুল করা ও তাওয়াক্কুলের শীর্ষস্থানে পৌঁছে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে।

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৭০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২০।
জান্নাতে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মর্যাদা

হাদীসে এসেছে: মুগীরা ইবন শোবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«سَأَلَ مُوسَى رَبَّهُ، مَا أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً، قَالَ: هُوَ رَجُلٌ يَجِيءُ بَعْدَ مَا أُدْخِلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ، فَيُقَالُ لَهُ: ادْخُلِ الْجَنَّةَ، فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ، كَيْفَ وَقَدْ نَزَلَ النَّاسُ مَنَازِلَهُمْ، وَأَخَذُوا أَخَذَاتِهِمْ، فَيُقَالُ لَهُ: أَتَرْضَى أَنْ يَكُونَ لَكَ مِثْلُ مُلْكِ مَلِكٍ مِنْ مُلُوكِ الدُّنْيَا؟ فَيَقُولُ: رَضِيتُ رَبِّ، فَيَقُولُ: لَكَ ذَلِكَ، وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ، فَقَالَ فِي الْخَامِسَةِ: رَضِيتُ رَبِّ، فَيَقُولُ: هَذَا لَكَ وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ، وَلَكَ مَا اشْتَهَتْ نَفْسُكَ، وَلَذَّتْ عَيْنُكَ، فَيَقُولُ: رَضِيتُ رَبِّ، قَالَ: رَبِّ، فَأَعْلَاهُمْ مَنْزِلَةً؟ قَالَ: أُولَئِكَ الَّذِينَ أَرَدْتُ غَرَسْتُ كَرَامَتَهُمْ بِيَدِي، وَخَتَمْتُ عَلَيْهَا، فَلَمْ تَرَ عَيْنٌ، وَلَمْ تَسْمَعْ أُذُنٌ، وَلَمْ يَخْطُرْ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ "، قَالَ: وَمِصْدَاقُهُ فِي كِتَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ: " ﴿فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧﴾ [السجدة: ١٧]

“মুসা আলাইহিস সালাম তার প্রতিপালককে জিজ্ঞেস করলেন, জান্নাতবাসীদের মধ্যে সর্বনিম্ন মর্যাদার লোকটি মর্যাদা কি রকম হবে? আল্লাহ তা‘আলা বললেন, সে হলো এমন এক ব্যক্তি, জান্নাতের অধিবাসীদের জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর আমি তাকে বলবো, তুমি জান্নাতে প্রবেশ করো। সে বলবে, হে রব! কীভাবে আমি জান্নাতে প্রবেশ করবো যখন সকলকে নিজ নিজ মর্যাদা অনুযায়ী স্থান নিয়ে গেছে এবং তাদের পাওনাগুলো গ্রহণ করেছে? তখন তাকে বলা হবে, দুনিয়ার সম্রাটদের মত একজন সম্রাটের যা থাকে তোমাকে সে পরিমাণ দেওয়া হলে তুমি কি সন্তুষ্ট হবে? সে উত্তরে বলবে হে প্রভূ, আমি সন্তুষ্ট হবো। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমাকে সে পরিমাণ দেওয়া হবে, তারপরও সে পরিমাণ আবার দেওয়া হবে, তারপরও সে পরিমাণ আবার দেওয়া হবে তারপর আবার সে পরিমাণ দেওয়া হবে। পঞ্চমবার সে বলবে, হে প্রভু আমি সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তাহলে এ পরিমাণ তোমার সাথে এর আরো দশগুণ তোমাকে দেওয়া হলো। আর তোমার জন্য রয়েছে যা তোমার মন কামনা করে আর যা তোমার চোখ দেখতে চায়। সে বলবে, হে রব আমি সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম। তারপর মুসা আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ! আর সবচেয়ে উচ্চ মর্যাদাবান ব্যক্তির স্থান কেমন হবে? আল্লাহ তা‘আলা বললেন: তারা হলো. যাদের মর্যাদার বীজ আমি নিজ হাতে বপন করেছি এবং তার উপর সীলমোহর এঁটে দিয়েছি। কাজেই সেখানের মর্যাদা ও সুখ-শান্তি এমন যা কোনদিন কোনো চোখ দেখে নি। কোনো কান শোনে নি। কোনো মানুষের অন্তর তার কল্পনা করে নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর সত্যতা তোমরা আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীতে পেতে পারো যেখানে তিনি বলেছেন,

﴿فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧﴾ [السجدة: ١٧]

