কেউ কেউ এ হাদীস দু’টি দ্বারা নবী ও ওলিদের জাতসত্তা, তাঁদের নাম, অধিকার ও মর্যাদার ওসীলায় দো‘আ করাকে জায়েয বলে দলীল দিয়ে থাকেন এবং এর ভিত্তিতেই তারা নবী, রাসূল, তথাকথিত গাউছ, কুতুব ও খাজেগানদের নাম ও মর্যাদার ওসীলায় দো‘আ করেন। রাসূল এর হুরমতের ওসীলায় দো‘আ করে বলেন :
"سهل يا إلهي كل صعب بحرمة سيد الأبرار"
‘‘হে আল্লাহ সৈয়্যিদুল আবরার এর হুরমতের ওসীলায় যাবতীয় কঠিন সমস্যাদি সহজ করে দিন।’’
অনেক সময় নামাযান্তে বা কোনো অনুষ্ঠান শেষে যৌথভাবে দো‘আ করার সময় বলে থাকেন: হে আল্লাহ সমস্ত নবী-রাসূল, সাহাবা, তাবেঈন, আইম্মায়ে কেরাম, গউছ, কুতুব ও খাজেগানদের ওসীলায় আমাদের অপরাধ মার্জনা করুন, ইহকাল-আখেরাতে কল্যাণ দান করুন এবং অকল্যাণ দূর করুন...ইত্যাদি।
তারা এ জাতীয় ওসীলা বৈধ বলে প্রমাণ করার জন্য বলেন: প্রথম হাদীস দ্বারা বাহ্যত প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যক্তিকে তাঁর নাম ও মর্যাদার ওসীলায় দো‘আ করতে শিখিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যক্তির জন্য তাৎক্ষণিক কোনো দো‘আ করেছেন বলেও এ হাদীসের বর্ণনায় কোনো প্রমাণ নেই। তাদের মতে এতে বুঝা যায় যে, তিনি তাঁর নামের ওসীলায়ই তাকে দো‘আ করতে শিখিয়েছেন। আর দ্বিতীয় হাদীসেও আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার দো‘আর ওসীলার কথা বর্ণিত না হওয়ায় তাদের মতে এ-হাদীসের দ্বারাও নবী ও ওলিদের নাম, জাত ও মর্যাদার ওসীলায় দো‘আ করার বৈধতা প্রমাণিত হয়। তবে নিম্নে বর্ণিত বিষয়াদির প্রতি লক্ষ্য করলে বুঝা যাবে যে, বাহ্যত উভয় হাদীস দ্বারা উক্ত সন্দেহের সম্ভাবনা প্রমাণিত হলেও আসলে প্রথম হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে ব্যক্তিকে তাঁর নামের ওসীলায় দো‘আ করতে বলেন নি। দ্বিতীয় হাদীসেও ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার জাত বা তাঁর মর্যাদার ওসীলায় দো‘আ করেন নি। বরং উভয় হাদীস দ্বারাই তাঁদের দো‘আর ওসীলা গ্রহণের কথাই প্রমাণিত হয়। লক্ষ্যণীয় বিষয়সমূহ নিম্নরূপ :
(ক) প্রথম হাদীসে যদিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দো‘আ করার কোনো বর্ণনা নেই, তবে এ না থাকাটি তাঁর দো‘আ না করার বিষয়টিকে অকাট্যভাবে প্রমাণ করে না। কারণ, এ হাদীসের প্রথম ও শেষাংশের দিকে লক্ষ্য করলে তাঁর সে ব্যক্তির জন্য দো‘আ করার কথাই প্রমাণিত হয়। কেননা, সেতো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দো‘আ করতে বলেছে এবং তিনিও তাকে দো‘আ করা বা ধৈর্য ধারণ করার কথা বলেছেন এবং তাকে যে দো‘আ শিক্ষা দিয়েছেন তাতে তাকে এই বলতে বলেছেন : (اللهم فشفعه في) ‘‘হে আল্লাহ! আমার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শাফা‘আত তথা তাঁর দো‘আ কবুল কর’’। এ সবের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে ব্যক্তির জন্য দো‘আ করেছিলেন। তবে বর্ণনাকারী তা বর্ণনা করাকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন নি। কারণ, তার দৃষ্টিতে সে ব্যক্তির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দো‘আ করার বিষয়টি বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই তার দৃষ্টিতে যা বলার প্রয়োজন, তিনি সেটুকুই বলেছেন।
(খ) এ হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, সে ব্যক্তি দো‘আ করতে বললে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দো‘আ করার ওয়াদা দিয়েছেন। সে যখন দো‘আ করার বিষয়টি বেছে নিয়েছে, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য অবশ্যই দো‘আ করে থাকবেন। নতুবা এতে ওয়াদা খিলাফী হওয়া জরুরী হয়ে পড়বে, যা রাসূলের ব্যাপারে কল্পনা করা যায় না।
(গ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যে দো‘আ শিখিয়েছেন তাতে বর্ণিত(اللهم فشفعه في) বাক্যটির অর্থ হচ্ছে- ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দো‘আ কবুল কর’’। এ কথাটি প্রমাণ করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দো‘আ করেছিলেন। নতুবা সে ব্যক্তির দো‘আর মধ্যে তাকে এ কথা বলতে শিখানোর কোনো অর্থ থাকে না।
(ঘ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম, জাত ও মর্যাদার ওসীলা করে দো‘আ করা বৈধ হলে সে ব্যক্তির পক্ষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে দো‘আ চাওয়ার কোনো প্রয়োজন হতো না। তার নিজের বাড়ীতে বসেইতো সে তা করে নিতে পারতো। কিন্তু তা না করে যখন রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে তাঁর দো‘আ কামনা করেছে, তখন এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এ হাদীস দ্বারা রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম, জাত ও মর্যাদার ওসীলা গ্রহণ করার দলীল গ্রহণ করা যায় না।
(ঙ) রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেখানো এ-দো‘আর উদ্দেশ্য যদি তাঁর নাম, জাত ও মর্যাদার ওসীলা গ্রহণই হয়ে থাকে এবং এ অন্ধ ব্যক্তির চক্ষু ফিরে পাওয়ার পিছনে মূল রহস্য যদি রাসূলের জাতসত্তার ওসীলায় এ-দো‘আর মাধ্যমে দু’আ করাই হয়ে থাকে, তা হলেতো অন্যান্য অন্ধরাও এ-দো‘আ পাঠ করে তাদের চক্ষু ফিরে পেতেন। কিন্তু বাস্তবতা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। এতে প্রমাণিত হয় যে, সে ব্যক্তির চক্ষু ফিরে পাওয়ার পিছনে মূল রহস্য হচ্ছে তার জন্য রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দো‘আ। তাঁর জাতের বা এ শিখানো দো‘আ এর ওসীলা নয়।
(চ) বিশিষ্ট মনীষীগণ এ হাদীসকে রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মু‘জিযা হিসেবে গণ্য করেছেন। রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দো‘আর ওসীলায় এ অন্ধ ব্যক্তির চক্ষু ফিরে পাওয়ার কারণেই তাঁরা এটাকে তাঁর নবুওয়াতের প্রমাণকারী বিষয় হিসেবে গণ্য করেছেন।[1]
উক্ত এ সব বিষয়াদির প্রতি লক্ষ্য করলে এ কথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, হাদীসে বর্ণিত (أتوجه إليك بنبيك و توجهت بك إلى ربي) এ দু’টি বাক্যের অর্থ হবে (أتوجه إليك بدعاء نبيك و توجهت بدعائك إلى ربي), অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার নবীর দো‘আর ওসীলায় তোমার দিকে মুখ ফিরালাম এবং তোমার দো‘আর ওসীলায় আমার রবের দিকে মুখ ফিরালাম। (أتوجه إليك بنبيك) এ বাক্যের দ্বারা কোনো অবস্থাতেই ‘তোমার নবীর নাম, জাত ও মর্যাদার ওসীলায় তোমার দিকে মুখ ফিরালাম’ এ অর্থ গ্রহণ করা সঠিক নয়।
(ছ) দ্বিতীয় হাদীস দ্বারা বাহ্যত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার নাম, জাত ও মর্যাদার ওসীলা গ্রহণ করে দো‘আ করার বৈধতার যে সম্ভাবনা প্রমাণিত হয় তাও এ হাদীসের অন্যান্য বর্ণনার প্রতি লক্ষ্য করলে দূর হয়ে যায়। প্রখ্যাত হাদীসবিদ ইসমা‘ঈলী, যিনি ইমাম বুখারী (রহ.) থেকে তাঁর সহীহ গ্রন্থ বর্ণনা করেছেন, তাঁর বর্ণনায় এ হাদীসে রয়েছে :
«كَانُوْا إِذَا قَحَطُوْا عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ اسْتَسْقَوْا بِهِ ، فَيَسْتَسْقِيْ لَهُمْ ، فَيَسْقَوْن ، فَلَمَّا كَانَ فِيْ إِمَارَةِ عُمَرَ َ...»الحديث
তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে অনাবৃষ্টিতে পতিত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে বৃষ্টির জন্য দো‘আ চাইতেন, তখন তিনি তাদের জন্য বৃষ্টি চেয়ে দো‘আ করতেন, ফলে বৃষ্টি হতো। অতঃপর যখন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতের সময় হয়...।’’[2] (এ হাদীসের বাকী অংশটুকু উপরের হাদীসের অনুরূপ, তাই এখানে এর পুনরাবৃত্তি করা হলো না)। এ হাদীসে বর্ণিত (فيستسقي لهم) এ কথার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তাঁরা দো‘আর করার সময় স্রেফ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম ব্যবহার করে বৃষ্টি চাইতেন না, বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের জন্য বৃষ্টি কামনা করে আল্লাহর নিকট দো‘আ করতেন এবং তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দো‘আকেই ওসীলা হিসেবে গণ্য করতেন। যেমন অপর এক ঘটনা দ্বারাও এ কথার যথার্থতা প্রমাণিত হয়। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,
«أَصَابَ النَّاسُ سِنَةً عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَبَيْنَمَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ قَائِمًا فِيْ يَوْمِ الجُمُعَةِ فَقَامَ أَعْرَابِيٌّ فَاسْتَقْبَلَ رَسُوْلَ الله صلى الله عليه وسلم قَائِمًا فَقَالَ يَا رَسُوْلَ الله! هَلَكَ المَالُ وَ جَاعَ الْعِيَالُ ، فَادْعُ الله لَنَا ، فَرَفَعَ يَدَيْهِ ، و في رواية : فَمَدَّ يَدَيْهِ و دَعَا»
‘‘রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে একদা লোকজন অভাবে পতিত হয়। একদিন রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- জুমু‘আর দিনে দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় এক গ্রাম্য ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বললো: হে আল্লাহর রাসূল ! সম্পদ সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং পরিবার পরিজন অনাহারে পতিত হয়ে গেছে, আপনি আমাদের জন্য দো‘আ করুন। ফলে রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-দো‘আর জন্য তাঁর দু’হাত উঠালেন[3]। অপর বর্ণনায় রয়েছে: ফলে তিনি দু’হাত প্রলম্বিত করে উঠালেন এবং দো‘আ করলেন’’।[4] ইসমা‘ঈলী এবং আনাস (রা. থেকে বর্ণিত হাদীস দু’টি দ্বারা পরিষ্কারভাবেই বুঝা যাচ্ছে যে, সাহাবীদের বৃষ্টির জন্য দো‘আ কামনা করা মূলত রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দো‘আর ওসীলায় ছিল, স্রেফ তাঁর নাম ও মর্যাদার ওসীলায় ছিল না।
(জ) এ-সময় আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা কী কথা বলে দো‘আ করেছিলেন তা উপস্থাপন করলেও রাসূলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দো‘আ করার বিষয়টি আমাদের কাছে আরো পরিষ্কার হয়ে যায়। তিনি এ বলে দো‘আ করেছিলেন :
«اللَّهُمَّ إِنَّه لَمْ يَنْزِلْ بَلاَءٌ إِلاَّ بِذَنْبٍ ولَمْ يُكْشَفْ إِلاَّ بِتُوْبَةٍ ، وَقَدْ تَوَجَّهَ الْقَوْمُ بِيْ إِلَيْكَ لَمَكَانِيْ مِنْ نَبِيِّكَ، وَ هٰذِهِ أَيْدِيْنَا إِلَيْكَ بِالذُّنُوْبِ وَنَوَاصِيْنَا إِلَيْكَ بِالتَّوْبَةِ ، فَاسْقِنَا...»
