এরপর লক্ষ্ণৌভী বলেন: ‘‘এ-ক্ষেত্রে ইনসাফের কথা হচ্ছে: এক মিছলের হাদীসসমূহ সুস্পষ্ট ও সহীহ এবং দু’ মিছলের হাদীসসমূহ দু’ মিছল না হলে ‘আসরের ওয়াক্ত হয় না এ-কথা বর্ণনার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নয়। যারাই দুই মিছলের কথা গ্রহণ করেছেন তাদের অধিকাংশই তাদের বক্তব্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে কিছু হাদীস বর্ণনা করে তাত্থেকে দু’ মিছলের বিষয়টি ইজতেহাদ করে বের করেছেন, অথচ ইজতেহাদ করে বের করা বিষয় সুস্পষ্ট বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে না। ‘বাহরুর রা-ইক্ব’ এর লেখক এ-বিষয়ে পৃথক একটি গ্রন্থে অনেক দীর্ঘ আলোচনা করেছেন, তবে এর দ্বারা তিনি তার দাবী প্রমাণিত হতে পারে এমন কিছু উপস্থাপন করতে পারেন নি’’।[36]
দু’ মিছলের প্রারম্ভ থেকেই ‘আছরের নামাযের ওয়াক্ত এসে যাওয়ার কথা জিব্রাঈল আলাইহিস সালামের নামাযের মুস্তাহাব ওয়াক্ত শিক্ষাদান সংক্রান্ত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও এবং ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর দ্বিতীয় মত ও হানাফী মাযহাবের বিশিষ্ট মনীষীদের মতামতের দ্বারা তা স্বীকৃত হওয়া সত্ত্বেও আমরা ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর প্রথম মতকেই ধরে রয়েছি। আর দু’ মিছল শেষে তৃতীয় মিছল শুরু হওয়ার পূর্বে ‘আছরের নামাযের ওয়াক্ত হয় না- এ-কথা বলার কারণে আমরা সাধারণ ও আলেম নির্বিশেষে নিম্নে বর্ণিত অভিযোগে অভিযুক্ত হচ্ছি:
১. এতে আমরা বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্ট হাদীস দ্বারা প্রমাণিত বিষয়ের বিরোধিতা করছি।
২. নিজ মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ও মূল প্রচারকদের মতের অনুসরণ না করে মাযহাবের দ্বিতীয় পর্যায়ের কিছু আলেমদের অনুসরণ করছি।
৩. জিব্রাঈল কর্তৃক বর্ণিত ‘‘নামাযের ওয়াক্ত এ’ দুই ওয়াক্তের মাঝখানে’’ এ-কথার অনুসরণে রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- ও তাঁর সাহাবীগণ অধিকাংশ সময়ে দ্বিতীয় মিছলের মাঝামাঝি সময়ে ‘আসরের নামায পড়ার কারণে আমরা তাঁদেরকে ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে নামায আদায় করেছেন বলে অভিযুক্ত করছি।
৪. বিশুদ্ধ হাদীসে আউয়াল ওয়াক্তে নামায আদায় করার অনেক গুরুত্ব ও ফযীলত থাকার কথা বর্ণিত হওয়া সত্ত্বেও আমরা ‘আসরের নামায সর্বদা মুস্তাহাব ওয়াক্তের সর্বশেষ সময়ে আদায় করছি, যা আউয়াল ওয়াক্তে নামায আদায় করার ফজীলত সংক্রান্ত সহীহ হাদীসের সম্পূর্ণ বিপরীত।
৫. ‘আসরের ওয়াক্ত আগমনের ব্যাপারে নিজ মাযহাবের ফতোয়ারও বিরোধিতা করছি।
দুই, নামাযের কাতারে পরস্পর কাঁধ ও পা মিলিয়ে দাঁড়ানো:
২. সহীহ বুখারী শরীফে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি রাসূল -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‘‘তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করো, কেননা, আমি তোমাদেরকে আমার পিঠের পিছন থেকে (বাঁকা অবস্থায়) দেখতে পাই। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: (রাসূল -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে) আমাদের একজন তাঁর কাঁধ ও পা তাঁর পার্শ্বের জনের কাঁধ ও পায়ের সাথে মিলিয়ে রাখতো’’।[37]
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- তাঁর সাহাবীগণকে নামাযে কাতার সোজা করার ব্যাপারে নির্দেশ করেছিলেন। তিনি তাঁর সাহাবীগণকে এ-জন্য পরস্পরের সাথে কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা লাগিয়ে দাঁড়াতে না বললেও তাঁরা কাতার সোজা করার জন্য এমনটি করেছিলেন। তবে ইবনে ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তাঁরা রাসূল -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর এ সংক্রান্ত অপর একটি নির্দেশ পালন করতে গিয়েই এমনটি করেছিলেন। রাসূল -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেছেন:
