প্রশ্ন-১৯ : বর্তমানে যুবকদের মাঝে এ মত ছড়িয়ে পড়েছে যে, সমালোচনার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করা অত্যাবশ্যক। তারা বলে ‘‘যখন তুমি কোন মানুষকে তার বিদআতের ব্যাপারে সমালোচনা করবে, তার দোষত্রুটি বর্ণনা করবে তখন তোমার জন্য আবশ্যক হবে যে, তুমি তার ভালো দিকগুলোও উল্লেখ করবে’’। সমালোচনার ক্ষেত্রে এই কর্মপদ্ধতি কি সঠিক? সমালোচনার ক্ষেত্রে দোষত্রুটি উল্লেখ করা কি ওয়াজিব?

উত্তর : এ প্রশ্নের উত্তর অতিক্রান্ত হয়েছে। সমালোচিত ব্যক্তি যদি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারী হয় আর যদি তার ভুল-ভ্রান্তিগুলো আক্বীদা বিধ্বংসী না হয় তাহলে তার গুণাবলী ও অবদানসমূহ উল্লেখ করা হবে এবং সুন্নাহকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে তার কোনো পদস্থলন ঘটলে তা গোপন রাখা হবে।

আর সমালোচিত ব্যক্তি যদি পথভ্রষ্ট, ভ্রান্ত, নীতি বিরোধী অথবা সংশয়বাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয় তাহলে তার ভালো দিকগুলো উল্লেখ করা উচিত হবে না। যদিও তার অবদান থাকুক না কেন। কেননা আমরা যদি তার অবদানের কথা উল্লেখ করি তাহলে সাধারণ লোকজন এর দ্বারা ধোঁকায় পতিত হবে। অনেকে তার অবদানের কথা শ্রবণ করে তার ভ্রষ্টতা, বিদআত, কুসংস্কার, দলাদলির ব্যাপারেও ভালো ধারণা পোষণ করবে এবং তার মতবাদ, চিন্তা-চেতনা গ্রহণ করবে।

আল্লাহ তা‘আলা কাফির, পাপি ও মুনাফিকদের দোষ বর্ণনা করলেও তাদের সামান্যতম অবদানের কথা উল্লেখ করেন নি।[1]

এমনিভাবে সালাফ ইমামগণ জাহমিয়্যাহ (الجهمية), মু‘তাযিলাহ (المعتزلة), ও অন্যান্য বাতিল-ভ্রষ্ট ফিরকার সমালোচনার ক্ষেত্রে তারা তাদের কোনো অবদানের কথা উল্লেখ করেননি। কেননা তাদের অবদানের চেয়ে তাদের ভ্রষ্টতা, কুফুরি, আল্লাহদ্রোহিতা, নিফাক্বী প্রাধান্য পেয়েছে। সুতরাং তোমার জন্য কোনো পথভ্রষ্ট, বিদাতীদের সমালোচনা করার সময় তাদের গুণাবলির কথা বলা ও আলোচনা করা অনুচিত, যেমন বলা তিনি ভালো মানুষ, তার অনেক ভালোগুণ রয়েছে। তার মাঝে এমন এমন গুণাবলী রয়েছে। কিন্তু তার অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে!!

ঐ ব্যক্তির জন্যে বলব, তার প্রশংসায় তোমার কিছু বলা বড়ই বিভ্রান্তিকর। কেননা তোমার প্রশংসার দ্বারা লোকজন তাকে হক হিসাবে গ্রহণ করবে। বিদাতীর প্রচার করার দ্বারা মূলতঃ সাধারণ লোকদেরকে ধোঁকা দেয়া হয়ে থাকে। এটা ভ্রষ্টদের মতবাদ গ্রহণের পথ উম্মোচনের শামিল।[2]

আর সমালোচিত ব্যক্তি যদি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত হন তাহলে শিষ্টাচারিতার সাথে তার মতামত খণ্ডন করা হবে এবং ফিক্বহ, ইসতিমবাত্ব (মাসআলা নিরূপণ করা) ও ইজতিহাদের ক্ষেত্রে কৃত ভুলগুলোর ব্যাপারে সতর্ক করা হবে। আমরা দলিল প্রমাণসহ এভাবে বলব যে অমুক ব্যক্তি এই মাসআলায় এই ভুল করেছেন; এর সঠিক রূপ হলো এই। আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করুন। এটা তার গবেষণা। যেভাবে চার মাযহাবের ফকীহ ও অন্যান্যদের মাঝে মতামত খণ্ডন হতো।

ঐ ব্যক্তি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সদস্য হলে এরকম সমালোচনার দ্বারা তার ‘ইলমি ব্যক্তিত্বের কোনোই ক্ষতি হবে না।

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতও নিষ্পাপ নয়। তাদেরও অনেক ভুল ভ্রান্তি আছে। যদি আহলুস সুন্নাহর কোনো আলেমের কোনো বিষয়ে দলিল ছুটে যায় অথবা মাসআলা নিরূপণের ক্ষেত্রে ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হয় তাহলে আমরা ভুল সত্ত্বেও নিশ্চুপ থাকব না। বরং অনুরোধের মাধ্যমে তা বর্ণনা করব।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সল্লাম বলেন,

