উত্তর : আল-হামদুলিল্লাহ, এদেশ তাওহীদ, ইসলাম ও ইসলামী পতাকার ভিত্তিতে একটি একক জামাতের দেশ; এখানে শান্তি, নিরাপত্তা ও নানাবিদ কল্যাণ রয়েছে। আমরা একটিমাত্র জামাত, আমরা কোন বিভক্তি গ্রহণ করবো না।
দলাদলি যেসব দেশে বিদ্যমান যেথায় শান্তি ও নিরাপত্তা অনুপস্থিত।
আল-হামদুলিল্লাহ, আমাদের দেশ অন্যান্য দেশ থেকে ভিন্নতর। আল্লাহর অনেক নিয়ামত দ্বারা অনন্য। তাওহীদের পথে দাওয়াত, শিরক দূরীভূত হওয়া, ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠিত থাকা, যা ইমাম, মুজাদ্দিদ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব (রহ.) এর যুগ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। সকল প্রশংসা আল্লাহরই জন্য।
আমরা বলব না যে তা সর্বদিক থেকে পূর্ণ। তবে আল-হামদুলিল্লাহ তা কল্যাণের উপর প্রতিষ্ঠিত। এতে আল-আমরু বিল মা‘রুফ ও আন নাহয়ূ ‘আনিল মুনকার (সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ প্রদান করা); হুদুদ বা শারঈ দ-বিধি বাস্তবায়ন করা ও আল্লাহ প্রদত্ত বিধান দ্বারা বিচার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে রয়েছে শারঈ বিচারালয়, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী উত্তরাধিকার সাব্যস্ত করণ ও বণ্টন ব্যবস্থা, অন্যান্য রাষ্ট্রের মত এসব ব্যাপারে কেউ অনাধিকার চর্চা করে না বা নাক গলায় না।
বুঝা গেলো, এদেশে আমরা এক জামা‘আতে আবদ্ধ। আমাদের জামাত বিচ্ছিন্নকারী, ঐক্য বিনষ্টকারী, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত বিরোধী কোনো জামাত বা মতবাদকে আমরা গ্রহণ করব না। যদি আমরা ওগুলো গ্রহণ করি তাহলে তা আমাদের যুব সমাজের চিন্তা-চেতনাকে বিষাক্ত করবে ও আমাদের মাঝে শত্রুতা-বিবাদ সৃষ্টি করবে।[1]
এই দলগুলো আমাদের মাঝে প্রবেশ করলে[2] আমরা বর্তমানে যে নিয়ামতরাজির মাঝে বসবাস করছি এগুলো সব বিদূরিত হয়ে যাবে। আমরা এই দলগুলোকে চাই না তাদের মাঝে যে ভালো কল্যাণকর বিষয় রয়েছে, আল-হামদুলিল্লাহ আমাদের নিকট তারচেয়ে বেশি রয়েছে। আর তাদের নিকট যে অনিষ্টকর বিষয়াবলি রয়েছে আমরা সেগুলো থেকে অনেক দূরে অবস্থান করতে চাই। আমাদের উচিত হবে মানুষের কল্যাণকে প্রকাশ করা, কল্যাণ ছড়িয়ে দেয়া।[3]
[1]. ইতোমধ্যে আমাদের অনেক যুবকের চিন্তা-চেতনা এসকল বিদাতী বিধ্বংসী মতবাদ ও দলাদলি দ্বারা বিষাক্ত হয়েছে। অনেক যুবকের মাঝে শত্রুতা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
বরং এক বাড়িতে (পরিবারে) দুর্ভাগ্যবান ভাইদের মাঝে দলাদলির শত্রুতা থাকে; একজন এই দলের সাথে সম্পৃক্ত তো তাই তিনি সেই দলের নীতির ভিত্তিতে বন্ধুত্ব স্থাপন ও শত্রুতা পোষণ করেন; অপর দিকে আরেকজন অন্য দলের সাথে যুক্ত তো তিনি সেই দলের মূলনীতির ভিত্তিতে শত্রুতা ও বন্ধুত্ব করে থাকেন। শুধু এতেই ÿান্ত নয়, বরং বিভিন্ন দল ও গ্রম্নপের প্রতি সম্পৃক্ত হওয়ার ভিত্তিতে দাঈদের মধ্যেও শত্রুতার প্রকাশ পেয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমীয়া (রহ.) এর উপর রহম বর্ষণ করুন। তিনি বলেন বিদআত দলাদলি ও বিচ্ছিন্নতার সাথে যুক্ত আর সুন্নাহ জামাত বা ঐক্যের সাথে যুক্ত। সুতরাং যেমনিভাবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত বলা হয় ঠিক তেমনিভাবে আহলুল বিদ‘আতি ওয়াল ফিরকা বলা যেতে পারে। (আল-ইসতিকমাহ ১/৪১)।