‘‘কাতার সোজা করো, কাঁধের সাথে কাঁধ বরাবর করো, ফাঁক বন্দ করো, শয়তানের জন্য কোনো ফাঁক রাখবে না। যে ব্যক্তি কাতারের সংযোগ স্থাপন করে আল্লাহও তার সাথে সংযোগ স্থাপন করেন, আর যে কাতার ছিন্ন করে, আল্লাহও তার সাথে সংযোগ ছিন্ন করেন’’।[38] এ হাদীসটি ইমাম ইবনে খুযায়মাঃ ও ইমাম হাকিম সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন।[39]
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- কাতার সোজা করে দাঁড়ানোর নির্দেশ করার পাশাপাশি দু’জনের পায়ের মধ্যখানে কোনো ফাঁক না রাখার ব্যাপারেও তাঁর সাহাবীদের প্রতি নির্দেশ করেছিলেন। আর সে-জন্যেই তাঁরা পরস্পরের সাথে কাঁধে কাঁধ বরাবর করার পাশাপাশি পায়ের সাথে পা-ও মিলিয়ে দাঁড়াতেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, নামাযের কাতারে পরস্পরের সাথে কাঁধ ও পা যথাসম্ভব লাগিয়ে দাঁড়ানো সুন্নাত। এ বিষয়টি অন্যান্য মাযহাব দ্বারা সমর্থিত হলেও হানাফী মাযহাবে শুধু পরস্পর মিলিয়ে ও কাঁধের সাথে কাঁধ বরাবর করে দাঁড়ানোর বিষয়টি সমর্থিত হয়েছে। পায়ের সাথে পা মিলানোর বিষয়টি সমর্থিত হয় নি। যেমন, হানাফী মাযহাবের ফিকহের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘বাদাই‘উস সানয়ে‘উ-তে এ-প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:
‘‘আর যখন কাতারে দাঁড়াবে তখন পরস্পর মিলে দাঁড়াবে এবং কাঁধের সাথে কাঁধ বরাবর করবে; কেননা; রাসূল -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- বলেছেন: তোমরা পরস্পর মিলে দাঁড়াও এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলাও’’।[40]
এ হাদীসে পায়ের সাথে পা মিলাও, এ-কথাটি না থাকায় আমাদের মাযহাবে পায়ের সাথে পা মিলানোর বিষয়টি কোনো গুরুত্ব পায় নি। যদিও তা উপর্যুক্ত আনাস ও ইবনে ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদীসদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, মাযহাবে যেটুকু করার নির্দেশ রয়েছে আমাদের সমাজে সেটুকু করারও প্রচলন নেই। নামাযে দাঁড়ালে প্রতি দু’জন নামাযীর মাঝখানে বিস্তর ফাঁক পরিলক্ষিত হয়। কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানো তো দূরের কথা একটু কাছে আসতে বললেও তারা আসতে চান না। উল্লেখ্য যে, ‘সাহাবীগণ পায়ের সাথে পা লাগাতেন’ এ-কথাটিকে আমাদের মাযহাবের কোনো কোনো বিদ্বান ‘পায়ের গোড়ালির সাথে গোড়ালি মিলাতেন’ মর্মে ব্যাখ্যা করেছেন। সে-কারণেই আমরা পায়ের সাথে পা মিলাতে চাই না। যদিও ইমাম ইবনে হাজার ‘আসক্বলানী এর বর্ণনানুযায়ী এ-ব্যাখ্যাটি একটি অনুল্লেখযোগ্য মত, যা মাযহাবের মুহাক্কিক বিদ্বানদের দ্বারা সমর্থিত নয়।[41]
উপর্যুক্ত হাদীসসমূহের বিভিন্ন শব্দ ও বাক্যের প্রতি লক্ষ্য করলে পায়ের সাথে পা মিলানোর কথাই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। কেননা, রাসূল -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- দু’জনের মধ্যে শয়তানের দাঁড়ানোর স্থান রাখতে নিষেধ করেছেন। কাঁদের সাথে কাঁধ বরাবর করে দাঁড়ালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্ত নির্দেশটি আংশিকভাবে পালিত হলেও পায়ের সাথে পা লাগিয়ে দাঁড়ালে তা পূর্ণভাবে পালিত হয়। এ ছাড়া সহীহ বুখারীতে নু‘মান ইবনে বশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন:
‘‘আমি আমাদের একজনকে তাঁর পাশের জনের পায়ের গ্রন্থির সাথে তাঁর পায়ের গ্রন্থি মিলাতে দেখেছি’’[42]।
