সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্যই, যিনি ব্যতীত আমাদের অপর কোন প্রতিপালক ও উপাস্য নেই। দরূদ ও সালাম সেই রাসূল, তাঁর পরিবার ও সাহবীদের প্রতি, যাঁর অনুসরণ, আনুগত্য ও ভালোবাসা ব্যতীত আমাদের ইহকাল ও আখেরাতে শান্তি ও মুক্তির কোনই উপায় নেই। কেয়ামত দিবস পর্যন্ত যারা এককভাবে আল্লাহ তা‘আলাকেই তাদের প্রতিপালক ও উপাস্য হিসেবে গণ্য ক’র এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আল্লাহ তা‘আলার সর্বশেষ রাসূল হিসেবে মনে করে নিঃশর্তভাবে কেবল তাঁরই আদর্শের অনুসরণ ও অনুকরণ করে, তাদের উপরেও আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।
অতঃপর, আমরা মৃত্যুর সাথে সাথে এমন এক জগতে পদার্পণ করবো যেখানে চিরস্থায়ী শান্তি আর অনাবিল আনন্দ কেবল তাদের জন্যেই অপেক্ষা করছে, যারা সেখানে সঠিক ঈমান ও ‘আমলের অধিকারী বলে স্বীকৃতি লাভে ধন্য হবে। আর চিরস্থায়ী শাস্তি আর অকল্পনীয় দুঃখ ও দুর্দশা কেবল তাদের জন্যেই অপেক্ষা করছে, যারা সেখানে শির্কের মত ক্ষমার অযোগ্য অপরাধে দণ্ডিত হবে।
এ পৃথিবী হচ্ছে মানুষের আখেরাতে শান্তিময় জীবন লাভের কর্ম ক্ষেত্র। মানুষ যাতে এখানে আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদে বিশ্বাসী হয়, সে-জন্যে রয়েছে তাঁর নানারকম আয়োজন। আমরা রূহ জগতে থাকাকালে তিনি যেমন এ-জন্য আমাদের নিকট থেকে তাঁর রুবূবিয়্যাতের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত স্বীকৃতি নিয়েছেন, তেমনি আমাদেরকে এখানে সৃষ্টি করার সময়ও তাঁকে স্বীকৃতি দানের উপযোগী করে সৃষ্টি করেছেন। আবার যখনই মানুষেরা পারিপার্শ্বিক বিবিধ কারণে তাঁর তাওহীদ থেকে বিচ্যুত হয়ে তাঁর রুবূবিয়্যাত ও উলূহিয়্যাতে শির্কে লিপ্ত হয়েছে, তখনই তিনি তাদের হেদায়তের জন্যে যুগে যুগে প্রেরণ করেছেন নবী ও রাসূল। তাঁদের সাথে দিয়েছেন হেদায়তের অমিয় বাণী। এ ধারাবাহিকতায় বিশ্ব মানবতার হেদায়তের জন্যে সর্ব শেষ রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে। তাঁকে দিয়েছিলেন তাঁর সর্বশেষ বাণী আল-কুরআন। যার প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ তিনি করেছেন তাঁর সুন্নাতের মাধ্যমে। যারাই তাঁকে ভালবেসে নিঃশর্তভাবে এ দু’য়ের অনুসরণ ও অনুকরণ করবে, তারাই হবে সেখানে সফলকাম। কিন্তু মানুষের এ সফলতার সম্মুখে অন্তরায় হচ্ছে তাদের চির শত্রু শয়তান। আদম আলাইহিস সালাম-কে সেজদা না করার ফলে যেদিন সে আল্লাহর অভিসম্পাত প্রাপ্ত হয়েছিল, সেদিনই সে আদম সন্তানদেরকে তার মতই অভিশপ্ত করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেছিল। সে বলেছিল :
﴿قَالَ فَبِمَآ أَغۡوَيۡتَنِي لَأَقۡعُدَنَّ لَهُمۡ صِرَٰطَكَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ١٦ ثُمَّ لَأٓتِيَنَّهُم مِّنۢ بَيۡنِ أَيۡدِيهِمۡ وَمِنۡ خَلۡفِهِمۡ وَعَنۡ أَيۡمَٰنِهِمۡ وَعَن شَمَآئِلِهِمۡۖ وَلَا تَجِدُ أَكۡثَرَهُمۡ شَٰكِرِينَ ١٧ ﴾ [الاعراف: ١٦، ١٧]
‘‘আপনি যেমন আমাকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করলেন তেমনি আমিও অবশ্য (এ আদমের সন্তানদেরকে) পথভ্রষ্ট করার জন্য আপনার সরল পথে বসে থাকব, অতঃপর তাদের সমুখ, পশ্চাৎ, ডান ও বাম দিক থেকে তাদের কাছে আসব। আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।’’[1]
