আল্লাহর নিকট কিছু চাইতে হলে তা মোট দু’ভাবে চাওয়া যেতে পারে :
এক. কোনো কিছুর মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি আল্লাহ তা‘আলার নিকট কিছু চাওয়া যেতে পারে। কোনো প্রয়োজনকে সামনে রেখে এ কথা বলা যেতে পারে যে, হে আল্লাহ আমার অমুক প্রয়োজনটি পূর্ণ করে দিন। আমার অসুখ হয়েছে তা দ্রুত নিবারণ করে দিন...ইত্যাদি।
দুই. কোনো কিছুর ওসীলা বা মাধ্যম করে আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া। কুরআন ও সহীহ হাদীস অধ্যয়ন করলে দেখা যায়, আল্লাহর কাছে মোট ছয় পন্থায় ওসীলা করে কিছু চাওয়া যেতে পারে:
প্রথম পন্থা : আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর নামাবলী ও সুমহান গুণাবলীর ওসীলায় দো‘আ করা :
আল্লাহ তা‘আলার জানা বা অজানা পবিত্র ও উত্তম নামাবলীর মাধ্যমে তাঁর কাছে কিছু আবেদন করা। নিজের প্রয়োজনের কথা বলার পূর্বে মুখে তাঁর নাম নেয়া । যেমন এ কথা বলা :
«يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ»
‘‘হে চিরঞ্জীব হে সবকিছুর ধারক! আমি তোমার রহমতের অসীলায় উদ্ধার কামনা করছি[1]।’’
এ পন্থা যে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশিত পন্থা তা আমরা ইতোপূর্বে অবগত হয়েছি। এটি ওসীলার সর্বোত্তম পন্থা হওয়ায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকহারে এ পন্থা অবলম্বন করেই দো‘আ করতেন। হাদীসের গ্রন্থসমূহের দো‘আর অধ্যায় খুললেই এর জলন্ত প্রমাণ পাওয়া যায়।
দ্বিতীয় পন্থা : আল্লাহর তাওহীদ ও ঈমানের রূকনসমূহের প্রতি ঈমান আনয়নের ওসীলায় দো‘আ করা :
নিম্নে বর্ণিত আয়াত দু’টি দ্বারা এ জাতীয় ওসীলার প্রমাণ পাওয়া যায়। ইউনুস (আলাইহিস সালাম) কে যখন সমুদ্রের মাছ ভক্ষণ করেছিল, তখন তিনি সে বিপদ থেকে দ্রুত মুক্তি লাভের জন্য আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদের ওসীলায় দো‘আ করে বলেছিলেন :
﴿فَنَادَىٰ فِي ٱلظُّلُمَٰتِ أَن لَّآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنتَ سُبۡحَٰنَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ﴾ [الانبياء: ٨٧]
‘‘অন্ধকারের মধ্যে তিনি এই বলে আহ্বান করেন যে, (হে আল্লাহ) তুমি ব্যতীত কোনো সঠিক ইপাস্য নেই, আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, নিশ্চয় আমি যালিমদের অন্তর্গত হয়ে গেছি।’’[2]
আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনয়নের ওসীলায় দো‘আ করা প্রসঙ্গে কুরআনুল কারীমে বর্ণিত হয়েছে :
﴿ رَّبَّنَآ إِنَّنَا سَمِعۡنَا مُنَادِيٗا يُنَادِي لِلۡإِيمَٰنِ أَنۡ ءَامِنُواْ بِرَبِّكُمۡ فََٔامَنَّاۚ رَبَّنَا فَٱغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرۡ عَنَّا سَئَِّاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ ٱلۡأَبۡرَارِ ١٩٣ ﴾ [ال عمران: ١٩٣]
‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা একজন আহ্বানকারীকে ঈমানের প্রতি এ মর্মে আহ্বান করতে শুনেছি যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনয়ন কর, ফলে আমরা ঈমান আনয়ন করেছি, হে আমাদের প্রতিপালক! অতএব, (তোমার প্রতি ঈমান আনয়নের ওসীলায়) তুমি আমাদের অপরাধসমূহ মার্জনা কর, আমাদের অপকর্মসমূহ দূর করে দাও এবং আমাদেরকে নেক মানুষদের সাথে মৃত্যু দাও।’’[3]
ঈমানের রুকসমূহের প্রতি ঈমান আনয়নের ওসীলায় দো‘আ করা প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে :
﴿ رَبَّنَآ ءَامَنَّا بِمَآ أَنزَلۡتَ وَٱتَّبَعۡنَا ٱلرَّسُولَ فَٱكۡتُبۡنَا مَعَ ٱلشَّٰهِدِينَ ٥٣ ﴾ [ال عمران: ٥٣]
‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি যা কিছু অবতীর্ণ করেছ আমরা তাতে ঈমান এনেছি এবং রাসূলের অনুসরণ করেছি, অতএব, তুমি আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের মধ্যে লিখে নাও।’’[4]
অত্র আয়াতে আল্লাহর কিতাবের প্রতি ঈমান এবং রাসূলের অনুসরণ এ দু’টি বিষয়কে ওসীলা করে সাক্ষ্যদানকারীদের মধ্যে লিখে নেয়ার কথা আল্লাহর কাছে চাওয়া হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, এ দু’টি বিষয়ের মত ঈমানের আরো যে সব রুকন রয়েছে সেগুলোর প্রতি ঈমান আনয়নের ওসীলায়ও দো‘আ করা যেতে পারে।
তৃতীয় পন্থা : আল্লাহর নিকট বিপদ ও দুঃখের কথা বলে নিজের অপারগতা ও দুর্বলতা প্রকাশের ওসীলায় দো‘আ করা :
যেমন আইউব (আলাইহিস সালাম) তাঁর অসুখের কথা বলে নিজের অপারগতা ও অসহায়ত্বের বিষয়টি আল্লাহর কাছে তুলে ধরে তাঁর দয়া কামনা করে বলেছিলেন :
﴿ أَنِّي مَسَّنِيَ ٱلضُّرُّ وَأَنتَ أَرۡحَمُ ٱلرَّٰحِمِينَ ﴾ [الانبياء: ٨٣]
‘‘প্রভু! আমাকে অকল্যাণ পেয়ে বসেছে, তুমি হলে অধিক দয়াবান।’’
চতুর্থ পন্থা : নিজের অপরাধ স্বীকার করার ওসীলায় দো‘আ করা :
যেমন আদম ও হাওয়া (‘আ.) শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে গম খাওয়ার পর যখন বুঝতে পারলেন যে, তারা অপরাধ করে ফেলেছেন, তখন তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করার ওসীলায় আল্লাহর কাছে তা মার্জনার জন্য দো‘আ করে বলেছিলেন :
﴿رَبَّنَا ظَلَمۡنَآ أَنفُسَنَا وَإِن لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَتَرۡحَمۡنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ﴾ [الاعراف: ٢٣]
‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নিজেদের উপর অত্যাচার করেছি, তুমি যদি ক্ষমা ও দয়া না কর, তা হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’’[5]
পঞ্চম পন্থা : কোনো সৎকর্মের ওসীলায় দো‘আ করা:
সৎ কর্ম বিভিন্ন রকমের হতে পারে। তন্মধ্যে উত্তম দু’টি ‘আমল হচ্ছে নামায ও বিপদে ধৈর্য ধারণ করা। তাই মহান আল্লাহ এ দু’টির ওসীলায় দো‘আ করার প্রতি নির্দেশ দিয়ে বলেছেন :
﴿ وَٱسۡتَعِينُواْ بِٱلصَّبۡرِ وَٱلصَّلَوٰةِۚ ﴾ [البقرة: ٤٥]
‘‘তোমরা ধৈর্য ধারণ এবং নামাযের ওসীলায় আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা কর’’।[6] এ আয়াতের মর্মানুযায়ী প্রমাণিত হয় যে, ফরয ও নফল নামাযান্তে একাকী বসে নামাযের ওসীলায় আল্লাহর কাছে কিছু প্রাপ্তির জন্য দো‘আ করা যেতে পারে।