বস্তুত পায়ের সাথে পা মিলানো কথাটি হাদীসে সুস্পষ্টভাবে থাকা সত্ত্বেও গোড়ালির সাথে গোড়ালি মিলানোর দ্বারা এর ব্যাখ্যা করা আদৌ সমীচীন নয়। কেননা, ‘কা‘ব’ (كعب) শব্দটির আভিধানিক অর্থ: টাখনু বা গ্রন্থি। তা পায়ের গোড়ালির অর্থ প্রকাশ করার কথা কোনো অভিধানে পাওয়া যায় না। তা ছাড়া এর দ্বারা যদি গোড়ালির অর্থই উদ্দেশ্য হয়ে থাকতো, তা হলে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ও নু‘মান ইবনে বশীর এর হাদীসে বর্ণিত ‘ক্বাদাম’ ও ‘কা‘ব’ শব্দের পূর্বের ক্রিয়াপদটি (يُلْزِقُ) না হয়ে (يُسَوِّيْ) ব্যবহৃত হতো। অর্থাৎ কথাটি এভাবে হতো: ‘আমাদের একজন তাঁর পায়ের গোড়ালী অপরজনের গোড়ালির বরাবর করতো’। কিন্তু কথাটি এভাবে না হয়ে হয়েছে: ‘আমাদের একজন তাঁর পা অপরজনের পায়ের সাথে লাগাতেন’। এতে প্রমাণিত হয় যে, সাহাবীগণ আসলে পায়ের সাথেই পা মিলাতেন। কেননা, এতে দু’জনের মাঝে ফাঁক না রাখা সংক্রান্ত রাসূল -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর নির্দেশ পূর্ণভাবে পালিত হয়; যা গোড়ালির সাথে গোড়ালি বরাবর করলে সঠিকভাবে পালিত হয় না। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, এ ব্যাখ্যাটি হাদীস বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও এবং মাযহাবের সকলের দ্বারা সমর্থিত না হয়ে কারো কারো দ্বারা সমর্থিত হওয়া সত্ত্বেও এটাই আমাদের নিকট অনুসরণীয় হয়ে রয়েছে। যা আদৌ উচিত নয়।
তিন, জানাযার নামাযে সূরায়ে ফাতিহাঃ পাঠ:
সহীহ বুখারীতে ত্বলহা ইবন ‘আব্দিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে- তিনি বলেন: ‘‘আমি ইবনে ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর পিছনে একটি জানাযার নামায আদায় করলাম, তিনি তখন তাতে সূরায়ে ফাতিহাঃ পাঠ করলেন। তিনি বললেন: এটি পাঠ করা সুন্নাত’’।[43] সুনানে নাসাঈ এর বর্ণনায় রয়েছে: ‘‘তিনি তখন তাতে সূরা ফাতিহাঃ এবং অপর একটি সূরা সশব্দে পাঠ করলেন, এমনকি আমরা তা শুনতে পেলাম। জানাযা শেষ হলে পরে আমি তাঁর হাত ধরে তাঁকে তা সশব্দে পাঠ করার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন: তোমরা যাতে অবগত হতে পারো যে, এটা পাঠ করা সুন্নাত ও হক, সে-জন্যেই আমি তা সশব্দে পাঠ করলাম’’।[44]
উপর্যুক্ত এ-হাদীস দু’টি দ্বারা জানাযার নামাযে সূরায়ে ফাতিহাঃ পাঠ করার কথা প্রমাণিত হয়। ইমাম ইবনে হাজার ‘আসক্বলানী বলেন:
‘‘জানাযার নামাযে সূরায়ে ফাতিহাঃ পাঠ করার বিষয়টি বিরোধপূর্ণ। ইমাম ইবনুল মুনযির রহ. ইবনে মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু, হাসান ইবনে ‘আলী ও আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়র রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে তা পাঠ করার বিধানের কথা বর্ণনা করেছেন। আর এটাই ইমাম শাফিঈ, আহমদ ও ইসহাক্বের মত। তবে আবু হুরায়রা ও ইবনে ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এর ‘আমল থেকে জানাযার নামাযে কোনো কিরাত না থাকার কথা বর্ণিত হয়েছে। আর এটি ইমাম মালিক ও কূফাবাসীদের মত।[45]
ইমাম নাসাঈ কর্তৃক উপরে বর্ণিত হাদীসটি ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করার পর বলেন:
‘‘এ হাদীসটি হাসান-সহীহ। রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কতিপয় সাহাবী এবং অন্যান্য কিছু বিদ্বানগণের এ হাদীসের উপর ‘আমল রয়েছে, তাঁরা প্রথম তকবীরের পর সূরায়ে ফাতিহাঃ পাঠ করাকে পছন্দ করেন। এটাই ইমাম শাফিঈ, আহমদ ও ইসহাকের মত। আবার কোনো কোনো বিদ্বান বলেছেন: জানাযার নামাযে কুরআন পাঠ করা হবে না। কেননা, জানাযার মূল উদ্দেশ্য আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করা, তাঁর রাসূলের প্রতি দরূদ পাঠ করা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দো‘আ করা বৈ আর কিছুই নয়। এটিই ইমাম ছাওরী ও অন্যান্য কূফাবাসীদের মত’’।[46]
আমাদের দেশে জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহাঃ পাঠ করার প্রচলন নেই। কারণ, আমাদের মাযহাবে এটি পাঠ করার অনুমোদন নেই। যেমন ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) তাঁর মুওয়াত্ত্বা গ্রন্থে লিখেছেন:
" لا قراءة على الجنازة ، و هو قول أبي حنيفة"
‘‘জানাযার নামাযে কোনো কিরাত নেই, এটিই ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর মত’’।[47] দলীল হিসেবে তিনি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর ‘আমল সম্বলিত একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে তিনি বলেন: যখন জানাযা রাখা হয় তখন আমি তকবীর পাঠ করি, অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা করি এবং তাঁর রাসূলের উপর দরূদ পাঠ করি। এরপর মৃতের জন্য দো‘আ করি...’’।[48]
জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহাঃ পাঠ করার বিধান হানাফী মাযহাব ও অপর কোনো কোনো ইমামদের মতে না থাকলেও নিম্নে বর্ণিত কারণে আমাদের পক্ষে তা পাঠ করা উচিত:
১. জানাযার নামাযে তা পাঠ করা সুন্নাত হওয়ার বিষয়টি উপর্যুক্ত বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। না পাঠ করার বিষয়টি কোনো কোনো সাহাবীদের ‘আমল দ্বারা প্রমাণিত হলেও যেহেতু তা পাঠ করাও সাহাবীদের ‘আমল দ্বারা সুন্নাত বলে প্রমাণিত, সেহেতু মৃতের কল্যাণের দিক বিবেচনা করে তা পাঠ করাই উত্তম।
২. কোন সাহাবী যদি কোনো বিষয়ে এ-কথা বলেন: ‘‘এমনটি করা সুন্নাত’’, তা হলে হানাফী মাযহাবের অগ্রবর্তী ফিকহের উসূলবিদ[49] ও শাফিঈ মাযহাবের উসূলবিদদের[50] মতে এ-কথাটি মুসনাদ মুরফূ‘ হাদীস হিসেবে গণ্য হবে। এ নিয়মের দৃষ্টিকোণ থেকেও তা পাঠ করা সুন্নাত বলে প্রমাণিত হয়। যদিও হানাফী মাযহাবের পরবর্তী ফকীহগণ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এ হাদীসকে উক্ত নিয়মের আওতাধীন মনে করেন না। তাঁরা এটাকে বেদ‘আতের বিপরীত যে সুন্নাত রয়েছে, সে রকম সুন্নাত বলে মনে করেন। অর্থাৎ তাঁদের মতে জানাযার নামায সূরায়ে ফাতিহাঃ পাঠ ক’রে এবং না ক’রে দু’ভাবে আদায় করাই সুন্নাত।
৩. ইমাম আছরামের বর্ণনামতে বিশিষ্ট তাবে‘ঈ মুজাহিদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি তা পাঠ করার বিষয়টি ১৮ জন সাহাবীকে জিজ্ঞেস করেছি, তাঁরা সকলেই তা পাঠ করার কথা বলেছেন।[51]
৪. তা পাঠ করার বিষয়টি উম্মে শুরাইক রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত একটি মুসনাদ হাদীস দ্বারাও সমর্থিত। তিনি বলেন: ‘‘রাসূল -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- আমাদেরকে জানাযার নামাযে সূরায়ে ফাতিহাঃ পাঠ করার নির্দেশ করেছেন।’’[52] এ হাদীসের সনদে সামান্য দুর্বলতা থাকলেও[53] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত এবং অন্যান্য সাহাবীদের মতামত দ্বারা এ হাদীসের বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার ফলে তা পাঠ করার বিষয়টি রাসূল -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ দ্বারা প্রমাণিত হয়।
৫. তা পাঠ না করার বিষয়টি কোনো কোন সাহাবীর ব্যক্তিগত ‘আমল দ্বারা প্রমাণিত হলেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোনো সহীহ বা দুর্বল হাদীস দ্বারা তা পাঠ না করার বিষয়টি প্রমাণিত নয়।
৬. সাহাবীদের মধ্যে যারা তা পাঠ না করার পক্ষে ছিলেন, তাঁরা হয়তো তা পাঠ করা সুন্নাত এ কথাটি অবগত হতে পারেন নি। পরবর্তীতে যখন সাহাবাদের মাঝে এ বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত দেখা দেয়, তখন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা তা সশব্দে পাঠ ক’রে এর সুন্নাত হওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর এ ঘটনার বর্ণনা প্রসঙ্গে বর্ণিত বিভিন্ন হাদীস দ্বারা এ-কথাই প্রমাণিত হয়।
৭. ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এবং অন্যান্য ইমামগণের নিকট ইবনে আব্বাসের হাদীস পৌঁছে থাকলে তাঁরা অবশ্যই তা পাঠ করার ব্যাপারে মত দিতেন। কেননা, তাঁরা বলেছেন : ‘‘হাদীস যখন সহীহ হিসেবে পাওয়া যাবে তখন সেটাই হবে আমাদের মত’’।[54] অথবা অন্তত তাঁরা এমনটি বলতেন : তা পাঠ করা উত্তম, তবে না করলেও কোনো অসুবিধা নেই।
৮. জানাযার নামাযে রুকু‘ ও সেজদা না থাকলেও তা ফরয নামাযের ন্যায় ক্বিবলা মুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমার সাথে আদায় করতে হয়। এর উদ্দেশ্য মৃত মানুষের জন্য দো‘আ হয়ে থাকলেও শর‘য়ী দৃষ্টিকোণ থেকে এটি এক ধরনের নামায। সে জন্যে তাতে সূরা ফাতিহাঃ পাঠ করা আবশ্যক। কেননা, ‘‘যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহাঃ পাঠ করে নি তার কোনো নামায নেই’’[55], এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক যে সব সাধারণ হাদীস রয়েছে, জানাযার নামাযও সে সব সাধারণ হাদীসের আওতায় পড়ে।
