আল-কুরআনে আদম ‘আলাইহিস সালামের নাম ২৫টি আয়াতে ২৫ বার উল্লেখ করা হয়েছে।[1] আদম ‘আলাইহিস সালামের প্রসিদ্ধ ঘটনাবলী বর্ণনার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ঘটনা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল থেকে হিদায়াত ও সৎকর্ম লাভের উপকরণ খুঁজে বের করা এবং জ্ঞান-বৃদ্ধি ও বিবেক দিয়ে আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি প্রদানের শিক্ষা লাভ করা। তাছাড়া আদম ‘আলাইহিস সালামের ঘটনায় অসংখ্য নছীহত এবং মাসআলার সমাবেশ রয়েছে। এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নছীহতের প্রতি ইঙ্গিত করা হলো।
আল্লাহর হিকমতসমূহের রহস্য অসংখ্য এবং অগণিত। কোনো মানুষের পক্ষ (সে আল্লাহর যত সান্নিধ্যপ্রাপ্তই হোক না কেন), সমস্ত রহস্য সম্বন্ধে ওয়াকিফহাল হওয়া সম্ভব নয়। এ কারণেই আল্লাহর ফিরিশতাগণ চূড়ান্ত পর্যায়ের সান্নিধ্যপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও আদমকে খলীফা বানানোর হিকমত সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেন নি এবং বিষয়টি পূর্ণ তথ্য সম্মুখে না আসা পর্যন্ত তারা বিস্ময়ে নিমগ্ন ছিলেন।
আল্লাহর দয়াদৃষ্টি এবং মনোযোগ যদি কোনো তুচ্ছ পদার্থের প্রতিও হয়ে যায়, তাহলে তা শ্রেষ্ঠ হতে শ্রেষ্ঠতর মর্যাদা এবং মহা সম্মানিত পদে অধিষ্ঠিত হতে পারে এবং মহত্ত্ব ও বুযুর্গী লাভে ধন্য হতে পারে।[2]
মানুষকে যদিও সকল প্রকারের বুযর্গী দান করা হয়েছে এবং সে সব প্রকারের মর্যাদা ও বুযর্গী লাভ করেছে, তবুও তার সৃষ্টিগত ও স্বভাবজাত দুর্বলতা স্বস্থানে পূর্ববৎ বহাল রয়েছে এবং মানব ও মনুষ্যসূলভ সে সৃষ্টিগত ত্রুটি তবুও বাকী রয়েছে। এ দুর্বলতা এবং ত্রুটিই সে বস্তু ছিল যা আদম ‘আলাইহিস সালামের উপরও ভুল আনয়ন করেছে, ফলে তিনি ইবলিসের ধোকায় পতিত হয়েছেন।[3]
অপরাধী হয়েও যদি মানুষের অন্তর তাওবা ও অনুতাপের প্রতি ঝুঁকে পড়ে তবে তার জন্য আল্লাহ পাকের রহমতের দ্বার রুদ্ধ নয়। সে দরবার পর্যন্ত পৌঁছবার পথে নিরাশার অন্ধকার ঘাটিতে পতিত হয় না। অবশ্য খাঁটি তাওবা ও সত্যিকারের অনুতপ্ত হওয়া অপরিহার্য। আদম ‘আলাইহিস সালামের ভুল-ত্রুটি যেমন এই তাওবা এবং অনুতাপের ফলে ক্ষমা লাভের যোগ্য হয়েছে, তেমনি তার সমুদয় বংশধরের জন্যই ক্ষমা ও রহমতের জগৎ খুবই প্রশস্ত[4]। যেমন, মহান আল্লাহ বলেন,
﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣﴾ [الزمر: ٥٣]
‘‘হে রাসূল! আপনি লোকদেরকে বলে দিন যে, আল্লাহ বলছেন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের নফসের ব্যাপারে সীমালংঘন করেছ (অর্থাৎ গুণাহের কাজ করে নফসের ওপর যুলুম করেছ) তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে, আল্লাহ যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দিবে, (তোমরা তাওবা ও অনুতাপের সাথে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা কর), নিঃসন্দেহে তিনি খুবই ক্ষমাশীল এবং দয়ালু।’’ [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫৩]
আল্লাহর দরবারে অবাধ্যতামূলক আচরণ এবং বিদ্রোহী হওয়া বড় সৎ কর্মগুলোকেও ধ্বংস করে দেয় এবং স্থায়ী অপমান ও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ বিষয়ে ইবলিসের ঘটনাটি বড়ই উপদেশমূলক। আর আল্লাহ তা‘আলার দরবারে অবাধ্যতা ও বিদ্রোহ করার ফলে তার পূর্বেকার ইবাদতের কি দুর্দশা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে লক্ষ লক্ষ উপদেশ গ্রহণের উপকরণ বটে।[5] যেমন, আল্লাহর বাণী,
﴿فَٱعۡتَبِرُواْ يَٰٓأُوْلِي ٱلۡأَبۡصَٰرِ ٢﴾ [الحشر: ٢] “
অতএব, উপদেশ লাভ কর, হে উপদেশ লাভের চক্ষু বিশিষ্ট লোকেরা।” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ২]
[2] আব্দুল ওয়াহাব আল-নাজ্জার, কাসাসুল আম্বিয়া (বৈরুত: দারুল-ফিকর, তা. বি), পৃ. ৬।
[3] আত-তাবারী, কাসাসুল আম্বিয়া (বৈরুত: দার আল-ফিকর, ১৯৮৯), পৃ. ৮।
[4] প্রাগুক্ত।
[5] ড. সালাহ আল-খলিনী, আল-কাসাস আল কুরআনী, ১ম সংস্কার (দিমাশক: দার আল-কলম, ১৯৯৮ খৃ.) খ. ১, পৃ. ১৬।