কাফের ও ফাসেকদের বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে মুগ্ধ হয়ে, রেডিও, টিভি, ফিল্ম, পত্র-পত্রিকা। ও বই-পুস্তকের নানা অপপ্রচারের প্যাচে পড়ে যুবক তার ধর্ম-বিশ্বাসে সন্দেহ করতে শুরু করেছে। উঁচু মানের চরিত্র থেকে নিচে নেমে নোংরামির অতল তলে তলিয়ে যাচ্ছে। যদি যুবকের নিকট এমন কোন সুগভীর দ্বীনী-সভ্যতার মজবুত ঢাল এবং প্রদীপ্ত চিন্তাশক্তি না থাকে যার দ্বারা সে হক ও বাতিল এবং উপকারী ও অপকারীর মাঝে পার্থক্য নির্বাচন করতে পারে, তাহলে সে কুফরী, ফাসেকী ও অশ্লীলতায় পতিত হতে বাধ্য। নাস্তিক ও বিধর্মীয় প্রচারমাধ্যমে মুগ্ধ হয়ে যুবক সম্পূর্ণ বিপরীতমুখে পশ্চাদগামী হয়ে চলতে শুরু করে। যেহেতু তাদের কথা-কৌশলের বীজ বিনা বাধায় যুবকের মন ও মগজে উর্বর জমি পায়। অতঃপর তা তাতে বদ্ধমূল হয়ে কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখা শক্ত হয়ে গজিয়ে ওঠে এবং নাস্তিক্যবাদের ঐ ধাধায় যুবক তার জ্ঞান ও জীবনের দর্পণে সবকিছুকে উল্টা দেখে থাকে।
এই রোগের প্রতিবিধানার্থে যুবকের উচিত, পূর্ব থেকেই ঈমানী শিক্ষার প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ করা, ঐ সকল দ্বীন ও চরিত্র-বিনাশী প্রচারমাধ্যম থেকে দূরে থাকা এবং এমন প্রচারমাধ্যমের সাহায্য নেওয়া যা হৃদয়ে আল্লাহ ও তদীয় রসুলের প্রতি মহব্বতের বীজ বপণ করে, ঈমান ও সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করে। আর এমন প্রচারমাধ্যম নিয়ে সন্তুষ্ট থেকে দ্বীন ও নৈতিকতা বিরোধী সমস্ত রকমের প্রচারমাধ্যমকে বর্জন করার উপর ধৈর্য ধারণ করা জরুরী। কারণ, মানুষের মন তো। মন হয়তো অনেক সময় ঐ অপকারী পত্র-পত্রিকা ও শ্রাব্য-দৃশ্য বিভিন্ন প্রোগামের প্রতি ঢলতে চাইবে এবং উপকারী পত্র-পত্রিকাদি পড়তে ও কল্যাণকর কিছু শুনতে ও দেখতে বিরক্তিবোধ করবে, এ সবে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হবে। সে ও তার মনের মাঝে যুদ্ধ হবে। সে আল্লাহর অনুগত হতে চাইলেও মন চাইবে খেল-তামাশা, অসারতা ও নোংরামিতে মত্ত থাকতে। কারণ, মানুষের মন অধিকাংশে মন্দ-প্রবণ।
ঈমান সজীব ও তাজা রাখতে যুবককে যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান প্রধান পুস্তকাদি পড়তে হয় তার মধ্যে (অনুবাদ সহ) আল-কুরআনের বিশুদ্ধ তফসীর, সঠিক বঙ্গানুবাদ হাদীসগ্রন্থ। এবং কিতাব ও সহীহ সুন্নাহকে ভিত্তি করে লিখিত বিভিন্ন সত্যানুসারী উলামাগণের বইপুস্তক। আমাদের দেশে রেডিও টিভিতে তো সঠিকভাবে ঈমানের আলো পাওয়া তো অবাস্তব কল্পনা। বরং তাতে যা কিছু প্রচার হয়ে থাকে তার সিংহভাগই হল ঈমান ও ইসলাম বিরোধী কার্যক্রম।