৯. তা ক্বিরাত হিসেবে না পাঠ করলেও অন্তত আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা ও দো‘আ হিসেবে পাঠ করা-ই উত্তম। হানাফী মাযহাবের প্রখ্যাত ইমাম ত্বহাবী[56] এবং ইমাম ইবনুল হুমাম দো‘আ হিসেবে তা পাঠ করার পক্ষে মত দিয়েছেন।[57]
১০. কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে কবরের পার্শ্বে দাঁড়িয়ে কুরআন পাঠ করা জায়েয হওয়ার পক্ষে কোনো দলীল না থাকা সত্ত্বেও আমরা কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কবরস্থ ব্যক্তির কল্যাণের জন্য ফাতেহা পাঠ করার একটি সুন্নাত জারি করেছি, অথচ জানাযা করার সময় তা পাঠ করা জায়েয হওয়ার প্রমাণে এত সব দলীল ও যুক্তি প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মাযহাবের দোহাই দিয়ে আমরা তা পাঠ করাকে জায়েয মনে করি না।
১১. জানাযার নামাযে ফাতিহাঃ পাঠ করার প্রমাণে এত সব দলীল প্রমাণাদি থাকার কারণে তা পাঠ করা জায়েয হওয়ার বিষয়টি বিশিষ্ট হানাফী ফকীহ হাসান ইবন হাসান শরম্বুলালী (মৃত ১৮২৭ খ্রি.) ও মাওলানা আব্দুল হাই লক্ষ্ণৌভী স্বীকার করেছেন। যারা তা পাঠ করাকে মকরূহ বলেন তাদের কথার প্রতিবাদ করার জন্য শরম্বুলালী
(النظم المستطاب لحكم القراءة في صلاة الجنازة بأم الكتاب)
নামে একটি পুস্তকও রচনা করেছেন এবং মাওলানা আব্দুল হাই লক্ষ্ণৌভী বলেছেন : তা পাঠ করা মকরূহ বলার কোনই যুক্তি নেই।[58]
উপর্যুক্ত বিষয়াদির প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আমরা যাদি সত্যিকার অর্থে কুরআন ও হাদীসের যথার্থ অনুসারী হয়ে থাকি, তা হলে আমাদেরকে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা ও উম্মে শুরাইক রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীসের উপর ‘আমল করা উচিত বলে বিবেচিত হবে। জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা : পাঠ করার বিধান আমাদের মাযহাবে নেই, এ কথা বলে ‘আলেম সমাজের পার পাবার কোনো সুযোগ নেই। কেননা, এর অর্থ হচ্ছে : আমরা দু’টি জায়েয কর্মের মধ্যে যে কাজটি উত্তম, সেটিকে উত্তম বলে স্বীকৃতি না দিয়ে যে কাজটি করা শুধুমাত্র জায়েয সেটির উপর ‘আমল করে সেটিকে উত্তমের পর্যায়ে উন্নীত করছি, আর উত্তম কর্মকে না জায়েয ও মকরূহ বলে তা পরিত্যাগ করছি এবং এ-সব করছি কেবল নিজ মাযহাবের দোহাই দিয়ে অন্ধভাবে তা অনুসরণ করার কারণেই। আবার অনেককে এ-সব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে এবং সহীহ হাদীস অনুযায়ী যা পালন করা উত্তম তা পালন না করার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন : এ সব বিষয়ের ফয়সালা বহু পূর্বেই শেষ হয়ে গেছে।
এ সব নিয়ে আমাদের চিন্তা করার কোনই অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো : এ সব নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ যদি না-ই থাকে, তা হলে আমাদের মাযহাবেরই বিশিষ্ট মনীষীগণ কেনইবা আমাদের মধ্যে প্রচলিত এসব ‘আমলের বিপরীত ‘আমলকে সঠিক বলে মন্তব্য করলেন? এতে প্রমাণিত হয় যে, আমাদের মাঝে প্রচলিত কোনো কোনো ‘আমলের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করার অবকাশ রয়েছে। আর সে জন্যেই তাঁরা উপর্যুক্ত ধরনের মন্তব্য করেছেন। এতে প্রমাণিত হচ্ছে যে, আমাদের মাঝে এমনও কিছু কর্ম রয়েছে যা প্রচলিত নিয়মে না হয়ে অন্যভাবে হওয়াই উচিত ও উত্তম ছিল। কিন্তু মাযহাবে অনুত্তম কর্ম প্রচলিত হয়ে গেছে বলেই আমরা আর সঠিক ও উত্তম ‘আমলে ফিরে যেতে চাই না। অনুসরণের ক্ষেত্রে এমন মানসিকতা পোষণ করা কি সঠিক তা আমাদের ভেবে দেখা উচিত। এ-ভাবে মাযহাবের অন্ধ তাকলীদ করার কথা বলে বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত সঠিক বা উত্তম ‘আমল পরিত্যাগ করলে আখেরাতে কি পরিত্রাণ পাওয়া যাবে? এতে কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যথার্থ অনুসরণ ও আনুগত্য হবে?