“অতএব, কোনো ব্যক্তি জানে না চোখ জুড়ানো কি জিনিস তাদের জন্য লুকিয়ে রাখা হয়েছে”।[1]

হাদীসে আরো এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«قَالَ اللَّهُ «أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ، فَاقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ ﴿فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ ١٧﴾ [السجدة: ١٧]

“আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য এমন বস্তু প্রস্তুত করে রেখেছি যা কোনো চোখ দেখে নি। আর যা কোনো কান শোনেনি। এবং কোনো মানুষের অন্তর তা কল্পনা করতে সক্ষম হয় নি। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পারো:

﴿فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ ١٧﴾ [السجدة: ١٧]

“অতএব কোনো ব্যক্তি জানে না চোখ জুড়ানো কি জিনিস তাদের জন্য লুকিয়ে রাখা হয়েছে”।[2]

[1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮৯।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩২৪৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮২৪।

জান্নাতের আটটি গেট রয়েছে। গেটগুলো এত বিশাল যে, একটি গেটের দুপাটের মধ্যে দুরত্ব হলো মক্কা থেকে হিজর পর্যন্ত (প্রায় ১১৬০ কিলোমিটার) অথবা মক্কা থেকে বসরা পর্যন্ত (প্রায় ১২৫০ কি.মি)

প্রত্যেক সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের তাদের আমল অনুযায়ী বিশেষ বিশেষ গেট থেকে আহবান করা হবে। যে ছদকাহ করেছে তাকে ছদকার গেট থেকে আহবান করা হবে। যে সাওম পালন করেছে তাকে রাইয়্যান নামক গেট থেকে আহ্বান করা হবে।

জান্নাতের গেট সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

﴿وَسِيقَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ إِلَى ٱلۡجَنَّةِ زُمَرًاۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءُوهَا وَفُتِحَتۡ أَبۡوَٰبُهَا وَقَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَا سَلَٰمٌ عَلَيۡكُمۡ طِبۡتُمۡ فَٱدۡخُلُوهَا خَٰلِدِينَ ٧٣﴾ [الزمر: ٧٢]

“আর যারা তাদের রবকে ভয় করেছে তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন সেখানে এসে পৌঁছবে এবং এর গেটসমূহ খুলে দেওয়া হবে তখন জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা ভালো ছিলে। অতএব স্থায়ীভাবে থাকার জন্য এখানে প্রবেশ কর”। [সূরা যুমার, আয়াত: ৭৩]

এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হলো যে, জান্নাতে অনেকগুলো গেট আছে।

জান্নাতের গেট সম্পর্কে হাদীসে আরো এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ أَنْفَقَ زَوْجَيْنِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، نُودِيَ مِنْ أَبْوَابِ الجَنَّةِ: يَا عَبْدَ اللَّهِ هَذَا خَيْرٌ، فَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّلاَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّلاَةِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الجِهَادِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الجِهَادِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصِّيَامِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الرَّيَّانِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّدَقَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّدَقَةِ "، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا عَلَى مَنْ دُعِيَ مِنْ تِلْكَ الأَبْوَابِ مِنْ ضَرُورَةٍ، فَهَلْ يُدْعَى أَحَدٌ مِنْ تِلْكَ الأَبْوَابِ كُلِّهَا، قَالَ: «نَعَمْ وَأَرْجُو أَنْ تَكُونَ مِنْهُمْ»

“যে দুটো বিষয় (প্রাণ ও সম্পদ) আল্লাহর পথে খরচ করেছে তাকে জান্নাতের গেট থেকে ডাক দিয়ে বলা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার জন্য এটা কল্যাণকর। যে নামাজী হবে তাকে সালাতের দরজা থেকে ডাকা হবে। আর যে জিহাদকারী তাকে জিহাদের গেট থেকে ডাকা হবে। সিয়াম পালনকারীকে রাইয়ান নামক গেট থেকে ডাকা হবে। যে ছদকা করেছে তাকে ছদকার গেট থেকে ডাকা হবে। এ কথা শুনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (আপনার প্রতি আমার পিতা মাতা উৎসর্গ হোক) যাকে এ সকল গেট থেকে ডাকা হবে সে কি কোনো অনুবিধার সম্মুখীন হবে? আর এমন কোনো লোক পাওয়া যাবে যাকে জান্নাতের সকল গেট থেকে ডাকা হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ, পাওয়া যাবে। আমি আশা করি তুমি তাদের একজন”।[1]

এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম, এমন কিছু নেককার মানুষ থাকবেন যাদেরকে জান্নাতে সকল গেট ও দরজা দিয়ে ডাকা হবে। জান্নাতের সকল কপাট তাদের জন্য খোলা থাকবে। আর এ সকল ভাগ্যবানদের একজন হলেন, খলীফাতুল মুসলিমীন আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। কারণ, তিনি সকল নেক আমলই সম্পাদন করতেন। কোনো নেক আমলই ত্যাগ করতন না। এ সম্পর্কে একটি হাদীসে এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

«مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ صَائِمًا؟» قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، قَالَ: «فَمَنْ تَبِعَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ جَنَازَةً؟» قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، قَالَ: «فَمَنْ أَطْعَمَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مِسْكِينًا؟» قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، قَالَ: «فَمَنْ عَادَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مَرِيضًا؟» قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا اجْتَمَعْنَ فِي امْرِئٍ، إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ»

“তোমাদের মধ্যে আজ কে সাওম পালন করেছে? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি সাওম পালন করেছি। এরপর তিনি প্রশ্ন করলেন, কে তোমাদের মধ্যে আজ কোনো মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন ও জানাযায় অংশ নিয়েছে? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি অংশ নিয়েছি। তারপর তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ কোনো অভাবী ব্যক্তিকে খাবার খাইয়েছে? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি খাবার দিয়েছি। তারপর তিনি প্রশ্ন করলেন, তোমাদের মধ্যে আজ কে অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করেছে? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি করেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার মধ্যে এ ভালো কাজগুলোর সমাবেশ ঘটবে জান্নাতে সে প্রবেশ করবেই”।[2]

আর এ জন্যই আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জান্নাতের সকল গেট থেকে আহবান করা হবে। কারণ, তিনি সকল প্রকার ভালো কাজ করেছেন।

এ হাদীসের শিক্ষা অনুযায়ি আমাদের কর্তব্য হলো, সকল প্রকার ভালো ও সৎকর্ম যা করা সম্ভব তা সম্পাদন করা। তাহলে আল্লাহ তা‘আলার রহমত-অনুগ্রহে আমরা এ মর্যাদা অর্জন করতে পারি।

হাদীসে আরো এসেছে: সাহাল ইবন সাআদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ فِي الجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ، يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، يُقَالُ: أَيْنَ الصَّائِمُونَ؟ فَيَقُومُونَ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ»

“জান্নাতে একটি গেট রয়েছে। যার নাম রাইয়্যান। কিয়ামতের দিন সিয়াম পালনকারীরাই শুধু সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, সিয়াম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য। যখন তারা প্রবেশ করবে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে ফলে তারা ব্যতীত অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না”।[3]

এ হাদীস দিয়েও আমরা বুঝলাম জান্নাতে সাওম পালনকারীদের জন্য একটি বিশেষ গেট থাকবে।

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০২৭।
[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০২৮।
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫২।

জান্নাতীদের মান মর্যাদা অনুযায়ী বিভিন্ন স্তর দান করা হবে। এমনিভাবে মুজাহিদদের জন্য একশত স্তর থাকবে। অন্যান্য ঈমানদার ও আলিম উলামাদের জন্য থাকবে বিভিন্ন স্তর।

এ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

﴿وَمَن يَأۡتِهِۦ مُؤۡمِنٗا قَدۡ عَمِلَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَأُوْلَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱلدَّرَجَٰتُ ٱلۡعُلَىٰ ٧٥﴾ [طه: ٧٥]

“আর যারা তাঁর নিকট আসবে মুমিন অবস্থায়, সৎকর্ম করে তাদের জন্যই রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদা”। [সূরা ত্বাহা, আয়াত: ৭৫]

﴿يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١١﴾ [المجادلة: ١١]

“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত”। [সূরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত: ১১]

﴿فَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ دَرَجَةٗۚ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ وَفَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ أَجۡرًا عَظِيمٗا ٩٥ دَرَجَٰتٖ مِّنۡهُ وَمَغۡفِرَةٗ وَرَحۡمَةٗۚ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمًا ٩٦﴾ [النساء: ٩٥، ٩٦]

