উত্তর : আমি মুসলিমদের জন্য বিশেষত এদেশবাসী মুসলিমদের জন্য মঙ্গল, কল্যাণ ও সম্প্রীতি-সঙ্গতিকেই ভালোবাসি।
আমি আল্লাহর উপর কারো পরিশুদ্ধতা বর্ণনা করছি না। আল-হামদুলিল্লাহ আমাদের সমাজ সবচেয়ে উত্তম সমাজ। ওয়া লিল্লাহিল হামদ, শাসকবর্গ, আলিমগণ এবং প্রজাবর্গ সর্বদিক থেকেই এদেশ উত্তম। আমরা বলছি না যে, তারা কামিল বা পরিপূর্ণ। তবে ইনসাফের দাবি হলো আমরা আমাদের প্রতি আল্লাহর রহমাতকে অস্বীকার করব না। কেননা তা অকৃতজ্ঞতার অন্তর্ভুক্ত। ওয়া লিল্লাহিল হামদ, আমাদের আলিমগণ ও শাসকগণ হক পথে রয়েছেন। তারা সমাজতন্ত্র, পুণর্জাগরণ, ইসলাম বিরোধী মানহাজ সমূহের অনুসারী নন। তাদের আকীদা যাবতীয় শিরক থেকে মুক্ত এবং তাওহীদের ভিত্তিতে ইসলামে দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাদের আকীদা হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদা। ওয়া লিল্লাহিল হামদ, তাদের আকীদা শিরক মুক্ত। তারা শারঈ হাদ্দ বা দ-বিধি বাস্তবায়ন করেন। সৎকাজের নির্দেশ প্রদান করেন এবং অসৎকাজ থেকে বারণ করেন। তারা কিতাবুল্লাহ দ্বারা বিচার কার্য সম্পাদন করেন। প্রত্যেক গৃহ, প্রত্যেক গ্রাম এবং প্রত্যেক শহরে শারঈ বিচারালয় স্থাপন করেন; যেথায় জনগণ আল্লাহর শা‘রীআহ অনুযায়ী বিচার গ্রহণ করে থাকে।
ভুল-ত্রুটি রয়েছে, তবে এর চেয়ে কল্যাণের পাল্লাই ভারি। সুতরাং আমাদের উপর ওয়াজিব হলো তাদের জন্য নছীহত প্রদান করা, তাদের তাওফিকব ও হিদায়াতের জন্য দু‘আ করা, গোপনে তাদেরকে উপদেশ প্রদান করা ও তাদের নিকট হক পৌছানো।
আমরা কি চাই যে এ সমাজ ভেঙ্গে যাক? এ সমাজে হানা-হানি ছড়িয়ে পড়ুক? আমরা কি চাই এ সমাজের শান্তি-শৃঙখলা হারিয়ে যাক? আমরা কি চাই জনগণ তার জান-মাল, ধন-সম্পদ, স্ত্রী-পরিবারের ব্যাপারে নিরাপত্তাহীনতায় পতিত হোক? আমরা কি এই নিয়ামতরাজীর বিলুপ্তি কামনা করি?
হে আল্লাহর বান্দারা আল্লাহকে ভয় করুন। তাক্বওয়া অর্জন করুন। ভ্রষ্ট দাঈরা যারা বিশৃঙখলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ছুতো খুঁজে বেড়ায় তাদের ধোঁকায় পতিত হবেন না। যারা নিজেরা চালুনির মত ছিদ্রযুক্ত হয়েও সূচের ছিদ্রের সমালোচনা করে।
আমাদের উচিত আল্লাহকে ভয় করা। কেননা এটাই দীন, এটাই যিম্মাদারী; এ ব্যাপারে আল্লাহর সামনে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করা হলে তা বিনষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ
আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন। (সূরা ইবরাহীম আয়াত নং ০৭)
আপনারা এই দেশের সাথে অন্য দেশের পরিমাপ করে দেখুন। বিবেকের সাথে তুলনা করলে অন্য রাষ্ট্র ও এ রাষ্ট্রের মাঝের পার্থক্য আপনার সামনে উদ্ভাসিত হয়ে যাবে। আপনি বুঝতে পারবেন তাদের এই বিরোধিতার মূল কারণ কী।
এর কারণ হলো এই দেশ কল্যাণের উপর রয়েছে। ওয়া লিল্লাহিল হামদ। এই দেশ তো সেই দেশ যেথায় রয়েছে রয়েছে সহীহ ‘আকীদা, যেথায় কিতাবুল্লাহ দ্বারা বিচার ফায়ছালা করা হয়। যেথায় সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ বিদ্যমান। এগুলো মহা নিয়ামত। কোন কল্যাণকামী মুসলিমের জন্য এসকল নিয়ামতকে অস্বীকার করা বা না শুকরি করে বিশৃঙখলা সৃষ্টির লক্ষ্যে দোষ-ত্রুটি অন্বেষণে আত্মনিয়োগ করা শোভা পায় না।[1]
[1]. যারা এই তাওহীদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মুখ বেঁকিয়ে কথা বলে তারা কোথায়? পুরো পৃথিবীতে কি এ রাষ্ট্রের মত কোন রাষ্ট্র আছে কী?
