মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী ‘উসুলুল কাফী’ গ্রন্থের মধ্যে “গোটা পৃথিবীর মালিক ইমাম” (باب أن الأرض كلها للإمام) নামক অধ্যায়ে আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: দুনিয়া ও আখেরাত ইমামের মালিকানায়, যেখানে ইচ্ছা তিনি তা রাখেন এবং আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কারস্বরূপ যার কাছে ইচ্ছা তা হস্তান্তর করেন।[1]
সুতরাং একজন বিচক্ষণ মুসলিম এই বক্তব্য থেকে কী উদঘাটন করবেন; অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সুস্পষ্ট আয়াতে বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلۡأَرۡضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا مَن يَشَآءُ ﴾ [سورة الأعراف: 128]
“যমীন তো আল্লাহরই। তিনি বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার উত্তরাধিকারী করেন”।[2]
﴿ وَلِلَّهِ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ﴾ [سورة آل عمران: 189]
“আসমান ও যমীনের সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই”।[3]
﴿ فَلِلَّهِ ٱلۡأٓخِرَةُ وَٱلۡأُولَىٰ ٢٥ ﴾ [سورة النجم: 25]
“বস্তুত ইহকাল ও পরকাল আল্লাহরই”।[4]
﴿ لَهُ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ﴾ [سورة الحديد: 2]
আসমান ও যমীনের সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র তারই।[5]
﴿ تَبَٰرَكَ ٱلَّذِي بِيَدِهِ ٱلۡمُلۡكُ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ١﴾ [سورة الملك: 1]
“মহামহিমান্বিত তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর নিয়ন্ত্রণে; তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান”।[6]
আর শিয়াগণ লেখে: “আলী বলেন: ... আমিই প্রথম, আমিই শেষ, আমিই ব্যক্ত, আমিই উপরে আর আমিই নিকটে এবং আমিই যমিনের উত্তরাধিকারী”।[7]
আর এই আকিদাটিও প্রথম আকিদার মত ভ্রান্ত। আর আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা থেকে পবিত্র ও মুক্ত; আর এটা তাঁর উপর একটা বড় ধরনের মিথ্যারোপ। তিনি এই ধরনের কথা বলতেই পারেন না।
আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ هُوَ ٱلۡأَوَّلُ وَٱلۡأٓخِرُ وَٱلظَّٰهِرُ وَٱلۡبَاطِنُ ﴾ [سورة الحديد: 3]
“তিনিই আদি, তিনিই অন্ত; তিনিই সবার উপরে এবং তিনিই সবার নিকটে”।[8]
﴿ وَلِلَّهِ مِيرَٰثُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ﴾ [سورة الحديد: 10]
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মালিকানা তো আল্লাহরই।[9]
আর প্রসিদ্ধ শিয়া মুফাসসির মকবুল আহমদ সূরা যুমারের এই আয়াতের ব্যাখ্যা করেছে:
﴿ وَأَشۡرَقَتِ ٱلۡأَرۡضُ بِنُورِ رَبِّهَا ﴾ [سورة الزمر: 69]
“বিশ্ব তার প্রতিপালকের জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হবে”। — (সূরা যুমার: ৬৯)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় সে (মকবুল আহমদ) বলেছে, জাফর সাদিক বলেন: নিশ্চয় যমিনের রব (মালিক) হলেন ইমাম। সুতরাং যখন ইমাম বের হবে, তখন তার আলোই যথেষ্ট; মানুষের জন্য চন্দ্র ও সূর্যের প্রয়োজন হবে না।[10]
