নিশ্চয়ই শরীয়তে সকল প্রকার বিদআত হারাম ও পথভ্রষ্টতা
এ প্রসঙ্গে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ. (أبو داود و ترمذي)
অর্থঃ তোমরা নব্য সৃষ্ট বিষয় হতে বেঁচে থাক। কেননা সকল নবসৃষ্ট বস্ত্ত বিদআত ও সকল বিদআত পথভ্রষ্টতা।[1]
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ. (بخاري و مسلم)
অর্থঃ যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবর্তন করে যা এর অন্তর্ভূক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।[2]
অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ. (مسلم)
অর্থঃ যে ব্যক্তি (ইবাদতের) নামে এমন কোন আমল করে যা আমাদের পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।[3]
উভয় হাদীসে এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, দ্বীনের মাঝে নবসৃষ্ট সকল বিষয় বিদআত এবং সকল বিদআতই ভ্রষ্টতা ও প্রত্যাখ্যাত। অতএব ইবাদতে বিদআত হারাম। তবে বিদআতের বিভিন্নতার কারণে এ হারাম বিভিন্ন রকম হয় ।
(১) কুফরীঃ যেমন-কবর বাসীর সম্মানে কবর তাওয়াফ করা, তার নামে মান্নত করা, জবেহ করা, তার কাছে দুআ করা ও আশ্রয় চাওয়া। যেমন- জাহমিয়া, মুতাজিলা ও শিয়া সম্প্রদায় করে থাকে।
(২) শিরকঃ যেমন-কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ ও কবরের পাশে সালাত আদায় ও দুআ করা।
(৩) গোনাহের কাজঃ যেমন-বিবাহ না করে বৈরাগ্য অবলম্বন করা, রোদে দাঁড়িয়ে সিয়াম পালন করা ও কামশক্তি নির্মূলের জন্য হিজরা হওয়া ইত্যাদি।[4]
ইমাম শাতেবী রহ. বলেন, বিদআতপন্থীর গুনাহ একটির মধ্যে সীমিত থাকে না। বরং বিভিন্ন দিকে শাখা বিস্তার করে। যেমন-
১। বিদআতী ব্যক্তি ইজতিহাদের দাবীদার হয় বা কারো তাকলীদ করে।
২। বিদআতপন্থী হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার মানসে বিদআত প্রবর্তন করে। যথা মান-সম্মান, ধন-দৌলত, ধর্ম, বুদ্ধি অথবা অন্য কোন স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে।
৩। বিদআতপন্থী স্বীয় কর্মকান্ড প্রকাশ্যে অথবা গোপনে করে।
৪। স্বীয় বিদআতের দিকে মানুষকে আহবান করে আবার কখনও করে না।
৫। সে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের বহির্ভূত গণ্য হবে বা হবে না।
৬। সেটা মৌলিক বিদআত অথবা আপেক্ষিক বিদআত হবে।
৭। বিদআতটি স্পস্ট হবে অথবা অস্পস্ট হবে।
৮। বিদআতটি কুফরী হবে বা হবে না।
৯। বিদআতটি একাধিকবার করা হবে বা হবে না।
তিনি (ইমাম শাতেবী) বলেন, এ সকল দিক তথা কারণগুলোর ভিন্নতার ফলে গুনাহও বিভিন্ন ধরণের হয়।[5] তিনি আরো বলেন, এ সকল কারণে কোন কোন বিদআত হারাম আবার কোনটি মাকরূহ। তবে পথভ্রষ্ট করার ক্ষেত্রে সবগুলো একই পর্যায়ের।
গুনাহের দিকে লক্ষ্য করে বিদআত তিন ভাগে বিভক্ত।
১মঃ সুষ্পষ্ট কুফরী,
২য়ঃ কবীরা গুনাহ,
৩য়ঃ সগীরা গুনাহ।[6]
যে সকল বিদআত সগীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত তার জন্য কয়েকটি শর্ত আছে।
১। এটা সর্বদা করা যাবে না। কেননা সর্বদা করার ফলে তা কবীরা গুনাহ হয়ে যাবে।
২। বিদআতের দিকে মানুষকে আহবান না করা। কেননা এর ফলে উক্ত বিদআতী কাজ বৃদ্ধি পেয়ে কবীরা গুনাহ হয়ে যাবে।
৩। মানুষ জমায়েতের স্থানে এবং যেখানে সুন্নাত আমল আদায় করা হয় সেখানে বিদআতটি পালন না করা।
৪। বিদআতকে ছোট ও তুচ্ছ মনে না করা। কেননা এর ফলে গুনাহকে ছোট করে দেখা হয়। আর গুনাহকে ছোট করে দেখাও কবিরা গুনাহ।
এ তিন প্রকারের সব গুলোকেই গোমরাহী বলা হয়েছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল বিদআতকে গোমরাহী বা পথভ্রষ্টতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। ফলে এ হাদীস কুফর ও পাপাচারমূলক সকল বিদআতকেই অন্তর্ভুক্ত করবে, চাই তা ছোট হোক বা বড়।
কিছু সংখ্যক উলামায়ে কেরাম শরীয়তের আহকামের দিকে লক্ষ্য করে বিদআতকেও পাঁচ ভাগে বিভক্ত করেন। যথাঃ
১. ওয়াজিব, ২. হারাম, ৩. মানদুব, ৪. মাকরূহ ও ৫. মুবাহ।
কিন্তু বিদআতের এ প্রকারভেদ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বানীঃ فَإنَّ كُلَّ مُحْدَثَة بدْعَةٌ وَ كُلَّ بدْعَة ضَلالَة. (أبوداود) এর পরিপন্থী।[7]
ইমাম শাতেবী রহ. প্রকারভেদগুলো বর্ণনা করার পর তা খন্ডন করে বলেন, এ প্রকারভেদও নবসৃষ্ট, কারণ শরীয়তে এর কোন দলিল নেই।
বিদআতের মৌলীকত্ব হল, তার পক্ষে শরয়ী কোন দলিল, বর্ণনা ও নীতিমালা না থাকা। যদি শরীয়তে তা ওয়াজিব, সুন্নাত, মুবাহ হওয়ার কোন দলিল থাকে তাহলে তা বিদআত হবে না। বরং তা শরীয়ত কর্তৃক আদিষ্ট বা অনুমোদিত আমলের অন্তর্ভুক্ত হবে। অতএব বিদআত ও শরীয়তের দলিল সম্পন্ন আমল এক হতে পারে না। আর যা মাকরুহ ও হারাম তা পুরোপুরিই বিদআত।[8]
[2] বুখারী : ২৬৯৭ ও মুসলিম : ১৭১৮
[3] মুসলিম : ১৭১৮
[4] কিতাবুত তাওহীদ -ড.সালেহ ফাওযান : ৮২পৃ:
[5] আল-ইতিসাম- শাতেবী (র) : ১/২১৬-২২৪পৃ:
[6] আল-ইতিসাম- শাতেবী (র) : ২/৫১৬-৫১৭পৃ:
[7] . আবু দাউদ-৪৬০৭
[8]. আল-ইতিসাম- শাতেবী ১/২৪৬