অনুসরণের ব্যাপারে সাধারণ ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতদের অবস্থা:
এ তো গেলো দেশের ‘আলেম সমাজের অনুসরণ সংক্রান্ত দূরবস্থার কথা। তারা অনেকটা চোখ থাকতে অন্ধ এর অবস্থার মত হয়ে রয়েছেন। অপর দিকে দেশের সাধারণ শিক্ষিত জনগণ ধর্মীয় উপাসনা ও অনুষ্ঠানাদি পালনের ক্ষেত্রে সাধারণ ‘আলেমদের অনুসরণে মাযহাবে প্রচলিত বিষয়াদির অন্ধ অনুসরণ করে থাকেন। অবশ্য এ ক্ষেত্রে তারা অনেকটা অপারগও বটে। তবে দুনিয়া অর্জন ও শাসনের ক্ষেত্রে তারা ধর্মীয় বিধানের কোনো তোয়াক্কা করেন না। সে-জন্য রাজনীতি থেকে শুরু করে অন্যান্য সকল ক্ষেত্রেই তারা নিজেদের অথবা পশ্চিমাদের তৈরী বিধি-বিধানের অনুসরণ করে চলেছেন। দেশ পরিচালনার জন্য আল্লাহর দেয়া নির্দেশিকা আল-কুরআনের আলোকে দেশ পরিচালনার জন্য সংবিধান রচনা না করে নিজেদের খেয়াল-খুশী অনুযায়ী সংবিধান তৈরী করে দেশ পরিচালনা করছেন।
চুরি, ডাকাতী, হত্যা, সন্ত্রাস ও ব্যভিচার ... ইত্যাদি বিষয়ের ক্ষেত্রে কুরআনুল কারীমে সুস্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও এর প্রতি কোনরূপ ভ্রুক্ষেপ না করে তারা সে-সব ক্ষেত্রে নিজেদের পক্ষ থেকে আইন ও বিধান রচনা করে সংসদে তা পাশ করে নিয়ে বিচার কার্য পরিচালনা করছেন। যারা দেশ ও বিচার বিভাগ পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহ প্রদত্ত আইন ও বিধানকে বর্তমান সময়ে তা বাস্তবায়নের অযোগ্য বলে উপেক্ষা করেন এবং দেশ ও বিচার কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের অনুসরণ করেন অথবা নিজেদেরকে সে-জন্যে প্রয়োজনীয় আইন রচনা করার যোগ্য বলে মনে করেন, তারা আল্লাহর রুবুবিয়্যাতে শির্কে নিমজ্জিত হয়ে রয়েছেন। আর যারা আল্লাহ প্রদত্ত আইন ও বিধানকে বর্তমানে বাস্তবায়নের যোগ্য মনে করা সত্ত্বেও পারিপার্শ্বিক বিবিধ কারণে তা বাস্তবায়ন করতে না পেরে মানব রচিত আইনের দ্বারা দেশ ও বিচার বিভাগ পরিচালনা করেন, তারা সর্বদাই কবিরা গুনাহের মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছেন।[59] নিজেদের পরকালীন জীবনের কল্যাণের স্বার্থে এ কাজ থেকে তাদের তাওবা করা একান্ত প্রয়োজন।
১৬.পীরের নিকট রহমত ও করুণা কামনা করা :
মানুষ কোনো অপরাধ করুক আর না-ই করুক, সর্বাবস্থায় তার মন আল্লাহর কাছে তাঁর রহমত ও করুণার ভিখারী হয়ে থাকবে। নিজের জানা বা অজানা সকল অপরাধের মার্জনা লাভের জন্য সর্বদা তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণকারী হয়ে থাকবে। কেননা, সর্বদা তাঁর করুণাকামী হয়ে থাকা হচ্ছে অন্তরের একটি উপাসনা বিশেষ, যা মৃত বা জীবিত কোনো পীর বা ওলির নিকট প্রকাশ করা যায় না। এ জাতীয় উপাসনার নির্দেশ করে আল্লাহ বলেছেন:
﴿ وَأَنِيبُوٓاْ إِلَىٰ رَبِّكُمۡ وَأَسۡلِمُواْ لَهُ﴾ [الزمر: ٥٤]