তোমরা চিন্তা করে দেখ, তারা কিভাবে ইমামকে ‘রব’ (প্রতিপালক) বানিয়েছে; এমনকি তারা "بنور ربها" (তার প্রতিপালকের জ্যোতিতে)-এর অর্থ বর্ণনায় বলে: ইমামই হলেন সেই রব এবং যমিনের মালিক।
অনুরূপভাবে সূরা যুমারের এই আয়াতের ব্যাখ্যায়
﴿لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥ بَلِ ٱللَّهَ فَٱعۡبُدۡ وَكُن مِّنَ ٱلشَّٰكِرِينَ ٦٦﴾ [سورة الزمر: 65-66]
“তুমি আল্লাহর শরিক স্থির করলে তোমার কর্ম তো নিষ্ফল হবে এবং অবশ্য তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত। অতএব তুমি আল্লাহরই ইবাদত কর এবং কৃতজ্ঞ হও।” — (সূরা যুমার: ৬৫-৬৬)
এই শিয়া মুফাসসির (মকবুল আহমদ) জাফর সাদিক থেকে ‘কাফী’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন: তার (আয়াতের) অর্থ হল: যদি তোমরা আলী’র বেলায়াতের (একচ্ছত্র কর্তৃত্ব বা অভিভাবকত্বের) সাথে কাউকে শরিক কর, তবে তার ফলে তোমার আমল নিষ্ফল হবে।
অতঃপর بَلِ ٱللَّهَ فَٱعۡبُدۡ وَكُن مِّنَ ٱلشَّٰكِرِينَ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: অর্থাৎ তোমরা আনুগত্যসহ নবীর ইবাদত কর এবং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; কারণ, আমরা আপনার ভাই এবং চাচার ছেলেকে আপনার বাহুবলে পরিণত করেছি।[11]
লক্ষ্য কর, কিভাবে তারা আয়াতের ব্যাখ্যায় জাফর সাদিকের উপর মিথ্যারোপ করে; অথচ এই আয়াতগুলোর বক্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ তথা একত্ববাদ প্রসঙ্গে; আর আল্লাহই হলেন সকল কিছুর সৃষ্টা। আর সকল প্রকার ইবাদত তাঁর জন্য হওয়াই বাঞ্ছনীয়। [এ আয়াত এগুলোই প্রমাণ হয়] কিভাবে তারা তা (আয়াত) বিকৃত করল এবং তার থেকে সুস্পষ্ট শির্ককে বৈধতার প্রমাণ পেশ করল? আল্লাহ তাদেরকে উপযুক্ত এর শাস্তি প্রদান করুন।
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ [سورة الذاريات: 56]
“আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এই জন্য যে, তারা কেবল আমারই ইবাদত করবে।” — (সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬)-এর ব্যাখ্যায় এই শিয়া মুফাসসির বলেন যে, জাফর সাদিক এই আয়াতের ব্যাখ্যায় হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছেন যাতে তারা তাকে চিনতে পারে। কারণ, তারা যখন তাকে চিনবে, তখন তারা তার ইবাদত করবে। অতঃপর তাদের একজন তাকে জিজ্ঞাসা করল: চিনা-জানা বলতে কী বুঝায়? তখন সে জবাব দিল: মানুষ তাদের যামানার ইমামকে চিনবে-জানবে।[12]
আর কুলাইনী ‘উসুলুল কাফী’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ইমাম মুহাম্মদ বাকের বলেন: আমরা আল্লাহর চেহারা; আমরা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে তার চোখ এবং তার হাত যা রহমতসহ তার বান্দাদের উপর সম্প্রসারিত।[13]
অনুরূপভাবে সে বলে: আমরা আল্লাহর জিহ্বা; আমরা আল্লাহর চেহারা এবং আমরা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে তার চোখ।[14]
আর আবূ আবদিল্লাহ আ. (জাফর সাদিক) থেকে বর্ণিত, আমীরুল মুমিনীন আ. বেশি বেশি বলতেন: জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে বণ্টনকারী ... আমাকে এমন কতগুলো বৈশিষ্ট্য দেয়া হয়েছে, যা আমার পূর্বে আর কাউকে দেয়া হয়নি; আমি জানি মৃত্যু, বালা-মুসিবত, বংশ এবং বক্তৃতা-বিবৃতির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সম্পর্কে। সুতরাং আমার পূর্বেকার কোন বিষয় আমার জানা থেকে বাদ পড়েনি এবং আমার নিকট থেকে যা অদৃশ্য, তাও আমার কাছ থেকে অজানা থাকে না।[15]
তোমরা লক্ষ্য কর, কিভাবে তারা আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলীকে আলী’র জন্য সাব্যস্ত করার সাহস করল।
অনুরূপভাবে সূরা আল-কাসাসের
﴿كُلُّ شَيۡءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجۡهَهُ﴾ [سورة القصص: 88]
“তাঁর (আল্লাহর) চেহারা (সত্তা) ব্যতীত সব কিছুই ধ্বংসশীল”। — (সূরা আল-কাসাস: ৮৮)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় শিয়া মুফাসসির মকবুল আহমদ বলেন, জাফর সাদিক তার ব্যাখ্যায় বলেন: আমরা আল্লাহর (চেহারা) সত্তা। অতএব তোমরা লক্ষ্য কর, কিভাবে তারা ইমামকে অবিনশ্বর ইলাহ বা মা‘বুদে পরিণত করেছে; অথচ যালিমগণ যা বলে, তার থেকে আল্লাহ অনেক মহান, উচ্চ।
কুলাইনী তার গ্রন্থের কোন এক অধ্যায়ে উল্লেখ করেন: ইমামগণ যা হয়েছে এবং যা হবে, তার জ্ঞান রাখেন; আর তাদের নিকট কোন কিছুই গোপন নেই।
আবূ আবদিল্লাহ আ. (জাফর সাদিক) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি অবশ্যই আসমান ও যমিনে যা কিছু আছে, তা জানি এবং আমি আরও জানি জান্নাত ও জাহান্নামে যা কিছু আছে। আর যা হয়েছে এবং যা হবে, তাও আমি জানি।[16]
অনুরূপভাবে ‘উসুলুল কাফী’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে: “তারা (ইমামগণ) যা ইচ্ছা করে, তা হালাল করতে পারে; আবার যা ইচ্ছা করে, তা হারামও করতে পারে। আর তারা কখনও কিছুর ইচ্ছা করেন না, যতক্ষণ না মহান আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করেন।[17]
অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَآ أَحَلَّ ٱللَّهُ لَكَ ﴾ [سورة التحريم: 1]
“হে নবী! আল্লাহ যা তোমার জন্য হালাল করেছেন, তা তুমি কেন হারাম করলে”। — (সূরা তাহরীম: ১)
সুতরাং আল্লাহ যখন তাঁর রাসূলকে হালাল জিনিসকে হারাম করার কারণে সতর্ক করে দিয়েছেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্যের দ্বারা তা কি করে সম্ভব হতে পারে।
কুলাইনী তার গ্রন্থের কোন এক অধ্যায়ে আরও উল্লেখ করেন: ইমামগণ জানেন যে, তারা কখন মারা যাবেন; আর তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী মারা যাবেন। আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: কোন ইমাম যদি তার উপর আপতিত বিপদাপদ ও তার পরিণতি সম্পর্কে না জানে; তবে সে ইমাম আল্লাহর সৃষ্টির ব্যাপারে দলিল (হিসেবে গ্রহণযোগ্য) নয়।[18] অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُ﴾ [سورة النمل: 65]
“বল, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বা গায়েবী বিষয়সমূহের জ্ঞান রাখে না”। — (সূরা আন-নমল: ৬৫) মহান আল্লাহ্ আরও বলেন,
