আমরা যারা সাধারণভাবে কুরআন ও হাদীস অল্প-বিস্তর জানি অথবা যারা জানি না, আমরা সকলে অবশ্যই কারো না কারো অনুসরণ বা তাকলীদ করবো। তবে এ ক্ষেত্রে ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের অনুরূপ হওয়ার অভিযোগ থেকে বাঁচতে হলে আমরা কোনো মাযহাব বা কোনো মনীষীর তাকলীদ করার ক্ষেত্রে এ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবো যে, যখনই কোনো বিষয়ে আমরা অনুসরণীয় মাযহাব বা মনীষীর কোনো মতামত কুরআন ও সহীহ হাদীসের বিপরীতে রয়েছে বলে নিজস্ব পড়া-শুনা অথবা কারো মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে অবগত হতে পারবো, তখনই সে বিষয়ে সে মাযহাব বা সে মনীষীর মতামতের উপর ‘আমল করা পরিহার করে কুরআন ও সহীহ হাদীসের দ্বারা যা করা সঠিক বলে প্রমণিত হয়, তা-ই করবো।
অনুরূপভাবে যখনই আমাদের নিকট নিজ মাযহাবে প্রচলিত কোনো ‘আমলের বিপরীতে অপর কোনো মাযহাবের ‘আমল এক বা একাধিক অপেক্ষাকৃত বিশুদ্ধ হাদীস ও যুক্তির আলোকে ‘আমলের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবার যোগ্য বলে প্রতীয়মান হবে, তখনই আমরা যাবতীয় ধরনের গোঁড়ামি পরিহার করে নিজ মাযহাবের ‘আমল পরিত্যাগ করে সে মাযহাবের আমলকে গ্রহণ করবো। আশা করি, এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কারো বা কোনো মাযহাবের অনুসরণ করলে এতে আমরা ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের অনুরূপ হওয়া থেকে বাঁচতে পারবো। সাধারণ লোকেরা যে এ ধরনের সরল ও সোজা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কারো না কারো তাকলীদ করবে এ প্রসঙ্গে শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) বলেন :
‘‘যে ব্যক্তি কারো তাকলীদ করে এ মানসিকতা নিয়ে যে, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অপর কারো কথা মানতে রাজি নয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হালাল বা হারাম করেছেন সে কেবল তাই হালাল বা হারাম বলে বিশ্বাস করে। কিন্তু, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী বলেছেন, তা তার জানা নেই, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বক্তব্যসমূহের মাঝে মতবিরোধপূর্ণ কথাগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের বা তাঁর কথা থেকে অনুসন্ধান করে মাসআলা বের করার পন্থা সম্পর্কেও তার কোনো জ্ঞান নেই, এমতাবস্থায় সে যদি কোনো হেদায়াত প্রাপ্ত আলিমের অনুসরণ করে এ ধারণার ভিত্তিতে যে, তিনি যা বলেন তা সঠিক, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করেই ফতোয়া দেন এবং তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ করেন, তবে তিনি (অনুসরণীয় ব্যক্তি) যদি কখনও তার উক্ত ধারণার বিপরীত কিছু করেন বলে তার নিকট প্রমাণিত হয়, তা হলে সে কোনো প্রকার বিতর্ক অথবা জিদ না করে তাৎক্ষণিকভাবেই সে আলিমের অনুসরণ করা পরিত্যাগ করবে।
তা হলে এমন তাকলীদকে কেউ কিভাবে অস্বীকার করতে পারে ?...তিনি অতঃপর বলেন: যে নিষ্পাপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ আল্লাহ তা‘আলা আমাদের উপর ফরয করে দিয়েছেন, সে রাসূলের কোনো হাদীস যদি বিশুদ্ধ সনদে আমাদের নিকট পৌঁছায়, আর তা যদি নিজ ইমামের মাযহাবের বিপরীত কিছু প্রমাণ করে, এমতাবস্থায় আমরা যদি তাঁর হাদীসকে পরিত্যাগ করে মুজতাহিদের হাদীস বিরোধী ইজতেহাদকে গ্রহণ করি, তা হলে আমাদের চেয়ে অধিক জালিম আর কে হতে পারে? কেয়ামতের দিন রব্বুল আলামীনের নিকট আমাদের কী জবাব হবে?’’[1]
>وليس محله (أي محل تحريم التقليد) فيمن لا يدين إلا بقول النبي صلى الله عليه وسلم و لا يعتقد حلا إلا ما أحله الله و رسوله ، و لا حراما إلا ما حرمه الله و رسوله لكن لم يكن له علم بما قال النبي صلى الله عليه و سلم و لا بطريق الجمع بين المختلفات من كلامه ، و لا بطريق الاستنباط من كلامه اتبع عالما راشدا على أنه مصيب فيما يقول ، و يفتي ظاهرا ، متبع سنة رسول الله صلى الله عليه و سلم ، فإن خالف ما يظنه أقلع من ساعته من غير جدال و لا أصرار، فهذا كيف ينكره أحد ... ثم قال : فإن بلغنا حديث من الرسول المعصوم الذي فرض= الله علينا طاعته بسند صالح يدل على خلاف مذهبه وتركنا حديثه واتبعنا ذلك التخمين أي= قياس المجتهد واستنباطه، فمن أظلم منا وما عذرنا يوم يقوم الناس لرب العالمين.
দেখুন : শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ; পৃ. ১৫৬।