إذا حكم الحاكم فاجتهد ثم أصاب فله أجران، وإذا حكم فاجتهد فأخطأ فله أجر واحد

‘যদি কোনো বিচারক বিচার ফায়ছালার ক্ষেত্রে ইজতিহাদ (গবেষণা) করে তাহলে তার গবেষণা বিশুদ্ধ হলে সে দু’টি প্রতিদান পাবে। আর যদি ইজতিহাদের ক্ষেত্রে ভুল করে তাহলে একটা প্রতিদান পাবে।[3]

এ ছিল ফিক্বহী মাসআলার ক্ষেত্রে।

আর যদি ‘আকীদাগত বিষয়ে হয়, তাহলে আমাদের জন্য আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত বিরোধী মু‘তাযিলাহ, জাহমিয়্যাহ, যিন্দিক, নাস্তিক ইত্যাদি পথভ্রষ্ট কোনো দলেরই প্রশংসা করা জায়েয নয়।[4]

বর্তমানে অধিকাংশ লোক সন্দেহ-সংশয়ে পতিত হয়েছে। এ সন্দেহ সংশয়ের মূল কারণ হলো সামালোচনার ক্ষেত্রে ভালো ও মন্দের সমতা বজায় রাখা। কিছু যুবক এমত ব্যক্ত করে বই লিখেছে। একজন যুবক এ নিয়ে খুব উৎফুলস্ন হয়েছে। যে রিসালার লিখক সমতা বজায় রাখাকে আবশ্যক বলেছেন আমি তার রিসালা (চিঠি) পড়েছি।

এবং শায়খ রবী‘ ইবনে হাদী আল মাদখালী[5]-এর রিসালাহ সম্পর্কেও অবগত রয়েছি। তিনি সমালোচনার ক্ষেত্রে সমতার দাবিদার লেখকের মতামত পরিপূর্ণভাবে খণ্ডন করেছেন। তাদের ভুল ভ্রান্তিকর বিশৃঙখল বাতিল মতামত বিশ্লেষণ করেছেন এবং মতামত খণ্ডনের ক্ষেত্রে সালাফদের মানহাজ কি তা বর্ণনা দিয়েছেন।


[1]. প্রত্যেক ব্যক্তিরই কিছু গুণাবলি রয়েছে এমন কি ইয়াহুদী খ্রিস্টানদেরও কিছু ভালো গুণ রয়েছে। সমতা অনুযায়ী তো কাফিরদেরকে সমালোচনার সময় তাদের কীর্তির কথা উল্লেখ করা অত্যাবশ্যক ছিল অথচ ইলম অন্বেষু ছাত্রতো দূরের কথা কোন জ্ঞানবান ব্যক্তিই একথা বলেন না। সুতরাং তুমি চিন্তা করো আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। সমালোচনার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মানহাজ হলো ভালো কাজের কথা উল্লেখ না করা। আর উল্লেখ করলেও এমনভাবে করা যাতে মানুষ ধোঁকায় না পড়ে। বক্তা এমনভাবে বলবে যে, আমাদের উচিত হবে তাদের চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও কীর্তির কথা ভুলে যাওয়া। এটা একটি সবচেয়ে বড় উদাহরণ এতে চিন্তাশীলদের জন্য হিদায়াত ও শিক্ষা বিদ্যমান। খারেজীদের ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম বলেন,

( يخرج من ضِئضئ هذا قومٌ، يقرؤون القرآن لا يجاوز حناجرهم، يمرقون من الدين مروق السهم من الرمية، يقتلون أهل الإسلام ويَدَعُون أهل الأوثان؛ لئن أنا أدركتهم لأقتلنهم قتل عاد )) البخاري : (৩১৬৬).

ক. শেষ যুগে একটি দল বের হবে, তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের গলধঃকরণ হবে না। তারা ইসলাম থেকে এরূপে বেরিয়ে যাবে যেভাবে নিক্ষিপ্ত তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তারা মুসলিমদেরকে হত্যা করবে এবং মূর্তিপূজারীদেরকে ছেড়ে দেবে। আমি তাদেরকে পেলে ‘আদ সম্প্রদায়কে হত্যা করার মত তাদেরকে হত্যা করতাম। (সহীহ বুখারী হা/৩১৬৬)

وفي رواية أخرى : ( يحقر أحدكم صلاته مع صلاتهم، وصيامه مع صيامهم ) البخاري : (3414)

খ. অন্য বর্ণনায় এসেছে ‘তোমরা তাদের সালাতের চেয়ে তোমাদের সালাতকে এবং তাদের ছিবয়ামের চেয়ে তোমাদের ছিবয়ামকে খুবই তুচ্ছ মনে করবে। (সহীহ বুখারী হা/৩৪১৪)

(( فأينما لقيتموهم فاقتلوهم )) البخاري : (3415)

গ. আরেক বর্ণনায় এসেছে ‘তোমরা যেখানেই তাদেরকে দেখতে পাবে হত্যা করবে। (সহীহ বুখারী হা/৩৪১৫)

