উত্তর : মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের ভিত্তি হলো-
(ক) আকীদা বিশুদ্ধ করণ: আকীদা যেন শিরকমুক্ত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
{ وَإِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُونِ }
তোমাদের এই দীন তো একই দীন। আর আমি তোমাদের রব, অতএব তোমরা আমার তাকবওয়া অবলম্বন কর। (সূরা আল মু’মিনুন আয়াত নং ৫২)
বিশুদ্ধ আকীদা আন্তরিক ভালোবাসার সৃষ্টি করে, এবং হিংসা বিদ্বেষ বিদূরিত করে। পক্ষান্তরে আকীদা ও মা’বুদ ভিন্ন ভিন্ন হলে হিংসা বিদ্বেষ ও শক্রতা ছড়িয়ে পড়ে। কেননা প্রত্যেক আকীদা বিশ্বাস ও মা’বুদের অনুসারীরা নিজেদের আকীদা ও মা‘বুদ সমূহকে সত্য-সঠিক এবং বাকিগুলোকে বাতিল মনে করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
{ أَأَرْبَابٌ مُتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ }
বহু সংখ্যক ভিন্ন ভিন্ন রব ভাল নাকি মহা পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? (সূরা ইউসুফ আয়াত ৩৯)
আকীদা গত মতানৈক্য মতপার্থক্য ও মতবিরোধের কারণেই জাহিলী যুগের আরব সমাজ বিক্ষিপ্ত ও মর্যাদাহীন দুর্বল জাতি ছিল। এরপর তারাই যখন ইসলামে প্রবেশ করে তাদের আকীদা সংশোধন করলো তারা ঐক্যমতে উপনীত হলো এবং এক অভিন্ন দেশের নাগরিকে পরিণত হলো।
(খ) মুসলিম নেতার নির্দেশ শ্রবণ ও মান্য করণ।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
أوصيكم بتقوى الله، والسمع والطاعة، إن أُمِّر عليكم عبد حبشي؛ فإنه من يعش منكم فسيرى اختلافاً كثيراً
আমি তোমাদেরকে তাক্বওয়া অর্জন করা এবং তোমাদের জন্য কোন হাবশী গোলামকেও নেতা নিয়োগ দেয়া হলে তার নির্দেশ শ্রবণ করা ও আনুগত্য করার ওছীয়ত করছি। কেননা তোমরা যারা বেঁচে থাকবে তারা অচিরেই অনেক মতানৈক্য লক্ষ্য করবে।[1]
শাসকদের পাপাচারকে কেন্দ্র করে অনেক মতানৈক্য হয়ে থাকে।
(গ) মতানৈক্য ও মতবিরোধের মূল্যেৎপাটনের জন্য কুরআন-সুন্নাহর প্রতি প্রত্যাবর্তন করণ। আল্লাহ আ‘আলা বলেন,
{ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً }
অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করো যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর। (সূরা আন নিসা ৫৯)
সুতরাং কোন ব্যক্তির মতামত বা অভ্যাসের দিকে প্রত্যাবর্তন করা যাবে না।
(ঘ) গোত্র বা সমাজের সদস্যদের মাঝে মতানৈক্য মতবিরোধ সৃষ্টি হলে তা সংশোধন করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
{ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ }
সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং পরস্পরের মধ্যকার অবস্থা সংশোধন করে নাও। (সূরা আল আনফাল ১)
(ঙ) দেশদ্রোহী ও খারিজীদেরকে হত্যা করা: যদি তারা সশস্ত্র হয় এবং মুসলিমদের মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করতে চায় অথবা মুসলিম সমাজে ভাঙন সৃষ্টি করতে চায় তাহলে তাদেরকে হত্যা করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
{ فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي }
অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে যে দলটি বাড়াবাড়ি করবে, তার বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করো। (সূরা আল হুজুরাত আয়াত নং ৯)
এজন্যই আমীরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি ত্বলিব (রা.) দেশদ্রোহী ও খারিজীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তার উক্ত কাজকে মহৎ কাজ বলে গণ্য করা হয়।
[1]. সহীহ: আবু দাউদ ৪৬০৭, তিরমিযী ২৭৭৬ হাকিম ১/৯৬