(১) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তেকালের পর তাঁর দ্বারা বরকত লাভ করা
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তেকালের পর তাঁর দ্বারা দু’ভাবে বরকত হাসিল করা যাবে। অন্য কোন উপায়ে তাঁর থেকে বরকত হাসিল করা নিষিদ্ধ।
প্রথমঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর ঈমান আনা, তাঁর আনুগত্য এবং অনুসরণ করা। যে ব্যক্তি উক্ত কাজগুলো করবে সে অফুরন্ত কল্যাণ এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্য লাভ করবে।
দ্বিতীয়ঃ তাঁর ইন্তেকালের পর যে সকল জিনিস অবশিষ্ট রয়েছে তার থেকে বরকত হাসিল করা। যথা-তাঁর জামা অথবা চুল অথবা তাঁর ব্যবহৃত পানি ইত্যাদি।
এ ছাড়া অন্য কোন ভাবে তাঁর থেকে বরকত হাসিল করা শরীয়ত সম্মত নয়। তাঁর কবর দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না। কেবল মাত্র তাঁর কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না। বরং তিনটি মসজিদের যে কোন একটির উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে ১. মসজিদে হারাম ২. মসজিদে নববী ও ৩. মসজিদে আক্বসা। এ ছাড়া সব সময় যে মদীনায় বসবাস করে আসছে তার জন্য নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব। অথবা কেউ মসজিদে নববী যিয়ারতের উদ্দেশ্যে এলে তার জন্যও কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব।
রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর যিয়ারতের নিয়ম
মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে প্রথমে দু‘রাকাত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সালাত আদায় করা। অতঃপর কবরের দিকে গিয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে হুজরার দিকে মুখ করে ক্ষীণ আওয়াজে আদবের সাথে বলা ‘‘আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ’’। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এর চেয়ে অতিরিক্ত কিছু বলতেন না। কখনও অতিরিক্ত কিছু বলতে চাইলে বলতেনঃ
اَلسَّلامُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ، يَا خَيْرَةَ اللهِ مِنْ خَلْقِهِ، أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُوْلُ اللهِ حَقًا، وَ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ الرِّسَالَةَ، وَ أَدَّيْتَ الأَمَانَةَ، وَ جَاهَدْتَ فِي اللهِ حَقَّ جِهَادِه، وَ نَصَحْتَ الأُمَّةَ. (فتاوىابن باز في الحج و العمرة)
অর্থঃ হে আল্লাহর রাসূল। আপনার প্রতি সালাম, হে আল্লাহর সৃষ্টির সর্বোত্তম ব্যক্তি! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর সত্য নবী, নিশ্চয়ই আপনি আপনার রেসালাত পৌঁছে দিয়েছেন, আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে আপনার সর্বশক্তি ব্যয় করেছেন এবং আপনি জাতিকে সত্যের উপদেশ দিয়েছেন। এগুলো বলতে কোন দোষ নেই। কেননা এগুলো তাঁর বৈশিষ্ট্যাবলী।[1]
তাঁর কবরের কাছে এ ধারণা করে দুআ করা যাবে না যে, তাঁর কাছে দুআ করলে কবুল হয়, তাঁর কবরের কাছে গিয়ে তাঁর নিকট সুপারিশ প্রার্থনা করা যাবে না। (বরকততের জন্য) তাঁর কবর, কবরের ধূলো-বালি শরীরে মাসেহ করা বা তাঁর কবরে অথবা কবরের পার্শ্বের কোন জিনিস (ইট, পাথর, দেয়াল ইত্যাদি) চুমু দেয়া যাবে না। এছাড়া রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে যায়গায় বসেছেন, যেখানে সালাত আদায় করেছেন, যে পথ দিয়ে চলাচল করেছেন, যে স্থানে তার নিকট অহী এসেছে, যে স্থানে তিনি জন্ম গ্রহণ করেছেন, যে রাতে জন্ম গ্রহণ করেছেন, যে রাতে মিরাজ হয়েছে এবং তাঁর হিজরতের রাস্তা ইত্যাদি দ্বারা বরকত গ্রহণ করা যাবে না। এক কথায় যে সকল জিনিস দ্বারা বরকত গ্রহণ করা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুমোদিত নয় তা দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না।[2]
