اساليب القرأن في الدعوة إلى توحيد الألوهية - তাওহীদুল উলুহীয়ার দিকে দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে কুরআনের পদ্ধতি

ফিতরাত বা সৃষ্টিগত স্বভাবের দাবি ও সৃষ্টিজগতের নিদর্শনাবলী দেখেই মানুষ যখন তাওহীদুর রুবুবীয়াতের স্বীকৃতি প্রদান করেছে, আর শুধু স্বীকৃতি প্রদানই যেহেতু আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের জন্য যথেষ্ট নয় এবং স্বীকৃতি প্রদান কাউকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচাবে না, তাই রসূলগণ তাওহীদুল উলুহীয়াতের দিকে দাওয়াত দেয়ার উপরে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে সর্বশেষ ও সর্বোত্তম রসূল আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিষয়টির উপর সবেচেয়ে বেশী গুরুত্ব প্রদান করেছেন। তিনি মানুষকে لاإله إلا الله বলার দাবি জানাতেন। এর দাবি হলো একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা এবং তিনি ছাড়া অন্যের ইবাদত বর্জন করা। লোকেরা তার কথা শুনে দূরে চলে যেতো। তারা বলেছিল,

﴿أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهاً وَاحِداً إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ﴾

‘‘সে কি বহু মাবুদকে এক মাবুদে পরিণত করে দিয়েছে? নিশ্চয় এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার! (সূরা সোয়াদ: ৫)

তারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দাওয়াত থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে এবং তাদেরকে মূর্তিপূজার উপর ছেড়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। এই জন্য তারা সকল প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কখনো তারা লোভ দেখিয়েছে আবার কখনো ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেছে। তিনি বলতেন আল্লাহর কসম! তারা যদি আমার ডান হাতে সূর্য এবং বাম হাতে চন্দ্র এনে দেয় এবং এর বিনিময়ে আমাকে এ দীনের দাওয়াত ছেড়ে দিতে বলে, তাতেও আমি সম্মত হবো না। আল্লাহ তা‘আলা এ দীনকে বিজয়ী না করা পর্যন্ত অথবা আমরণ আমি এ দাওয়াত চালিয়ে যাবো।

তাওহীদের প্রতি দাওয়াত দেয়ার আদেশসহ এবং মুশরিকদের সন্দেহগুলোর প্রতিবাদে কুরআনের আয়াতগুলো তার উপর নাযিল হতো। তাতে তাদের দীনের অসারতা প্রমাণের জন্য দলীল-প্রমাণও কায়েম করা হতো। তাওহীদুল উলুহীয়াতের দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে কুরআনে অনেক পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্য থেকে আমরা এখানে কয়েকটি পদ্ধতি উল্লেখ করবো:

    আল্লাহ তা‘আলা একমাত্র তার ইবাদত করা এবং তাকে বাদ দিয়ে অন্যের ইবাদত বর্জন করার আদেশ দিয়েছে।

সূরা আন নিসার ৩৬ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا﴾

‘‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। আর তার সাথে অন্য কিছুকে শরীক করো না’’।


আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,  

﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ (২১) الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا وَالسَّمَاءَ بِنَاءً وَأَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَكُمْ فَلَا تَجْعَلُوا لِلَّهِ أَنْدَادًا وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ﴾

‘‘হে মানব জাতি। ইবাদাত করো তোমাদের রবের, যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্বে যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন, এভাবেই তোমরা নিষ্কৃতি লাভের আশা করতে পারো। তিনিই তোমাদের জন্য মাটিকে বিছানা স্বরূপ বিছিয়েছেন, আকাশকে ছাদ স্বরূপ করেছেন, আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন এবং তার সাহায্যে সব রকমের ফসলাদি উৎপন্ন করে তোমাদের আহার যুগিয়েছেন। অতএব জেনে-বুঝে তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে সমকক্ষ নির্ধারণ করো না’’। (সূরা আল বাকারা: ২১-২২)

(২) কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি জিন-ইনসানকে একমাত্র তার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ﴾

‘‘আমি জিন এবং মানুষকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি’’। (সূরা যারিয়াত: ৫৬)।

