কারোর মৃত্যুর পর ঐ পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারের ঐ বেদনাবিধুর সদস্যদের সাথে সাক্ষাত করে এমন কথাবার্তা বলা যাতে তারা সান্ত্বনা পায়, ভারাক্রান্তি কমে আসে এবং দুঃখের ভার হালকা হয়। এটি একটি মস্ত বড় ইবাদত। অপরদিকে এটা একটা সামাজিকতাও বটে এবং এর মধ্যে রয়েছে সৌজন্যবোধ। আর সমবেদনা প্রকাশের পদ্ধতি হলো শোকাহত পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেওয়া এবং ধৈর্যের পুরষ্কারের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া। মাইয়্যেতের এবং মাইয়্যেতের পরিবারের জন্য দু'আ করা। এমনকি মৃত্যু ছাড়াও যেকোন বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো অনেক বড় সাওয়াবের কাজ।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন মুসীবতের সময় বিপদগ্রস্থ তার কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত করে তাকে সান্তনা দেবে (সমবেদনা প্রকাশ করবে), আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাকে সবুজ রঙের পোশাক পরিয়ে দেবেন, যা দেখে অন্য লোকেরা ঈর্ষা করবে।” (ইবনে আবি শাইবা- ৪/১৬৪) কেউ মৃত্যুবরণ করলে রাসূলুল্লাহ (সা.) মাইয়্যেতের পরিবারের সদস্যদের কাছে ছুটে যেতেন এবং তাদেরকে নিম্নবর্ণিত ভাষায় সান্তনা দিতেন:
১. একবার এক লোকের একটি ছেলে মারা গেল। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার বাড়িতে গেলেন এবং মৃত ছেলের বাবাকে বললেন, “হে অমুক! তোমার কাছে কোনটি অধিক পছন্দের? তোমার ছেলেকে নিয়ে তুমি দুনিয়াতে সুখে থাকবে এটি? নাকি তোমার এ সন্তান তোমার আগেই জান্নাতে পৌঁছে যাবে, আর তোমার জন্য সে জান্নাতের দরজা খুলে দেবে সেটি? লোকটি উত্তর দিল, হে আল্লাহর নবী! সে আমার আগেই জান্নাতে চলে যাবে। আর আমার জন্য সে জান্নাতের দরজা খুলে দেবে সেটিই আমার অধিক পছন্দনীয়। নবী (সা.) তখন বললেন, তুমি তাই পাবে। (অতএব, ধৈর্য ধারণ কর ৷)- নাসাঈ: ২০৮৭
২. আরেকবার এক শিশু মারা যাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) তার মাকে সান্তনা দিয়ে বলেছিলেন, “কোন পুরুষ বা মহিলার ৩ জন শিশু সন্তান মারা গেলে তারা যদি ধৈর্য ধারণ করে তাহলে এর বিনিময়ে আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” এমনকি ২টি সন্তান মারা গেলেও সবর করলে তাদের মাতা-পিতাও জান্নাতে যাবে।(হাকেম- ১/৩৮৪)। আর এজন্য সমবেদনা প্রকাশকারীর প্রধান উপদেশ হবে ধৈর্য ধারণ করার।
৩. আর সমবেদনা প্রকাশের জন্য আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মাইয়্যেত ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য দু'আ করা। (দেখুন, আহমাদ: ১৭৫০) আর যেকোন দু'আ ৩ বার করা সুন্নাত।
৪. মুস্তাহাব হলো মৃতের এতীম সন্তান থাকলে তাদের মাথায় হাত বুলানো, তাদের প্রতি হে প্রদর্শন করা। (আহমাদ: ১৭৬০)
৫. সমবেদনা প্রকাশের সময় মৃতের পরিবারকে একথা জানানো জরুরি যে, কান্নাকাটি করলে মাইয়্যেতের আযাব হয় এবং তাওবা না করলে কিয়ামতের দিনও আযাব হবে।(মিশকাত: ১৭২৪, ১৭২৭)
৬. উল্লেখ্য যে, শোকাহত পরিবারের সদস্যদেরকে এমন কথা না বলা যাতে তাদের ব্যথাবেদনা আরো বেড়ে যায়, পুরনো দিনের কোন ব্যথাতুর ঘটনা আবার মনে পড়ে যায়। ফলে কষ্ট বেড়ে যায়।
৭. সমবেদনা প্রকাশের জন্য নির্দিষ্ট কোন দিন-ক্ষণ নাই, কোন সময়সীমাও নির্ধারিত নেই। যেকোন দিন যেকোন সময় যেকোন জায়গায় তা হতে পারে। তবে মাইয়্যেতের বাড়িতে আগত লোকদের জন্য খানাখাদ্য তৈরি করা অনেক আলেম জায়েয মনে করেন না। কেননা, এটা নিয়াহা অর্থাৎ মাতমের মধ্যে গণ্য হয়ে যায়, যা ইসলামে হারাম। (জানাযা দর্পন/ফাইযী, পৃ. ১১২)
৮. সমবেদনা প্রকাশ করতে এসে কুরআন পড়া, সূরা ইয়াসীন পড়া বা অন্য কোন সূরা পড়া উচিত নয়। কেননা, এটা বিদ'আত (ফাতাওয়া তাযীয়াহ পৃ. ৪৬)
৯. তবে অমুসলিমদেরকে সান্তনা দিতে যাওয়া বৈধ নয়। কেননা, তারা ঈমান আনেনি, আল্লাহ প্রদত্ত ইসলাম গ্রহণ করেননি। এটা হলো একটা মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় অপরাধ! তাই তাদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাওয়াও জায়েয নেই। এমনকি তাদের জন্য দু'আ করতেও আল্লাহ তাআলা নিষেধ করেছেন। (দেখুন সূরা ৯; তাওবা ১১৩) তবে তাদের জীবদ্দশায় তাদের জন্য এ দু'আ করা যায়, যাতে আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত করেন, সত্যের পথ দেখান।