প্রশ্ন-১০০ : কতিপয় ব্যক্তি ইবনু হাজার আল আসক্বলানী, ইমাম নববী, ইবনু হাযম, ইমাম শাওকানী, বাইহাকী (রহ.) প্রমুখ ইমামকেও বিদাতী আখ্যা দেয়। তাদের এ কাজ কী সহীহ?

উত্তর : উল্লেখিত ইমামগণ (রহ.) দের অনেক মর্যাদা-ফযীলত, প্রচুর ইলম, জনকল্যাণে অবদান, সুন্নাহর সংরÿণে ইজতিহাদ-গবেষণা এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদি বিদ্যমান; যা তাদের দোষত্রুটি ঢেকে রাখার জন্য যথেষ্ট।

ছাত্রদের প্রতি আমার উপদেশ হলো, তারা যেন এহেন গর্হিত কাজে জড়িয়ে না পড়ে। কেননা এটা হারাম। এর দ্বারা ইলম থেকে মাহরুম হবে।

আর যেই বা ইমামগণের ব্যাপারে এহেন অপবাদ আরোপে মাশগুল হবে সে ইলম অর্জন থেকে বঞ্চিত হবে। প্রকৃতপক্ষক্ষ সে তো ফিতনা সৃষ্টি ও জনগণের মাঝে দ্বন্দ্ব লাগানোতেই লিপ্ত হয়।[1]

আমরা সকলকে ইলম অর্জন করার উপদেশ দিই। আমরা তাদেরকে উপদেশ দিই ইলম অর্জনের প্রতি আগ্রহী হতে এবং সকল প্রকার অহেতুক ও অনুপকারী কাজ থেকে বিরত থাকতে।

আল্লামা নববী, ইবনু হাযম, ইবনু হাজার, ইমাম শাওকানী ও বায়হাকী (রহ.) প্রমুখ তারা ইসলামের বড় বড় ইমাম। বিদ্বানগণের নিকট তারা গ্রহণযোগ্য। তাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রয়েছে-মুসলিম উম্মাহ যে গ্রন্থগুলোকে তথ্যসূত্র হিসেবে গ্রহণ করে। তাদের এ সকল খিদমাত তাদের ভুলত্রুটি ঢেকে রাখার জন্য যথেষ্ট।

আর তোমার অবস্থা কী, হে মিসকীন, তোমার নিকট কী রয়েছে? হে ঐ ব্যক্তি, যে কিনা ইবনু হাজার, ইবনু হাযম ও তাদের সাথে উল্লেখিত ব্যক্তিদ্বয়ের গোয়েন্দাগিরি ও দোষ-ত্রুটি অন্বেষণে লিপ্ত, তুমি মুসলিম উম্মাহকে কী দ্বারা উপকৃত করেছ?

তুমি কতটুকু ইলম অর্জন করেছ, ইবনু হাজার ও ইমাম নববী (রহ.) যতটুকু জানতেন তুমি কী সে পরিমাণ জানো?

ইবনু হাযম ও ইমাম বায়হাকী (রহ.) উম্মাহকে যতটুকু উপহার দিয়েছে তুমি তার কতটুকু দিতে সক্ষম হয়েছো?

সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ এ বান্দাদের প্রতি রহম করুন যাতে তারা নিজেদের সক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারে।  তোমার ইলম হ্রাস পেয়েছে ফলে তুমি এরকম ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য করছ এবং তোমার তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি কমে গেছে ফলে তুমি যাচ্ছে তা-ই বলছ।


[1]. বর্তমানে একটা দল গজিয়েছে; যারা নিজেদেরকে সালাফী বলে দাবি করে। অথচ প্রকৃতপক্ষে সালাফিয়্যাহর (সালাফী মানহাজের) সাথে তাদের দূরতমও কোন সম্পর্ক নাই উদাহরণত এদের নেতাদের মধ্যে মাহমুদ হাদ্দাদের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। তার সম্পর্কে আলোচনা ইতোপূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। তাদের মিশনই হয়ে দাঁড়িয়েছে বড় বড় বিদগ্ধ আলিম এবং মুহাক্কিক মুহাদ্দিছগণের ভুল-ত্রুটি তদন্ত করা।