 (৩) কুরআন সংবাদ দিয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত রসূলকে একমাত্র তার দিকে দাওয়াত দেয়ার জন্য এবং তাকে ছাড়া অন্যের ইবাদত করতে নিষেধ করার জন্য পাঠিয়েছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ﴾

‘‘আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রসূল পাঠিয়েছি। তার মাধ্যমে এ নির্দেশ দিয়েছি যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, আর তাগুতকে বর্জন করো’’। (সূরা আন নাহাল: ৩৬)

(৪) তিনিই একমাত্র রব, স্রষ্টা এবং ব্যবস্থাপক বলে সংবাদ দেয়ার মাধ্যমে তাওহীদুল উলুহীয়ার উপর দলীল পেশ করেছেন। যেমন একটু পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ﴾

‘‘হে মানব জাতি। ইবাদাত করো তোমাদের রবের, যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্বে যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন’’ (সূরা আল বাকারা:২১)।

 

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَمِنْ آيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُلَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ﴾

‘‘রাত-দিন এবং চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহর নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। সূর্য ও চাঁদকে সিজদা করো না, সে আল্লাহকে সিজদা করো যিনি তাদের সৃষ্টি করেছেন, যদি সত্যিই তোমরা তার ইবাদতকারী হয়ে থাকো’’। (সূরা হামীম সাজদা: ৩৭) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿أَفَمَن يَخْلُقُ كَمَن لَّا يَخْلُقُ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ﴾

 ‘‘যে সৃষ্টি করেন এবং যে কিছুই সৃষ্টি করে না তারা উভয় কি সমান? তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না?’’ (সূরা আন নাহাল: ১৭)

(৫) তিনিই একমাত্র পূর্ণ গুণ দ্বারা বিশেষিত হওয়া এবং মুশরিকদের মাবুদদের মধ্য থেকে সেটা নাকোচ করার মাধ্যমে তার ইবাদত আবশ্যক হওয়ার দলীল প্রদান করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿رَّبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهِ هَلْ تَعْلَمُ لَهُ سَمِيًّا﴾

‘‘তিনি আসমান ও যমীন এবং এ দুয়ের মাঝখানের সবকিছুর রব। কাজেই তুমি তার ইবাদত করো এবং তার ইবাদতের উপর অবিচল থাকো। তোমার জানা মতে তার সমকক্ষ কোনো সত্তা আছে কি? (সূরা মারইয়াম: ৬৫)

আল্লাহ তা‘আলা সূরা আরাফের ১৮০ নং আয়াতে বলেন,

﴿وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾  

‘‘আল্লাহ তা‘আলার অনেকগুলো সুন্দরতম নাম রয়েছে। সুতরাং তাকে সেই নামেই ডাকো এবং তার নামসমূহের মধ্যে যারা বিকৃতি করে, তোমরা তাদেরকে বর্জন করো। তারা যা করে আসছে, তার ফল অবশ্যই তারা পাবে’’।

আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ব্যাপারে বলেন,

﴿إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ يَا أَبَتِ لِمَ تَعْبُدُ مَا لَا يَسْمَعُ وَلَا يُبْصِرُ وَلَا يُغْنِي عَنكَ شَيْئًا﴾

‘‘স্মরণ করো সেই সময়ের কথা যখন ইবরাহীম নিজের বাপকে বললো, আববাজান! আপনি কেন এমন জিনিষের ইবাদত করেন, যা শোনেও না দেখেও না এবং আপনার কোনো উপকারও করতে পারে না?’’ (সূরা মারইয়াম: ৪২)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴾ ﴿إِن تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوا دُعَاءَكُمْ

‘‘তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের ডাক শুনতে পারে না এবং শুনলেও তোমাদের কোনো জবাব দিতে পারে না’’। (সূরা ফাতির: ১৪)


আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَاتَّخَذَ قَوْمُ مُوسَىٰ مِن بَعْدِهِ مِنْ حُلِيِّهِمْ عِجْلًا جَسَدًا لَّهُ خُوَارٌ أَلَمْ يَرَوْا أَنَّهُ لَا يُكَلِّمُهُمْ وَلَا يَهْدِيهِمْ سَبِيلًا اتَّخَذُوهُ وَكَانُوا ظَالِمِينَ﴾