তোমাদের ভাবী রাষ্ট্র কী সেই রাষ্ট্র যা ইবরাহীমী তরীকার স্মারক হিসেবে ইবরাহীমী গম্বুজ নির্মাণ করে? নাকি যার আধ্মাতিক নেতা বিভিন্ন ধর্মের সমন্বয়ে নতুন ধর্ম আবিষ্কারের জন্য আহবান করে? (ইতোমধ্যে তারা এরকম সমন্বিত ধর্মের উদ্ভব করেছে। কিন্তু তাওহীদী রাষ্ট্র তাদের সাথে যোগদান করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ) নাকি সেই রাষ্ট্র হবে আশ‘আরী-মাতুরিদী সুফী রাষ্ট্র?
তোমরা নিজেরাই কথা ও কাজে পরস্পর বিরোধিতায় লিপ্ত। তোমরা প্রশ্ন উত্থাপন করো যে ‘‘তোমরা কেন কাফির ও ধর্মনিরপেক্ষদেরকে ছেড়ে আহলে ইসলাম ও দাঈদের সমালোচনা করো?’’
দুইভাবে এ প্রশ্নের জওয়াব দেয়া যেতে পারে।
(ক) মুসলিমদের মধ্যে যারা কুরআন-সুন্নাহ ও সালাফে সালেহীনের মানহাজের বিরোধিতা করে একমাত্র তাদেরই মতামত খণ্ডণ করা হয়। আকীদা রক্ষা করার জন্য এহেন সমালোচনা করা ওয়াজিব।
(খ) প্রত্যেকের জন্য সকল বিষয়ের মতামত খণ্ডণ করা আবশ্যক নয়। প্রত্যেকেই তার শক্তি সামর্থ অনুযায়ী বিরুদ্ধাবাদীদের মতামত খণ্ডন করবে। কেউ ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের মতামত খণ্ডন করবে। কেউ কাফিরদের মতামত খণ্ডন করবে। এমনিভাবে একে অপরের সমন্বয়েই মুসলিমগণ পূর্ণতা লাভ করে। প্রত্যেকের শক্তি সামর্থ এক সমান নয়।
‘‘আপনারা কেন সাউদী রাষ্ট্রর প্রতিই বক্রাঙ্গুলি প্রদর্শন করছেন? আপনারা কি লক্ষপাত করছেন না যে আপনারাই অমঙ্গলের দরজা উন্মুক্ত করছেন?
তাওহীদী রাষ্টের ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও তাওহীদী রাষ্ট্রের পাশে দাঁড়ানো এবং আরোপিত অপবাদ ও সমস্যাবলি দূর করা ওয়াজিব। ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছেই সুতরাং আপনার উপর ওয়াজিব হলো কিতাবুল্লাহ-সুন্নাতে রসূলিল্লাহ এবং সালাফে সালেহীন ও বর্তমান যুগের উত্তম আলিমদের প্রদর্শিত শারঈ পন্থায় বা সংশোধন করবেন। কেউ মা‘ছুম বা নিষ্পাপ নয়। কাউকেই মা‘ছুম বলা যাবে না। বরং প্রত্যেকেই ত্রুটি-বিচ্যুতিকারী এবং প্রত্যেকেই মুযনিব বা পাপী, গুনাহগার।
আপনারা কতদিন পর্যন্ত এ সমাজকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাবেন? খারিজী রাষ্ট্র কায়িমের পূর্ব পর্যন্ত? নাকি সুফিবাদী শিরকী রাষ্ট্র কায়িমের মাধ্যমে? বাতিল বিষয়ে ঘুরপাক করার চেয়ে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা ওয়াজিব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَأَنِيبُوا إِلَى رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ
আর তোমরা তোমাদের রবের অভিমুখী হও এবং তোমাদের ওপর আযাব আসার পূর্বেই তার কাছে আত্মসমর্পণ কর। (সূরা যুমার আয়াত নং ৫৪) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
وَاتَّبِعُوا أَحْسَنَ مَا أُنْزِلَ == ... إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ
আর অনুসরণ কর উত্তম যা নাযিল করা হয়েছে -----তোমাদের রবের পক্ষ থেকে । (সূরা যুমার আয়াত নং ৫৫) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
إِلاَّ مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلاً صَالِحاً فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُوراً رَحِيماً
তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ( সূরা ফুরক্বান আয়াত নং ৭০) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لله أشد فرحاً بتوبة عبده، حين يتوب
কোন বান্দা তাওবাহ করলে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি খুশি হন। সহীহ মুসলিম হাদীছ নং ২৭৪৭।