বস্তুত শয়তান তার এ সংকল্প বান্তবায়ন করার জন্যে নানারকম অপকৌশল গ্রহণ করে চলেছে। আর সে সব অপকৌশলের মাধ্যমে সে বনী আদমকে জড়িত করেছে বিবিধ রকমের অপরাধমূলক কর্মে। যার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ অপরাধ হচ্ছে শির্ক। এ শির্কজনিত কারণেই সে অতীতের কাওমে নূহ, ‘আদ ও ছামূদ...ইত্যাদি জনপদের লোকদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল। সৃষ্টিকর্তা, জীবন-জীবিকা, মৃত্যু ও সব কিছুর মূল পরিচালক হিসেবে আল্লাহ তা‘আলাকে স্বীকৃতিদানকারী, দ্বীনে ইব্রাহীমের অনুসারীর দাবীদার, কা‘বা শরীফের খাদেম কুরায়শ ও আরব জনপদের লোকদেরকেও সে এ শির্কের মাধ্যমেই পথভ্রষ্ট করেছিল। তাদেরকে কতিপয় সৎমানুষ এবং লাত, উজ্জা ও মানাত নামের কাল্পনিক দেবীসমূহ ছাড়াও আরো অসংখ্য প্রতিমা ও দেব-দেবীকে আল্লাহ তা‘আলার রুবূবিয়্যাতের কোন কোন বৈশিষ্ট্যে শরীক বলে ধারণা দিয়ে তাদের উপাসনায় লিপ্ত করেছিল। আল্লাহর অলি ও সে-সব দেব-দেবীকে আল্লাহ তা‘আলা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী ও সুপারিশকারীর ভূমিকা পালনকারী বলেও তাদেরকে ধারণা দিয়েছিল এবং তাঁদের মধ্যস্থতা ও সুপারিশ পাওয়ার নিমিত্তে আল্লাহর উপাসনার পাশাপাশি এদেরও নানাবিধ উপাসনা করতে অভ্যস্থ করেছিল। তৎকালে হাতে গোণা কিছু লোক ব্যতীত অবশিষ্ট সকল লোকদেরকেই বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে শয়তান তার অতীত সংকল্পকে বান্তবে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিল। সে জন্য কুরআনুল কারীম অবতীর্ণ হওয়ার সময়ের মানুষের ঈমান ও ‘আমলের শোচনীয় অবস্থা বিচারে আল্লাহ তা‘আলা বলেছিলেন :
﴿ وَلَقَدۡ صَدَّقَ عَلَيۡهِمۡ إِبۡلِيسُ ظَنَّهُۥ فَٱتَّبَعُوهُ إِلَّا فَرِيقٗا مِّنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢٠﴾ [سبا: ٢٠]
‘‘আর শয়তান তাদের উপর তার ধারণা সত্যে পরিণত করেছিল। ফলে তাদের মধ্যে মু’মিনদের একটি দল ব্যতীত সকলেই তার পথ অনুসরণ করেছিল।’’[2]
তবে আল্লাহ তা‘আলার অপার অনুগ্রহে সর্বশেষ নবীর শুভাগমন এবং তাঁর ও তাঁর যোগ্য উত্তরসূরীদের সুযোগ্য নেতৃত্বে ইসলামের জয়যাত্রার ফলে আরব বিশ্বসহ এর পার্শ্ববর্তী পারস্য ও রোমান অঞ্চল থেকে শির্ক বিতাড়িত হয়ে সেখানে তাওহীদের পতাকা উড্ডীন হয়েছিল। সেখান থেকে ধীরে ধীরে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল তাওহীদের অমিয় বাণী। যার ফলে ছিন্ন হয়েছিল শয়তানের দীর্ঘ দিনের পাতানো চক্রান্তের জাল। আমাদের দেশসহ বিভিন্ন দেশের অধিকাংশ মানুষ শয়তানের দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে পরিণত হয়েছিল এক আল্লাহর দাসে।
সভ্যতার উত্থান ও পতন এটি যেন ইতিহাসের একটি অমোঘ বিধান। তাই এ বিধানের হাত থেকে ইসলামও রক্ষা পায়নি। অতীতের বিভিন্ন জাতির লোকেরা যেমন শয়তানের চক্রান্তে পড়ে ধীরে ধীরে সঠিক দ্বীন পালন থেকে বিচ্যুত হয়ে পুনরায় শির্কে নিমজ্জিত হয়েছিল, ঠিক তেমনি ইসলামের পরবর্তী অসংখ্য অনুসারীরাও শয়তানের চক্রান্তে পড়ে ধীরে ধীরে সঠিক দ্বীন পালন থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। শয়তান অতীতের মানুষদেরকে যে-সব ধ্যান-ধারণা দিয়ে ও অপকৌশল প্রয়োগ করে বিভ্রান্ত করে আল্লাহর রুবূবিয়্যাত ও উলূহিয়্যাতে শির্কে লিপ্ত করেছিল, সে সব ধ্যান-ধারণা ও অপকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমেই সে অসংখ্য মুসলিমকেও আল্লাহর রুবূবিয়্যাত ও উলূহিয়্যাতে শির্কে লিপ্ত করেছে। তাই শির্কের মত জঘন্য অপরাধে আজ বিশ্বের অসংখ্য মুসলিম জর্জরিত। প্রবল প্রতাপের সাথে যে-সব স্থানে ইসলাম তার তাওহীদী চিন্তাধারা নিয়ে প্রবেশ করে শির্ককে বিদায় জানিয়েছিল, বহুযুগ পূর্বেই সে সব স্থানের সাধারণ মুসলিমদের মাঝে তাওহীদী চিন্তার পাশাপাশি শির্কও পুনরায় আপন স্থান করে নিয়েছে। সে হিসেবে আমাদের দেশে তাওহীদের অবস্থা যে কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়। এখানে যেমন ইসলাম এসেছে অনেকটা ধীরগতিতে, তেমনি আসার পথে প্রভাবিত হয়েছে ভারতীয় হিন্দু বৈরাগ্যবাদের বিষক্রিয়ায়। যার ফলে এদেশের অধিকাংশ মানুষ ইসলাম গ্রহণের প্রাক্কালে প্রকৃত তাওহীদ সম্পর্কেই যথার্থ জ্ঞান লাভ করতে পারে নি। যারা পেরেছিল তাদের পরবর্তী প্রজন্মের লোকেরা ধর্মীয় শিক্ষার অভাব ও এখানে বৃটিশ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে সে জ্ঞান বেশী দিন ধরে রাখতে পারেনি। যার ফলে দেখা যায়, যে সব আলেম ও অলিগণ এদেশে এসেছিলেন শির্ক বিনাশ করে তাওহীদের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করতে, সময়ের পরিবর্তনে শয়তানের চক্রান্তে পড়ে তাঁদের ভক্ত ও সাধারণ অজ্ঞ মুসলিমদের দ্বারা স্বয়ং তাঁদের কবর ও মাযারসমূহই শির্ক চর্চা করার একেকটি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আল্লাহর রহমতে ধীরে ধীরে ইসলামী জ্ঞানের চর্চা পূর্বের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে এ সব মাযার ও কবর সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা অনেকটা দূরীভূত হলেও এখনও সাধারণ মানুষের অন্তর থেকে অলিদের ব্যাপারে শির্কী চিন্তাধারার অবসান ঘটে নি। অলিদের মাযার কেন্দ্রিক ছাড়াও এ দেশের সাধারণ মুসলিমদের মাঝে আরো বিভিন্ন উপায়ে শির্কী কর্মকাণ্ড অহরহ হয়েই চলেছে।
শির্ক মানুষের ধ্যান-ধারণা, কর্ম ও অভ্যাসের মধ্যকার যেখানেই হোক, এটি এমন একটি বিষক্রিয়া যে, যদি কারো জীবনে কখনও একটি মাত্র শির্কও সংঘটিত হয় এবং তাত্থেকে সে ব্যক্তি তাওবা করে মরতে না পারে, তা হলে এই একটি শির্কই তার ঈমান ও জীবনের যাবতীয় সৎকর্মকে নিষ্ফল করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। এ ধরনের লোকদের ঈমান ও ‘আমলের অশুভ পরিণতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন :
﴿ قُلۡ هَلۡ نُنَبِّئُكُم بِٱلۡأَخۡسَرِينَ أَعۡمَٰلًا ١٠٣ ٱلَّذِينَ ضَلَّ سَعۡيُهُمۡ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَهُمۡ يَحۡسَبُونَ أَنَّهُمۡ يُحۡسِنُونَ صُنۡعًا ١٠٤ ﴾ [الكهف: ١٠٣، ١٠٤]
‘‘বলুন : আমি কি তোমাদেরকে সে-সব লোকদের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক থেকে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত? তারা সে-সব লোক, যাদের পার্থিব জীবনের প্রচেষ্টা বিভ্রান্ত হয়, অথচ তারা মনে করে যে তারা সৎকর্ম করছে।’’[3]
এ পৃথিবীতে আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর তাওহীদের স্বীকৃতি দান, এর সংরক্ষণ, প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করার জন্যে। এটি এমন একটি কাজ যে, এনিয়ে কারো দ্বিমত পোষণ বা এ নিয়ে মতবিরোধ করারও কোন অবকাশ নেই। সে জন্য মহান আল্লাহ বলেন :
﴿أَنۡ أَقِيمُواْ ٱلدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُواْ فِيهِۚ﴾ [الشورى: ١٣]
‘‘তোমরা দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর এবং তা প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার মতবিরোধ করো না।’’[4]
এ দ্বীন প্রতিষ্ঠার মূল কথা হচ্ছে কালিমায়ে তাওহীদকে সঠিকভাবে হৃদয়ঙ্গম করা ও এর উপর মৃত্যু পর্যন্ত সুপ্রতিষ্ঠিত থাকা। আর এর উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকার দাবী হচ্ছে এ তাওহীদকে বিনষ্টকারী শির্ক নামের মহা অপরাধটি কী এবং সমাজে এটি কেন সংঘটিত হয়, সে সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান রাখা। তা না হলে যে কোন সময় শয়তানের খপ্পরে পড়ে যে কারো ঈমান ও জীবনের সৎকর্মের যাবতীয় সাধনা ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। এ হেন গুরুতর পরিণতির হাত থেকে যেমন নিজেকে রক্ষা করা আবশ্যক, তেমনি এত্থেকে দেশবাসী ও বিশ্বের সকল মুসলিমকেও রক্ষা করা আবশ্যক। আর এ আবশ্যকতাবোধই আমাকে এ ব্যাপারে একটি গবেষণাকর্ম চালাতে উদ্বুদ্ধ করেছে। মানব কল্যাণমূলক এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণাকর্মের তৌফিক দানের জন্য আমি সর্বাগ্রে মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। অতঃপর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ, একাডেমিক শাখাসহ অন্যান্য শাখার কর্মকর্তা ও কমর্কচারীবৃন্দের, যাঁরা আমাকে ‘‘বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে প্রচলিত শির্ক ও বেদ‘আত : একটি সমীক্ষা’’-এ শিরোনামের উপর পি. এইচ. ডি.গবেষণা করার সুযোগ দিয়েছিলেন। আমার এ গবেষণাকর্মটি আরবী ভাষায় সম্পাদিত হওয়ার কারণে দেশের জনগণের অধিকতর উপকারের স্বার্থে এর শির্ক অংশটিকে বাংলা ভাষায় প্রকাশের জন্য আমি তাতে প্রয়োজনীয় কিছু সংযোজন ও বিয়োজন করে এর শিরোনাম দিয়েছি ‘‘শির্ক কী ও কেন?’’। আশা করি, আল্লাহ চাহে তো এ বইখানা পাঠ করলে ইসলাম থেকে বহিষ্কারকারী ও আমল বিনষ্টকারী এ জঘন্য অমার্জনীয় অপরাধ সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত হওয়া সম্ভব হবে এবং সমাজে তা সংঘটিত হওয়ার জন্য পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে কোন্ কোন্ কারণকে দায়ী করা যায়, সে সম্পর্কেও ওয়াকিফহাল হওয়া সম্ভব হবে।
আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদকে সংরক্ষণ, এর প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করাই হচ্ছে একজন মু’মিনের জীবনের প্রধানতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমি আমার এ বইখানা লেখার প্রয়াস চালিয়েছি। এতে উপস্থাপিত বক্তব্য ও তথ্যাবলী সঠিক হলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়ে থাকবে; আর অনিচ্ছাকৃতভাবে কোথাও কোন ভুল হলে তা হবে আমার ও শয়তানের পক্ষ থেকে। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল-ভ্রান্তি মার্জনা করেন এবং আমার এ প্রয়াসকে কবুল ও মঞ্জুর করেন; এর দ্বারা তিনি যেন বিপথগামী মুসলিমদেরকে সরল ও সঠিক পথের সন্ধান দান করেন।এর ওসীলায় যেন আমাকে, আমার পিতা-মাতা, পরিবার, সন্তানাদি, মু’মিন ও মু’মিনাত আত্মীয় স্বজন এবং এ বইখানা লিখতে ও তা প্রকাশ করতে যারা নিষ্ঠার সাথে আমাকে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের সকলকে আখেরাতে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করে জান্নাত নসীব করেন, আমীন ছুম্মা আমীন।
ড. মুহাম্মদ মুয্যাম্মিল আলী
অধ্যাপক
আল-হাদীস এ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
[2] . আল-কুরআন, সূরা সাবা : ২০।
[3] . আল-কুরআন, সূরা কাহাফ : ১০৪-১০৫।
[4]. আল-কুরআন.সূরা : শুরা : ১৩।