আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি মানুষের ভালোবাসারস্বরূপ হচ্ছে সে ভালোবাসা তাদের নিজেদের সত্তা, নিজ সন্তানাদি, পিতা-মাতা ও অন্যান্য সব কিছুর চেয়ে অধিক হবে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
«لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتّٰى أَكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَ وَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ»
‘‘আমি যতক্ষণ তোমাদের কারো নিকট তার পিতা, সন্তান ও সকল মানুষের চেয়ে অধিক ভালোবাসার পাত্র না হবো, ততক্ষণ সে প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না।’’[1]
একদা ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিলেন : ‘‘হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি আমার নিকট আমার নিজ সত্তা ব্যতীত অন্য সব কিছুর চেয়ে অধিক প্রিয়। তাঁর কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
«وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ حَتَّى أَكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْكَ مِنْ نَفْسِكَ»
‘‘শপথ সেই সত্তার যাঁর হাতে আমার আত্মা! যতক্ষণ আমি তোমার নিকট তোমার নিজ সত্তার চেয়েও অধিক প্রিয় না হবো, ততক্ষণ তুমি পূর্ণাঙ্গ মু’মিন হতে পারবে না।’’[2]
কেউ যদি বলে : আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবাসি, তা হলে জীবনের সকল ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করার মধ্য দিয়েই তাকে তার এ দাবীর সত্যতা প্রমাণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন :
﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ﴾ [ال عمران: ٣١]
‘‘আপনি তাদেরকে বলুন! তোমরা যদি সত্যিকার অর্থে আল্লাহ তা‘আলাকে ভালবেসে থাক, তা হলে তোমরা আমার অনুসরণ কর, এতে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ মার্জনা করবেন।’’[3]
একজন রাসূল মহব্বতকারীর পরিচয় হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ যদি তার প্রাণ, তার স্ত্রী, পুত্র-কন্যা ও সম্পদ ইত্যাদিকে বিসর্জন দেয়ার দাবী করে, তা হলে সে নির্দ্বিধায় তা বিসর্জন দিতে প্রস্তুত হয়ে যাবে। কেননা; তা একটি বিশেষ ধরনের ভালোবাসা, যাকে আল্লাহর দাসত্ব প্রকাশের ভালোবাসা বলা হয়। এ জন্য প্রয়োজন আল্লাহর বিধানের সামনে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ। আল্লাহর অবাধ্যতায় অন্য কারো ভালোবাসা প্রকাশের জন্য এ ধরনের কোনো বিসর্জন দেয়া যেতে পারে না। এখন যদি কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ বা নিষেধ পালনের পরিবর্তে অপর কোনো ধর্মীয় গুরু বা রাজনৈতিক নেতার আদেশ বা নিষেধ পালনের জন্য নিজের সব কিছু বিসর্জন দেয়, তা হলে বুঝতে হবে যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসার উপর তাদের ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিয়েছে এবং এভাবে সে গায়রুল্লাহর ভালোবাসাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিশেষ ভালোবাসার সমকক্ষ বানিয়ে নিয়েছে। এ জাতীয় ভালোবাসার লোকদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ ﴾ [البقرة: ١٦٥]
‘‘মানুষের মাঝে এমনও কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহর একাধিক সমকক্ষ নির্ধারণ করে, তাদেরকে আল্লাহর ভালোবাসার ন্যায় ভালবাসে। বস্তুত যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহ তা‘আলাকেই সব চেয়ে অধিক ভালবাসে।’’[4]আরবের মুশরিকরা তাদের দেবতাদের এ ধরনের ভালবাসতো বিধায়, আল্লাহ এ আয়াতে তাদের এ জাতীয় ভালোবাসার সমালোচনা করেছেন। মুসলিমদের মাঝে যারা আল্লাহর অবাধ্যতায় তাদের নেতৃবৃন্দের আদেশ ও নিষেধকে ভালোবাসা ও আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করবে, তাদের অবস্থাও আরবের মুশরিকদের মতই হবে।
>[2]. বুখারী, প্রাগুক্ত; কিতাবুল আইমান ওয়ান নুজুর, বাব : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শপথ কেমন ছিল?; ৪/৬/২৩১-২৩২।
[3]. আল-কুরআন, সূরা আলে ইমরান : ৩১।
[4]. আল-কুরআন, সূরা বাক্বারাহ : ১৬৫।