প্রশ্ন-৭১ : মুসলিম উম্মাহ বর্তমানে দ্বীনী বিষয়ে বিশৃঙখলায় পতিত হয়েছে। দলাদলি, ফিরকাবাজী বৃদ্ধি পেয়েছে। আর প্রত্যেক ফিরকা ও দলই দাবি করছে যে, তাদের দল ও মানহাজই সহীহ ও অবশ্যপালনীয় মানহাজ। এ নিয়ে মুসলিমগণ বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে যে কোন দল হক এবং তারা কোন দলের অনুসারী হবেন?

উত্তর : দলাদলি দীন বহির্ভূত বিষয়। কেননা দীন আমাদেরকে তাওহীদের আকীদা ও ইত্তিবা'উর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভিত্তিতে একক জামাত ও অভিন্ন উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

إِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُونِ

নিশ্চয় তোমাদের এ জাতি তো একই জাতি। আর আমিই তোমাদের রব। অতএব তোমরা আমারই ‘ ইবাদত করো। (সূরা আম্বিয়াহ: ৯২)

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعاً وَلا تَفَرَّقُوا

 তোমরা একত্রভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো। (সূরা আলি ইমরান:১০৩)

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعاً لَسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ

নিশ্চয় যারা তাদের দীনকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোন ব্যাপারে তোমার দায়িত্ব নেই। তাদের বিষয়টি তো আল্লাহর নিকট। অতঃপর তারা যা করত, তিনি তাদেরকে সে বিষয়ে অবগত করবেন।( সূরাহ আল আনআম: ১৫৯)।

মতানৈক্য ও দল বিচ্ছিন্নতার বিষয়ে এই হলো শাস্তির হুমকি। সুতরাং আমাদের দীন হলো জামাত মহববত ও ঐক্যের দীন। দলাদলি ও বিচ্ছিন্নতা আমাদের দীনের অন্তর্গত নয়। দীন আমাদেরকে একক জামাতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

المؤمن للمؤمن كالبنيان يشد بعضه بعضاً

"এক মুমিন আরেক মুমিনের জন্য দেয়ালের গাঁথুনির ন্যায় যার একাংশ অপরাংশকে বেঁধে রাখে।[1]

সুতরাং আমাদের জন্য তাওহীদ ও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতী মানহাজের ভিত্তিতে দীন ইসলামের পথে ঐক্যবদ্ধ থাকা ওয়াজিব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

‘নিশ্চয়ই আমার সরল পথ এটাই। সুতরাং তোমরা এর অনুসরণ কর। এবং অন্যান্য পথের অনুসরণ কর না। তাহলে তা তোমাদেরকে তার পথ থেকে বিচ্যুত করে দিবে। এসব বিষয়ে তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ প্রদান করছেন। যেন তোমরা (ভ্রান্ত পথগুলি হতে) মুক্ত থাকো’।

বর্তমানের এই দল-জামাতগুলো ইসলাম কর্তৃক স্বীকৃত নয়। বরং ইসলাম দলাদলিকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে এবং তাওহীদের আকীদার ভিত্তিতে ঐক্যের উপর চলার নির্দেশ প্রদান করে।[2]


[1]. সহীহ বুখারী হা/২৩১৪।

[2]. বর্তমানের দলগুলোর মতে, তাওহীদের প্রতি দাওয়াত দেয়া, শিরক উৎখাত করা, কবরের মিনারগুলো ভেঙ্গে ফেলা, বিদ'আত এবং কুরআন সুন্নাহ বিরোধীদের মতামত খণ্ডন করা এর সবই দলাদলি! তাদের মতে এগুলো ঐক্য নয়। তারা কী জানে না যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন প্রেরিত হয়েছিলেন, তখন বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত ছিল। আল্লাহ তা‘আলা তাওহীদ দ্বারা তার নাবীর হাতে এই বিশৃঙ্খল জাতিকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করলেন। চিন্তা-ফিকিরে সক্ষম বিচক্ষণ লোকেরা কোথায়? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একইসাথে কী মানুষের মাঝে পার্থক্যকারী ছিলেন না? সহীহ বুখারীতে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহর সূত্রে বর্ণিত, মালাইকাদের ভাষায়, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের মাঝে পার্থক্যকারী। অর্থাৎ তিনি মুমিন ও কাফির এবং হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য নিরূপণ করেন। (হাদীছ নং ৬৮৫২)