এক বা একাধিক কারণে ওযু ভঙ্গ হতে পারে । দলীল ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ নিমে তা। আলোচনা করা হলো:
১. পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া
পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে প্রস্রাব, পায়খানা, বায়ু, কৃমি, মযী, মনি এবং মেয়েদের হায়েয বা নিফাসের রক্ত বের হলে ওযু ভঙ্গ হয়ে যায়। (আবু দাউদ: ২০৬)।
২. শরীরের যেকোন অঙ্গ থেকে নাপাকি বের হওয়া
অপারেশন করে পাইপের মাধ্যমে প্রস্রাব-পায়খানা বের করলে বা শরীরের কোন ক্ষতস্থান থেকে বেশি পরিমাণ রক্ত, বমি বা পুঁজ বের হলে ওযু ভঙ্গ হয়ে যায় । (ফাতাওয়া বিন বায৩/২৯৪)
৩. গোসল ফরয হয় এমন কিছু ঘটে যাওয়া
যেসব কারণে গোসল ফরয হয় সেসব ঘটনায় ওযূও ভঙ্গ হয়ে যায় ।
৪. শুয়ে, চিৎ হয়ে বা ঠেস দিয়ে ঘুমানো
শুয়ে বা হেলান দিয়ে ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হয়। কিন্তু বসে বসে ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হয় না।
৫. হুঁশ জ্ঞান হারিয়ে ফেলা
পাগল, বেহুঁশ বা মাতাল হয়ে যাওয়া বা কোন ঔষধ সেবনের কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে ওযূ ছুটে যায়। (তিরমিযী: ৯৬; মুগনী- ১/২৩৪)। মস্তিষ্কের বিকৃতি বা চেতনা হারিয়ে ফেললেও ওযু থাকে না।
৬. লজ্জাস্থান স্পর্শ করা
বিনা আবরণে হাত দ্বারা লিঙ্গ স্পর্শ করলে ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে কাপড়ের উপর দিয়ে স্পর্শ হলে ওযু ভাঙবে না।
ক. বুছরা বিনতে সাফওয়ান (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার লিঙ্গ স্পর্শ করল (তার ওযূ ছুটে গেল, অতএব) সে যেন আবার ওযূ করে নেয়।” (আবু দাউদ: ১৮১)
খ. উম্মে হাবীবা (রা) বর্ণিত অপর এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “যে (পুরুষ বা মেয়ে) লোক তার লিঙ্গ স্পর্শ করল (তার ওযু ভঙ্গ হয়ে গেল, অতএব) সে যেন আবার ওযূ করে নেয়।” (ইবনে মাজাহ: ৪৮১)।
গ. আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “যদি তোমাদের মধ্যে কোন নারী বা পুরুষ তার হাত দিয়ে কাপড়ের আবরণ ছাড়া সরাসরি তার লিঙ্গ স্পর্শ করে তাহলে তাকে আবার ওযূ করতে হবে।” (ইবনে হিব্বান: ২১০) এ হাদীস থেকেও প্রমাণিত হলো যে, লিঙ্গে হাতের ছোঁয়া লাগা ওযু ভঙ্গের কারণ । কিন্তু হাতের কজির উপরের অংশের ছোঁয়া লাগলে ওযু নষ্ট হবে না। (শারহুল মুমতি) পক্ষান্তরে হানাফী ফকীহগণের মতে লিঙ্গ স্পর্শ ওযু ভঙের কারণ নয়। তাদের দলীল হলো, তলক ইবনে আলী (রা)-এর একটি হাদীস । একবার এক ব্যক্তি (সম্ভবত সে একজন বেদুঈন) এসে রাসূলুল্লাহ (স)-কে জিজ্ঞাসা করল,
“ইয়া রাসূলুল্লাহ! কোন ব্যক্তি নামাযরত অবস্থায় তার পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে তার সম্পর্কে আপনার মত কী? উত্তরে তিনি বললেন, এটা তোমার শরীরের এক টুকরা মাংস বা একটি অংশ মাত্র।” (নাসাঈ: ১৬৫) উল্লেখ্য যে, লিঙ্গ স্পর্শে ওযু ভেঙ্গে যায় এ মর্মে বর্ণিত হাদীসের সংখ্যাও বেশি এবং এগুলো সহীহ হাদীস । তাই অধিকাংশ ফকীহ বলেছেন, লিঙ্গ স্পর্শ করলে ওযু ভেঙে যায়- এ মতটিই অধিক গ্রহণযোগ্য। অতএব, সাবধান! ওযূ করে গোসল করার সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য কাপড়ের আবরণ ছাড়াই যদি লজ্জাস্থান হাত দ্বারা মাজাঘষা করে তাহলে কিন্তু ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে । আর এ অবস্থায় যদি কেউ নামায পড়ে বা ইমামতী করে তাহলে তো সর্বনাশ! তাই, হয় কাপড়ের উপর দিয়ে লিঙ্গ মাজাঘষা করবে, নতুবা পুনরায় ওযূ করে নেবে।
৭. উটের মাংস ভক্ষণ
জাবের বিন ছামুরা (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (স)-কে জিজ্ঞেস করল- উটের মাংস খেলে কি ওযু করতে হবে? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, “হ্যা, উটের মাংস খাওয়ার পর ওযূ কর” (মুসলিম: ৩৬০)। উল্লেখ্য, হানাফী ফকীহগণ নিম্নবর্ণিত দু'টি কাজকেও ওযু ভঙ্গের কারণ বলে উল্লেখ করেছেন:
১. নামাযে উচ্চঃস্বরে হাসা কিন্তু এ বক্তব্যের সপক্ষে আনিত দলীলকে মুহাদ্দিসগণ ‘মওদু’ বলেছেন। মওদু’ অর্থ হলো মানুষের বানোয়াটি কথা যা নবীর হাদীস নামে প্রচারনা করছে। তাই অন্যান্য ইমামগণের মতে নামাযে উচ্চৈঃস্বরে হাসলে ওযু ভঙ্গ হয় না। তবে এটা গর্হিত কাজ।
২. নামায অবস্থায় পুরুষদের লুঙ্গি পাজামা টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরা এর পক্ষের আনীত হাদীসও দুর্বল । আর দুর্বল হাদীস দিয়ে দলীল প্রদান গ্রহণযোগ্য নয়। টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা গুনাহের কাজ। কিন্তু এতে ওযু নষ্ট হয় না। এটাই জমহুর ফুকাহাদের রায় ।