‘‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে ফিরে আসো এবং তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণ কর’’।[60] আল্লাহর দিকে ফিরে আসার পদ্ধতি সম্পর্কে কারো জানা না থাকলে তা জানার জন্য তিনি জীবিত লোকদের মধ্যে যারা তা জানেন, তাদের নিকট থেকে তা জেনে নিবে, এটাই শরী‘আতের নির্দেশ। তা জেনে নিয়ে আল্লাহর কাছে সে তার মনের কথা বলবে, তাঁর কাছেই অনুনয় বিনয় করে নিজের যাবতীয় কৃত অপরাধের জন্য মার্জনা কামনা করে তাঁর রহমত কামনা করবে। কিন্তু পীর ভক্তদেরকে এর ব্যতিক্রম করতে দেখা যায়। তারা আল্লাহর পরিবর্তে তাদের পীর বাবার কাছেই বিনয় প্রকাশ করেন। তারই কাছে ক্ষমা ও করুণা ভিক্ষা করেন। উদাহরণস্বরূপ নিম্নের কথাগুলো লক্ষ্য করা যায়। এক ব্যক্তি একটি বই এর প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় লিখেছে :
‘‘হে চাঁদপুরীশাহ! হে আমার বাবা ও পীর এবং ক্বিবলা! আমার উপর রহম করুন’’।[61]
অপর এক কবিতায় একজন লিখেছে:
‘‘আশা পুরাও ওহে চাঁদপুরী মাওলা দু’জাহান
তা না হলে দুই অধমে করো না কুরবান।’’[62]
অপর এক ব্যক্তি বলেছে:[63]
‘‘আমার গউছুল আ‘জম চাঁদপুরী শাহ হাকীকে রাসূল
রহম নজরে বাবায় তরায় দুই কুল’’।
অপর একজন তার পীরকে খেতাব করে বলেছে:‘‘ তুমি তোমার ভক্তদের জন্য ক্ষমাশীল ও দয়ালু ছিলে’’।[64]
নোয়াখালী জেলার হাফিজ মহিউদ্দিন নামক পীরের দরবার থেকে প্রচারিত এক পত্রে জনৈক ভক্ত লিখেছে : ‘‘ওহে বাবা! তুমি যদি আমার উপর রহম না কর, তা হলে আমার কী অবস্থা হবে।’’এভাবে পীর ভক্তগণ তাদের পীরকেই আল্লাহর গুণে গুণান্বিত করে নিয়েছেন। তাই আল্লাহর পরিবর্তে তারা তাদের পীরের কাছেই আত্মসমর্পণ করে তার করুণা ও দয়া ভিক্ষা করে থাকেন।
[37].বুখারী, প্রাগুক্ত;কিতাবুল আ-যান, বাব নং ৪৭, হাদীস নং ৬৯২, ১/২৫৪;ইবনে হাজার, ফতহুল বারী; কিতাবুল আ-যান, বাব নং ৭৬, হাদীস নং ৭২৫, ২/২১১।
[38].হাদীসটি নিম্নরূপ: عن ابن عمر رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال:" أقيموا الصفوف وحاذوا بين المناكب و سدوا الخلل و لا تذروا فرجات للشيطان ، و من وصل وصله الله ، ومن قطع قطعه الله." দেখুন:আবু দাউদ, প্রাগুক্ত;কিতাবুস সালাত, বাব নং ৯৫, হাদীস নং ৬৬৬, ১/১৭৮।
[39]. দেখুন: ইবনে হাজার ‘আসক্বলানী, ফতহুল বারী; প্রাগুক্ত; ২/২১১।
[40]. যেমন কিতাবে এসেছে,
وإذا قاموا في الصفوف تراصوا وسووا بين مناكبهم، لقوله صلى الله عليه وسلم : تراصوا و ألصقوا المناكب بالمناكب.
দেখুন: আল-কা-সানী, ‘আলাউদ্দীন আবু বকর ইবন মাস‘উদ, বাদাই‘উস সানায়ে‘; (করাচী: এস.এম.সাঈদ কম্পানী, ১ম সংস্করণ, ১৯১০ ইং), ১/১৫৯।
[41]. ইবনে হাজার ‘আসক্বলানী, ফতহুলবারী;২/২১১।
[42]. বুখারী, প্রাগুক্ত; কিতাবুল আযান, বাব নং ৪৭;১/২৫৪।
[43]. হাদীসটি নিম্নরূপ: " عن طلحة بن عبد الله بن عوف قال :صَلَّيْتُ خَلْفَ ابنِ عباسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَلَى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ .قَالَ لِتَعْلَمُوْا أنَهَّاَ سُنَّةٌّ. দেখুন: বুখারী, প্রাগুক্ত;কিতাবুল জানাইয, বাব: নং ৬৪, হাদীস নং ১২৭০, ১/৪৪৮; ইবনে হাজার আসক্বালানী, ফতুহুতল বারী; বাব নং ৬৫, হাদীস নং ১৩৩৫; ৩/২০৩।
[44]. সুনানে নাসাঈর বর্ণনাটি নিম্নরূপ:فِقَرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَ سُوْرَةً، وَجَهَرَ حَتَّى أَسْمَعنَا، فَلَمَّا فَرَغَ أَخَذْتُ بِيَدِهِ ، فَسَأَلْتُهُ ؟ قَالَ: إِنَّمَا جَهَرْتُ لِتَعْلَمُوْا أَنَّهَا سُنَّةٌ وًَ حَقٌّ." - দেখুন:ইমাম নাসাঈ, প্রাগুক্ত;কিতাবুল জানাইয, বাব: আদ-দু‘আ, হাদীস নং১৯৮৭, ৪/৭৬; ইবনে হিববান, প্রাগুক্ত;৭/৩৪০।