এছাড়াও সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, বনী ইসরাঈলের তিন ব্যক্তি একদা রাত যাপনের জন্য একটি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল। রাতে পাহাড়ের চূড়া থেকে একটি পাথর গড়িয়ে পড়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেলে তারা পরস্পরকে বললো :
«إِنَّهُ لاَ يُنْجِيكُمْ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ إِلَّا أَنْ تَدْعُوا اللَّهَ بِصَالِحِ أَعْمَالِكُمْ»
‘‘তোমাদের সৎ ‘আমলের ওসীলায় আল্লাহকে আহ্বান না করা ব্যতীত এ পাথর থেকে তোমাদের মুক্তির কোনো উপায় নেই...।’’[7] এরপর তাদের একজন তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করার ওসীলায় দো‘আ করলো, আরেকজন আল্লাহর ভয়ে ব্যভিচার করা থেকে বিরত থাকার ওসীলায় দো‘আ করলো, তৃতীয়জন মজুরকে তার প্রাপ্যসহ আরো অধিক সম্পদ দেয়ার ওসীলায় আল্লাহ তা‘আলাকে আহ্বান করার পর আল্লাহ তাদেরকে সে বিপদ থেকে মুক্ত করেছিলেন।[8]
এতে প্রমাণিত হয় যে, শরী‘আত কর্তৃক নির্দেশিত যাবতীয় করণীয় ও বর্জনীয় কর্ম করে এর ওসীলায় ইহ-পরকালীন কল্যাণার্জন ও অকল্যাণ দূরীকরণের জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ করা যেতে পারে।
ষষ্ঠ পন্থা : জীবিত মানুষের দো‘আর ওসীলায় আল্লাহর নিকট কিছু কামনা করা :
জীবিত মানুষের দো‘আর ওসীলা গ্রহণ করেও আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া যেতে পারে। এ ওসীলা আবার দু’ভাবে হতে পারে :
এক. নিজের এবং নিজের সন্তানাদি ও পরিবারের ইহ-পরকালীন কল্যাণের জন্য কোনো মানুষের নিকট গিয়ে তাকে এ কথা বলা যেতে পারে যে, আমাদের জন্য একটু দো‘আ করুন বা আমাদের জন্য দো‘আ করবেন[9]। দো‘আকারী ব্যক্তি তাৎক্ষণিক আমাদের জন্য দো‘আ করতে পারেন। ইচ্ছা করলে পরবর্তী সময়ে আমাদের অনুপস্থিতিতেও তা করতে পারেন। তবে অনুপস্থিত অবস্থার দো‘আই সবচেয়ে উত্তম। কেননা, তা আল্লাহর কাছে গৃহীত হওয়ার অধিক সম্ভাবনা রয়েছে বলে ইতোপূর্বে বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
নবজাত শিশু ও রোগীদেরকে কারো কাছে নিয়ে যেয়ে তার নিকট তাদের জন্য দো‘আ কামনা করাও এ জাতীয় ওসীলারই অন্তর্ভুক্ত। এ জাতীয় কর্ম রাসূলের সাহাবীদের মাঝে প্রচলিত ছিল। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সন্তানদের নিয়ে আসা হতো, তিনি (দো‘আ পাঠ করে তাদের গায়ে হাত বুলিয়ে ঝাড়ফুঁক করে) তাদের উপর বরকত দিতেন এবং খুরমা চিবিয়ে তাদের মুখের তালুতে লাগিয়ে দিতেন।’’[10]
