শায়েখ ড. সলিহ ইবনে ফাওযান ইবনে আব্দুল্লাহ আল ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ আল কাসীম অঞ্চলের বুরায়দাহ শহরের নিকটবর্তী শামাসীয়ার অধিবাসী। তিনি ১লা রজব ১৩৫৪ হিজরী মোতাবেক ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসের ২৮ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালেই তার পিতা ইনতিকাল করেন। অতঃপর তিনি ইয়াতীম অবস্থায় স্বীয় পরিবারে প্রতিপালিত হন। শহরের মাসজিদের ইমামের নিকট তিনি কুরআনুল কারীম, কিরাআতের মূলনীতি এবং লেখা শিখেন।

১৩৬৯ হিজরীতে শামাসীয়ায় সরকারী মাদরাসা চালু করা হলে তিনি সেখানে ভর্তি হন। অতঃপর ১৩৭১ হিজরী সালে বুরায়দা শহরস্থ ফয়সালিয়া ইবতেদায়ী মাদরাসা হতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর ১৩৭৩ হিজরী সালে বুরায়দায় ইসলামিক ইন্সটিটিউট খোলা হলে তিনি সেখানে ভর্তি হন। ১৩৭৩ হিজরী সালে এখান থেকে শিক্ষা সমাপ্ত করে রিয়াদ শহরস্থ কুল্লিয়া শারঈয়া কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি ১৩৮১ হিজরী সালে শিক্ষা সমাপনী ডিগ্রি লাভ করেন। অতঃপর তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে ইসলামী ফিকহের উপর মাস্টার্স সম্পন্ন করেন এবং একই বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবন

শারঈয়াহ কলেজে ভর্তি হওয়ার পূর্বে ১৩৭২ হিজরীতে ইবতেদায়ী মাদরাসায় শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। শারঈয়া কলেজ থেকে ডিগ্রি অর্জন করার পর তিনি রিয়াদস্থ ইসলামিক ইন্সটিটিউটে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরে তাকে শারঈয়াহ কলেজের শিক্ষক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। অতঃপর তাকে ইসলামী আক্বীদা বিভাগের উচ্চতর শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। পরে তাকে বিচার বিষয়ক উচ্চতর প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। অতঃপর তাকে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধানের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের মেয়াদ শেষে পুনরায় শিক্ষকতা পেশায় ফিরে আসেন।

পরে তাকে ইসলামী গবেষণা ও ফতোয়া বিভাগের স্থায়ী কমিটির সদস্য নিয়োগ করা হয়। তিনি আরো যেসব সরকারী দায়িত্ব পালন করেন, তার মধ্যে هَيْئَةُ كِبَارِ الْعُلَمَاءِ এর সদস্য। মক্কা মুকার্রামায় অবস্থিত রাবেতার পরিচালনাধীন ইসলামী ফিকহ একাডেমির সদস্য, ইসলামী গবেষণা ও ফাতওয়া বিভাগের স্থায়ী কমিটির সদস্য। হাজ্জ মওসুমে দাঈদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সদস্য।

রিয়াদ শহরের মালায এলাকার আমীর মুতইব ইবনে আব্দুল আযীয আল-সউদ জামে মাসজিদের ইমাম, খতীব ও শিক্ষক।

তিনি সৌদি আরব রেডিওতে نُوْرٌ عَلَى الدَّرْب নামক প্রোগ্রামে শ্রোতাদের প্রশ্নের নিয়মিত উত্তর প্রদান করেন। এ ছাড়াও তিনি পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি, গবেষণা, অধ্যয়ন, পুস্তিকা রচনা, ফতোয়া প্রদান করাসহ বিভিন্নভাবে ইলম চর্চা অব্যাহত রেখেছেন। এগুলো একত্র করে কতিপয় পুস্তকও রচনা করা হয়েছে। তিনি মাস্টার্স ও ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনার্থী অনেক ছাত্রের গবেষণা কর্মে তত্ত্বাবধান করেন।

শায়েখের উস্তাদবৃন্দ

শায়েখ হাফিযাহুল্লাহ অনেক আলিম ও বিচারকের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছেন। তন্মধ্যে-

(১) শায়েখ আব্দুল্লাহ ইবনে বায (রহ.) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইবনে বায (রহ.) শায়েখকে বিশেষ সম্মান করতেন। পুনঃনিরীক্ষণের জন্য তার নিকট কিতাবাদী প্রেরণ করতেন।

(২) আব্দুল্লাহ ইবনে হুমাইদ (রহ.) বুরায়দস্থ আল মা‘হাদুল ইলমীতে অধ্যয়ন রত অবস্থায় নিয়মিত তার ক্লাসে উপস্থিত হতেন।