‘‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় অপরাধ সংঘটিত না হলে কোনো বিপদ অবতীর্ণ হয়না, আর তাওবা ব্যতীত তা দূর করা হয়না, আমি তোমার নবীর নিকটজন হওয়ার কারণে জনগণ আমার (দো‘আর) মাধ্যমে আপনার দিকে মুখ করেছে, আমরা আমাদের গুনাহমাখা হাতগুলো আপনার দিকে প্রসারিত করেছি এবং তাওবার সাথে আমাদের ললাটগুলো আপনার সমীপে অবনত করেছি, কাজেই আপনি আমাদের বৃষ্টি দান করুন...।’’[5]
এ হাদীস দ্বারা যেমন এ কথাটি প্রমাণিত হয় যে, ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু মূলত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার দো‘আর ওসীলা গ্রহণ করেই দো‘আ করেছিলেন, তেমনি আরো প্রমাণিত হয় যে, তাঁদের দ্বারা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার দো‘আর ওসীলা গ্রহণ করার বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবিত থাকাকালীন সময়ে তাঁর দো‘আর ওসীলা গ্রহণ করার মতই ছিল। কাজেই এ হাদীস দ্বারাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ওলিদের নাম, জাত ও মর্যাদার ওসীলা গ্রহণ জায়েয হওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করা যায় না।
(ঝ) এ হাদীস থেকে এ জাতীয় অর্থ গ্রহণের কোনই সম্ভাবনা নেই; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম, জাত ও মর্যাদার ওসীলা গ্রহণ করে দো‘আ করা জায়েয হলে ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর মর্যাদার ওসীলায় দো‘আ না করে সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম ও মর্যাদার ওয়াসীলায়ই দো‘আ করতেন। কিন্তু তা না করে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সামনে রেখে বৃষ্টির জন্য উক্ত ধরনের দো‘আ করার দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় নিজেই দো‘আ করতেন বলে তাঁরা তাঁর দো‘আর ওসীলা গ্রহণ করতেন। তাঁর অবর্তমানে তাঁরা তাঁর জীবিত চাচা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর দো‘আর ওসীলা গ্রহণ করেছিলেন।
(ঞ) কারো নামের ওসীলা গ্রহণ করে দো‘আ করা জায়েয হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার চেয়ে মর্যাদাবান হওয়ায় তাঁরা অনাবৃষ্টির সময় তাঁর নাম নিয়েই বৃষ্টি চাইতেন। কিন্তু তা না করে রাসূলের চেয়ে কম মর্যাদার অধিকারী আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওসীলা গ্রহণ করাতে প্রমাণিত হয় যে, তাঁরা মূলত তাঁর নামের ওসীলায় দো‘আ কামনা করেন নি, বরং তাঁর দো‘আর ওসীলায়ই বৃষ্টি কামনা করেছিলেন।
(ট) আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তাঁরা একাধিকবার আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মাধ্যমে অনাবৃষ্টির সময় দো‘আ করেছিলেন। কারো মর্যাদার ওসীলা গ্রহণ করে দো‘আ করা জায়েয হলে তাঁরা বার বার তাঁর মাধ্যমে দো‘আ না করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামের ওসীলায় দো‘আ করতেন। কিন্তু তাঁরা তা না করাতে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম, মর্যাদা ও হুরমতের ওসীলা গ্রহণ করে দো‘আ করা জায়েয নয়।
(ঠ) ‘আমরা আমাদের নবীর চাচার মাধ্যমে তোমার কাছে ওসীলা করছি’ এ কথা বলার উদ্দেশ্য যদি আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নাম ও তাঁর মর্যাদার ওসীলা গ্রহণ হয়ে থাকে, তা হলে তাঁরাতো নিজ নিজ ঘরে বসেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর মর্যাদার ওসীলা গ্রহণ করে দো‘আ করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তাঁরা তাঁর নিকটে আসাতে প্রমাণিত হয় যে, তাঁর দো‘আর ওসীলা গ্রহণের জন্যেই তাঁরা তাঁর নিকট এসেছিলেন। তাঁর মর্যাদার ওসীলা গ্রহণের জন্যে নয়।উপরে বর্ণিত এ সব বিষয়াদির প্রতি লক্ষ্য করলে এ কথাটি স্বতঃই প্রমাণিত হয় যে, এ উভয় হাদীস থেকে কোনো অবস্থাতেই নবী বা অলিগণের নাম, মর্যাদা ও জাতের ওসীলা গ্রহণ করে দো‘আ করার বৈধতা প্রমাণ করা যায় না।
[2]. ইবন হাজার, ফতহুল বারী; ২/২৯৯।
[3]. বুখারী, প্রাগুক্ত; কিতাবুল জমাআঃ, বাব : জুমু‘আর দিনের খুতবায় বৃষ্টির জন্য দু‘আ করা); ২/২/৪৭।
[4]. তদেব।
[5]. ইবনে হাজার, ফতহুল বারী; ৩/১৫০।