প্রশ্ন-১১ : তাবলীগ জামাত বলে যে, তারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আদর্শের উপর চলতে ইচ্ছুক। কিন্তু তাদের কেউ ভুল করতেই পারে। সেজন্য তারা বলে, তোমরা কীভাবে আমাদের উপর হুকুম লাগাও এবং আমাদের থেকে সতর্ক করো?

উত্তর : তাবলীগ জামাত সম্পর্কে অনেক লেখালেখি হয়েছে। তাদের সাথে যারা গিয়েছে তাদের ব্যাপারে গবেষণা করেছে, তাদের সাথে উঠাবসা করেছে তারাই লিখেছেন। তাদের ব্যাপারে হুকুম জানার জন্য তোমাদের উচিত সে লেখাগুলো পড়া।[1]

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে অমুক-তমুকের অনুসরণ করা থেকে অমুখাপেক্ষী করেছেন। আমাদের নিকট আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের ত্বরীকা বিদ্যমান। আমরা তা দৃঢ়ভাবে ধারণ করি। কোনো তাবলীগ জামাত, অতাবলিগ জামাত ইত্যাদির প্রতি আমাদের কোনোই প্রয়োজন নেই। হকের বিপরীতে শুধু ভ্রষ্টতাই থাকে। তাদের হাকিকত (প্রকৃত অবস্থা) সম্পর্কে অনেক বই-পুস্তক লেখা হয়েছে। আপনারা সেগুলো পড়ুন তাহলেই বুঝতে পারবেন। যারা তাদের সাথে গিয়েছেন, তাদের সাথে সফর করেছেন, তাদের সাথে মিশেছেন তারাই মূলত সুস্পষ্টভাবে জানার পরে এ বইগুলো লিখেছেন।


[1]. যারা তাবলিগ জামাত সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে লিখেছেন, শায়খ সা‘দ আব্দুর রহমান আল-হাসিন হাফিযাহুল্লাহ তার ‘‘হাকিক্বাতুদ দা’ওয়াতি ইলাল্লাহি তায়ালা ওয়া মা ইখতাছব্ছবত বিহি জাযিরাতুল আরাব ওয়া তাকবিমু মানাহিজিদ দা’ওয়াতিল ইসলামিয়্যাহ আল ওয়াফিদাহ ইলাইহা’’- যা প্রকাশ করেছেন শায়খ ফালিহ ইবনে নাফি’ আল হারবী। উক্ত কিতাবের প্রথম সংস্করণের ৭০ নং পৃষ্ঠায় ‘‘তাবলিগ জামাতের নিকট কালিমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর উদ্দেশ্য’’ শিরোনামে বলেন ‘‘বস্তত উপর থেকে অন্তরের নষ্ট বিশ্বাসকে বের করে আল্লাহর যাতের /সত্তার উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা যে আল্লাহ ছাড়া কোন সৃষ্টিকর্তা নেই‘‘ এটা তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহ (পালন কার্যে আল্লাহর এককত্ব) ছাড়া আর কিছু নয়। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগের মুশরিকেরাও যার স্বীকৃতি দিত। অথচ তাদের এ স্বীকৃতি সত্ত্বেও  তারা মুসলিম বলে গণ্য হয়নি।

তিনি উক্ত কিতাবের ৭০-৭১ নং পৃষ্ঠায় আরো বলেন, তাবলিগ জামাতের বিশ্বাস হলো যে তারা ফিকহী মাযহাব গত দিক থেকে হানাফী, আকীদার দিক থেকে আশ‘আরী, মাতুরিদী আর তাছাউউফের দিক থেকে চিশতী, কাদিরী, নকশবন্দী সাহারাওয়াদী। তাদের ব্যাপারে শায়খ হামুদ ইবনে আব্দুল্লাহ আত-তুওয়াইজিরী (রহ.) একটি চমৎকার কিতাব লিখেছেন। যা এই ফিরকা সম্পর্কে লিখিত সবচেয়ে বিস্তারিত বই। তিনি তাবলিগ জামাতের হাকিকত বর্ণনার ক্ষেত্রে প্রথমে তাদের বই পুস্তক থেকে বর্ণনা উল্লেখ করেছেন এরপর সে সকল মত খণ্ডন করেছেন। কিতাবে কিছু ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির মতও উল্লেখ করেছেন যাদের তাবলিগ জামাতের নেতা ও তাদের নেতাদের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ এটা বর্তমানে ‘‘আল কওলুল বালিগ ও ফিত তাহযিরি মিন জামা‘আতিত্ তাবলিগ’’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের ব্যাপারে মেজর মুহাম্মাদ আসলাম (রহ.) লিখেছেন, তিনি পাকিস্থানী নাগরিক এবং মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্নকারী।

তাদের ব্যাপারে  শায়খ ড. মুহাম্মাদ ত্বাকী উদ্দীন আল হিলালী (রহ.) ‘‘আসসিরাজুল মুনির ফি তানবিহী জামা‘আতীত তাবলিগ আলা আখদ্বায়িহিম’’ নামক কিতাবে লিখেছেন। এ বিষয়ে লিখিত বড় কিতাব সমূহের একটি এটি মূলতঃ আসলামের কিতাবের ব্যাখ্যা যারা তাবলিগ দ্বারা ধোঁকাগ্রস্থ ছিলেন তাদের অনেকেই ঐ জামাতের প্রকৃত রূপ স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেছেন। তাদের হাকিকত প্রকাশ করে তাদেরকে বর্জন করেছেন এবং অন্যদেরকে তাদের থেকে সতর্ক করেছেন। তাদের দোষ হিসেবে এটাই যথেষ্ট যে, তারা তাওহীদের প্রতি আহবান করে না। বরং তারা তাওহীদের প্রতি আহাবান করা ও আহবায়ককে ঘৃণা করে।

এ মুখোশধারী সুফী ফিরকার দ্বারা ধোঁকাগ্রস্থ হয়ে যারা তাদের সাথে বের হয় তাদের উদ্দেশ্য বলা হবে: তাদের সাথে বের হওয়ার সময় উদাহরণ স্বরূপ তাদের মাঝে ইমাম শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্হাব (রহ.) এর ‘‘কিতাবুত তাওহীদ’’ নামক বই বিতরণ করুন, এরপর লক্ষ্য করুন তারা কীভাবে আপনার কাজকে প্রত্যাখান করে এবং তাদের সুন্দর চরিত্র/আচারণ কীভাবে বন্য প্রাণীর ন্যায় উচ্ছৃংখল আচরণে পরিণত হয় ও তাদের বন্ধুত্ব হিংসা ও শত্রুতায় রূপ নেয়। এটি একটি পরীক্ষিত বিষয় এর মাধ্যমে তদের কাজ প্রকাশ পায়/এর দ্বারা তাদের প্রকৃত চেহারা উম্মোচিত হয় সাউদী আরবের সাবেক জাতীয় মুফতী ও প্রধান বিচারপতি শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আলে শায়খ (রহ.) তার ‘‘ফাতওয়া ও রিসালা সমগ্র ০১/২৬৭ তে বলেন, ‘এ সংগঠন তথা তাবলিগ জামাত নামক এ সংগঠনে কোনই কল্যাণ নেই। কেননা এটি একটি বিদাতী ও ভ্রষ্ট সংগঠন। যা মূলতঃ এমন কিছু বই-পুস্তক পাঠের উপর নির্ভরশীল যেগুলোকে আমি শিরক বিদআত, ভ্রষ্টতা, কবর পূজা ও শিরকের প্রতি আহবানে ভরপূর পেয়েছি। ফাতওয়া প্রদানের তারিখ ২৯ শে মুহাররাম, ১৩৮২ হিজরী।

সাউদী আরবের সাবেক গ্রান্ড- মুফতি শায়খ আব্দুল আজিজ ইবনে বায (রহ.) ‘আদ-দাওয়াহ আস সাউদিয়্যাহ’ নামক ম্যাগাজিনের ১৪৩৮ সংখ্যা, প্রকাশ তারিখ ৩রা যিলক্বাদ, ১৪১৪ হিজরীতে বলেন, তাবলিগ জামাতের নিকট আকীদা (বিশ্বাসগত) বিষয়ে বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন জ্ঞান (স্পষ্ট ধারণা) নেই। সুতরাং তাদের সাথে বের হওয়া জায়েয নয়।

তাবলিগ জামাত কি সেই ৭২ ফিরকার অন্তর্ভুক্ত হবে?

এ প্রশ্নের জবাবে ইবনে বায (রহ.) বলেন, হ্যাঁ। যারাই/যে ব্যক্তিই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদা বিরোধী কাজ করবে সেই ৭২ ফিরকার অন্তর্ভুক্ত হবে। আল-মাজাল্লাহ আস-সালাফিয়্যাহ, ৭ম সংখ্যা, পৃষ্ঠা ৪৭, সন ১৪২২ হিজরী

শামের (সিরিয়ার) মুহাদ্দিস শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহ.) বলেন, তাবলিগ জামাত কুরআন-সুন্নাহ এবং সালাফে সালেহীনের মানহাজের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। সুতরাং তাদের সাথে বের হওয়া বৈধ নয়। (আল-ফাতওয়া আল-ইমারাতিইয়াহ)