“নিজদের জান ও মাল দ্বারা জিহাদকারীদের মর্যাদা আল্লাহ বসে থাকাদের ওপর অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহ প্রত্যেককেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং আল্লাহ জিহাদকারীদেরকে বসে থাকাদের ওপর মহা পুরস্কার দ্বারা শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তাঁর পক্ষ থেকে রয়েছে অনেক মর্যাদা, ক্ষমা ও রহমত। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আন নিসা, আয়াত: ৯৫-৯৬]

এ সকল আয়াতের সবগুলোতে আমরা দেখতে পেলাম, আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে মর্যাদার বিভিন্ন স্তর রেখেছেন। তিনি নবী ও রাসূলদের পর সাধারণ মানুষদের মধ্য থেকে আলিম-উলামা ও আল্লাহর পথে যারা জিহাদ করেছেন তাদের বিশেষ ও সুউচ্চ মর্যাদা দান করবেন।

জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَبِرَسُولِهِ، وَأَقَامَ الصَّلاَةَ، وَصَامَ رَمَضَانَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ يُدْخِلَهُ الجَنَّةَ، جَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ جَلَسَ فِي أَرْضِهِ الَّتِي وُلِدَ فِيهَا»، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَفَلاَ نُبَشِّرُ النَّاسَ؟ قَالَ: «إِنَّ فِي الجَنَّةِ مِائَةَ دَرَجَةٍ، أَعَدَّهَا اللَّهُ لِلْمُجَاهِدِينَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، مَا بَيْنَ الدَّرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ، فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللَّهَ، فَاسْأَلُوهُ الفِرْدَوْسَ، فَإِنَّهُ أَوْسَطُ الجَنَّةِ وَأَعْلَى الجَنَّةِ - أُرَاهُ - فَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ»

“যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে আর সালাত কায়েম করবে ও রোযা পালন করবে আল্লাহর উপর দায়িত্ব হলো, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সে ব্যক্তি তার জন্ম ভূমিতে বসে থাকুক বা আল্লাহর পথে জিহাদ করুক (উভয় অবস্থাতে সে জান্নাতের অধিকারী হবে) সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি এ সুসংবাদটি মানুষকে দেব না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: অবশ্যই জান্নাতে একশ স্তর রয়েছে বিভিন্ন মর্যাদার। যা আল্লাহ সে সকল লোকদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেছে। এক একটি মর্যাদার ব্যপ্তি হবে আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যকার দুরত্বের সম পরিমাণ। যখন তোমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা করবে তখন তোমরা জান্নাতুল ফেরদাউস চাবে। কারণ এটা জান্নাতের মধ্যবর্তী ও সুউচ্চ মর্যাদার স্থান। এর উপর রয়েছে দয়াময় আল্লাহর আরশ”।[1]

এ হাদীস থেকে আমরা যা শিখতে পারি

এক. যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে, সালাত আদায় করবে ও সাওম পালন করবে তারা জান্নাতে যাবে।

দুই. যারা আল্লাহর পথে তাঁর দীন সুউচ্চ করার লক্ষ্যে যুদ্ধ ও জিহাদ করবে তাদের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি।

তিন. আল্লাহ তা‘আলার কাছে জান্নাতে সর্বোচ্চ মর্যাদা তথা ফেরদাউস লাভ করার জন্য প্রার্থনা করতে রাসূলের নির্দেশ।

চার. এ হাদীসটি মুসলিমদের জন্য একটি বিরাট সুসংবাদ। সাহাবায়ে কেরাম হাদীসটি শোনার পর বলেছেন, এ সংবাদটি কি আমরা সকলের কাছে প্রচার করবো না? তাদের এ প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু বলেননি। অন্য বর্ণনায় আছে তিনি বলেছেন, তাহলে লোকদের অলসতায় পেয়ে বসবে। মোট কথা হলো, যেখানে ও যখন হাদীসটি বললে লোকদের অলসতায় পেয়ে বসবে না, বরং ঈমান ও ইসলামের ব্যাপারে তাদের উৎসাহিত করা প্রয়োজন, তখন হাদীসটি বলা উচিৎ। আর যখন দেখা যাবে হাদীসটি বললে এ সমাজের লোকদের মধ্যে অলসতা এসে যাবে তখন না বলা উত্তম হবে।

আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«يُقَالُ يَعْنِي لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ : اقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا، فَإِنَّ مَنْزِلَتَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَأُ بِهَا»

“আল কুরআনের ধারক-বাহককে বলা হবে, পাঠ করতে থাকো আর উপরে উঠতে থাকো এবং সামনে অগ্রসর হও। যেমন তুমি দুনিয়াতে কুরআন পাঠে সামনে অগ্রসর হয়েছিলে। তোমার মর্যাদা সেখানে, যেখানে তুমি তোমার সর্বশেষ আয়াতটি পাঠ করবে।”[2]