(৩) শায়েখ মুহাম্মাদ আল আমীন আশ-শানকীতী (রহ.)।

(৪) শায়েখ আব্দুর রায্যাক আফীফী (রহ.)।

(৫) শায়েখ হামূদ ইবনে সুলাইমান আত-তালাল হাফিযাহুল্লাহ। যিনি তার গ্রামের মসজিদের ইমাম ছিলেন। তিনি ক্বাছিম অঞ্চলের দ্বারিয়্যাহ শহরে বিচারক হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন।

(৬) ইবরাহীম ইবনে দ্বাইফুল্লাহ আল-ইউসুফ শামাসিয়াহর মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন।

তার গ্রন্থসমূহ

০১. আত-তাহক্বীক্বাত আল-মারদ্বিয়াহ ফিল মাবাহিছ আল-ফারদ্বিয়াহ ফিল মাওয়ারিছ (এটি তার মাস্টার্সের থিসিস)।

০২. আহকামুল আত‘ইমাহ ফিশ-শারীআহ আল-ইসলামিয়াহ (এটি তার পি এইচ ডি থিসিস)।

০৩. শারহুল আকীদা আল-ওয়াসিত্বীয়াহ।[1]

০৪. আল-বায়ান ফিমা আখত্বআ ফিহি বা‘দ্বুল কুত্তাব (২ খণ্ড)।

০৫. মাজমু‘ মুহাদ্বারাত ফিল আকীদা ওয়া আদ-দাওয়াহ (৪ খণ্ড)।

০৬. আল-খুত্বাব আল-মিমবারিয়্যাহ ফিল মুনাসাবাত আল আছরিয়াহ (৬খণ্ড)।

০৭. মিন আ‘লাম আল-মুজাদ্দিদীন ফিল ইসলাম।

০৮. মাবাহিছু ফিক্বহিয়াহ ফি মাওয়াদ্বি‘ মুখতালিফাহ।

০৯. মাজমু‘ ফাতাওয়া ফিল আকীদা ওয়াল ফিক্বহ (৫ খণ্ড)।

১০. নাকবদু কিতাব আল-হালালি ওয়াল হারামি ফিল ইসলাম, ইউসুফ আল-ক্বারযাবীর মত খণ্ডন।

১১. আল-মুলাখ্খাস ফী শারহি কিতাব আত-তাওহিদ লিশ-শায়েখ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব।

১২. ইআ‘নাহ আল মুসতাফীদ শারহু কিতাব আত-তাওহীদ (২ খণ্ড)।

১৩. আত-তা‘ক্বীব আলা মা যাকারাহু আল-খত্বীব ফী হাক্কি আশ-শায়েখ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব।

১৪. আল-মুলাখখাস আল ফিক্বহ (২ খণ্ড)।

১৫. ইতহাফু আহলিল ঈমান বিদুরূসি শাহরি রামাদ্বান।

১৬. আদ্ব-দ্বিয়া উল লামিউ মাআল আহাদিছ আল কুদসিয়াহ আল-জাওয়ামি।

১৭. বায়ানু মা ইয়াফআলু আল হাজ্জু ওয়াল মু’তামির।

১৮. কিতাবু আক্বীদাতিত তাওহীদ (মাধ্যমিক শ্রেণির পাঠ্য-তালিকাভুক্ত)।

১৯. মাজাল্লাতুত দাওয়া হতে প্রকাশিত ফাতাওয়া ও প্রবন্ধ সমগ্র।

২০. দুরূসুম মিনাল কুরআনিল কারীম।

২১. আল-আজউইবাতুল মুফীদাহ আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ (যা আমাদের সামনে রয়েছে)।

এছাড়াও তার আরো গ্রন্থ রয়েছে, যা প্রকাশিতব্য।

যুবকদেরকে বাতিল মানহাজসমূহ থেকে সতর্ক করা ও সহীহ মানহাজের প্রতি দিক-নির্দেশনা প্রদানের ক্ষেত্রে তার বিশাল অবদান বিদ্যমান। তার মাধ্যমে বিদাতী ও পথভ্রষ্টরা পরাভূত হয়েছে এবং অনেক মানুষ হিদায়াত পেয়েছে। আল্লাহ তাকে আমাদের ও সকল মুসলিমের পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। তার আমলসমূহ একনিষ্ঠ আমল হিসাবে কবুল করে কিয়ামাতের দিন ছাওয়াবের পাল্লায় যোগ করুন।

দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার পরিবার ও সকল সাথীবর্গের উপর।


জামাল ইবনে ফুরাইহান আল-হারিসী
শায়খের একজন ছাত্র
আল আজউইবাতুল মুফিদাহ আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ
আল্লাহর নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি।

[1]. মাকতাবাতুস সুন্নাহ কর্তৃক প্রকাশিত।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে