মৃত্যুর সাথে সাথে মানুষ ইবাদতের সুযোগ হারিয়ে ফেলে। জীবিত থাকার সময়কার ইবাদতের ফল ভােগ করতে থাকে মৃত্যুর পর।রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,  “দুনিয়ার জীবন হলো আখেরাতের শস্য বুনার জায়গা”। দুনিয়ায় শস্য বুনবে তো মৃত্যুর পর এর ফসল উঠাবে অর্থাৎ তা ভােগ করবে, আর দুনিয়ায় তা বুনবে না তো আখেরাতেও কিছু পাবে না। হিসাব একেবারেই সহজ। বিশেষ করে যারা পাপী মানুষ তারা জীবিতদের কাছে সাহায্যের আশায় চেয়ে থাকে। যেসব কাজ করলে ঐ নিদানকালে মাইয়্যেত উপকৃত হয় তা হলো,

১. দু'আ করা: মাইয়্যেতের জন্য জীবিতরা দু'আ করলে মৃত ব্যক্তি তা পায়। কিভাবে দুআ করবেন তা আল্লাহ তাআলা শিখিয়ে দিয়েছেন, আর তা হলো,
“হে আমাদের রব! তুমি আমাদের মাফ করে দাও, আমাদের আগে আমাদের যে ভাইয়েরা ঈমান এনেছে তুমি তাদেরও মাফ করে দাও এবং আমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে, তাদের ব্যাপারে আমাদের মনে কোন রকম হিংসা বিদ্বেষ রেখো না, হে আমাদের রব, তুমি অনেক মেহেরবান ও পরম দয়ালু।” (সূরা ৫৯; হাশর ১০) যার জন্য দু'আ করা হয় তার অনুপস্থিতিতে হলে সে দু'আ আরো দ্রুত কবুল হয়। (মুসলিম: ২৭৩৩) যেহেতু মাইয়্যেত কবরে, আর দুআকারী দুনিয়াতে, সেজন্য ‘জীবিতদের দুআ মৃতদের জন্য খুবই উপকারী।

২. মান্নাত রোযা আদায় করে দেওয়া: মাইয়্যেত যদি এমন কিছু রোযা মান্নত করে থাকে যা পালন করার আগেই মরে যায়, তাহলে জীবিত আত্মীয়রা মাইয়্যেতের পক্ষ থেকে ঐ রোযাগুলো রাখলে মাইয়্যেত দায়মুক্ত হয় এবং উপকৃত হয়। (আবু দাউদ: ৩৩০৮, ২৪০১)।

৩. ঋণ পরিশোধ: মাইয়্যেতের কোন ঋণ থেকে থাকলে আপনজন বা অন্য কেউ মাইয়্যেতের পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করে দিলে মাইয়্যেত এ পাপ থেকে মুক্তি পেয়ে যায়।(বুখারী: ৬৬৯৯)

৪. হজ্জ আদায়: মাইয়্যেতের উপর হজ্জ ফরজ থাকলে, আর কোন কারণে তা আদায় করা ছাড়া মারা গেলে, নিজের সন্তান বা আপনজনদের কেউ তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্জ আদায় করলে মৃত ব্যক্তি এ অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়ে যায়। (মুসলিম: ১৩৩৪-১৩৩৫) এতে মাইয়্যেত হজ্জের সাওয়াবও পেয়ে যাবেন ইনশাল্লাহ!

৫. নেক সন্তানের আমল: সন্তান যেসব ভালো কাজ করে তার সমপরিমাণ সাওয়াব মাতাপিতারাও পান, এমনকি কবরে থেকেও। যদি পিতা-মাতা তার সন্তানকে ভালো পথে পরিচালিত হওয়ার শিক্ষাদান করে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “সন্তান হলো নিজের উপার্জিত ধন-সম্পদের মতো।” (আবু দাউদ: ৩৫২৮) সন্তান যত বেশি ভালো কাজ করবে, মাতা-পিতারা ততবেশি সওয়াব পেতে থাকবে।

সাদকায়ে জারিয়াহ: জীবদ্দশায় আমল করে যাওয়া দান-খয়রাত যা সদাকায়ে জারিয়াহ হিসেবে তার নেক আমল চলমান থাকবে।রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“যখন কোন মানুষ মৃত্যুবরণ করে, তখন তিনটি বস্তু ছাড়া (তার নিকট) সকল প্রকার আমলের সাওয়াব যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। (ক) সাদাকাহ জারিয়াহ, (খ) এমন ইলম রেখে যাওয়া যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ও (গ) রেখে যাওয়া এমন সৎসন্তান যে তার জন্য দু'আ করবে।” (মুসলিম: ১৬৩১)। আবু হোরায়রা বর্ণিত আরেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

“মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুর পরও তার কিছু আমল ও নেক কাজের প্রতিদান তার নিকট পৌছতে থাকবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, (১) সেই জ্ঞান যা সে অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে ও প্রচার করেছে, (২) সুসন্তান রেখে গেছে, (৩) সন্তানকে কুরআনের উত্তরাধিকারী বানিয়ে গেছে, (৪) অথবা মসজিদ তৈরি করে রেখে গেছে, অথবা (৫) মুসাফিরের জন্য একটি ঘর তৈরি করে রেখে গেছে, (৬) অথবা (জনস্বার্থে) পানি সরবরাহের জন্য একটি নদীনালা চালু করে গেছে, অথবা তার (৭) জীবিত থাকাকালীন সুস্থ অবস্থায় তার সম্পদ হতে সাদাকাহ বের করে (দান করে) গেছে, এসব কিছুর সাওয়াব তার মৃত্যুর পরও তার নিকট পৌছতে থাকবে।” (ইবনে মাজাহ: ২৪২)
এ কাজগুলো জীবদ্দশায় করে গেলে মৃত্যুর পরে তার নেক আমল জারী থাকবে। কিন্তু এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, যদি তার কোন সন্তান বা তার আত্মীয় বা আপনজন বা ওয়ারিশ মাইয়্যেতের পক্ষ থেকে জীবিত লোকের খরচে এ প্রকার সদাকাহগুলো করে থাকে আর এ নিয়ত করে যে, এসব কাজের সাওয়াব উক্ত মাইয়্যেতের জন্য, তাহলে এতেও মাইয়্যেত সদাকায়ে জারিয়াহর সাওয়াব পেতে থাকবে। তবে সাবধান! যেসব কাজে মাইয়্যেতের কোন উপকার হয় না সেগুলো হলো: কারো মৃত্যুর পরপরই গরু-ছাগল জবাই করে খানার আয়োজন করা। বাহ্যত আমাদের চোখে কাজটি ভালো মনে হলেও ইসলামী শরীয়তে এর অনুমোদন নেই। বরং এটি তীব্রভাবে নিষিদ্ধ। এটাকে বলা হয় নিয়াহাহ অর্থাৎ মাতম যা হারাম। সাহাবী জারীর ইবনে আবদুল্লাহ আল-বাজালী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,

“মৃতের পরিবারের নিকট জমায়েত হওয়া এবং দাফনের পর খানার আয়োজন করাকে আমরা (নিয়াহা' অর্থাৎ) মাতম গণ্য করতাম।” (আহমাদ: ৬৯০৫) এছাড়াও নিম্নবর্ণিত কাজগুলো করা জায়েয নেই:
১. মাইয়্যেতের পক্ষ থেকে তার কাযা নামায আদায় করা, (২) সে বেঈমান হয়ে থাকলে তার পক্ষ থেকে ঈমান আনা ও তাওবাহ করা, (৩) মাদরাসার ছাত্র বা গ্রামের মোল্লা দিয়ে কুরআন খতম করা, (৪) শাবিনা পাঠ, (৫) ফাতেহা খানী, (৬) কুলখানী, (৭) চল্লিশা করা, (৮) চেহলাম, (৯) মৃত্যু বার্ষিকী পালন, (১০) মৃত্যু বার্ষিকীর দিন খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন, (১১) নীরবতা পালন, (১২) কফিনে বা কবরে ফুল দেওয়া- এগুলো জায়েয নয় এবং এতে মাইয়্যেতের কোন উপকারও হয় না। তাছাড়া মাইয়্যেতের জন্য কুরআন খতম করে টাকা দেওয়া-নেওয়া এবং মৃত ব্যক্তি ও নবীদের নামে এর সওয়াব বখশে দেওয়া- এগুলো আরেক অদ্ভুত ধরনের বিদআত।