আল্লাহ তা‘আলার কিতাব ও রসূলের সুন্নাতে মুমিনদেরকে বন্ধু বানানোর বেশ কিছু লক্ষণ বর্ণনা করেছে। তার মধ্যে
(১) কাফেরদের দেশ পরিত্যাগ করে মুসলিমদের দেশে হিজরত করা। কাফেরদের দেশ থেকে মুসলিমদের দেশে দীন নিয়ে পলায়ন করাকে হিজরত বলা হয়। এ উদ্দেশ্যে হিজরত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় হওয়া পর্যন্ত হিজরত ওয়াজিব থাকবে। যেসব মুসলিম কাফেরদের মাঝে বসবাস করে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের থেকে দায়মুক্ত হয়েছেন। সুতরাং কাফেরদের দেশে মুসলিমদের বসবাস করা হারাম। তবে সেখান থেকে যদি হিজরত করার ক্ষমতা না রাখে কিংবা সেখানে বসবাস করার মধ্যে কোনো দীনি কল্যাণ থাকে, যেমন আল্লাহর দিকে মানুষকে দাওয়াত দেয়া ও ইসলাম প্রচার করা, তাহলে সে কথা ভিন্ন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ الَّذِينَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ ظَالِمِي أَنْفُسِهِمْ قَالُوا فِيمَ كُنْتُمْ قَالُوا كُنَّا مُسْتَضْعَفِينَ فِي الْأَرْضِ قَالُوا أَلَمْ تَكُنْ أَرْضُ اللَّهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوا فِيهَا فَأُولَئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَسَاءَتْ مَصِيرًا (97) إِلَّا الْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ لَا يَسْتَطِيعُونَ حِيلَةً وَلَا يَهْتَدُونَ سَبِيلًا (98) فَأُولَئِكَ عَسَى اللَّهُ أَنْ يَعْفُوَ عَنْهُمْ وَكَانَ اللَّهُ عَفُوًّا غَفُورًا﴾
‘‘যারা নিজেদের উপর যুলুম করে, তাদের প্রাণ হরণের সময় ফেরেশতাগণ বলে, তোমরা কী অবস্থায় ছিলে? তারা বলে, দুনিয়ায় আমরা অসহায় ছিলাম। তারা বলে, তোমরা নিজ দেশ ত্যাগ করে অন্য দেশে বসবাস করতে পারতে, আল্লাহর যমীন কি এমন প্রশস্ত ছিল না? এদের বাসস্থান হলো জাহান্নাম। আর তা কতই না নিকৃষ্ট বাসস্থান। তবে যেসব পুরুষ, নারী ও শিশু কোনো উপায় অবলম্বন করতে পারে না এবং কোনো পথও পায় না তাদের কথা ভিন্ন। আল্লাহ হয়ত তাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ মার্জনাকারী পরম ক্ষমাশীল’’। (সূরা আন-নিসা: ৯৭-৯৯)
(২) মুসলিমগণ তাদের দীন ও দুনিয়ার যেসব বিষয়ে সাহায্য-সহযোগিতার প্রতি মুখাপেক্ষী হয়, তাদেরকে জান-মাল ও জবান দিয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করা আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ۚ أُولَٰئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ﴾
‘‘মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, এরা সবাই পরস্পরের বন্ধু। এরা ভালো কাজের হুকুম দেয় এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তার রসূলের আনুগত্য করে’’। (সূরা তাওবা: ৭১)আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آوَوا وَّنَصَرُوا أُولَٰئِكَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يُهَاجِرُوا مَا لَكُم مِّن وَلَايَتِهِم مِّن شَيْءٍ حَتَّىٰ يُهَاجِرُوا ۚ وَإِنِ اسْتَنصَرُوكُمْ فِي الدِّينِ فَعَلَيْكُمُ النَّصْرُ إِلَّا عَلَىٰ قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُم مِّيثَاقٌ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ﴾
‘‘যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে নিজের জানমালের ঝুঁকি নিয়ে জিহাদ করেছে আর যারা হিজরাতকারীদেরকে আশ্রয় দিয়েছে ও সাহায্য করেছে, আসলে তারাই পরস্পরের বন্ধু ও অভিভাবক। আর যারা ঈমান এনেছে ঠিকই, কিন্তু হিজরত করেনি, তারা হিজরত করে না আসা পর্যন্ত তাদের সাথে তোমাদের বন্ধুত্ব ও অভিভাবকত্বের কোন সম্পর্ক নেই। তবে হ্যাঁ দীনের ব্যাপারে যদি তারা তোমাদের কাছে সাহায্য চায় তাহলে তাদেরকে সাহায্য করা তোমাদের জন্য ফরয। কিন্তু এমন কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয় যাদের সাথে তোমাদের চুক্তি রয়েছে। তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তা দেখেন’’। (সূরা আনফাল: ৭২)