-আমি বলব আল্লাহর কসম, রসূল সলাস্নল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম তাদের প্রশংসা করার জন্য এসব বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেননি যাতে মানুষ ধোঁকায় পড়ে যায়। বরং তিনি উম্মাহকে সতর্ক করার জন্যই উল্লেখ করেছেন। যাতে তারা খারিজীদের বাহ্যিক আমল দেখে ধোঁকায় না পড়ে।

সালাফগণ এ অর্থই বুঝেছেন এবং তাদের জীবনে বাস্তবায়ন করেছেন। এটা তাদের আকীদার মানহাজে পরিণত হয়েছে। তাইতো দেখা যায় ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের ক্ষেত্রে কারাবিসী পবিত্র কুরআনের লফয মাখলুক বললে তিনি তা খণ্ডন করেন।

ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে আহমাদ (রহ.) ‘আস-সুন্নাহ নামক’ গ্রন্থের ১ম খণ্ড-র ১৬৫ নং পৃষ্ঠায় বলেন ‘‘আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি বলে কুরআনের লফয মাখলুক তার কথাটি খুবই নিকৃষ্ট। যে আকীদা মূলতঃ জাহমিয়্যাদের আকীদা। আমি ইমাম আহমাদ (রহ.) কে বললাম হুসাইন আল-কারাবিসী এই মত পোষণ করে। তিনি বললেন, সে মিথ্যা বলেছে। আল্লাহ তার মানহানি করুন। সে একজন অনিষ্টকর ব্যক্তি।

[2]. সম্মানিত পাঠক, বিদাতীদের প্রশংসা করার দ্বারা কী মারাত্মক ক্ষতি হয় তার নমুনা স্বরূপ এ ঘটনাগুলো উল্লেখ করা হলো: ইমাম যাহাবী ও অন্যান্য ইমামগণ এগুলো বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবুল ওয়ালিদ আল-রাজী ‘ইখতিছারু ফিরাকিল ফুক্বাহা’ নামক গ্রন্থে ক্বাযী আবু বাকর আল-বাকিল্লানী প্রসঙ্গে বলেন ‘‘আশ‘আরী মতবাদের প্রতি আকৃষ্ট আবু বাকর আল-হিরাবী কে আমি জিজ্ঞাসা করলাম আপনি আশআ‘রী মতবাদ কোথায় পেলেন? তিনি বললেন, আমি একদা আবুল হাসান দারূক্বুত্বনীর পিছনে হাঁটছিলাম, হঠাৎ পথিমধ্যে আবু বাকর ইবনে আত্ ত্বইয়্যিব আল-আশ‘আরীর সাথে সাক্ষাৎ ঘটলে ইমাম দারুক্বুত্বনি তাকে আঁকড়ে ধরে তার চেহারায় চুমো দিতে লাগবেন। তিনি তার নিকট থেকে পৃথক হওয়ার পর তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি যার সাথে এ আচরণ করলেন লোকটি কে? তিনি বললেন মুসলিমদের ইমাম, দীনের প্রতিরÿক ক্বাযী আবু বাকর ইবনে আত- ত্বইয়্যিব । এরপর আমি অনেক বার তার নিকট গিয়েছি ও তার মতবাদ গ্রহণ করেছি।

আমি বলব, এ ঘটনাতে লক্ষ্য করুন দারুক্বুত্বনী যখন বাকিল্লানীর সাথে এরকম আচরণ করলেন, তার প্রশংসায় বললেন যে, তিনি মুসলিমদের নেতা। তার এই প্রশংসা যারা প্রত্যক্ষ্য করেছিল তারা এর দ্বারা আশ‘আরী মতবাদ গ্রহণ করলো।

এমনিভাবে যারাই কোন বিদাতী বা প্রবৃত্তি পূজারীর প্রশংসা করে প্রকারান্তরে তারাই যেন অনেক বান্দাকে ঐ বিদাতী ও প্রবৃত্তিপূজারীদের দিকে ঠেলে দেয়। বিশেষত সততাপূর্ণ দাঈদের থেকে এমনটা ঘটলে। আল্লাহই মহাজ্ঞানী।

[3]. সহীহ বুখারী হা/৬৯১৯, সহীহ মুসলিম হা/১৭১৬

[4]. অনেকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনারা আকীদা বিষয়ক মাসআলা আলোচনা করার ক্ষেত্রে সব সময় মু’তাযিলা, জাহমিয়্যাহ, নাস্তিক, আশ‘আরী, খারিজী ও মুরজিয়াদের সমালোচনা করেন কেন? এ ফিরকাগুলো তো অনেক আগেই অতিক্রান্ত হয়েছে। তাদের অনুসারীরাও মাটির সাথে মিশে গেছে। যেমন প্রবাদ রয়েছে যে, সময় তাকে খেয়েছে ও পান করেছে। তাদের মতবাদের প্রতি আহবানকারী কোন দায়ী/আহবায়ক অবশিষ্ট নেই। আল্লাহর সাহায্যে আমরা তাদের প্রতুত্তরে বলি যে, হ্যাঁ, এই ফিরকাগুলো অতীতকালে ছিল। এগুলোর প্রবর্তকেরা ও অনুসারীরা অনেক যুগ আগেই অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু তাদের মতবাদ ও চিন্তা-চেতনা রয়েই গেছে। তাদের প্রভাবে প্রভাবিত অনুসারী বর্তমানকালেও রয়েছে। তাদের আকীদা-বিশ্বাস চিন্তা চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে স্থানান্তরিত হচ্ছে এবং বিসত্মৃতি লাভ করছে। এখনো রয়েছে সেগুলোর বিস্তৃতিকারী।