২. কোন নেককার লোক দ্বারা বরকত হাসিল
কোন নেককার বা বুযুর্গের ব্যক্তিস্বত্ত্বা, তাদের কোন নিদর্শন, ইবাদতের স্থান থেকে, বাসস্থান এবং তাদের কবর দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না। তাদের মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাও যাবে না। তাদের কবরের পাশে সালাত আদায় করা যাবে না। তাদের কবরের কাছে গিয়ে নিজের প্রয়োজন পূরণের জন্য কিছু প্রার্থনা করা, কবর স্পর্শ করা ও কবরের পাশে ইতেকাফ করা যাবে না। তাদের জন্ম বার্ষিকী, ওরস ইত্যাদি পালন করা যাবে না। কেউ যদি এ বিশ্বাস নিয়ে বুযুর্গদের নৈকট্য লাভের জন্য উপরোক্ত কোন কাজ করে যে, বুযুর্গগণ তাদের উপকার করতে পারে বা তাদের ক্ষতি করতে পারে অথবা তাদের কোন জিনিস দিতে পারে বা কোন জিনিস থেকে বঞ্চিত করতে পারে, তাহলে সে আল্লাহর সাথে বড় ধরণের শিরক করল।
যে ব্যক্তি এ সকল বুযুর্গ দ্বারা বরকত হাসিলের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট থেকে বরকত হাসিল করতে চায় সে বিদআতে লিপ্ত হল এবং অত্যন্ত ঘৃণিত কাজে লিপ্ত হল।[3]
৩. পাহাড় বা কোন স্থান দ্বারা বরকত হাসিল করা
পাহাড় বা কোন স্থান দ্বারা বরকত হাসিল করা নিষিদ্ধ। কেননা এটা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শরীয়ত পরিপন্থী। এগুলো দ্বারা বরকত হাসিলের মাধ্যমে এসবের সম্মান বাড়িয়ে দেয়া হয়।
এগুলোকে হাজরে আসওয়াদ ও বায়তুল্লাহর তাওয়াফের উপর কিয়াস করা বৈধ নয়। কেননা এ দু’টো আল্লাহর ইবাদত। হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামানী ব্যতীত অন্য কোন পাথর স্পর্শ করা যাবে না। কেননা সকল আলেম ঐকমত্য হয়েছেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোকনে ইয়ামানী ব্যতীত অন্য কোন রোকন স্পর্শ করেননি।[4]
ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন, দুনিয়াতে হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামানী ব্যতীত এমন কোন পাথর বা স্থান নেই যা চুম্বন করা শরীয়ত সিদ্ধ এবং তা গুনাহ মার্জনাকারী।[5]
তিনি মক্কার বৈশিষ্ট বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, পৃথিবীতে মক্কা নগরী ব্যতীত অন্য কোন স্থান এমন নেই যেখানে তাওয়াফ বা সায়ী করা জায়েয।[6]
শায়খুল ইসলাম রহ. কাবা ব্যতীত অন্য কোন ঘরের তাওয়াফ সম্পর্কে লিখেন, এ ধরণের তাওয়াফ হারাম ও বিদআত। এ কাজটি দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করলে তাকে তওবা করতে বলা হবে নতুবা তাকে হত্যা করা হবে।[7]
এমনিভাবে মাকামে ইব্রাহীম, অন্য কোন পাথর, মসজিদে হারামের কোন দেয়াল বা হেরা গুহা বা জাবালে নূরকে চুমু দেয়া বা বরকতের জন্য স্পর্শ করা বৈধ নয়। এগুলো জিয়ারত করার উদ্দেশ্যে যাওয়া, তাতে চড়া, তাতে সালাত আদায় করা ঠিক নয়। সাওর পর্বতের দ্বারা বরকত হাসিল করা বা তা জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাওয়া শরীয়তসিদ্ধ নয়। অনুরূপভাবে জাবালে রহমত ও জাবালে আবি কুবাইস দ্বারাও বরকত গ্রহণ করা ঠিক নয়। এমনিভাবে দারুল আরকাম বা অন্য কোন ঘর দ্বারা বরকত হাসিল করা বৈধ নয়। জাবালে তূর জিয়ারত করা বা তা জিয়ারতের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা বৈধ নয়। মোট কথা কোন পাথর বা গাছ দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না।[8]
[2] আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আল-জাদী: ৩১৫-৩৮০ পৃ
[3] আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী: ৩৮১-৪১৮ পৃ
[4] ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম- ইবনে তাইমিয়্যাহ (র) :২/৭৯৯
[5] যাদুল মায়াদ : ১/৪৮
[6] যাদুল মায়াদ : ১/৪৮
[7] ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়াঃ ২৬/১২১
[8]আত-তাবাররুক ওয়া আনওয়াউহু, ওয়া আহকামুহু, ড. নাছির আলজাদী:৪১৯-৪৬৪ পৃ