﴿ وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَ ﴾ [سورة الأنعام: 59]
“আর অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে, তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জনে না”। — (সূরা আল-আন‘আম: ৫৯)
কিন্তু শিয়াগণ তাদের ইমামদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞানের ব্যাপারে আল্লাহর সাথে শরিক করে।
কুলাইনী তার গ্রন্থের কোন এক অধ্যায়ে আরও উল্লেখ করেন: ইমামগণকে যদি গোপনে জিজ্ঞেস করা হতো, তবে তারা প্রত্যেক মানুষের যাবতীয় কল্যাণ ও অকল্যাণ বলে দিত।
কুলাইনী ‘উসুলুল কাফী’ (এটা শিয়াদের মহাগ্রন্থ) গ্রন্থের “ইমামগণ ফেরেশতা, নবী ও রাসূলগণের নিকট প্রেরিত সকল জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত” (باب أن الأئمة يعلمون جميع العلوم التي خرجت إلى الملائكة و الأنبياء و الرسل عليهم السلام) নামক অধ্যায়ে আরও উল্লেখ করেন: সামা‘আ থেকে বর্ণিত, সে আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণনা করেছেন, সে বলল: ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার নিকট দুই ধরনের জ্ঞান রয়েছে: এক প্রকারের জ্ঞান সম্পর্কে তাঁর ফেরেশতা, নবী ও রাসূলগণ অবহিত; সুতরাং যে বিষয়ে তাঁর ফেরেশতা, নবী ও রাসূলগণ অবহিত, তা আমরা জানি। আরেক প্রকার জ্ঞান হল যা একচেটিয়া তাঁর (আল্লাহর) নিজের জন্য; সুতরাং সেখান থেকে কোন বিষয়ে যখন আল্লাহর বোধোদয় হয়, তখন তিনি তা আমাদেরকে জানিয়ে দেন এবং আমাদের পূর্বে যেসব ইমাম ছিলেন, তাদের নিকট তা পেশ করেন।’ তোমরা লক্ষ্য কর, তারা তাদের ইমামদেরকে তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী ফেরেশতা, নবী ও রাসূলগণের চেয়ে বেশি জ্ঞানী মনে করে। আর জ্ঞানের ক্ষেত্রে তারা তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার অংশীদার মনে করে। এই সবগুলোই মিথ্যা, বানোয়াট ও কুফরী।
আর ‘উসুলুল কাফী’ এবং শিয়াদের অন্যান্য গ্রন্থসমূহ এই ধরণের মারাত্মক বিষয়াদি দ্বারা পরিপূর্ণ। আমরা এখানে যা উল্লেখ করেছি, তা নিতান্তই কম। আর উর্দু ভাষায় শিয়াদের অনেক কাব্য রয়েছে, যেগুলো আল্লাহর সাথে শির্ক এবং তাদের ইমামদের নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি দ্বারা ভরপুর; তার কিছু অংশে বর্ণিত আছে যে, সকল নবী বিপদ-মুসিবতের সময় আলী’র নিকট সাহায্য-সহযোগিতা চাইত; অতঃপর তিনি তাদেরকে সাহায্য করতেন। সুতরাং নূহ আ. প্লাবনের সময় তার নিকট সাহায্য চেয়েছেন; ইবরাহীম, লুত, হুদ ও শীস আ.-সহ সকলেই তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছেন এবং তিনি তাদের সাহায্য করেছেন। আর আলী’র মু‘জিযাসমূহ খুবই মহান, বিস্ময়কর এবং প্রত্যেক বস্তুর উপর প্রভাবশালী (নাউযুবিল্লাহ)।
আর শিয়াদের নিকট নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহ থেকে আমরা কয়েকটি বর্ণনা মাত্র এখানে লিপিবদ্ধ করেছি। পাঠকদের জানা উচিত যে, তাদের গ্রন্থসমূহ এ ধরনের শির্ক মিশ্রিত আকিদায় ভরপুর। সুতরাং এসব ভ্রান্ত আকিদায় বিশ্বাস করার পরও কোন ব্যক্তি মুসলিম থাকতে পারে কি?
কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ٱللَّهُ خَٰلِقُ كُلِّ شَيۡءٖۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ وَكِيلٞ ٦٢﴾ [سورة الزمر: 62]
“আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সকল কিছুর কর্মবিধায়ক”। — (সূরা যুমার: ৬২)
তিনি আরও বলেন:
﴿ وَلَا يُشۡرِكُ فِي حُكۡمِهِۦٓ أَحَدٗا ٢٦ ﴾ [سورة الكهف: 26]
“তিনি কাউকেও নিজ কর্তৃত্বে শরিক করেন না”। — (সূরা আল-কাহফ: ২৬)
তিনি আরও বলেন:
﴿ ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡحَيُّ ٱلۡقَيُّومُۚ لَا تَأۡخُذُهُۥ سِنَةٞ وَلَا نَوۡمٞۚ لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ ﴾ [سورة البقرة: 255]
“আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সমস্ত তাঁরই।” — (সূরা আল-বাকারা: ২৫৫)
তিনি আরও বলেন:
﴿وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥﴾ [سورة الزمر: 65]
“তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই ওহী হয়েছে, তুমি আল্লাহর শরিক স্থির করলে তোমার কর্ম তো নিষ্ফল হবে এবং অবশ্য তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্ত।” — (সূরা যুমার: ৬৫)
তিনি আরও বলেন:
﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُ﴾ [سورة النساء: 116]
“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না; এটা ব্যতীত সব কিছু যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন”। — (সূরা আন-নিসা: ১১৬)
তিনি আরও বলেন:
﴿ إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُ﴾ [سورة المائدة: 72]
“কেউ আল্লাহর সাথে শরিক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই নিষিদ্ধ করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম”। — (সূরা আল-মায়িদা: ৭২)
তিনি আরও বলেন:
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَخۡفَىٰ عَلَيۡهِ شَيۡءٞ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فِي ٱلسَّمَآءِ ٥ ﴾ [سورة آل عمران: 5]
“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট আসমান ও যমিনে কিছুই গোপন থাকে না”। — (সূরা আলে ইমরান: ৫)
সুতরাং এই আয়াত ও অনুরূপ অন্যান্য আয়াত খুবই স্পষ্ট যে, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বস্তুর একক স্রষ্টা এবং আসমান ও যমিনের ব্যবস্থাপক। আর তিনিই প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাবান এবং তিনিই সব কিছুই জানেন।
পক্ষান্তরে শিয়াগণ আল্লাহ্র গুণাবলীকে তাদের ইমামের জন্য সাব্যস্ত করেন; আর আল্লাহ্র গুণাবলী আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য সাব্যস্ত করা কি শির্ক নয়?আর যে ব্যক্তি এসব গুণাবলী আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য সাব্যস্ত করাকে বৈধ বলে বিশ্বাস করে, সে কি মুশরিক নয়? হ্যাঁ, অবশ্যই তা আল্লাহর গুণাবলীর মধ্যে শির্ক। আর এসব কথার প্রবক্তাগণ প্রকৃতই মুশরিক।
[2] সূরা আল-আ‘রাফ: ১২৮
[3] সূরা আলে ইমরান: ১৮৯
[4] সূরা আন-নাজম: ২৫
[5] সূরা আল- হাদীদ: ২
[6] সূরা আল-মুলক: ১
[7] ‘রিজালু কাশী’ (رجال كشي), পৃ. ১৩৮ (ভারতীয় ছাপা)।
[8] সূরা আল- হাদীদ: ৩
[9] সূরা আল- হাদীদ: ১০
[10] তরজমাতু মকবুল আহমদ, পৃ. ৩৩৯ (আসল বক্তব্য উর্দু ভাষায়; আমরা পুরাপুরি আমানতের সাথে আরবি অনুবাদ করেছি)।
[11] তরজমাতু মকবুল আহমদ, পৃ. ৯৩২
[12] তরজমাতু মকবুল আহমদ, পৃ. ১০৪৩
[13] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৮৩
[14] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ১৯৩
[15] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ১১৭
[16] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ১৬০
[17] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ২৭৮
[18] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ২৭৮। (অর্থাৎ গায়েব জানতে হবে, নতুবা ইমাম হতে পারবে না। মনে হচ্ছে যেন তারা ইমামদেরকে মুশরিক না বানানো পর্যন্ত অনুসরণযোগ্য মনে করে না।) [সম্পাদক]