‘‘ মূসার অনুপস্থিতিতে তার জাতির লোকেরা নিজেদের অলংকার দিয়ে বাছুরের মূর্তি তৈরী করলো। তার মুখ দিয়ে গরুর মতো হাম্বা রব বের হতো। তারা কি দেখতে পেতো না যে, ঐ বাছুর তাদের সাথে কথা বলে না আর কোনো ব্যাপারে তাদেরকে পথ নির্দেশনাও দেয় না? কিন্তু এরপরও তাকে মাবুদে পরিণত করলো। বস্তুত তারা ছিল বড়ই যালেম’’। (সূরা আরাফ: ১৪৮)

(৬) মুশরিকদের মাবুদদের অক্ষমতা বর্ণনা করার মাধ্যমে নিজের তাওহীদের দলীল-প্রমাণ পেশ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَيُشْرِكُونَ مَا لَا يَخْلُقُ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ وَلَا يَسْتَطِيعُونَ لَهُمْ نَصْرًا وَلَا أَنْفُسَهُمْ يَنْصُرُونَ﴾

‘‘তারা কি আল্লাহর সাথে এমন সব বস্তুকে শরীক করে, যারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারেনা? বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট হয়। আর তারা না তাদেরকে কোনো রকম সাহায্য করতে পারে, না নিজেদের সাহায্য করতে পারে’’। (সূরা আরাফ: ১৯১-১৯২)

আল্লাহ তা‘আলা সূরা ইসরার ৫৬ নং আয়াতে বলেন,

﴿قُلِ ادْعُواْ الَّذِينَ زَعَمْتُم مِّن دُونِهِ فَلاَ يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنكُمْ وَلاَ تَحْوِيلاً﴾

‘‘বলো, আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তোমরা উপাস্য মনে করো, তারা তো তোমাদের কষ্ট দূর করার ক্ষমতা রাখেনা এবং তা পরিবর্তনও করতে পারে না’’।

আল্লাহ তা‘আলা সূরা নাহালের ৭৩ নং আয়াতে বলেন,

﴿وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَمْلِكُ لَهُمْ رِزْقًا مِّنَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ شَيْئًا وَلَا يَسْتَطِيعُونَ﴾

‘‘আর তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন সব বস্তুর পূজা করে যারা আসমান ও যমীন থেকে তাদের কিছু রিযিক দেবার ক্ষমতা রাখে না’’।

আল্লাহ তা‘আলা সূরা হজ্জের ৩৭ নং আয়াতে বলেন,

﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ لَن يَخْلُقُوا ذُبَاباً وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ وَإِن يَسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئاً لَّا يَسْتَنقِذُوهُ مِنْهُ ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ﴾

‘‘হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন; তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা করো, তারা কখনো একটি মাছি সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও তারা সকলে একত্রিত হয়। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু ছিনিয়ে নেয়, তবে তারা তার কাছ থেকে তা উদ্ধার করতে পারবে না। প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয়, উভয়েই অসহায়’’।

(৭) যেসব মুশরিক আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যসব বস্ত্তর ইবাদত করে, তাদেরকে তিনি মূর্খ বলে উল্লেখ করেছেন। ইবরাহীম খলীল আলাইহিস সালাম শিরকের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যা বলেছিলেন, তা উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قالَ أَفَتَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكُمْ شَيْئًا وَلَا يَضُرُّكُمْ أُفٍّ لَّكُمْ وَلِمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ أَفَلَا تَعْقِلُونَ﴾

‘‘ইবরাহীম বললো, তোমরা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমনসব জিনিসের পূজা করছো যারা তোমাদের না উপকার করতে পারে, আর না করতে পারে ক্ষতি? ধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব উপাস্যের তোমরা পূজা করছো তাদেরকে। তোমাদের কি বুদ্ধি নেই?’’ (সূরা আম্বীয়া: ৬৬-৬৭) ।

আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন,

    ﴿وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ مَنْ لَا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَائِهِمْ غَافِلُونَ وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوا لَهُمْ أَعْدَاءً وَكَانُوا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِينَ﴾