হ্যাঁ, ইবনু হাজার ও ইমাম নববী (রহ.) আশ‘আরী মতবাদে পতিত হয়েছিলেন। আলিমগণ তাদের সে ভুলের ব্যাপারে উম্মাহকে সতর্ক করেছেন। ফাতহুল বারীতে ইমাম ইবনে বায (রহ.) এর লিখিত  সর্বজন জ্ঞাত, প্রসিদ্ধ টীকা-টিপ্পনী এ বিষয়ের উজ্জ্বল প্রমাণ বহণ করে। আমরা তাদের এসকল ভুল-ত্রুটিকে দুর্নাম করার ও কুৎসা রটানো ক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করব না। তাদের নিন্দাবাদ করার জন্য মাজলিস স্থাপন করব না। কেননা তাদের দাওয়াত বিদআতের প্রতি ছিল না। বরং তারা সুন্নাহকে সাহায্য করেছেন এবং দলীল সহ মাসআলা-মাসাইল বিশ্লেষণ করেছেন। সুতরাং তাদেরকে বিদআতের প্রতি আহবানকারী, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সালাফে সালেহীনের মানহাজ বিরোধীদের সাথে তুলনা করা যেতে পারে না। যদিও আমরা বলেছি যা ইতোপূর্বে এই কিতাবে অতিক্রান্ত হয়েছে ও সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ভুল এবং বিরুদ্ধাচরণের ব্যাপারে মৌনতা অবলম্বন করা যাবে না। বরং আমরা পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী বর্ণনা করব। এতদ্বসত্ত্বেও বিদাতী যদি ইসলামের গণ্ডীতে সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে তার প্রতি দয়া প্রদর্শন করা জায়েয। তার থেকে মানা করার ব্যাপারে কোন দলীল নাই।

আলিমগণ ইবনু হাজার আল আসকলানী (রহ.) দের ফাতহুল বারী এবং ইমাম নাবাবী রহিমাহুল্লার শারহু মুসলিমের উচ্ছবসিত প্রশংসা করেছে। উল্লেখিত গ্রন্থদ্বয় আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামাতের নিকট গ্রহণযোগ্য। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত তাদের সঠিক কথাগুলো গ্রহণ করে। তাদের গ্রন্থে বিশুদ্ধতার সংখ্যাই বেশি। আর তাদের ভুল-ভ্রান্তিগুলোকে পরিহার করে।

শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব (রহ.) এর পুত্র শায়খ আব্দুল্লাহ (রহ.) বলেন, ‘‘আমরা কিতাবুল্লাহ অনুধাবন করার ক্ষেত্রে গ্রহণ যোগ্য তাফসীর গ্রন্থাবলির সাহায্য গ্রহণ করি এবং হাদীছ অনুধাবন করার ক্ষেত্রে হাদীছ শাস্ত্রে বিদগ্ধ পণ্ডিত গনের সাহায্য গ্রহণ করি। যেমন সহীহ বুখারী অনুধাবন করার জন্য আল্লামা আসকলানী এবং কসত্বলানী (রহ.) দের উপর এবং মুসলিম অনুধাবন করার জন্য ইমাম নববী (রহ.) এর সাহায্য নিয়ে থাকি।

তিনি আরো বলেন, ইমাম নববী কতই না চমৎকার ভাবে কিতাবুল আযকার সংকলন করেছেন! (আদ দুরার আস সুন্নিয়া খ. ০১ পৃ. ১২৭, ১৩৩)।