[45]. ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী; ৩/২০৩।
[46]. তিরমিযী, প্রাগুক্ত; কিতাবুল জানাইয, বাব নং ৩৯, হাদীস নং ১০২৭; ৩/৩৪৬।
[47].আশ-শয়বানী, ইমাম মুহাম্মদ ইবন হাসান, প্রাগুক্ত;পৃ.১৬৯; সারখাসী, আবু বকর মুহাম্মদ ইবন আহমদ, আল-মাবসূত; (করাচী: এদারাতুল কুরআন ওয়াল ‘উলূমিল ইসলামিয়্যাঃ, সংস্করণ বিহীন, ১৯৮৭ইং), ২ / ৬৪।
[48]. ইমাম মুহাম্মদ, প্রাগুক্ত; পৃ.১৬৮।
[49].হানাফী ফিকাহবিদদের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ইমাম ইবনুল হুমাম তাঁর ‘আত-তাহরীর’ গ্রন্থে এবং এর ভাষ্যকার ইবনে আমীর আল-হাজও এ-জাতীয় কথাকে মুসনাদ মরফূ‘ হাদীস হিসাবে গ্রহণ করার বিষয়টিকে সঠিক মাযহাব বলে স্বীকার করেছেন। দেখুন:ইবনে আমীর আল-হাজ্জ, শরহুত তাহরীর; ২/২২৪।
[50].দেখুন: ইমাম নববী, ইয়াহইয়া ইবনে শরফ, আল-মাজমূ‘ শরহুল মুহায্যাব; (স্থান বিহীন: দারুল ফিকর, সংস্করণ বিহীন, সন বিহীন), ৫/২৩২।
[51].আল-লক্ষ্ণৌভী, আবুল হাসানাত মুহাম্মদ আব্দুল হাই আল-হানাফী, আত-তা‘লীকুল মুমাজ্জাদ ‘আলা মুওয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ; (দেওবন্দ: আশরাফী বুক ডিপো, সংস্করণ বিহীন, সন বিহীন), পৃ.১৬৯।
[52]. ইবনে মা-জাঃ, প্রাগুক্ত; কিতাবুল জানাইয, বাব নং ২২, হাদীস নং ১৪৭৬, ৩/৪৭৯। [(এর সনদ দুর্বল), সম্পাদক]
[53].ইমাম ইবনে হাজার ‘আছক্বালানী এ হাদীসের সনদে সামান্য দুর্বলতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। দেখুন : আবুল হাসানাত আব্দুল হাই, প্রাগুক্ত; পৃ.১৬৯। [শাইখ আলবানীও হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন]
[54].ইমাম আবু হানীফা (রহ.) বলেছেন: إذا صح الحديث فهو مذهبي . ‘‘হাদীস যখন সহীহ হবে সেটাই আমার মাযহাব হবে’’। দেখুন:ইবনে ‘আবিদীন, হাশিয়াতু রদ্দিল মুহতার ‘আলাদ দুররিল মুখতার; ১/৬৭।
[55].বুখারী, প্রাগুক্ত; কিতাব নং ১৬, সিফাতিস সালাত, বাব নং ১৩, হাদীস নং ৭২৩, ১/২৬৩; মুসলিম, প্রাগুক্ত; ১/২৯৫;তিরমিযী, প্রাগুক্ত; ২/২৫।
[56].ইবনে হাজার ‘আসক্বালানী, ফতহুলবারী;৩/২০৪।
[57].ইবনুল হুমাম, কামাল উদ্দীন মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহিদ, শরহে ফতহুল ক্বাদীর; (দ্বার এহইয়াউত তুরাছিল ‘আরাবী, সংস্করণ বিহীন, সন বিহীন), ১/৪৫৯।
[58]. আবুল হাসানাত আব্দুল হাই, প্রাগুক্ত; পৃ. ১৬৯।
[59]. শায়খ মুহাম্মদ ইবন ইব্রাহীম আ-লুশয়খ, তাহকীমুল কাওয়ানীন; (মদীনা : মারকাযু সুউনিদ দাওয়াতি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদীনা, ৩য় সংস্করণ, ১৪০৪ হি:), পৃ.১১।
[60]. আল-কুরআন, সূরা যুমার: ৫৪।
[61]. চাঁদপুরী শাহ পীরের ভালবাসা প্রকাশার্থে লিখিত ‘‘প্রেমের শুরা-এষ্কের খনী’’ নামক পুস্তিকার প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় একথাগুলে লিখিত রয়েছে। (বইটির প্রকাশক: চাঁদপুরী শাহ দরবার শরীফ: খাদেম মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, ১ম সংস্করণ)।
[62]. তদেব; কবিতা নং- ১৯।
[63]. তদেব; কবিতা নং- ২০।
[64]. কুমিল্লা জেলার গাজীউল হক মাইজভান্ডারীর কোন এক ভক্তের কথা, যা তার কবরের প্রচার পত্র থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।