এভাবে আল-কুরআনের ধারক-বাহক, হাফেয, ক্বারী, আলিম, কুরআনের বাণী প্রচারক ও মুফাসসিরদের জান্নাতে সুউচ্চ মর্যাদা দান করা হবে।

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৭৯০।
[2] তিরমিযী, হাদীস নং ২৯১৪, তিনি হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন, আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿لَٰكِنِ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ لَهُمۡ غُرَفٞ مِّن فَوۡقِهَا غُرَفٞ مَّبۡنِيَّةٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ وَعۡدَ ٱللَّهِ لَا يُخۡلِفُ ٱللَّهُ ٱلۡمِيعَادَ ٢٠﴾ [الزمر: ٢٠]

“কিন্তু যারা নিজদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে কক্ষসমূহ যার উপর নির্মিত আছে আরো কক্ষ। তার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত। এটি আল্লাহর ওয়াদা; আল্লাহ ওয়াদা খেলাফ করেন না”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ২০]

এ আয়াত দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে, জান্নাতবাসীদের জন্য জান্নাতে প্রাসাদ ও কক্ষসমূহ প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।

হাদীসে এসেছে: আবু সায়ীদ আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ أَهْلَ الجَنَّةِ يَتَرَاءَوْنَ أَهْلَ الغُرَفِ مِنْ فَوْقِهِمْ، كَمَا يَتَرَاءَوْنَ الكَوْكَبَ الدُّرِّيَّ الغَابِرَ فِي الأُفُقِ، مِنَ المَشْرِقِ أَوِ المَغْرِبِ، لِتَفَاضُلِ مَا بَيْنَهُمْ» قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ تِلْكَ مَنَازِلُ الأَنْبِيَاءِ لاَ يَبْلُغُهَا غَيْرُهُمْ، قَالَ: «بَلَى وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، رِجَالٌ آمَنُوا بِاللَّهِ وَصَدَّقُوا المُرْسَلِينَ»

“জান্নাতের কক্ষে অবস্থানরত জান্নাতবাসীরা অন্যান্য জান্নাতবাসীদের দেখবে। যেমন তোমরা পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে অস্তগামী নক্ষত্রসমূহকে দেখতে পাও। তাদের পরস্পরের মর্যাদার ভিন্নতা সত্বেও তোমরা দেখতে পাবে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, ইয়ার রাসূলাল্লাহ! রাসূলদের এই যে মর্যাদা রয়েছে তাতে অন্য কেউ কি অভিষিক্ত হতে পারবে? তিনি বললেন: যার হাতে আমার প্রাণ সেই সত্বার শপথ ঐ সকল মানুষেরা সেই মর্যাদা পাবে যারা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও রাসূলদের সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে”।[1]

আমরা যেমন ভুপৃষ্ঠে অবস্থান করে আকাশের সব তারকাগুলো দেখতে পাই। কোনটা আছে পূর্ব প্রান্তে, কোনটা পশ্চিম প্রান্তে আবার কোনটি মধ্য আকাশে থাকে। কোনটা দেখতে আমাদের বেগ পেতে হয় না। এমনিভাবে জান্নাতের কক্ষ ও অধিবাসীদের দেখা যাবে।

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩২৫৬।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

﴿يَٰعِبَادِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡكُمُ ٱلۡيَوۡمَ وَلَآ أَنتُمۡ تَحۡزَنُونَ ٦٨ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَا وَكَانُواْ مُسۡلِمِينَ ٦٩ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ أَنتُمۡ وَأَزۡوَٰجُكُمۡ تُحۡبَرُونَ ٧٠ يُطَافُ عَلَيۡهِم بِصِحَافٖ مِّن ذَهَبٖ وَأَكۡوَابٖۖ وَفِيهَا مَا تَشۡتَهِيهِ ٱلۡأَنفُسُ وَتَلَذُّ ٱلۡأَعۡيُنُۖ وَأَنتُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٧١ وَتِلۡكَ ٱلۡجَنَّةُ ٱلَّتِيٓ أُورِثۡتُمُوهَا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٧٢ لَكُمۡ فِيهَا فَٰكِهَةٞ كَثِيرَةٞ مِّنۡهَا تَأۡكُلُونَ ٧٣﴾ [الزخرف: ٦٨، ٧٣]