[2]. বর্তমানে বিভিন্ন দল উপদল; যেমন তাবলিগ, ইখওয়ান, ইখওয়ান ক্বুত্বুবিয়্যাহ, ইখওয়ান ক্বুত্বুবিয়্যাহ সুরুরিয়্যাহ এবং বিশেষভাবে স্মরণীয় হাদ্দাদিয়্যাহ (এ ফিরক্বা সম্পর্কে সামনে আলোচনা আসবে) এ ফিরকাগুলো আমাদের মাঝে অনুপ্রবেশ করেছে। সালাফী ‘আকীদা ও মানহাজের প্রতি সম্বন্ধনীয় দাঈদের যারা সুন্নাহর দ্বারাই পথনির্দেশনা গ্রহণ করেন তাদের জন্য ওয়াজিব হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ছাহাবায়ে কিরামের মানহাজ বিরোধিদের মুকবাবিলা করা। তাদেরকে ভ- মতবাদ ছড়ানোর ব্যাপারে কোন ক্ষমা না করা। বরং তাদের পথ সঙ্কুচিত করা ও তাদের মূলোৎপাটন করা ওয়াজিব। তাদের মুক্বাবিলা ও মূলোৎপাটন করতে হবে কুরআন-সুন্নাহ ও সালাফে সালেহীনের বুঝ অনুযায়ী, শারঈ ‘ইলম প্রচার করা এবং জনগণকে তাওহীদ শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে। যা এই ফিরক্বাগুলো অবহেলা করে। তারা রাজনীতিতে লিপ্ত হয় এবং রাজনীতি জটিল করণে জনগণকে লিপ্ত করে। অনেকে দাবি করে যে তাদের মিশন হলো মানুষকে রক্ষা করা; পাপাচার থেকে মুক্ত করে মাসজিদে প্রবেশ করানো। আর ‘আকীদাগত দিক থেকে তাদের শিরকী অবস্থাতেই ছেড়ে দেয়া, তারা কবর ছুঁয়ে আশীর্বাদ করে, কবরের পাশে ত্বওয়াফ করে, কবর ওয়ালার নিকট পবিত্রতা কামনা করে।
আবার অনেকের মিশন হলো: নিজে নেতা সেজে ‘আকীদার প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করে জোট বাঁধে। তাদের মতে ‘আকীদার দিকে লক্ষ্য করলে নাকি উম্মাহকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। আপনি লক্ষ্য করবেন তাদের দলে কবর পূজারী, খারিজী, মু‘তাযিলী, জাহমী, শী‘আ সবাই রয়েছে। তাদের মতবাদ হলো ঐক্য করা। তাদের মিশন হলো দলে জনবৃদ্ধি ঘটানো। তাদের মূলনীতি হলো ‘‘আমরা সর্বজন স্বীকৃত বিষয়াবলিকে একত্রে বাস্তবায়ন করব। আর মতানৈক্যপূর্ণ বিষয়গুলোতে একে অপরকে মা‘যূর (গ্রহণযোগ্য কারণে অপারগ) মনে করব’’।
আহলুস সুন্নাহ, আহলুল আছার, সালাফীগণের দায়িত্ব হলো এ দলগুলোর মুখোশ উম্মোচন করা, যারা দলগুলোর সাথে জড়িত তাদের দোষত্রুটি উদঘাটন করার মাধ্যমে উম্মাহকে সতর্ক করা ও মানুষের মনে তাদের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করা। তাদের সন্দেহ ও মারপ্যাঁচ শারঈয়্যাহর দলীল প্রমাণাদি দ্বারা অপনোদন করা। সালাফে সালেহীনদের রিদ্বওয়ানুল্লাহু আলাইহিম এর মানহাজের প্রতি দাওয়াত প্রদান করা।
যেভাবে আমাদের সালাফগণ আমাদের কলবে আল-আকীদা আস-সালাফিয়্যাহর বীজ বপন করেছেন, ঠিক সেভাবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কলবে আল-আকীদা আস সালাফিয়্যাহর বীজ বপন করা।
[3]. এটা হতে পারে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে যে নিয়ামতরাজী দিয়েছেন তার বর্ণনা দেয়া, আল্লাহ তা‘আলা বিশুদ্ধ তাওহীদী ‘আকীদা দ্বারা যে আমাদেরকে সংরক্ষণ করেছেন তার বর্ণনা দেয়া। আল্লাহওয়ালা সালাফী ‘আলিম ও বিচারকগণ আল্লাহর শারঈয়্যাহ অনুযায়ী বিচার ফায়ছালা করেন। যার কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রসূলকেই তাদের উৎস হিসাবে গ্রহণ করেন। কুরআন-সুন্নাহ ব্যতিরেকে অন্য কোন সংবিধান গ্রহণ করেন না। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্য।