‘‘তার চেয়ে অধিক ভ্রান্ত আর কে হতে পারে, যে আল্লাহকে ছাড়া এমন কাউকে ডাকে, যে কিয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দিবেনা। তারা তো তাদের দু‘আ সম্পর্কে সম্পূর্ণ বেখবর। যখন মানুষকে হাশরে একত্রিত করা হবে, তখন তারা তাদের শত্রুতে পরিণত হবে এবং তাদের ইবাদত অস্বীকার করবে’’। (সূরা আহকাফ: ৫-৬)

(৮)  যেসব মুশরিক আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে অন্যের ইবাদত করে, তিনি তাদের শাস্তি বর্ণনা ও পরিণাম বর্ণনা করেছেন। তারা যাদের ইবাদত করে, তারাও তাদের পরিণতি ভোগ করবে। কিয়ামতের কঠিন ময়দানে এ মাবুদগুলো তাদের অনুসারীদের থেকে সম্পূর্ণ দায়মুক্তি ঘোষণা করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَوْ يَرَى الَّذِينَ ظَلَمُوا إِذْ يَرَوْنَ الْعَذَابَ أَنَّ الْقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا وَأَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعَذَابِ إِذْ تَبَرَّأَ الَّذِينَ اتُّبِعُوا مِنَ الَّذِينَ اتَّبَعُوا وَرَأَوُا الْعَذَابَ وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ الْأَسْبَابُ (১৬৬) وَقَالَ الَّذِينَ اتَّبَعُوا لَوْ أَنَّ لَنَا كَرَّةً فَنَتَبَرَّأَ مِنْهُمْ كَمَا تَبَرَّءُوا مِنَّا كَذَلِكَ يُرِيهِمُ اللَّهُ أَعْمَالَهُمْ حَسَرَاتٍ عَلَيْهِمْ وَمَا هُمْ بِخَارِجِينَ مِنَ النَّارِ﴾

‘‘যালেমরা যা কিছু অনুধাবন করার তা যদি আজ অনুধাবন করতো যে, সমস্ত শক্তি ও ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর অধীন এবং শাস্তি ব্যাপারে আল্লাহ অত্যন্ত কঠোর। যখন তিনি শাস্তি দেবেন তখন এ সমস্ত নেতা ও প্রধান ব্যক্তিরা, দুনিয়ায় যাদের অনুসরণ করা হতো, তাদের অনুগামীদের সাথে সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করতে থাকবে। কিন্তু শাস্তি তারা পাবেই এবং তাদের সমস্ত উপায়- উপকরণের ধারা ছিন্ন হয়ে যাবে। আর যেসব লোক দুনিয়ায় তাদের অনুসারী ছিল তারা বলতে থাকবে, হায়! যদি আমাদের আর একবার সুযোগ দেয়া হতো, তাহলে আজ এরা যেমন আমাদের সাথে সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করছে তেমনি আমরাও এদের সাথে সম্পর্কহীন হয়ে যেতাম। এরা যে সমস্ত কাজ করছে সেগুলো আল্লাহ তাদের সামনে এমনভাবে উপস্থিত করবেন যাতে তারা কেবল আক্ষেপই করতে থাকবে কিন্তু জাহান্নামের আগুন থেকে তারা বের হতে পারবেনা। (সূরা আল বাকারা: ১৬৫-১৬৭)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُونَ بِشِرْكِكُمْ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيرٍ﴾

‘‘কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শিরক অস্বীকার করবে। বসত্মুত আল্লাহর ন্যায় তোমাকে কেউ অবহিত করতে পারবে না’’। (সূরা ফাতির: ১৩-১৪)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ مَنْ لَا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَائِهِمْ غَافِلُونَ وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوا لَهُمْ أَعْدَاءً وَكَانُوا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِينَ﴾

‘‘তার চেয়ে অধিক ভ্রান্ত আর কে হতে পারে, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ছাড়া এমন কাউকে ডাকে, যে কিয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দিবেনা। তারা তো তাদের দু‘আ সম্পর্কে সম্পূর্ণ বেখবর। যখন মানুষকে হাশরে একত্রিত করা হবে, তখন তারা তাদের শত্রুতে পরিণত হবে এবং তাদের ইবাদত অস্বীকার করবে’’। (সূরা আহকাফ: ৫-৬)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا ثُمَّ يَقُولُ لِلْمَلَائِكَةِ أَهَؤُلَاءِ إِيَّاكُمْ كَانُوا يَعْبُدُونَ (৪০) قَالُوا سُبْحَانَكَ أَنْتَ وَلِيُّنَا مِنْ دُونِهِمْ بَلْ كَانُوا يَعْبُدُونَ الْجِنَّ أَكْثَرُهُمْ بِهِمْ مُؤْمِنُونَ﴾

‘‘যেদিন তিনি তাদের সবাইকে একত্রিত করবেন এবং ফেরেশতাদেরকে বলবেন, এরা কি তোমাদেরই পূজা করত? ফেরেশতারা বলবে, আপনি পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত আপনিই আমাদের বন্ধু; বরং তারা জিনের পূজা করত। তাদের অধিকাংশই ছিল তাদের প্রতি বিশ্বাসী’’। (সূরা সাবা: ৪০-৪১)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَإِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَهَيْنِ مِنْ دُونِ اللَّهِ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أَقُولَ مَا لَيْسَ لِي بِحَقٍّ إِنْ كُنْتُ قُلْتُهُ فَقَدْ عَلِمْتَهُ تَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِي وَلَا أَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِكَ إِنَّكَ أَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ﴾

‘‘যখন আল্লাহ বলবেন, হে ঈসা ইবনে মারইয়াম! তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে যে, আল্লাহকে ছেড়ে আমাকে ও আমার মাতাকে উপাস্য হিসাবে গ্রহণ করো? ঈসা বলবেন, আপনি পবিত্র। আমার জন্যে শোভা পায় না যে, আমি এমন কথা বলি, যা বলার কোনো অধিকার আমার নেই। যদি আমি বলে থাকি, তবে তুমি অবশ্যই পরিজ্ঞাত; তুমি তো আমার মনের কথাও জান এবং আমি জানি না যা তোমার মনের মধ্যে রয়েছে। নিশ্চয় তুমি অদৃশ্য বিষয়ে পরিজ্ঞাত’’। (সূরা মায়িদা: ১১৬)

(৯) মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলা ও তাদের মধ্যে যে মধ্যস্থতাকারী ও সুপারিশকারী নির্ধারণ করেছিল আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিবাদ করেছেন। তাদের প্রতিবাদ এভাবে করা হয়েছে যে, শাফা‘আতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো কাছে শাফা‘আত চাওয়া যাবে না। আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি ছাড়া কেউ তার নিকট শাফা‘আত করতে পারবে না। সে সঙ্গে যার জন্য সুপারিশ করা হবে তার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি থাকা অপরিহার্য।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿أَمِ اتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ شُفَعَاءَ قُلْ أَوَلَوْ كَانُوا لَا يَمْلِكُونَ شَيْئًا وَلَا يَعْقِلُونَ قُل لِّلَّهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيعًا﴾

‘‘তবে কি ওরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে সুপারিশকারী বানিয়ে রেখেছে? বলো, তাদের কোনো ক্ষমতা যদি নাও থাকে এবং তারা কিছু না বুঝলেও কি সুপারিশ করবে? বলো, সমস্ত শাফা‘আত কেবল আল্লাহরই মালিকানাধীন’’। (সূরা যুমার: ৪৩-৪৪)

আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেছেন,

﴿مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ﴾

‘‘তার অনুমতি ব্যতীত তার নিকট কে শাফা‘আত করতে পারে?’’ (সূরা আল বাকারা: ২৫৫)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَكَمْ مِنْ مَلَكٍ فِي السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا مِنْ بَعْدِ أَنْ يَأْذَنَ اللَّهُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَرْضَى﴾

‘‘আকাশমণ্ডলে এমন অনেক ফেরেশতা রয়েছেন, যাদের শাফা‘আত কোনো কাজেই আসবে না, তবে আল্লাহ নিজ ইচ্ছায় যাকে খুশী তার জন্য সুপারিশ করার অনুমতি দিলে সে কথা ভিন্ন। (সূরা আন নাজম: ২৬)

আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতগুলোতে বর্ণনা করেছেন যে, শাফা‘আত একমাত্র তারই মালিকানাধীন। সেটা তার নিকটেই চাইতে হবে। শাফা‘আতকারীকে সুপারিশের অনুমতি দেয়ার আগে এবং যার জন্য শাফা‘আত করা হবে, তার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি না থাকলে সেটা অর্জিত হওয়া সম্ভব নয়।

(১০) তাওহীদের প্রতি দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে কুরআনুল কারীমের আরেকটি পদ্ধতি হলো, আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন যে, তাকে বাদ দিয়ে যেসব মাবুদের ইবাদত করা হচ্ছে কোনভাবেই এসব মাবুদ তাদের অনুসারীদের উপকার করতে পারবে না। সুতরাং যে তার অনুসারীর উপকার করতে পারে না, সে উপাস্য হওয়ার যোগ্য নয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَمَا لَهُمْ فِيهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَمَا لَهُ مِنْهُمْ مِنْ ظَهِيرٍ وَلَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ﴾

    হে নবী! বলো, আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তোমরা উপাস্য মনে করো, তাদেরকে আহবান করো। তারা নভোম-ল ও ভূমণ্ডলের অণু পরিমাণ বস্তুরও মালিক নয়, এতে তাদের কোনো অংশও নেই এবং তাদের কেউ আল্লাহর সহায়কও নয়। যার জন্য অনুমতি দেয়া হয়, সে ব্যতীত আল্লাহর কাছে অন্য কারো সুপারিশ ফলপ্রসু হবে না। (সূরা সাবা: ২২)

(১১) তার মধ্য থেকে আরেকটি পদ্ধতি হলো, আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে এমন অনেক দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন, যার দ্বারা মুশরিকদের শিরক বাতিল হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যায়। যেমন  আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ﴾

‘‘এবং যে কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করল; সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়লো, অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে দূরবর্তী কোনো স্থানে নিক্ষেপ করল’’। (সূরা আল হজ: ৩১)

উচ্চতা, প্রশস্ততা এবং মান-মর্যাদার দিক থেকে আল্লাহ তা‘আলা এখানে তাওহীদকে আসমানের সাথে তুলনা করেছেন এবং তাওহীদ বর্জনকারীকে আসমান থেকে যমীনের সর্বনিমণস্তরে নিপতিত ব্যক্তির সাথে তুলনা করেছেন। কেননা সে ঈমানের শীর্ষস্থান থেকে কুফরীর সর্বনিমণস্তরে পড়ে গেছে। যে শয়তান তাকে শিরকের দিকে নিয়ে যায়, তাকে এমন পাখির সাথে তুলনা করা হয়েছে, যে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। তার যে প্রবৃত্তি তাকে সত্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে সেটাকে ঐ বাতাসের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যা তাকে দূরবর্তী কোনো স্থানে নিক্ষেপ করে। শিরকের অসারতা এবং দুনিয়া ও আখিরাতে মুশরিকদের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ব্যাপারে কুরআনে যেসব দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হয়েছে তা থেকে এটি অন্যতম।[1]

তাওহীদুল উলুহীয়াতের দাওয়াত দিতে গিয়ে এবং শিরকের অসারতা বর্ণনায় কুরআনুল কারীম যেসব দৃষ্টান্ত ও উপমা পেশ করেছে, তার মধ্য থেকে আমরা এখানে যা উল্লেখ করলাম, তা খুবই অপ্রতুল। মুসলিমদের উচিত চিন্তা-গবেষণার সাথে কুরআন পড়া। তাতেই সে অনেক কল্যাণ, সন্তোষজনক দলীল এবং এমন উজ্জ্বল প্রমাণাদি খুঁজে পাবে, যা মুমিনের অন্তরে তাওহীদের বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করবে এবং তা থেকে শিরকের সকল সন্দেহের মূলোৎপাটন করবে। ইনশা-আল্লাহ।


[1] . শির্কের অসারতা ও মুশরিকদের মূর্খতা এবং দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আরো কয়েকটি দৃষ্টান্ত নিম্নে উল্লেখ করা হলো। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَنْ يَخْلُقُوا ذُبَابًا وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ وَإِنْ يَسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئًا لَا يَسْتَنْقِذُوهُ مِنْهُ ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ﴾

‘‘হে লোক সকল! একটি উপমা দেয়া হচ্ছে, মনোযোগ দিয়ে শোনো, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব উপাস্যকে তোমরা ডাকো তারা সবাই মিলে একটি মাছি সৃষ্টি করতে চাইলেও করতে পারবে না। বরং মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোনো জিনিস ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাহলে তারা তা ছাড়িয়েও নিতে পারবে না। সাহায্য প্রার্থীও দুর্বল এবং যার কাছে সাহায্য চাওয়া হচ্ছে সেও দুর্বল। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا عَبْدًا مَمْلُوكًا لَا يَقْدِرُ عَلَى شَيْءٍ وَمَنْ رَزَقْنَاهُ مِنَّا رِزْقًا حَسَنًا فَهُوَ يُنْفِقُ مِنْهُ سِرًّا وَجَهْرًا هَلْ يَسْتَوُونَ الْحَمْدُ لِلَّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ (75) وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا رَجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا أَبْكَمُ لَا يَقْدِرُ عَلَى شَيْءٍ وَهُوَ كَلٌّ عَلَى مَوْلَاهُ أَيْنَمَا يُوَجِّهْهُ لَا يَأْتِ بِخَيْرٍ هَلْ يَسْتَوِي هُوَ وَمَنْ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَهُوَ عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ﴾

‘‘আল্লাহ একটি উপমা দিচ্ছেন, একজন গোলাম, যে অন্যের অধিকারভুক্ত এবং নিজেও কোনো ক্ষমতা রাখে না। দ্বিতীয়জন এমন এক ব্যক্তি যাকে আমি নিজের পক্ষ থেকে ভালো রিযিক দান করেছি এবং সে তা থেকে প্রকাশ্যে ও গোপনে খরচ করে। বলো, এরা দু’জন কি সমান? আলহামদু লিল্লাহ, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। আল্লাহ আরেকটি উপমা দিচ্ছেন। দুজন লোক, একজন বধির ও বোবা, কোনো কাজ করতে পারে না। নিজের প্রভুর ঘাড়ে বোঝা হয়ে চেপে আছে। যে দিকেই তাকে পাঠায় সে ভালো কিছু নিয়ে আসতে পারে না। দ্বিতীয়জন ইনসাফের হুকুম দেয় এবং নিজে সত্য সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত আছে। বলো, এরা দু’জন কি সমান?’’ (সূরা নাহাল: ৭৬) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ مَا يَمْلِكُونَ مِنْ قِطْمِيرٍ (13) إِنْ تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوا دُعَاءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوا مَا اسْتَجَابُوا لَكُمْ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُونَ بِشِرْكِكُمْ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيرٍ﴾

তাকে বাদ দিয়ে অন্য যাদেরকে তোমরা ডাকছো তারা তো একটি খেজুরের বীচির উপরের পাতলা পর্দার অধিকারীও নয়। তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের ডাক শুনতে পারে না এবং শুনলেও তোমাদের কোনো জবাব দিতে পারে না এবং কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শিরক অস্বীকার করবে। প্রকৃত অবস্থান এমন সঠিক খবর একজন সর্বজ্ঞ ছাড়া কেউ তোমাদের দিতে পারে না’’। (সূরা ফাতির: ১২-১৩) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ عِبَادٌ أَمْثَالُكُمْ فَادْعُوهُمْ فَلْيَسْتَجِيبُوا لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ﴾

‘‘তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাকো তারা তো তোমাদের মতই বান্দা। তাদের কাছে দু‘আ করে দেখো, তাদের সম্পর্কে তোমাদের ধারণা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে তারা তোমাদের আহবানে সাড়া দিক’’। (সূরা আরাফ: ১৯৪)

﴿مَثَلُ الَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِ اللَّهِ أَوْلِيَاءَ كَمَثَلِ الْعَنْكَبُوتِ اتَّخَذَتْ بَيْتًا وَإِنَّ أَوْهَنَ الْبُيُوتِ لَبَيْتُ الْعَنْكَبُوتِ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ﴾

‘‘যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করে, তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সা, যে ঘর তৈরী করে। আর ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো সবচেয়ে দুর্বল। যদি তারা জানতে পারতো’’। (সূরা আনকাবুত: ৪১)