শির্ক কী ও কেন? প্রথম পরিচ্ছেদ ড. মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল আলী ১ টি

এখানে উল্লেখ্য যে, ভালোবাসা মূলত দু’প্রকার :

এক. বিশেষ ধরনের ভালোবাসা, যাকে আমরা ‘আল্লাহর সত্তাগত ভালোবাসা’ বলতে পারি। যে ভালোবাসা নিয়ে আমরা উপরে আলোচনা করেছি। এ জাতীয় ভালোবাসা কেবল আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কারো জন্যে হতে পারে না। রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসাও আল্লাহর ভালোবাসার কারণে হতে হবে, রাসূলের সত্তাগত কোনো ভালোবাসা নয়। রাসূল আমাদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াতের বাণী পৌঁছিয়েছেন, আমাদেরকে দ্বীনের দিশা দিয়েছেন, আমাদেরকে তিনি পথভ্রষ্টতা থেকে বাঁচাতে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন সেজন্যই তাঁকে ভালোবাসতে হবে। কেবল রাসূলের ব্যক্তিসত্ত্বার জন্য এ জাতীয় ভালোবাসা হতে পারবে না। হ্যাঁ, রাসূলের জন্য অন্যান্য ভালোবাসা যোগ হতে পারে, যার আলোচনা সামনে আসছে।

দুই. সাধারণ ভালোবাসা। এটি আবার তিন প্রকার:

  1. প্রকৃতিগত ভালোবাসা, যেমন- কোনো বিশেষ প্রকারের মাছ, মাংস বা মিষ্টি খাওয়ার প্রতি অন্তরের আকর্ষণ। অনুরূপভাবে ক্ষুধার্ত মানুষের আহার ও তৃষ্ণার্ত মানুষের পানির প্রতি আকর্ষণ, এ সব একই পর্যায়ের ভালোবাসা। এ সব বস্তুর প্রতি অন্তরের ভালোবাসা যেমন সম্মান মিশ্রিত নয়, তেমনি এ ভালোবাসার সাথে সম্মান প্রদর্শনেরও কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং এ জাতীয় ভালোবাসার সাথে শির্কেরও কোন সম্পর্ক নেই।
  2. একত্রে বসবাস ও সহাবস্থানগত ভালোবাসা। যেমন- কোন শিল্প কারখানার কর্মচারীদের পারস্পরিক ভালোবাসা। স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পারস্পরিক ভালোবাসা। ভ্রমণ বা ব্যবসার সঙ্গীদের পারস্পরিক ভালোবাসা। ভিন্ন দেশে অবস্থানকারী একদেশী মানুষের পারস্পরিক ভালোবাসা। একইভাবে স্বামী-স্ত্রী ও বন্ধু-বান্ধবদের পারস্পরিক ভালোবাসা ইত্যাদি। এ জাতীয় ভালোবাসাতেও উপাসনাগত সম্মান প্রদর্শনের কোনো সম্পর্ক না থাকায় এর সাথেও শির্কের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
  3. দয়া ও অনুগ্রহপ্রসূত ভালোবাসা। যেমন- সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার এবং পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা। এ জাতীয় ভালোবাসার সাথেও উপাসনাগত সম্মান প্রদর্শনের কোনো যোগসূত্র নেই বলে এতেও আপত্তির কিছু নেই[1]।

উপর্যুক্ত এ তিন প্রকারের ভালোবাসা দ্বারা পরস্পরের প্রতি অস্বাভাবিক ধরনের কোনো বিনয় ও সম্মান প্রদর্শিত বা প্রমাণিত হয় না বিধায়[2], এ সবের সাথে শির্কের কোনো সম্পর্ক নেই।[3]

>
[1] মনে রাখতে হবে যে, রাসূলের প্রতি আমাদের ভালোবাসাও এ পর্যায়ের। তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসার কারণ হচ্ছে,

তাঁকে ভালোবাসতে আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং তাঁর ভালোবাসার মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশকে আমরা বাস্তবায়ণ করি।
তিনি আমাদেরকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন, সুতরাং তাঁর অনুগ্রহ আমাদের উপর অনেক। তাই তাঁকে ভালোবাসতে হবে।
তিনি আমাদেরকে ভালোবাসতেন, তাই তাঁর ভালোবাসার প্রতিদানস্বরূপ আমরাও তাঁকে ভালোবাসব।
তাঁর আনুগত্যের নির্দেশ আল্লাহ তা‘আলা দিয়েছেন। সে নির্দেশ বাস্তবায়ণ করতে হলে ভালোবাসার কোনো বিকল্প নেই।

রাসূলের প্রতি আমাদের ভালোবাসা কখনই সত্তাগত নয়, বরং গুণগত। এ বিশ্বাস প্রতিটি মুমিনের রাখা উচিত। [সম্পাদক]

[2] এটাই হচ্ছে অনুমোদিত ভালোবাসা ও নিষিদ্ধ ভালোবাসার সীমারেখা। কোনোক্রমেই এ সব ভালোবাসায় অস্বাভাবিক ধরনের কোনো বিনয় ও সম্মান প্রদর্শিত বা প্রমাণিত হতে পারবে না। যদি কোনোভাবে এগুলোতে এ জাতীয় কিছু পরিলক্ষিত হয়, তবে সেটাও শির্কী ভালোবাসায় পরিণত হবে। যদি কেউ রাসূল, স্ত্রী, পণ্য, সন্তান-সন্তানাদি, অথবা দুনিয়ার যে কোনো বস্তু বা বিষয়ের প্রতি পরিপূর্ণ বিনয় ও অস্বাভাবিক ভালোবাসা দেখায় তবে সেটাও মা‘বুদে পরিণত হবে এবং যে এ ধরনের ভালোবাসবে সে মুশরিক হয়ে যাবে। [সম্পাদক]

[3] শেখ সুলাইমান ইবন আব্দুল্লাহ, প্রাগুক্ত; পৃ. ৪৬৮। (সংক্ষিপ্ত) তবে এটাও উপরোক্ত শর্ত দ্বারা শর্তযুক্ত। [সম্পাদক]