(৩) মুসলিমদের ব্যথায় ব্যথিত হওয়া এবং তাদের আনন্দে আনন্দিত হওয়া। তিনি আরো বলেন,
«تَرَى الْمُؤْمِنِينَ فِي تَرَاحُمِهِمْ وَتَوَادِّهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ كَمَثَلِ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى عُضْوٌ تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ جَسَدِهِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى» (بخارى:6011)
‘‘পরস্পরের প্রতি দয়া-মায়া ও ভালোবাসা প্রদর্শনে এবং পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার ক্ষেত্রে তুমি মমিনদেরকে একটি দেহের মত দেখতে পাবে। দেহের কোনো অঙ্গ অসুস্থ হলে গোটা দেহ অনিদ্রা এবং জ্বরে তার শরীক হয়ে যায়’’।[1] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّ الْمُؤْمِنَ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا وَشَبَّكَ أَصَابِعَهُ»
‘‘এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য প্রাচীর সদৃশ। তারা একে অপরকে শক্তিশালী করে। এই বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাতের আঙুল অপর হাতের আঙ্গুলের ফাঁকা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিলেন’’।[2]
(৪) মুসলিমদের কল্যাণ কামনা করা, তাদের ভালো কিছু ভালোবাসা, তাদেরকে ধোঁকা না দেয়া এবং তাদের সাথে কোনো প্রকার প্রতারণার আশ্রয় না নেয়া। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,
«لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ». (بخارى:13)
‘‘তোমাদের কেউ ততোক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত মুমিন হতে পারবেনা যতক্ষণ না সে তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে যা নিজের জন্য পছন্দ করে’’।[3]
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,
«الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يَخْذُلُهُ وَلَا يَحْقِرُهُ التَّقْوَى هَاهُنَا وَيُشِيرُ إِلَى صَدْرِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنْ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ»
‘‘এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। সে তার ভাইয়ের উপর যুলুম করতে পারে না, তাকে পরিত্যাগ করতে পারে না এবং তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে পারে না। তাকওয়া হলো এখানে। এ কথা বলে তিনি তিনবার তার বক্ষদেশের দিকে ইঙ্গিত করলেন। কোনো ব্যক্তি নিকৃষ্ট চরিত্রবান হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে অপদস্ত ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে। একজন মুসলিমের জান, মাল ও সম্মানসহ সবকিছুই অন্য মুসলিমের উপর হারাম’’।[4]
আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,
«لا تَبَاغَضُوا، وَلا تَحَاسَدُوا، وَلا تَدَابَرُوا، وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا، وَلا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ». (بخارى:6065)
‘‘তোমরা একে অপরের প্রতি ঘৃণা পোষণ করো না। পরস্পর হিংসা করবে না এবং একে অন্যের অসাক্ষাতে নিন্দা করবে না। আর তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে যাও। কোনো মুসলমানের পক্ষে তার মুসলিম ভাইকে তিন দিনের অধিক সময় বর্জন করা বৈধ নয়।[5]
(৫) মুসলিমদেরকে বন্ধু বানানোর আরেকটি লক্ষণ হলো তারা তাদেরকে সম্মান করবে, তাদের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করবে এবং তাদের মানহানি করবে না ও তাদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰ أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَىٰ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ ۖ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ ۖ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ ۚ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُولَٰئِكَ ﴿هُمُ الظَّالِمُونَ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ﴾