“হে আমার বান্দাগণ, আজ তোমাদের কোনো ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না। যারা আমার আয়াতে ঈমান এনেছিল এবং যারা ছিল মুসলিম। তোমরা সস্ত্রীক সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর। স্বর্ণখচিত থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে, সেখানে মন যা চায় আর যাতে চোখ তৃপ্ত হয় তা-ই থাকবে এবং সেখানে তোমরা হবে স্থায়ী। আর এটিই জান্নাত, নিজদের আমলের ফলস্বরূপ তোমাদেরকে এর অধিকারী করা হয়েছে।  সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে অনেক ফলমূল, যা থেকে তোমরা খাবে। [সূরা যুখরুফ, আয়াত: ৬৮-৭৩]

এ আয়াতগুলো থেকে আমরা যা জানতে পারলাম:

এক. জান্নাতবাসীদের কোনো ভয় থাকবে না আর থাকবে না কোনো দু:শ্চিন্তা। দুনিয়ার জীবনে মানুষ যত সম্পদের অধিকারী হোক না কেন আর সে যতই সুখী হোক, তার ভয় থাকে, থাকে দু:শ্চিন্তা। কিন্তু জান্নাতে এক অনন্য বৈশিষ্ট হলো, সেখানে কোনো পেরেশানী, দু:খ-কষ্ট, উদ্বেগ, দুঃশ্চিন্তা ভয় কিছুই থাকবে না।

দুই. ঈমান ও ইসলাম দুটো দুই বিষয়। যেমন, এ আয়াতে দুটোকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তিন. যারা জান্নাতের অধিকারী হবে তাদের স্ত্রী, স্বামী ও সন্তান-সন্তদি যদি ঈমানদার ও সৎকর্মশীল হয় তাহলে তারা জান্নাতে একত্রেই থাকবে। যেমন এ আয়াতে স্বামী ও স্ত্রীসহ জান্নাতে প্রবেশ করতে বলা হবে বলে বাণী এসেছে।

অন্য আয়াত আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

﴿وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَٱتَّبَعَتۡهُمۡ ذُرِّيَّتُهُم بِإِيمَٰنٍ أَلۡحَقۡنَا بِهِمۡ ذُرِّيَّتَهُمۡ وَمَآ أَلَتۡنَٰهُم مِّنۡ عَمَلِهِم مِّن شَيۡءٖۚ كُلُّ ٱمۡرِيِٕۢ بِمَا كَسَبَ رَهِينٞ ٢١ وَأَمۡدَدۡنَٰهُم بِفَٰكِهَةٖ وَلَحۡمٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢٢ يَتَنَٰزَعُونَ فِيهَا كَأۡسٗا لَّا لَغۡوٞ فِيهَا وَلَا تَأۡثِيمٞ ٢٣ ۞وَيَطُوفُ عَلَيۡهِمۡ غِلۡمَانٞ لَّهُمۡ كَأَنَّهُمۡ لُؤۡلُؤٞ مَّكۡنُونٞ ٢٤ وَأَقۡبَلَ بَعۡضُهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ يَتَسَآءَلُونَ ٢٥ قَالُوٓاْ إِنَّا كُنَّا قَبۡلُ فِيٓ أَهۡلِنَا مُشۡفِقِينَ ٢٦﴾ [الطور: ٢٠، ٢٥]

“আর যারা ঈমান আনে এবং তাদের সন্তান-সন্তুতি ঈমানের সাথে তাদের অনুসরণ করে, আমরা তাদের সাথে তাদের সন্তানদের মিলন ঘটাব এবং তাদের কর্মের কোনো অংশই কমাব না। প্রত্যেক ব্যক্তি তার কামাইয়ের ব্যাপারে দায়ী থাকবে। আর আমি তাদেরকে অতিরিক্ত দেব ফলমূল ও মাংস যা তারা কামনা করবে। তারা পরস্পরের মধ্যে পানপাত্র বিনিময় করবে; সেখানে থাকবে না কোনো বেহুদা কথাবার্তা এবং কোনো পাপকাজ। আর তাদের সেবায় চারপাশে ঘুরবে বালকদল; তারা যেন সুরক্ষিত মুক্তা। আর তারা একে অপরের মুখোমুখি হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে, তারা বলবে, পূর্বে আমরা আমাদের পরিবারের মধ্যে শঙ্কিত ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করেছেন এবং আগুনের আযাব থেকে আমাদেরকে রক্ষা করেছেন”। [সূরা আত-তূর, আয়াত: ২১-২৭]

চার. জান্নাতে মনে যা চায় ও চোখ যা দেখতে চায় তার সবকিছুই থাকবে। এমন নয় যে শুধু আল-কুরআন ও হাদীসে যা উল্লেখ করা হয়েছে শুধু সেগুলোই থাকবে। শুধু বাগান, নদী, গাছ, ফল-মুলই নয়। যা চায় মনে তার সবকিছু পাওয়া যাবে সেখানে। দুনিয়াতে একজন মানুষ যত প্রভাবশালী, ক্ষমতার অধিকারী ও ধন-সম্পদের মালিক হোক না কেন, মনে যা চায় সে তা পায় না। সে তা করতে পারে না; কিন্তু জান্নাত এ রকম নয়। সেখানে নেই কোনো সীমাবদ্ধতা।

জান্নাতে খাবার দাবার সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلسَّٰبِقُونَ ١٠ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلۡمُقَرَّبُونَ ١١ فِي جَنَّٰتِ ٱلنَّعِيمِ ١٢ ثُلَّةٞ مِّنَ ٱلۡأَوَّلِينَ ١٣ وَقَلِيلٞ مِّنَ ٱلۡأٓخِرِينَ ١٤ عَلَىٰ سُرُرٖ مَّوۡضُونَةٖ ١٥ مُّتَّكِ‍ِٔينَ عَلَيۡهَا مُتَقَٰبِلِينَ ١٦ يَطُوفُ عَلَيۡهِمۡ وِلۡدَٰنٞ مُّخَلَّدُونَ ١٧ بِأَكۡوَابٖ وَأَبَارِيقَ وَكَأۡسٖ مِّن مَّعِينٖ ١٨ لَّا يُصَدَّعُونَ عَنۡهَا وَلَا يُنزِفُونَ ١٩ وَفَٰكِهَةٖ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ ٢٠ وَلَحۡمِ طَيۡرٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢١ وَحُورٌ عِينٞ ٢٢ كَأَمۡثَٰلِ ٱللُّؤۡلُوِٕ ٱلۡمَكۡنُونِ ٢٣ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٢٤ لَا يَسۡمَعُونَ فِيهَا لَغۡوٗا وَلَا تَأۡثِيمًا ٢٥ إِلَّا قِيلٗا سَلَٰمٗا سَلَٰمٗا ٢٦ وَأَصۡحَٰبُ ٱلۡيَمِينِ مَآ أَصۡحَٰبُ ٱلۡيَمِينِ ٢٧ فِي سِدۡرٖ مَّخۡضُودٖ ٢٨ وَطَلۡحٖ مَّنضُودٖ ٢٩ وَظِلّٖ مَّمۡدُودٖ ٣٠ وَمَآءٖ مَّسۡكُوبٖ ٣١ وَفَٰكِهَةٖ كَثِيرَةٖ ٣٢ لَّا مَقۡطُوعَةٖ وَلَا مَمۡنُوعَةٖ ٣٣ وَفُرُشٖ مَّرۡفُوعَةٍ ٣٤ إِنَّآ أَنشَأۡنَٰهُنَّ إِنشَآءٗ ٣٥ فَجَعَلۡنَٰهُنَّ أَبۡكَارًا ٣٦ عُرُبًا أَتۡرَابٗا ٣٧ لِّأَصۡحَٰبِ ٱلۡيَمِينِ ٣٨ ثُلَّةٞ مِّنَ ٱلۡأَوَّلِينَ ٣٩ وَثُلَّةٞ مِّنَ ٱلۡأٓخِرِينَ ٤٠﴾ [الواقعة: ١٠، ٤٠]

“আর অগ্রগামীরাই অগ্রগামী। তারাই সান্নিধ্যপ্রাপ্ত। তারা থাকবে নিআমতপূর্ণ জান্নাতসমূহে। বহুসংখ্যক হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে, আর অল্পসংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে। স্বর্ণ ও দামী পাথরখচিত আসনে! তারা সেখানে হেলান দিয়ে আসীন থাকবে মুখোমুখি অবস্থায়। তাদের আশ-পাশে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোররা, পানপাত্র, জগ ও প্রবাহিত ঝর্ণার শরাবপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে। তা পানে না তাদের মাথা ব্যথা করবে, আর না তারা মাতাল হবে। আর (ঘোরাফেরা করবে) তাদের পছন্দ মতো ফল নিয়ে। আর পাখির গোশ‌ত নিয়ে, যা তারা কামনা করবে। আর থাকবে ডাগরচোখা হূর। যেন তারা সুরক্ষিত মুক্তা। তারা যে আমল করত তার প্রতিদানস্বরূপ। তারা সেখানে শুনতে পাবে না কোনো বেহুদা কথা এবং না পাপের কথা; শুধু এই বাণী ছাড়া, সালাম, সালাম। আর ডান দিকের দল; কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! তারা থাকবে কাঁটাবিহীন কুলগাছের নিচে, আর কাঁদিপূর্ণ কলাগাছের নিচে, আর বিস্তৃত ছায়ায়, আর সদা প্রবাহিত পানির পাশে, আর প্রচুর ফলমূলে, যা শেষ হবে না এবং নিষিদ্ধও হবে না। (তারা থাকবে) সুউচ্চ শয্যাসমূহে; নিশ্চয় আমি হূরদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করব। অতঃপর তাদেরকে বানাব কুমারী, সোহাগিনী ও সমবয়সী। ডানদিকের লোকদের জন্য। তাদের অনেকে হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে। আর অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে”। [সূরা আল-ওয়াকিয়া, আয়াত: ১০-৪০]

হাদীসে এসেছে: জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,

«إِنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ يَأْكُلُونَ فِيهَا وَيَشْرَبُونَ، وَلَا يَتْفُلُونَ وَلَا يَبُولُونَ وَلَا يَتَغَوَّطُونَ وَلَا يَمْتَخِطُونَ» قَالُوا: فَمَا بَالُ الطَّعَامِ؟ قَالَ: «جُشَاءٌ وَرَشْحٌ كَرَشْحِ الْمِسْكِ، يُلْهَمُونَ التَّسْبِيحَ وَالتَّحْمِيدَ، كَمَا تُلْهَمُونَ النَّفَسَ»

“জান্নাতবাসীরা জান্নাতে খাবে, পান করবে কিন্তু তারা থুথু ফেলাবে না, প্রসাব করবে না, পায়খানা করবে না, বমি করবে না। এ কথা শুনে সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, তাহলে খাবার দাবার কোথায় যাবে? তিনি বললেন, ঢেকুর হয়ে মৃগনাভীর সুগন্ধ নিয়ে বের হয়ে যাবে। যেভাবে শাস-প্রশ্বাস নেওয়া হয়, এভাবেই জান্নাতবাসীরা আল্লাহ তা‘আলার তাসবীহ ও তাহমীদ করতে থাকবে”।[1]

এ হাদীসটি থেকে আমরা জানতে পারলাম:

এক. জান্নাতবাসীরা খাওয়া-দাওয়া করবে কিন্তু এ জন্য তাদের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হবে না।

দুই. তাদের পানাহারকৃত বস্তুগুলো ঢেকুরের সাথে বের হয়ে যাবে। আর এ ঢেকুর কোনো বিরক্তির কারণ হবে না। বরং সুগন্ধ ছড়াবে।

তিন. জান্নাতবাসীরা আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা বা তাহমীদ ও পবিত্রতা বর্ণনা বা তাসবীহ আদায় করবে। কিন্তু এ জন্য তাদের আলাদা কোনো পরিশ্রম করতে হবে না। যেমন আমাদের শ্বাস প্রশ্বাস নিতে কোনো পরিশ্রম বা ইচ্ছা করতে হয় না।

[1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৩৫।

হাদীসে এসেছে: আবু মূসা আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«فِي الْجَنَّةِ خَيْمَةٌ مِنْ لُؤْلُؤَةٍ مُجَوَّفَةٍ، عَرْضُهَا سِتُّونَ مِيلًا، فِي كُلِّ زَاوِيَةٍ مِنْهَا أَهْلٌ، مَا يَرَوْنَ الْآخَرِينَ، يَطُوفُ عَلَيْهِمِ الْمُؤْمِنُ»

“জান্নাতে মুমিনদের জন্য মুক্তা খচিত তাবু থাকবে। যার প্রশস্ততা হবে ষাট মাইল। সেখানে মুমিনদের পরিবার পরিজন একত্র হবে ও পরস্পরে দেখা সাক্ষাত করবে”। [1]

জান্নাতে যেমন বিশাল বিশাল অট্টালিকা থাকবে তেমনি থাকবে বিশাল বিশাল তাবু। যখন যেমন মনে চাবে জান্নাতীরা তা ব্যবহার করবে।

[1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৩৮।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »