প্রশ্ন-৩৭ : গ্রীষ্মকালীন কেন্দ্রসমূহে কিছু যুবক কথিত দ্বীনী অভিনয় ও ইসলামী সংগীতের আয়োজন করে থাকে, এগুলোর হুকুম কী?

উত্তর : অভিনয়[1] আমি জায়েয মনে করি না। প্রথমত এতে উপস্থিতদেরকে মজিয়ে রাখা হয়।[2] কেননা তারা অভিনেতার অভিনয় দেখে দেখে হাসে।[3]

অধিকাংশ অভিনয় দ্বারা উদ্দেশ্য শুধু বিনোদন দেওয়া ও উপস্থিত লোকদেরকে হতবুদ্ধি করে রাখা। এটা গেল একটা দিক।

দ্বিতীয় দিক হলো, যে লোকেরা অভিনয় করে তারা কেউ ইসলামের মর্যাদাবান ব্যক্তিদের চরিত্রে অভিনয় করে, এমনকি কখনো কখনো ছাহাবীদের চরিত্রেও অভিনয় করে। এভাবে অভিনয় করা তাদেরকে অমর্যাদা করার শামিল।[4]

তুমি অনুভব করো বা নাই করো শিশু-তরুণ অথবা অনুপযুক্ত দৃশ্য সম্বলিত ব্যক্তি মুসলিম আলিম অথবা ছাহাবী চরিত্রে অভিনয় করে। এভাবে অভিনয় করা জায়েয নয়। পাপাচারী অথবা নিন্দিত ব্যক্তি এই রকম চরিত্রায়ন করার দ্বারা ইসলামী ব্যক্তিদেরকে খাটো করা হয়।

যদি কেউ তোমার হাঁটা-চলা, কথা বলার ধরণ ইত্যাদি নিয়ে অভিনয় করে তাহলে তুমি কি তাতে সন্তুষ্ট হবে? নাকি মনে করবে যে তোমাকে খাটো-কটাক্ষ করা হচ্ছে। যদিও অভিনেতা এর দ্বারা দাবি করে যে তার উদ্দেশ্য ভালো। তবুও কোন ব্যক্তি বরদাশত করবে না যে কেউ তাকে কটাক্ষ করুক।

তৃতীয়ত : সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হলো অনেকে কাফিরের চরিত্রে অভিনয় করে যেমন আবু জাহল অথবা ফির‘আউন ইত্যাদি চরিত্র ধারণ করে। এর দ্বারা নাকি তাদের উদ্দেশ্য হলো কাফিরদের মতামত খণ্ডন করা এবং বর্ণনা করা যে, জাহিলিয়্যাত কেমন ছিল। এরকম অভিনয় করা তাদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করার নামান্তর। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুশরিক ও কাফিরদের সাদৃশ্য গ্রহণ করতে বারণ করেছেন।[5]

পোশাক-পরিচ্ছদে সাদৃশ্য গ্রহণ করা থেকে এবং কথা বার্তায় (তাদের রীতি) সাদৃশ্য গ্রহণ করা থেকে।

জ্ঞাতব্য : দাওয়াতের ক্ষেত্রে অভিনয়ের এই পদ্ধতি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সালাফে সালেহীন ও মুসলিমদের পদ্ধতি নয়।

এই অভিনয়গুলো মূলতঃ বিভিন্ন কাফিরদেশ থেকে অনুপ্রবেশ করেছে। আমাদের মাঝে ইসলামী দাওয়াতের নামে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিনয়কে ইসলামী দাওয়াতের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করা বিশুদ্ধ নয়। ওয়া লিল্লাহিল হামদ। দাওয়াতের পদ্ধতি সুনির্ধারিত এবং সে পদ্ধতি এ সকল পদ্ধতি থেকে সমৃদ্ধ ও অমুখাপেক্ষী।[6]

এ অভিনয় ছাড়াই বিভিন্ন যুগে দাওয়াতে সফলতা ছিল। কেন এ পদ্ধতি এসেছে? এ পদ্ধতি মানুষের কোনই উপকার করতে পারেনি যা বুঝাবে যে এটা কোন স্বতন্ত্র পদ্ধতি। অভিনয় মোটেও কোন কিছুকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়নি। এ পদ্ধতিতে কোনই লাভ নেই বরং ক্ষতি আর ক্ষতি।

যদি কেউ বলে যে, মালাঈকা (ফেরেশতারা) ও তো মানুষের আকৃতি ধারণ করে?

মালাঈকা মানুষের আকৃতি ধারণ করে: এর কারণ হলো, মালাঈকা যদি তাদের স্ব আকৃতিতে মানুষের নিকট আগমন করে তাহলে মানুষ তাদেরকে দেখতে সক্ষম হবে না। এটা হয় মানুষের কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রেখে। যদি মালাঈকা তাদের প্রকৃত ছবুরতে আগমন করে তাহলে মানুষ তাদেরকে সম্বোধন করতে, তাদের সাথে কথা বলতে ও তাকাতে সক্ষম হবে না।[7]

মালাঈকা মানুষের আকৃতি ধারণের ক্ষেত্রে অভিনয়ের উদ্দেশ্যে কোন কিছু করে না যেমনটি করে থাকে অভিনেতারা। মালাঈকা মানুষের আকৃতি ধারণ করে মানুষের কল্যাণের জন্যই। কেননা তাদের আকৃতি মানুষের আকৃতির মত নয়। কিন্তু মানুষ মানুষের নিকট কীভাবে স্বআকৃৃতির পরিবর্তন করতে পারে?


[1]. শায়খ বাকর ইবনে যায়দ হাফিযাহুল্লাহ আত-তামছীল নামক কিতাবে বলেন ‘‘শুরু থেকে অভিনয় অমুসলিমদের নিকট ইবাদত হিসাবে পরিগণিত হয়। অনেক গবেষক এমতকে প্রাধান্য দিয়েছেন যে, অভিনয় মঞ্চ স্থাপন করা গ্রীক মূর্তিপূজকদের নিকটে ‘ইবাদতের নিদর্শন হবে পরিগণিত হয় পৃ. ১৮।

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমীয়া (রহ.) ‘ইকতিদ্ব‘উ ছিবরাতিল মুসতাক্বীম’ নামক গ্রন্থের ১৯১ নং পৃষ্ঠায় ‘ঈদুশ শা‘আনীন’ নামক খ্রিষ্টানদের ঈদ প্রসঙ্গে বলেন, তারা যায়তুনের বোরাক বের করে বলে যে, তা হলো ঈসা আলাইহিস সালামের ক্ষেত্রে যা ঘটেছিল তার প্রতিচিত্র।

শায়খ বাকর আবু যায়দ ও তার আত-তামছীল গ্রন্থের ২৭-২৮ নং পৃষ্ঠায় এদিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আপনি যখন জানতে পারলেন যে উত্তম যুগের মুসলিমদের সাথে অভিনয়ের কোন সম্পর্ক নেই, এর আগমন ঘটেছে অধঃপতন যুগে; হিজরী চতুর্দশ শতকে। তারা এটাকে খেল-তামাশা ও বিনোদনের বিষয় হিসাবে গ্রহণ করেছে। এরপর তা খৃস্টানদের ইবাদত খানা থেকে বের হয়ে ক্রমশ বিভিন্ন মাদরাসা ও ইসলামী দল (যেমন ইখওয়ানুল মুসলিমীন ফিরকা) এর মাঝে দ্বীনী অভিনয়ের রূপ লাভ করেছে। আপনি যখন এটা জানলেন, অতএব জেনে নিন যে, ইসলামী শরীয়াতের নিয়ম-নীতির আলোকে সম্মান ও মর্যাদার কথা হলো এগুলো প্রত্যাখান করতে হবে। সর্বজন জ্ঞাত যে, আমল দু’প্রকার। যথা; ইবাদত ও আদাত (অভ্যাসগত কাজ)

‘ইবাদতের ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো: আল্লাহ তা‘আলা যে সকল বিষয়কে শরীয়াতে ইবাদত হিসাবে নির্ধারণ করেছেন শুধু সেগুলোই ইবাদত হিসাবে গণ্য হবে। অন্য কোন কিছু ইবাদত হিসাবে নির্ধারণ করা যাবে না।

আদাত বা অভ্যাসগত কাজের ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, আল্লাহ তা‘আলা যে সকল অভ্যাস পরিত্যাগ করতে বলেছেন, শুধু সেগুলো অভ্যাস থেকে বারণ করা হবে। অন্য কোন অভ্যাস নিষিদ্ধ করা হবে না।

সুতরাং এর ভিত্তিতে আত-তামছীল আদ দ্বীনী বা দ্বীনী অভিনয় ইবাদত হিসাবে, অনুষ্ঠান হিসাবে, আনন্দ-মজা ও বিনোদনের বিষয় হিসাবে গ্রহণ করা বৈধ নয়। আত-তামছীল আদ-দ্বীনী বা দীন অভিনয়ের শারঈ কোন ভিত্তি নেই। বরং এটি একটি বিদাতী কাজ। আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,  من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رَدّ যদি কোন ব্যক্তি আমাদের এই দীনে কোন কিছু বৃদ্ধি করে তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত। সহীহ মুসলিম হা/১৭১৮

আপনি দেখতে পাবেন, অনেক বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু দ্বীনী অভিনয় গোষ্ঠী রয়েছে। এদের বাস্তবতা হলো এই অভিনয় গোষ্ঠিগুলো হলো আত-তামছিল আল-বিদ‘ঈ বা বিদাতী অভিনয় গোষ্ঠী। আপনি মূলনীতি সম্পর্কে জেনেছেন এবং এও জেনেছেন যে ইসলামী শরী‘আতে এরকম অভিনয়ের কোন শারঈ দলীল নেই। যেহেতু ইসলামে এর কোন ভিত্তি নেই সুতরাং এ কাজটি নব্য আবিষ্কার। দীনের মধ্যে প্রত্যেক নব আবিষ্কারই শরী‘আহ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত। অতএব ইসলামী শরী‘আহ অনুযায়ী এর নাম হলো আত তামছিল আল বিদ‘ঈ বা বিদাতী অভিনয়।

আর যদি অভিনয়কে অভ্যাসগত কাজ হিসাবে ধরা হয় তাহলে তা আল্লাহর শত্রু কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা হয়। অথচ যদি কোন অভ্যাস শুধু কাফিরদের অভ্যাস হিসাবে পরিচিত হয় তাহলে সে অভ্যাসের ক্ষেত্রে তাদের সাদৃশ্য অর্জন করার ব্যাপারে আমাদেরকে বারণ করা হয়েছে।’’

আমি বলি, ‘তাদের মত গ্রীষ্মকালীন সেন্টার সমূহে এবং বিভিন্ন বিদ্যালয়ে দাওয়াতের ক্ষেত্রে আত-তামছিল আদ-দ্বীনী’ বা দ্বীনী অভিনয় একটি পন্থা যা যুবকদেরকে প্রভাবিত করার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম’ তাদের এই কাজ শরী‘আত অনুযায়ী প্রত্যাখ্যাত। দাওয়াতের ক্ষেত্রে শরী‘আতের পন্থা সুনির্ধারিত। সুতরাং কারো জন্য এতে নিজের পক্ষ থেকে কোন কিছু যোগ করার কোন অবকাশ নেই। আমি কথা দীর্ঘায়িত করব না।

শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমীয়া (রহ.) কে গুনাহ থেকে তাওবাহ করার নব পন্থা আবিষ্কার কারীর হুকুম  কী জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি তাদের মতকে প্রত্যাখ্যান করেন।

যদি কেউ বলে যে দাওয়াতের পদ্ধতি সমূহ (বাকি আছে), তাহলে আমি বলব শরী‘আত কী বান্দার কোন কল্যাণকে অবহেলা করে?

দেখুন শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমীয়া এর কথায় এর জবাব রয়েছে। তিনি বলেন, মোটকথা শরী‘আত কখনো কল্যাণকর বিষয়কে অবহেলা করে না। বরং আল্লাহ তা‘আলা আমাদের কল্যাণের জন্য দীনকে পূর্ণ করেছেন এবং আমাদেরকে এমন একটা শরীয়াতের উপর ছেড়ে দিয়েছেন যার রাত-দিন উভয়ই সমান। একমাত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ বিপথগামী হয় না।

আব্দুস সালাম বারজিস কর্তৃক লিখিত ‘‘আল-হুজাজ আল কবিয়্যাহ আলা আন্না ওসাইলুদ দাওয়াতি তাওকিফিয়্যাহ’’ থেকে সংকলিত।

আমি বলি যখন বিরাট সংখ্যক লোক শারঈ পদ্ধতিতেই কুফুরী, ফুসুক্বী ও অবাধ্যচারিতা থেকে তাওবা করে তাহলে দাঈরা ইসলামী শরীয়াতে বর্ণিত হয়নি এমন পন্থার আশ্রয় নেবে কেন?

যেহেতু আল্লাহর পথে দাওয়াত প্রদানের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য শরীয়াতে বর্ণিত পন্থায়ই যথেষ্ট, তা হলো অবাধ্যচারীদেরকে তাওবাহ করানো এবং পথভ্রষ্টদেরকে পথের দিশা প্রদান করা। দাঈরা মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাথীবর্গের চেয়ে বেশি সমৃদ্ধ নয়। ছাহাবীগণ ‘ইলম অর্জন ও প্রচার প্রসার করতেন।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, হে লোক সকল, তোমরা অচিরেই অনেক নতুন উদ্ভাবন করবে এবং তোমাদের জন্যও অনেক নতুন বিষয় উদ্ভাবন করা হবে। যখন তোমরা ধর্মের নামে নতুন কোন বিষয় দেখবে সেক্ষেত্রে তোমাদের কাজ হবে প্রথম যুগের বিষয়াবলির প্রতি প্রত্যাবর্তন করা। তিনি আরো বলেন, তোমরা নব আবিষ্কৃত বিষয়াবলি থেকে সতর্ক থাকো, বাড়াবাড়ি (কোন বিষয়ে সীমা লঙ্ঘন করা) থেকে সতর্ক থাকো, অহেতুক বিষয়ে প্রশ্ন করা থেকে সতর্ক থাকো। তোমাদের জন্য করণীয় হলো প্রাচীন ধর্ম গ্রহণ করা। (ত্ববক্বাতুল হানাবিলাহ খ. ০১ পৃ. ৬৯-৭১)।

শায়খ আব্দুস সালাম বলেন, কোন বিষয়ের কল্যাণ পরিমাপ করা খুবই কঠিন কাজ। এমন হয় যে কোন দর্শক কোন কিছু দেখে কল্যাণকর মনে করে। অথচ বাস্তবে তা কল্যাণকর নয়। একারণেই মুজতাহিদগণ (উম্মাহর গবেষকগণ) যারা ন্যায়পরায়ণতা, শারঈ বিষয়াবলিতে সূক্ষ্ম দৃষ্টি সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও কল্যাণের পরিমাপ নির্ধারণ করা থেকে দূরে সরে গিয়েছেন।

কল্যাণ কামনা এবং প্রবৃত্তির প্রাধান্য পাওয়া থেকে মুক্ত থাকার জন্য এ যোগ্যতা অর্জন করা অতিরিক্ত সতর্কতার বিষয়। কেননা অধিকাংশ সময়ই প্রবৃত্তি অনিষ্টের কাজকে ভালো হিসাবে উপস্থাপন করে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ এর অনিষ্টের ক্ষেত্রে ধোঁকাগ্রস্থ হয়। এর উপকার থেকে ক্ষতিই বেশি। মুজতাহিদগণেরই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে মুকাল্লিদ এর পক্ষে কীভাবে সম্ভব যে, সে ধারণা করে বলে যে এতে অনেক কল্যাণ রয়েছে। এটা মূলতঃ দীনের উপর দুঃসাহসিকতা ও শারঈ বিষয়ে দলীল ছাড়াই আগ বাড়িয়ে বলা ছাড়া বৈ কিছু নয়।

সালাফী শায়খ হামুদ ইবনে আব্দুল্লাহ আত-তুওয়াইজিরী (রহ.) বলেন ‘‘আদ-দাওয়াহ ইল্লাল্লাহ বা আল্লাহর পথে আহবানের ক্ষেত্রে অভিনয়কে অন্তর্ভুক্ত করা রসূল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রশিদীনদের সুন্নাত নয়। বরং এটা বর্তমান কালের নব আবিষ্কৃত বিষয়ের অন্তর্গত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নব আবিষ্কৃত বিষয়াবলি থেকে সতর্ক করেছেন। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো খবর দিয়েছেন যে, নব আবিষ্কৃত বিষয় মন্দ ও গোমরাহী (আল-হুজাজুল কউইয়া পৃ. ৪৫, ৫৫)।

[2].  এর দ্বারা সময় নষ্ট করা হয়। মুসলিম তার সময়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। মুসলিমের জন্য উচিত সময়কে সংরক্ষণ করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা ও এর দ্বারা দুনিয়া আখিরাত উভয় জাহানের কল্যাণ হাসিল করা। আবু বারযা আল আসলামী (রা.) বলেন,

قال : قال رسول الله - صلى الله عليه وسلم - : لا تزول قدما عبد يوم القيامة حتى يُسأل عن : عمره فيمَ أفناه، وعن ماله من أين اكتسبه وفيمَ أنفقه، وعن جسمه فيمَ أبلاه

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামাতের দিন বান্দাকে তার বয়স কোথায় ব্যয় করেছে, সম্পদ কোথায় থেকে উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে এবং তার শরীরকে কি কষ্ট দিয়েছে ইত্যাদি বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হওয়ার পূর্বে বান্দার উভয় পা একটুও এগুবে না।  সহীহ: তিরমিযী হা/২৪১৭।

[3]. অধিকাংশ অভিনয়ই মিথ্যা হয়ে থাকে। বলতে গেলে পুরোটাই মিথ্যা হয়ে থাকে। এ মিথ্যা হওয়ার কারণ হলো দর্শক-শ্রোতাকে প্রভাবিত করা ও তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা।

অথবা দর্শক-শ্রোতাকে হাসানো। এজন্য কল্পনাপ্রসূত আবিষ্কৃত বিষয়ের বর্ণনা দেওয়া। যে ব্যক্তি মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ব্যাপারে মারাত্মক শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন।

فعن معاوية بن حيدة - رضي الله عنه - أن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قال : ويل للذي يحدث فيكذب ليضحك به القوم، ويل له، ويل له

মু‘আবিআ ইবনে হায়দাহ রযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঐ ব্যক্তির জন্য ধ্বংস যে ব্যক্তি মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে। তার জন্য ধ্বংস। তার জন্য ধ্বংস। হাদীছটি হাসান। মুসনাদে আহমাদ ০৫/৩-৫ তিরমিযী হা/২৩১৫ হাকিম হা/৪৬ এই হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু তাইমীয়া (রহ.) বলেন, (‘ইবনু মাস‘উদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন:  إن الكذب لا يصلح في جد ولا هزلনিশ্চয়ই মিথ্যা কথা মর্যাদা সম্পন্ন কাজে অথবা রসিকতার কাজে কোথাও কোন কল্যাণ নিয়ে আসে না।)

আর যদি মুসলিমদের সাথে শত্রুতা পোষণের জন্য অথবা ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা কথা বলে তাহলে তা আরোও মারাত্মক হারাম। যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে মানুষকে হাসায় সে সর্বাবস্থায় শারঈ শাস্তির হকদার যে শাস্তি তাকে ঐ কাজ থেকে দূরে রাখবে। মাজমু‘ ফাতওয়া ৩২/২৫৬

কিচ্ছা-কাহিনী: ‘‘সালাফগণ কিচ্ছা-কাহিনী বলা ও কিচ্ছা কাহিনীর অনুষ্ঠানকে অপছন্দ করেছেন। তারা ঐ সকল অনুষ্ঠান থেকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন এবং যারা কিচ্ছা-কাহিনী বলে ও এর অনুষ্ঠান করে তাদের সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে যুদ্ধ করেছেন।’’

ইবনু আবু ‘আছিম কর্তৃক লিখিত ও খালিদ আর রদাদী কর্তৃক সম্পাদিত ‘‘আল মুযাক্কির ওয়াত তাযকির ওয়ায যিক্র’’ নামক কিতাবের ২৬ নং পৃ. থেকে উৎকলিত।

ইবনু আবু ‘আছিম সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেন যে ‘আলী রযিয়াল্লাহু আনহু জনৈক ব্যক্তিকে কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণনা করতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন ‘তুমি কী নাসিখ মানসুখ কাকে বলে জানো?

সে বলল: না। আলী রযিয়াল্লাহু আনহু বললেন তুমি নিজে ধ্বংস হয়েছো এবং অন্যকেও ধ্বংস করেছ। (আল মুযাককির ওয়াত তাযকির পৃ. ৮২)

ইমাম মালিক (রহ.) বলেন ‘আমি মাসজিদে কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণনা করাকে অপছন্দ করি। আমি কিচ্ছা বর্ণনাকারীদের মাজলিসে বসা বৈধ মনে করি না। কিচ্ছা-কাহিনীর রীতি বিদআত।

সালিম (রহ.) বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রযিআল্লাহু আনহুমা মাসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে যেতে বলছিলেন তোমাদের এই কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণনাকারীর আওয়াজই আমাকে মাসজিদ থেকে বের করে দিয়েছে।

ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেন, সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী ব্যক্তি হলো গল্পকার ও অধিক প্রশ্নকারী। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ‘আপনি কি তাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতেন? তিনি প্রতুত্তরে বলেছিলেন, না। ত্বরতূশি কর্তৃক রচিত ‘বিদা‘ ওয়াল হাওয়াদিছ’ নামক গ্রন্থ থেকে সংকলিত।  ইনশাআল্লাহ ১০২ নং প্রশ্নের উত্তর ও টীকায় সবিস্তারে আলোচনা করা হবে।

[4]. অভিনয়ের অপর একটি নাম হলো মুহাকাতুন বা অনুকরণ। চাল-চলনে, নড়া-চড়ায় এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির অনুসরণ করা। হাদীছে এরকম অনুকরণ করার নিন্দা করা হয়েছে। আয়িশা রযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ما أحب أني حكيت إنسانًا، وأن لي كذا وكذا আমি পছন্দ করি না যে আমার এই এই বিষয় থাকা সত্ত্বেও আমি অপর ব্যক্তির অনুকরণ করব। হাদীছ সহীহ, মুসনাদে আহমাদ ০৬ হা/১৩৬-২০৬, তিরমিযী হা/২৫০৩।

[5]. মুশরিক ও কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা স্বরূপ অনেক হাদীছ রয়েছে তন্মধ্য হতে এখানে কিছু হাদীছ উল্লেখ করা হলো।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

خالفوا اليهود والنصارى

তোমরা ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানের বিরোধিতা করো। সহীহ, ইবনু হিববান  হা. ২১৮৬

তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করো। সহীহ, মুসলিম হা. ২৫৯

... وقوله - صلى الله عليه وسلم - : (( خالفوا المشركين ... )) مسلم ( 259 ) .

তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, তোমরা মূর্তিপূজকের বিরোধিতা করো। সহীহ, মুসলিম হা/ ২৬০

... وقوله - صلى الله عليه وسلم - : (( خالفوا المجوس ... )) مسلم ( 260

[6]. ‘আল-হুজাজ আল কউইয়াহ আলা আন্না ওসায়িলুদ দাওয়াতি তাওকিফিয়্যাহ’ নামে শায়খ আব্দুস সালাম ইবনে বারজিস আলি আব্দুল কারীমের একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। উক্ত বিষয়ে বইটি খুবই ভালো। আপনারা এ বইটি পড়বেন।

[7]. মালাঈকা যে ব্যক্তির আকৃতি ধারণ করে তার কথা-বার্তা, চলাফেরা, ইত্যাদির অনুকরণ করে না। যেমনটি বর্তমানের অভিনেতারা করে থাকে। শায়খ আব্দুস সালাম বারজিস ওয়াফফাককাল্লাহ ঈকাফুন নাবিল আলা হুকমিত তামছীল নামক গ্রন্থ দেখুন।