‘‘হে ঈমানদারগণ, পুরুষরা যেন অন্য পুরুষদের বিদ্রুপ না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। আর মহিলারাও যেন অন্য মহিলাদের বিদ্রুপ না করে। হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অপরকে বিদ্রুপ করো না এবং পরস্পরকে খারাপ নামে ডেকো না। ঈমান গ্রহণের পর কাউকে ফাসেক নামে ডাকা অত্যন্ত জঘণ্য ব্যাপার। যারা এ আচরণ পরিত্যাগ করেনি তারাই যালেম। হে ঈমানদারগণ, বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোনো কোনো ধারণা ও অনুমান গুনাহ। অন্যের দোষ অন্বেষণ করো না। আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে। তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে তার মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়া পছন্দ করবে? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু’’। (সূরা হুজুরাত: ১১-১২)
(৬) মুসলিমদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করার আরেকটি লক্ষণ হলো অভাব-অনটন ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ এবং বিপদাপদ ও আরাম-আয়েশ সকল অবস্থায় তাদের সাথে থাকবে। তারা মুনাফেকদের বিপরীত। কেননা মুনাফেকরা সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও আরাম-আয়েশের সময় মুসলিমদের সাথে থাকে এবং বিপদাপদের সময় কেটে পড়ে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
﴿الَّذِينَ يَتَرَبَّصُونَ بِكُمْ فَإِنْ كَانَ لَكُمْ فَتْحٌ مِنَ اللَّهِ قَالُوا أَلَمْ نَكُنْ مَعَكُمْ وَإِنْ كَانَ لِلْكَافِرِينَ نَصِيبٌ قَالُوا أَلَمْ نَسْتَحْوِذْ عَلَيْكُمْ وَنَمْنَعْكُمْ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ﴾
‘‘যারা তোমাদের (শুভাশুভ পরিণতির) প্রতীক্ষায় থাকে, তাদের অবস্থা হলো আল্লাহর অনুগ্রহে তোমাদের বিজয় হলে তারা বলে, আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না? আর যদি কাফেরদের আংশিক বিজয় হয়, তাহলে তারা কাফেরদেরকে বলে আমরা কি তোমাদের উপর জয়ী ছিলাম না এবং বিশ্বাসীদের থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করিনি? অতএব আল্লাহই কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে বিচার-মীমাংশা করবেন’’। (সূরা নিসা: ১৪১)
(৭) মুসলিমদের সাথে সাক্ষাত করা, ভালোবাসা, বিনিময়ের জন্য পরস্পর মিলিত হওয়া এবং তাদের সাথে একত্রিত হওয়া।
হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, «وجبت محبتي للمتزاورين فيّ» ‘‘আমার সন্তুষ্টির জন্য পরস্পর সাক্ষাতকারীদের প্রতি আমার ভালোবাসা আবশ্যক হয়ে গেছে। অন্য হাদীছে এসেছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«أَنَّ رَجُلًا زَارَ أَخًا لَهُ فِي قَرْيَةٍ أُخْرَى فَأَرْصَدَ اللَّهُ لَهُ عَلَى مَدْرَجَتِهِ مَلَكًا فَلَمَّا أَتَى عَلَيْهِ قَالَ أَيْنَ تُرِيدُ قَالَ أُرِيدُ أَخًا لِي فِي هَذِهِ الْقَرْيَةِ قَالَ هَلْ لَكَ عَلَيْهِ مِنْ نِعْمَةٍ تَرُبُّهَا قَالَ لَا غَيْرَ أَنِّي أَحْبَبْتُهُ فِي اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ قَالَ فَإِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكَ بِأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَبَّكَ كَمَا أَحْبَبْتَهُ فِيهِ»