দুই. কারো নিকট নিজের কল্যাণের জন্য দো‘আ চাওয়া এবং তিনি তাৎক্ষণিক দো‘আ করলে নিজেও সে দো‘আয় শরীক হয়ে আল্লাহর কাছে নিজের জন্য দো‘আকারীর দো‘আ কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহুম্মা আ-মীন বলা। অথবা তার দো‘আর সাথে শরীক না হয়ে পরবর্তী কোনো সময়ে নিজে নিজের জন্য দো‘আ করার সময় তাঁর দো‘আর ওসীলা গ্রহণ করে এ কথা বলা যে, হে আল্লাহ! অমুক ব্যক্তি আমার জন্য যে দো‘আ করেছেন, তাঁর সে দো‘আ এর ওসীলা করে বলছি- আমার ব্যাপারে তাঁর দো‘আ কবুল করুন। এ জাতীয় ওসীলা করার বৈধতা নিম্নে বর্ণিত হাদীসদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয়:
প্রথম হাদীস
‘উছমান ইবনে হানীফ (রহ.) থেকে বর্ণিত। একজন অন্ধ মানুষ এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললো :
«أُدْعُ اللهَ أَنْ يُعافِيْنِيْ . فَقَالَ لَهُ:"إِنْ شِئْتَ دَعَوْتُ لَكَ ، وَ إِنْ شِئْتَ صَبَرْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ". فقال:اُدْعُ. "فَأَمَرَهُ أَنْ يَتَوَضَّأَ ، فَيُحْسِنَ وُضُوْءَهُ ، فَيُصَلِّيْ رَكْعَتَيْنِ ، وَ يَدْعُوْ بِهَذَا الدُّعَاءِ : اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ وَ أَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ نَبِيَّ الرَّحْمَةِ يَا مُحَمَّدُ إِنِّيْ تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّيْ فِيْ حَاجَتِيْ هَذِهِ فَتَقَضِيْ لِيْ ، اللَّهُمَّ فَشَفِّعْهُ فِيَّ". و في رواية "وَ شَفِّعْنِيْ فِيْهِ. قال الراوي : فَبَرِأَ الرَّجُلُ»
‘‘হে রাসূল! আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন তিনি যেন আমার চক্ষু ফিরিয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : তুমি চাইলে আমি তোমার জন্য দো‘আ করবো, আর তুমি চাইলে ধৈর্য ধারণ করতে পারো, তা হলে তোমার জন্য তা মঙ্গল হবে। লোকটি বললো: দো‘আ করুন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উত্তমভাবে ওয়াযু করে দু’রাক‘আত নামায আদায় করে নিম্নোক্ত দো‘আর মাধ্যমে দো‘আ করতে বললেন:হে আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে সওয়াল করছি এবং তোমার রহমতের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এর দো‘আ)-এর ওসীলায় তোমার দিকে মুখ ফিরালাম, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি তোমার (দো‘আ এর) ওসীলায় আমার এই প্রয়োজনের ক্ষেত্রে তোমার রবের প্রতি মুখ ফিরালাম, অতএব আমার এই প্রয়োজন পূর্ণ করুন। হে আল্লাহ! আমার ব্যাপারে তুমি তাঁর দো‘আকে কবুল কর’’। অপর বর্ণনায় রয়েছে : আমার সে ব্যাপারে আমার দো‘আ কবুল কর।’’ এ হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন : লোকটি এভাবে দো‘আ করার পর সে সুস্থ হয়ে যায়।’’[11]
এ হাদীসে বর্ণিত লোকটির দো‘আর জন্য আবেদন করা অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ থেকে তার জন্য দো‘আ করা বা না করার ব্যাপারে এখতিয়ার দেয়া, পরিশেষে রাসূলের পক্ষ থেকে তাকে উক্ত দো‘আ শিখিয়ে দেয়ার দ্বারা এ জাতীয় ওসীলার বৈধতা প্রমাণিত হয়।
দ্বিতীয় হাদীস
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগে যখন অনাবৃষ্টিজনিত কারণে তাঁরা অভাবে পতিত হতেন তখন তারা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর দো‘আর ওসীলায় বৃষ্টি চাইতেন এবং ‘উমার তাঁর দো‘আয় বলতেন :
«اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِيْنَا، وَ إِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا ، قَالَ : فَيَسْقَوْنَ»
‘‘হে আল্লাহ! আমরা আমাদের নবীর মাধ্যমে আপনার নিকট বৃষ্টির জন্য দো‘আ চাইতাম, ফলে তুমি আমাদের বৃষ্টি দিতে, আমরা (এখন) আমাদের নবীর চাচার (দো‘আর) মাধ্যমে আপনার নিকট বৃষ্টি কামনা করছি.অতএব, আপনি আমাদের বৃষ্টি দান করুন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন : এ ভাবে দো‘আ করার পর তাঁদের বৃষ্টি দান করা হতো।’’[12] এ হাদীস দ্বারাও অন্যের দো‘আর ওসীলায় দো‘আ করার বৈধতা প্রমাণিত হয়।
>[2]. আল-কুরআন, সূরা : আম্বিয়া : ৮৭।
[3]. আল-কুরআন, সূরা : আলে ইমরা্ন : ১৯৩।
[4]. আল-কুরআন, সূরা আলে ইমরান : ৫৩।
[5]. আল-কুরআন, সূরা : আ‘রাফ : ২৩।
[6]. আল-কুরআন, সূরা : বাক্বারাহ : ৪৫।
[7]. বুখারী, প্রাগুক্ত; কিতাবুল ইজারাহ, বাব নং- ১২ ; ৩/৭৯৩; মুসলিম, প্রাগুক্ত; কিতাবুয যিক্র, বাব : ক্বিস্যাতু আসহাবিল গারিস সালাসাতি, হাদীস নং- ১০০; ৪/২০৯৯।
[8]. মুসলিম, প্রাগুক্ত; (কিতাবুয যিকির ওয়াদ দু’আ, বাব: তিন গুহাবাসীর ঘটনা...); ৪/২০৯৯।
[9]. যদিও কারও কাছে দো‘আ চেয়ে বেড়ানো কুরআন ও রাসূলের সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় নি; কারণ এতে দু’টি সমস্যা রয়েছে, এক. বান্দা তার রব থেকে দূরে সরে যেতে পারে। দুই. শুধু শুধু কারও কাছে ছেয়ে বেড়ানোর মাধ্যমে নিজেকে হেয় করছে এবং অন্যের প্রতি মুখাপেক্ষী হচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সুতরাং বান্দা নিজেই এ কাজটি নিজের জন্য করা উচিত। যদি অন্যের কাছে দো‘আ চায়, তখন তার উদ্দেশ্যে থাকতে হবে যে যার কাছে দো‘আ চেয়েছি সে ব্যক্তি নিজেও আমার জন্য দো‘আ করা দ্বারা উপকৃত হতে পারে; কারণ, যে কেউ কারও জন্য তার অনুপস্থিতিতে দো‘আ করে ফেরেশতা বলতে থাকে, “তোমার জন্যও অনুরূপ হোক”। সুতরাং এর মাধ্যমে দো‘আপ্রার্থী ও দো‘আকারী উভয়েই সমভাবে উপকৃত হতে পারে। তাই কারও কাছে দো‘আ চাওয়ার সময় উভয়ে উপকৃত হওয়ার এ নিয়ত থাকা আবশ্যক, নিছক নিজের জন্য কারও কাছে যাচ্ঞা করে বেড়ানো ইসলামের মূল শিক্ষার বিরোধী। এ বিষয়টি আরও জানার জন্য শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ লিখিত, ‘আল-ওয়াসেতা-বাইনাল হাক্কি ওয়াল খালক’ বা স্রষ্টাকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ গ্রন্থটি (কামিয়াব প্রকাশনী কর্তৃক আমার দ্বারা অনুবাদ ও সম্পাদিত) দেখা যেতে পারে। [সম্পাদক]
[10]. মুসলিম, প্রাগুক্ত; (কিতাবুত ত্বাহারত, পরিচ্ছদ : দুগ্ধপানকারী শিশুদের বরকত দানের হুকুম); ১/২৩৭।
[11]. তিরমিযী, প্রাগুক্ত; ৪/৫৬৯; আব্দুর রহমান আল-মুবারকপুরী, প্রাগুক্ত; ৪/২৮১-২৮২।
[12]. বুখারী, প্রাগুক্ত; (কিতাবুল ইস্তেসকা, পরিচ্ছদ : অনাবৃষ্টির সময় জনগণ কর্তৃক ইমামকে বৃষ্টি জন্য দু‘আ করতে বলা); ১/২/৭৫।