সালাফী মুহাদ্দিছ আল্লামা শায়খ নাছীরুদ্দীন আলবানী (রহ.) বলেন, ইমাম নববী, ইবনু হাজার আল আসকলানী এবং তাদের মত অন্যান্য ইমামগণকে বিদাতী বলা যুলুমের অন্তর্ভুক্ত। আমার জানা মতে তারা আশ‘আরী আকীদার অনুসারী ছিলেন। কিন্তু তারা কখনও কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রসূলিল্লাহর বিরোধিতা করেননি। তারা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত আশ‘আরী আকীদার ব্যাপারে সংশয়ে পতিত হয়েছিলেন। তারা দু‘ধরণের ধারণা করেছিলেন।

প্রথমত : ইমাম আশ‘আরী ঐ কথা বলেছেন অথচ বাস্তবে ইমাম আশ‘আরী তার প্রাচীন মতে বলে থাকলেও পরে তা ফিরিয়ে নিয়েছেন।

দ্বিতীয়ত : তারা সঠিক মনে করেছেন অথচ প্রকৃতপক্ষে তা সঠিক ছিল না। (‘কে কাফির এবং কে বিদাতী’নামক ক্যাসেট থেকে সংকলিত।)

যদি অভিযোগ উত্থাপন করা হয় যে, কেন ইবনু হাজার আল আসকলানী এবং ইমাম নববী (রহ.) এর তাবীল বা ব্যাখ্যার ওযর গ্রহণ করা হচ্ছে অথচ সাইয়্যিদ কুতুব, হাসানুল বান্না, মওদুদী প্রমুখের ওযর গ্রহণ করা হচ্ছে না? তাহলে দু‘ভাবে এর উত্তর প্রদান করা যেতে পারে।

(এক) উল্লেখিত শ্রেণিদ্বয়ের মাঝে বিরাট ফারাক বিদ্যমান।

ইমাম নববী ও আল্লামা ইবনু হাজার আল আসকলানী (রহ.) গণের নিকট রয়েছে ইলমের ভা-ার এবং মুসলিম জাতির কল্যাণ। তাদের ভুল-ভ্রান্তি-দোষ-ত্রুটিকে গোপন রাখা হয় না। আহলুল ইলম বা ইসলামী বিদ্বানগণ সেগুলো উল্লেখ করে আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। সুতরাং এই সতর্কীকরণ দ্বারা এর ক্ষতিকর দিক দূরীভূত হয়েছে।

‘‘সাইয়্যিদ কুতুব, হাসানুল বান্না’’ প্রমুখের অবস্থান হলো ইমাম নববী, ইমাম ইবনু হাজার আস কলানী (রহ.) তা‘আলা ও অন্যান্য বড় বড় ইমামগণের তুলনায় তাদের ইলম আমল মুসলিমদের কল্যাণ কিছুই নাই।

(দ্বিতীয়) ইমাম নববী এবং ইবনু হাজার (রহ.) তাদের ভুল ত্রুটির পথে কাউকে দাওয়াত প্রদান করেন নি। তারা আহবান করেননি মোটেও দলাদলি, সমাজকে কাফির বলা, রাফিযী শী‘আ, খ্রিষ্টান, অগ্নিপূজক এবং বিভিন্ন ভ্রষ্ট নামীয় দলের সাথে ঐক্য গড়ে থাকে। তাদের ভুল-ত্রুটির দ্বারা সমাজের কোন ক্ষতি সাধিত হয়নি। সাইয়্যিদ কত্বুব (রহ.),বান্না প্রমুখ এর বিপরীত। তারা বাতিল আকীদা বরং কাফিরী আকীদার মাঝে কোন পার্থক্য করে না। তারা রাফিযী, খ্রিষ্টান এবং মুসলিমদের মাঝে কোন পার্থক্য করে না।তারা মুসলিমদের ক্ষতিসাধন করেছে কোন উপকার করেনি। অনেক ব্যক্তি তাদের কুরআন সুন্নাহ বিরোধী মতামতকে অন্ধের মত গ্রহণ করে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সাথে শত্রুতা শুরু করেছে। এটাই তাদের সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতি ও নিকৃষ্ট অবচেয়ে অবদান।

শেষ কথা : আছে কি কেউ ইবনু হাজার এবং ইমাম নববীর রহিমহুল্লাহর কিতাবাদির প্রয়োজন যার নাই।