‘‘জনৈক লোক তার এক ভাইয়ের সাক্ষাতে অন্য একটি গ্রামের উদ্দেশ্যে বের হলো। আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য রাস্তায় একজন ফেরেশতা বসিয়ে রাখলেন। লোকটি যখন ফেরেশতার নিকট আসলো, তখন তিনি বললেন, কোথায় যাও? সে বললো, আমি এ গ্রামে আমার একজন ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত করতে যাচ্ছি। ফেরেশতা বললেন, তার কাছে তোমার এমন কোনো সম্পদ আছে কি, যার খোজ-খবর নিতে ও ঠিকঠাক করতে যাচ্ছো? সে বললো, না তবে আমি তাকে আল্লাহ তা‘আলার জন্য ভালোবাসি। ফেরেশতা তখন বললো, আমি আল্লাহর পক্ষ হতে দূত হিসাবে এসেছি এ খবর দেয়ার জন্য যে, তুমি যেমন তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসো, সেরকমই আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসেন’’।[6]
(৮) মুসলিমদের অধিকারসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। কোনো মুসিলম তার মুসলিম ভাইদের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় করবে না, তাদের দরদামের উপর দরদাম করবেনা এবং তাদের প্রস্তাবের প্রস্তাব করবে না। এমনি যেসব হালাল ও বৈধ বিষয়ের প্রতি মুসলিমগণ অগ্রগামী হয়েছে তার পথে বাধা সৃষ্টি করবে না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«وَلا يَبِيعُ الرَّجُلُ عَلَى بَيْعِ أَخِيهِ، وَلا يَخْطُبُ عَلَى خِطْبَةِ أَخِيهِ» (بخارى: 2140)
‘‘কেউ যেন তার ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় না করে এবং কেউ যেন তার ভাইয়ের প্রস্তাবের প্রস্তাব না করে’’।[7] অন্য বর্ণনায় আছে, কেউ যেন তার ভাইয়ের দামাদামির উপর দামাদামি না করে’’।
(৯) মুসলিমদের দুর্বলদের প্রতি দয়া করা। যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«لَيْسَ مِنَّا مَنْ يُوَقِّرْ كَبِيرَنَا وَلَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا»
‘‘যে ব্যক্তি আমাদের বড়দেরকে সম্মান করে না এবং ছোটদের প্রতি রহম করে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়’’।[8]
তিনি আরো বলেছেন,«هَلْ تُنْصَرُونَ وَتُرْزَقُونَ إِلاَّ بِضُعَفَائِكُمْ» ‘‘তোমাদের দুর্বল ও অসহায়দের কারণেই তোমরা রিযিক ও সাহায্য প্রাপ্ত হয়ে থাকো’’। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَلا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطاً﴾
‘‘তুমি নিজেকে তাদের সঙ্গে রাখো, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে আহবান করে। তারা তার সন্তুষ্টি চায়। তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের দিক থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না। আর তুমি তার অনুসরণ করো না, যারা অন্তরকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি। সে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে’’। (সূরা কাহাফ: ২৮)
(১০) মুসলিমদেরকে অভিভাবক ও বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করার অন্যতম লক্ষণ হলো, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দু‘আ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَاعْلَمْ أَنَّهُ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ﴾
‘‘জেনে রেখো, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন সত্য মাবুদ নেই। অতঃপর ক্ষমা প্রার্থনা করো তোমার গুনাহর জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য’’। (সূরা মুহাম্মাদ: ১৯) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ﴾
‘‘তারা বলে, ‘‘হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে এবং আমাদের পূর্বে যারা ঈমান এনেছে, তাদেরকে ক্ষমা করো। আর ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না’’। (সূরা হাশর: ১০)
[1]. সহীহ বুখারী, হা/ ৬০১১।
[2]. সহীহ বুখারী, হা/ ৪৮১।
[3]. সহীহ বুখারী, হা/ ১৩।
[4]. সহীহ বুখারী, হা/ ২৪৪২, সহীহ মুসলিম ২৫৬৪।
[5]. সহীহ বুখারী, হা/ ৬০৬৫।
[6]. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং- ৪৬৫৬।
[7]. সহীহ আল-বুখারী, হাদীছ নং- ২১৪০।
[8]. তিরমিযী, হাদীছ নং- ১৯২১।