উত্তর : দাওয়াতের কর্মপদ্ধতি তাওক্বীফিয়্যাহ। কিতাবুল্লাহ, সুন্নাহ এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনীতে তা সবিস্তারে বর্ণিত রয়েছে।[1] আমরা এতে নিজের পক্ষ থেকে কোনো কিছু সংযোজন করি না। দাওয়াতের পন্থা কুরআন-সুন্নাহ তে বিদ্যমান। যদি আমরা নিজের পক্ষ থেকে কোনো কিছু সংযোজন করি, তবে নিজেরাও ধ্বংস হবো এবং অপরকেও ধ্বংস করব।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رَدٌّ
কেউ যদি আমাদের দীনে কোনো নতুন বিষয় সংযোজন করে তা হলে তা প্রত্যাখ্যাত বলে গণ্য হবে।[2]
হ্যাঁ, বর্তমানে অনেক নতুন নতুন মিডিয়া প্রকাশ পেয়েছে যা ইতোপূর্বে ছিল না। যেমন মাইক, রেডিও, পত্রিকা, ম্যাগাজিন, বিভিন্ন ইলেকট্রিক মিডিয়া ও ইন্টারনেট। এ মাধ্যমগুলোকে দাওয়াতের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এগুলোকে মানহাজ বলা হয় না। মানহাজ হলো যা আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ
তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান করো এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক করো। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন। সূরা আন নাহল ১৬:১২৫
قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي
বল, এটা আমার পথ, আমি জেনে-বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও। সূরা ইউসুফ ১২: ১০৮
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা ও মাদীনার দাওয়াতী জীবন চরিতে দাওয়াতী মানহাজ বিদ্যমান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
অবশ্যই তোমাদের জন্য রসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। (সূরা আহযাব ৩৩:২১)
[1]. আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য দীনকে পরিপূর্ণ করেছেন। কোন ব্যক্তির জন্য নিজের পক্ষ থেকে কোন পথ আবিষ্কারের প্রয়োজন নেই। নতুবা অচিরেই তার কথার ধরণ এমন হবে যে, ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার রিসালাতের তাবলিগের ক্ষেত্রে অত্যধিক ফলপ্রসূ ও উপকারী পথ ছেড়ে দিয়ে কিছুটা নিমণতর পন্থা অবলম্বন করেছেন। নাউযুবিল্লাহ!
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মু‘আয ইবনে জাবাল (রা.) কে ইয়ামানে প্রেরণের সময় তাকে নির্দেশনা প্রদান করেন যে,
إنك ستأتي قوماً أهل كتاب؛ فإذا جئتهم فادعُهم إلى : أن يشهدوا أن لا إله إلا الله وأن محمداً رسول الله، فإن هم أطاعوا لك بذلك فأخبرهم .. )) الحديث . أخرجه البخاري (১৩৩১،১৪২৫)
‘‘তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছ। তাদেরকে প্রথমে ‘আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রসূল’ এ সাক্ষ্য প্রদানের প্রতি আহবান করবে। যদি তারা এটা মেনে নেয় তাহলে তাদেরকে সংবাদ দিবে যে। (বুখারী হা/১৩৩১, ১৪২৫)। এই হাদীছ সুস্পষ্ট প্রমাণ করে যে, দাওয়াতের পদ্ধতি তাওক্বীফিয়্যাহ/নির্দিষ্ট। নতুবা মু‘আয (রা.) বর্তমানের হাজার জন দাঈর চেয়েও বেশি যোগ্য ছিলেন। এতদ্বসত্ত্বেও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দাওয়াতের পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমীয়া (রহ.) কে জনৈক দাঈর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল; যিনি সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করাকে আল্লাহর পথে আহবান করা ও তাওবাহ করানোর মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করছিলেন।
প্রশ্নের ভাষা হলো, ‘একদল লোক চুরি, ডাকাতি, মদ্যপান ইত্যাদি কাবীরাহ গুনাহ সম্পাদনের জন্য সমবেত হতো। অতঃপর আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের ভালো অনুসারী বলে পরিচিত জনৈক শায়খ তাদেরকে এ পথ থেকে বারণ করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। কিন্তু সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা ব্যতিরেকে তাদেরকে সমবেত করার অন্য কোন উপায় পেলেন না। তিনি ঝনঝনি, দফ ও বাঁশি ছাড়া বৈধ কবিতা আবৃতির অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদেরকে একত্রিত করতে সক্ষম হলেন। তাদের একটি দল তাওবাহ করলো। কিন্তু তারা এমন স্বভাবের হলো যে, সালাত আদায় করে না, চুরি করে, যাকাত দেয় না, বরং সন্দেহ-সংশয় পোষণ করে।
[2]. সহীহ বুখারী হা/৩৫৫০, সহীহ মুসলিম হা/১৭১৮।