আ‘শআরী আকীদা: সাধারণ মুসলিমদের মাঝে আশ‘আরী ফিরকার সাংগঠিক অস্তিত্ব রয়েছে।

মু’তাযিলা আকীদা: মু’তাযিলা আকীদা এখনো রয়েছে। বরং অনেক ইসলামী নামধারী ব্যক্তির মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে। শী’আদের সকল দল উপদল মু’তাযিলা আকীদার অনুসারী এমনকি যাঈদিয়্যাহরাও।

ইরজা আকীদা: মুরজিয়ারা মনে করে ঈমান হলো সমর্থন (অন্তরে বিশ্বাস) ও মৌখিক স্বীকৃতি। তাদের মতে আমল ঈমানের অন্তর্গত নয়। আহলুল কালাম বা যুক্তিবাদী বলে পরিচিতদের ইরজা থেকে এ প্রকারের ইরজা অধিক হালকা।

প্রত্যেক যুগেই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত বিরোধী এসকল আকীদা-বিশ্বাস ছিল এবং প্রতিযুগেই এমন ব্যক্তিবর্গ ছিলেন যারা এসকল ভ্রান্তি থেকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদা সংরক্ষণ করেছেন।

সাউদী আরবের আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ লিল বুহুছিল ইলমিয়্যাহ ২১৪৩৬ নং ফাতওয়া ৮ই ববিউস ছানী ১৪২১ হি.তে ইরজা আকীদা সম্পর্কে সতর্ক করেছে।

লাজনাহ দায়িমাহ বলা হয়: মুরজিয়ারা ঈমান থেকে আমল বিচ্ছিন্ন করে। তারা বলে যে ঈমান হলো শুধু অন্তরের বিশ্বাস অথবা অন্তরের বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকৃতি। তাদের মতে আমল হলো ঈমানের পূর্ণতা লাভের জন্য শর্তমাত্র। ঈমানের অন্তর্ভুক্ত বিষয় নয়। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি শুধু অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করে ও মৌখিক স্বীকারোক্তি প্রদান করে তাহলে সে ব্যক্তি পূর্ণাঙ্গ ঈমান বিশিষ্ট মুমিন বলে বিবেচিত হবে। এরপর তার আমল বা কাজকর্ম যাই হোক না কেন। চাই সে ওয়াজিব তরক করুক, আর নিষিদ্ধ কাজকর্ম সম্পাদন করুক না কেন। যদি সে জীবনে  একটাও সৎ কাজ না করে তবুও সে জান্নাতে প্রবেশ করার অধিকারী হবে। নিঃসন্দেহে এটি  আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সাথে সাংঘর্ষিক ও সুস্পষ্ট বাতিল মতবাদ। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী কোন যুগের আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতই এমত পোষণ করেনি। এ মতবাদ মূলতঃ ক্ষতি ও দুর্নীতির পথকে উন্মুক্ত করে। দেখুন (আত-তাহযির মিনাল ইরজা‘ ওয়া বা‘যুল কুতুবিদ দাঈয়াহ লাহু ৮/৯

ওয়াহদাতুল ওজুদ (সর্বেশ্বরবাদ) মতবাদ এখনও রয়েছে। ইবনু আরাবী আতত্বয়ী এর অনুসারী গোঁড়া সুফিরা হলো এ মতবাদে বিশ্বাসী ।

দলিলের ভিত্তিতে আলোচনা সমালোচনা করি কোন বর্তমানে অস্তিত্বহীন কোন ফিরকা নিয়ে আলোচনা করি না। বরং এমন ফিরকাদের বিষয়ে আলোকপাত করি যা বর্তমানের মুসলিমদের মাঝে বিদ্যমান আছে। এবিষয়টি ছাত্রদের নিকট গোপন নয়।

এসকল ফিরকা সম্পর্কে আলোচনা করাকে শুধু সে ব্যক্তিই খারাপ মনে করে যে বাস্তবতা সম্পর্কে জানে না অথবা সাধারণ মানুষকে ধোঁকা সংশয়ে ফেলে বাতিল আকীদাগুলোর প্রচার করতে চায়। বরং ব্যক্তির উপর উচিত হলো অভিযোগের পূর্বে জেনে নেয়া। এখানে সংক্ষিপ্তাকারে উল্লেখ করা হলো যাতে কলেবর বৃদ্ধি না পায়।

উল্লেখিত বাতিল ফিরকাগুলো যে বর্তমানেও রয়েছে তার প্রমাণ স্বরূপ কিছু উদাহরণ পেশ করা হলো।

ক. সাইয়িদ কুতুব ‘‘যিলালিল কুরআন’’ এর ৪নং খণ্ড-র ২৩২৮ নং পৃষ্ঠায় বলেন আল-কুরআন আসমান যমীনের মত একটা বাহ্যিক সৃষ্টি। এটা মূলতঃ খালক্বে কুরআন মতবাদ। জাহমিয়্যাহ ও অন্যান্যরাও এমত পোষণ করে থাকে। যিলালিল কুরআনে কুরআনের নীচের আয়াতকে গানের সূরে ও গানের ছন্দে নাযিল বলেছেন। উদাহরণ: সূরা শামছ, ফাজর, গাশি‘আহ, ত্বরিক ও কিয়ামাহ।

আর সূরা আল-আ‘লাতে আল্লাহকে ছনি‘ (নির্মাতা) বলেছেন। অথচ তাদের কথা থেকে আল্লাহ তা‘আলা অনেক  উচ্চে।

খ. তিনি যিলালিল কুরআনের ৬নং খণ্ড-র ৪০০২ নং পৃষ্ঠায় (আয়াত) এর ব্যাখ্যায় বলেন, এটা হলো সত্তাগত দিক থেকে একক সত্ত্বা। সুতরাং সত্তায় তার বাস্তবতা ছাড়া কোন বাস্তবতা নেই। তার অস্তিত্ব ব্যতিরেকে কোন প্রকার অস্তিত্ব নেই, তার অস্তিত্ব ব্যতিরেকে যত অস্তিত্ব রয়েছে সবকিছুর অস্তিত্বই ঐ প্রকৃত অস্তিত্বের উপর নির্ভরশীল।

এ হলো ওয়াহদাতুল ওজুদ (সর্বেশ্বরবাদ) এর আকীদা। আল্লামা শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে সলিহ আল-উছাইমীন (রহ.) বলেন ‘‘আমি সূরা ইখলাসের ব্যাখ্যায় যিলালিল কুরআনে যা কিছু বলেছে তা পড়েছি। তিনি সেখানে আহলুস সুন্নাহ ওয়ালা জামাতের আকীদা বিরোধী এক মারাত্মক কথা বলেছেন। তার তাফসীরে উল্লেখিত মত প্রমাণ করেছে যে, তিনি ওয়াহদাতুল ওজুদের কথা বলেছেন। (বারআতু উলামায়িল উম্মাহ পৃ.৪২) মুহাদ্দিস্ শায়খ আলবানী (রহ.) বলেন ‘‘সাইয়িদ কুতুব সুফিবাদীদের মত উল্লেখ করেছেন এর দ্বারা তিনি যে ওহদাতুল ওয়াজুদের কথা বলেছেন এ ছাড়া অন্য কিছু বুঝা যায় না। (বারাআতু উলামায়িলউম্মাহ পৃ.৩৭)

শায়খ রবী‘ আল হাদী আল মাদখালী কর্তৃক লিখিত ‘‘আল আ‘ওয়াছিবম মিম্মা ফি কুতুবি সাইয়িদ কুত্বুব মিনাল ক্বাওয়াছিবম’’ নামক কিতাবের ২য় সংস্করণ ১৪২১হিজরী এর ৩য় পৃষ্ঠায় শায়খ আলবানী (রহ.) স্বহসেত্ম লিখিত ভূমিকায় বলেন ‘‘সাইয়িদ কুতুবের মতামত খণ্ডনে আমি যা কিছু বলেছি তা সব সত্য ও সঠিক। ইসলামি শিক্ষা সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা সম্পন্ন প্রত্যেক পাঠকই বুঝতে পারবেন যে, তিনি ইসলামী বিষয়ের উসূল (মূলনীতি), ফুরু (শাখা প্রশাখা গত বিষয়ে) কিছু বুঝতেন না। হে আমার ভাই (শায়খ রবী‘) আল্লাহ তোমাকে যেন উত্তম প্রতিদান দান করেন, তার অজ্ঞতা, মুর্খতা ও ভ্রষ্টতা বর্ণনা করার জন্য। (আল মাজাল্লা আস সালফিয়্যাহ ৭ম সংখ্য বর্ষ ১৪২২ হিজরীর ৪৬ পৃ. তে প্রকাশিত হয়েছে।

গ. মুহাম্মাদ কুতুব বলেন, ‘‘লোকদেরকে নতুনভাবে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দেয়া প্রয়োজন। তবে তা এজন্য নয় যে, তারা মৌখিকভাবে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ বলাকে অস্বীকার করেছে। বরং এজন্য যে, তারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর মূল দাবিকে অস্বীকার করেছে। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর মূল দাবি হলো ‘আল্লাহর শরী‘আহ অনুযায়ী বিচার ফায়ছালা করা’। (ওয়াকি‘উনা আল মুআ‘ছিবর পৃ.২৯)

আমি বলি, এটা সর্বসাধারণকে কাফির বলার নামান্তর। নতুবা যারা আল্লাহর শরী‘আহ দ্বারা বিচার কার্যপরিচালনা করে, আল্লাহর কিতাবই যাদের একমাত্র সংবিধান তাদেরকে পৃথক না করে তিনি কীভাবে এ হুকুম সাব্যস্ত করতে পারেন যে, সবাই আল্লাহর বিধানকে প্রত্যাখ্যান করে? তাদেরকে কীভাবে ইসলাম পূর্ব জাহিলিয়্যাতের সাথে তুলনা করতে পারে?

এরকম ‘আমভাবে সকল মানুষকে একই হুকুমের অন্তর্গত করার ঘটনা ঐ সকল লেখকদের ক্ষেত্রে বারবার ঘটে থাকে। যেন তারা জাযিরাতুল আরব বা আরব উপদ্বীপে ইসলামী সালাফী আমলাকাহ রাষ্ট্র সম্পর্কে জানেই না। এরকমভাবে পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে বসবাসকারী আহলুল হাদীছ ইত্যাদি মুসলিমদের অস্তিত্ব সম্পর্কে তারা যেন জানেই না।

এটা খুবই আশ্চর্যজনক বিষয় যে তাদের মধ্যে যারা এ ইসলামী দেশ ‘আল-মামলাকাতুল আরাবিয়্যাহ আস-স‘উদিয়্যা হতে বসবাস করে তাদের এমন ছড়িয়ে পড়ার দ্বারা শ্রোতাদের জন্য মারাত্মক ধোঁকা বিদ্যমান থাকে।

সহজ সরল পাঠকেরা মনে করে যে, পৃথিবীতে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর বাণী উচ্চারণকারী, এই কালিমার দাবি পূরণকারী ও আল্লাহর শরী‘আহ অনুযায়ী বিচার ফায়ছালাকারী কোন রাষ্ট্রই অবশিষ্ট নেই। আর সারা পৃথিবীর কোথাও তাওহীদপন্থী কোন দল বা সংগঠন পাওয়া যাবে না। (এটা তাদের ভুল ধারণা।)

তাদের এই ধোঁকা, প্রবঞ্চনা ও ভ্রান্তির দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে অধিকাংশ পাঠকেরা তাকফিরে পতিত হয়। সুতরাং ছাত্ররা যেন এধরণের বই পুস্তক থেকে সতর্ক থাকে। আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে সঠিক পথ প্রদান করুন।

ঘ. জনৈক দাঈ বলেন ‘কৃতপাপের কথা প্রকাশ্যে আলোচনা প্রসঙ্গে অনেক লোক তার সহপাঠী, সহকর্মী ও সমবয়সীদের সামনে প্রকাশ্যভাবে পাপের কথা আলোচনা করতে গর্ববোধ করে। সে খোলাখুলিভাবে পাপের কথা আলোচনা করতে থাকে যে, অমুক অমুক পাপ কাজ সে করেছে। পাপ কাজের তালিকা পেশ করতে থাকে। তার এই পাপ তাওবা ছাড়া মা‘ফ করা হবে না। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিষয়ে বলেছেন যে, সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে না (প্রত্যেক উম্মাত ক্ষমা প্রাপ্ত)।

আমি বলব এ হাদীছের কোথায় রয়েছে যে তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না? এরপর কথা হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের কে বলেছে যে প্রকাশ্যভাবে পাপের বর্ণনা প্রদানকারীর তাওবা কবুল হবে না?

সে কী আল্লাহর  المشيئة  বা ইচ্ছার অন্তর্গত থাকবে না যে আল্লাহ ইচ্ছে করলে তাকে মা‘ফ করবেন অথবা ইচ্ছে করলে আযাব দেবেন। অতঃপর জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তবে, হাঁ। খারিজী বা মু‘তাজিলী সম্প্রদায়ের হলে ভিন্ন কথা।

এরপর এই দাঈ আরো বলেন ‘ওদের মধ্যে সবচেয়ে দুষ্টু ও মারাত্মক হলো ঐ ব্যক্তি যে কিনা বলে আমার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে, আমার খুব অন্তরঙ্গ বন্ধু রয়েছে বা আমার বিভিন্ন সফর রয়েছে। এভাবে সে পাপের বর্ণনা প্রদান করাতে পরিতৃপ্তি পায়। আবার অনেকে পাপ কাজের ধৃষ্ঠতার কথা রেকর্ড করে। তাদের কোন মর্যাদা নেই, তারা সবাই এসকল কাজের দ্বারা মুরতাদ হয়ে গেছে। সে রেকর্ড করে কীভাবে একজন যুবতীকে ধোঁকা দিয়েছে! কীভাবে তার সাথে পাপ কাজ সম্পাদন করেছে ইত্যাদি!! এই কাজগুলো ইসলামে রিদ্দাহ বা ধর্ম ত্যাগের কাজ বলে গণ্য হয়। তাওবা না করে মারা গেলে ঐ ব্যক্তি চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে।

গায়ক ও গায়িকা যাদের ক্যাসেট কিছু যুবক-যুবতীদেরকে মন্দ কাজে প্ররোচিত করে তাদের প্রসঙ্গে বলেন ‘আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে এই পাপকে যতটুকু খারাপ বলা হয় তা এর বাস্তবতা থেকে অনেক কমই বলা হয়। বাস্তবে এই পাপ খুবই মারাত্মক। আর নিঃসন্দেহে কোন পাপকে তুচ্ছ মনে করা বিশেষত যেসকল কবিরা গুনাহ হারাম হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত রয়েছে। সুতরাং আমি দৃঢ়চিত্তে একথা বলতে পারি যে, এদের এ কাজগুলো কুফুরী ‘আশ- শাবাবু আস-ইলাহ ওয়া মুশকিলাত’ নামক ক্যাসেট থেকে সংগৃহিত। সামনে ১৩২ নং টীকায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

আমি বলব: তাকফির (অন্যকে কাফির বলা), পাপের কথা, অবাধ্যাচরণের কথা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়াকে হালকা (ছোট পাপ) মনে করা হয়। যা মানুষকে কুফুরির দিকে ঠেলে দেয়। কাবীরা গুনাহের কারণে তাকফির করা বড় দুঃসাহস ও আল্লাহভীতিহীনতা বুঝায়। এটা মূলতঃ খারিজীদের পন্থা। তারা কাবীরাহ গুনাহ সম্পাদনকারীকে কাফির বলে। কেননা তিনি পাপাচারের ব্যাপারে সংবাদ দেয়া, অবাধ্যচারীদের সাথে খারাপ সম্পর্ক রাখা ইত্যাদি যা কিছু উল্লেখ করেছেন এগুলো সবই সম্ভাব্য বিষয়। উক্ত ব্যক্তি যে হালাল মনে করে এগুলো করছে এবিষয়ে স্পষ্ট কোন প্রমাণ নেই। হতে পারে সে অজ্ঞতাঃবশত এগুলো করছে। সুতরাং তাদেরকে কাফির না বলে আগে নছীহাহ-উপদেশ প্রদান করতে হবে। এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জাম‘আহর কর্মপদ্ধতি।

হতে পারে সে ঠাট্টা বা হটকারিতামূলকভাবে হালকা মনে করে না। বরং যে ব্যক্তিই ছোট বা বড় কোন পাপ কাজ করে সে মূলতঃ উক্ত কাজটাকে হালকা বা তুচ্ছ মনে করেই করে থাকে। তবে সে হঠকারিতামূলকভাবে হালকা মনে করে না। আছে কি কেউ নিষ্পাপ? আল্লাহই মহাজ্ঞানী।

অপর একজন প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে বলেন ‘‘একটু ভাবুন তো আমাদের সমাজের অশ্লীল কাজগুলো কি সাধারণ পাপই শুধু?’’

বর্তমানে অনেক মানুষ মনে করে যে,  সুদ অন্যান্য পাপের মত একটি সাধারণ পাপই মাত্র বা একটি কাবীরা গুনাহ। এমনিভাবে মাদকাসক্তি, ঘুষ এগুলো সাধারণ গুনাহ বা কাবিরা গুনাহ। না ভাইয়েরা, আমি এ বিষয়ে গবেষণা-অনুসন্ধান করে দেখেছি। আমার নিকট স্পষ্ট হয়েছে যে আমাদের সমাজের অনেক লোক সুদকে হালাল মনে করে। আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা করছি। আপনারা কি জানেন? যে বর্তমানে আমাদের দেশের সুদী ব্যাংকে কোটিপতিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে? প্রত্যেক কোটিপতি কি জানে যে সুদ হারাম?

কিন্তু এটা কি একটা পাপ হওয়া সত্ত্বেও তারা করছে? না আল্লাহর কসম।

বরং বর্তমানে পাপ কাজের বহুল প্রচারের কারণে এই সমস্যার উদ্রেক হয়েছে। অনেকেই এই কাবীরা গুনাহগুলোকে হালাল মনে করছে। (আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা করছি)। ‘আত-তাওহীদ আওওয়ালান’ নামক ক্যাসেট থেকে।

তিনি কসমসহ যে উদাহরণ উল্লেখ করেছেন ‘‘বর্তমানে আমাদের সমাজে সুদ, মাদকাসক্তি ও ঘুষ ইত্যাদি যা সংঘটিত হয় সেগুলো কোন সাধারণ পাপ নয়। তার এই উদাহরণটিই বেশি মারাত্মক।

আমি পূর্বেই উদাহরণসহ উল্লেখ করেছি যে, উল্লেখিত পাপসমূহ সম্পাদনকারীকে নিশ্চিতভাবে না জানা পর্যন্ত কাফির বলা যাবে না। তবে যে হালাল মনে করে উক্ত পাপ সম্পাদন করে। যদি স্পষ্টভাবে শোনা যায় যে, সে সুদ, ঘুষ, মাদকদ্রব্য ইত্যাদিকে হালাল মনে করে। নিশ্চিতভাবে একথাগুলো শোনা না গেলে কাউকে কাফির বলা যাবে না।

শুধুমাত্র এ সকল পাপকাজ করার কারণে কাউকে কাফির বলাই এই তাকফিরকারীর আল্লাহভীতি ও চিন্তা-ভাবনা শক্তির দুর্বলতার প্রমাণ বহন করে। এটা খারিজী ও মু‘তাযিলাদের মতবাদ। তাদের প্রতি এবং যারা তাদের মতবাদে বিশ্বাসীদের প্রতি উপদেশ হলো তাদের উচিত অন্যকে বলার পূর্বে এরকম বিপজ্জনক ব্যাখ্যা থেকে প্রত্যাবর্তন করা। কেননা বাতিল ও ভ্রান্ত পথে হাবু ডুবু খাওয়া থেকে হকের প্রতি ফিরে আসা উত্তম।

ঙ. তৃতীয়ত আকীদা বিষয়ক জনৈক ডক্টর, যিনি উপসাগরীয় দেশের একটি হোটেলে একটি প্রচার পত্র টাঙিয়ে ছিলেন। আর তা ছিল মূলতঃ একটি মাসজিদের দেয়ালে। কিন্তু তিনি মাসজিদের মর্যাদার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করেননি। ‘এই হোটেলে সকল প্রকার মদ ও পানীয় পাওয়া যায় অর্থাৎ এখানে মদ সংশিস্নষ্ট বিষয়াবলী পরিবেশন করা হয়। এটা মদ গ্রহণের সুস্পষ্ট আহবান। আর এর সংশিস্নষ্ট বিষয় হলো মদ গ্রহণের সাথে সাথে নৃত্য ও উলঙ্গপনা। আমরা আল্লাহর নিকট এই কুফুরি থেকে আশ্রয় কামনা করি। (শারহুল ‘আকীদা আত ত্বহাবিয়্যাহ খ.০২,পৃ. ২৭২ ক্যাসেট থেকে)।

তিনি তার গ্রন্থে বলেছেন ‘‘আমাদের পত্রিকাগুলোতে কুফুরি ও নাস্তিকতা প্রকাশ পেয়েছে এবং আমাদের প্রচার মিডিয়ায় অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়েছে এবং টেলিভিশন ও রেডিওতে যিনার  প্রতি আহবান করা হচ্ছে। আর আমরা সুদকে বৈধ মনে করছি’’।

এ বইটি বিভিন্ন শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে পাকিস্তানে ‘কাশফুল গুম্মাহ ‘আন ‘উলামাই আমেরিকায় ‘‘ওয়া‘দু কিসিনজার ’’মিসরে হাক্বাইক্বু হাওলা আহদাছিল খালিজ’’ ইত্যাদি । আমি বলছি ‘‘আপনি লক্ষ্য করবেন লেখক সর্বোপরি একথায় দাবি করেছেন যে, আমরা সুদ (ঘুষ, মদ) কে জায়েয মনে করি। আল-হামদুলিল্লাহ, আমরা ও আমাদের সমাজ সুদকে জায়েয মনে করে না। আর প্রতিবেশি বিভিন্ন অঞ্চলে সুদ ছড়িয়ে পড়াকে কুফুরিও মনে করি না। বরং আল্লাহর কসম, ঐসকল দাঈ সুদ ও এর সাথে যে বিষয়াবলি উল্লেখ করেছেন সেগুলোর সবই পাপ ও অবাধ্যতা কুফুরি নয়। বরং এগুলো এমন পাপ যেগুলো ব্যক্তির থেকে ঈমানকে পুরোপুরিভাবে দূর করে দেয় না। বরং ব্যক্তির ঈমানকে ত্রুটিপূর্ণ করে দেয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেন,

لَا يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَسْرِقُ السَّارِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ

 যখন যিনাকারী যিনা করে তখন সে মুমিন থাকে না এবং চোর যখন চুরি করে তখন সে মুমিন থাকে না। (সহীহ বুখারী হা/৬৭৮২, সহীহ মুসলিম হা/৫৭, তিরমিযী হা/২৬২৫)

নিঃসন্দেহে, এখানে ঈমান না থাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো পূর্ণ ঈমান না থাকা। ইসলামী শরী‘আ হতে এ রকম আরো অনেক নিদর্শন বিদ্যমান।

আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের দীনের সুক্ষ জ্ঞান অর্জন করার তাওফিক দান করেন। এসকল লোকদেরকে এবং ওদের অনুসারীদেরকে যেন হিদায়াত দান করেন।

সালাফী মানহাজ সম্পর্কে অবগত, সম্মানিত পাঠক ভ্রষ্ট ‘আকীদাবিশিষ্ট ইসলামী দাঈ এবং তাদের দ্বারা ধোঁকাগ্রস্থ যুবকদের এ উদাহরণ যারা তাদের সামনে উপস্থিত হয় ও তাদের বিকৃত আকীদা ও মতবাদ দ্বারা প্ররোচিত হয় এবং বর্তমান কালেও তাদের ‘আকীদা বিশ্বাস ও ভ্রষ্টতা বাকী থাকা সত্ত্বেও কি আপনি বলবেন আমরা অতীতে অতিক্রান্ত বাতিল ফিরকা ও তাদের আচার আচরণ নিয়ে আলোচনা করি কেন?

[5]. বিভিন্ন ব্যক্তি ও দলকে সমালোচনার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মূলনীতি সম্বলিত গ্রন্থ। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংযোজনসহ নতুন কভারে বইটির পুনঃমুদ্রণ প্রকাশিত হয়েছে। এবই পড়ার জন্য আপনাদেরকে অনুরোধ করছি।