শায়খ সালেহ আল-ফাওযান বলেন, বর্তমানে যুব-সমাজ বিপজ্জনক স্রোতের সম্মুখীন। যা যুব-সমস্যার মহাসমস্যাবলীর অন্যতম। যদি তাদেরকে ঐ স্রোতের মুখে ভাসতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে তাতে তাদের চরিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। আচরণ বিশৃঙ্খলগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে এবং আকীদা ও দ্বীনী বিশ্বাস বিনষ্ট ও বিলীন হয়ে যাবে। এ ধরনের বহু প্রকার বহুমুখী স্রোত, যার বহু উৎসমুখ রয়েছে। কিছু স্রোত যা বিভিন্ন প্রচার-তরঙ্গে প্রবাহিত। যেমন, রেডিও, টিভি, পত্র-পত্রিকা চরিত্র-বিধ্বংসী বই-পুস্তক ইত্যাদি যা (মিঠা অথচ) তীব্র হলাহল। যুব-সমাজ অথবা তার কিছু তরুণদল, যারা অপকারী থেকে উপকারী নির্বাচন করতে পারে না, তারা তা হাত পেতে গ্রহণ করে নিয়েছে।
যদি পাঠ্য, দৃশ্য ও শ্রাব্যের এই প্রবাহধারাগুলিকে যুবসমাজকে কবলিত করতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে এর পরিণাম হবে চরম ভয়ানক প্রতিকুল। যেহেতু আজকের যুবকদলের অনেকের চরিত্র বিগড়ে গেছে এবং তারা প্রাচ্য অথবা প্রতীচ্যের পরিচ্ছদ, চিন্তাধারা ও আচরণ-বিধির ঠিক তেমন অন্ধানুকরণ করতে লেগেছে; যেমন তারা শুনছে, দেখছে ও পড়ছে। যা ঐ সমস্ত প্রচারমাধ্যমগুলো তাদের নিকট এনে পৌছে দিচ্ছে। যার অধিকতর পরিস্থিতি এই যে, তাতে যুবসমাজকে (চরিত্রগত দিক দিয়ে) ধংস (ও তাদেরকে পদানত) করার গুপ্ত ষড়যন্ত্রই বেশী। বরং এর চেয়ে গুরুতর আপদ এই যে, যুবকের আকীদা ও ধর্মবিশ্বাসকে পরিবর্তন করার বড় অভিসন্ধি থাকে। তাই তো সত্যসত্যই কতক (বরং অধিকাংশ) যুবক মুসলিম নাম নিয়েও নাস্তিক্য, কমিউনিজম ইত্যাদি সর্বনাশী মতবাদের বিশ্বাসীতে পরিণত হয়ে গেছে। যেহেতু সে যখন এই সমস্ত প্রচার-আহ্বানের বিষয়ের প্রতি আগ্রহী থাকে; যা তার জন্য অতি ধীরে ধীরে ও অনায়াসে নিবেদন করা হয় এবং যখন তার মন ও মস্তিষ্ক প্রত্যেক মতবাদ থেকে শূন্য থাকে, আবার তার নিকট এমন কোন প্রতিরক্ষার হাতিয়ার আর না-ই কোন এমন ইলম থাকে; যার দ্বারা সে এই সন্দিগ্ধ অভিসন্ধি অথবা এই অষ্টকারী প্রচারাদিকে বুঝতে সক্ষম হয় তখন তার নিকট যা আসে তাই সাদরে গ্রহণ করে নেয়।
অতএব যে যুবক এই প্রচার-আহ্বানকে সত্বর বরণ করে এবং যার মস্তিষ্ক প্রত্যেক উপকারী ইন্ম থেকে খালি থাকে, তার মস্তিষ্কে তা যে বদ্ধমূল হয়ে যাবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। বলা বাহুল্য তা তার মন-মগজ থেকে ছিড়ে ফেলা বড় দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে। আর এটা হল আধুনিক অন্যতম যুবসমস্যা। (মিন মুশকিলাতিশ শাবাব ১৫-১৬পৃঃ)
কচি-কাঁচা মন নিয়ে যুবক যৌবনে পদার্পণ করে। খোলা ও উদার মন তখনও পঙ্কিল ও আবর্জনাময় থাকে না। নিরীশ্বরবাদ, নাস্তিক্যবাদ, বহুশ্বরবাদ, সর্বেশ্বরবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা (ধর্মহীনতা) বাদ, ইয়াহুদীবাদ, খৃষ্টবাদ, মির্জাবাদ, সূফীবাদ, জরায়ু-স্বাধীনতাবাদ ইত্যাদি বিভিন্ন মতবাদ, সংগঠন ও প্রভাবশীল মিশনারির প্রলোভন ও খপ্পরে যখনই কোন মুসলিমমন সর্বপ্রথম ফেঁসে যায়, তখনই মুশকিল বাধে তার সঠিক পথে ফিরে আসার ক্ষেত্রে। আরবীতে একটি কবিতা আছে,
أتاني هواها قبل أن أعرف الهوى ٭ فصادف قلبا خاليا فتمكنا
এর ভাবার্থ হল, কে না চায় তার জীবন-সঙ্গিনী প্রেমিকা সুন্দরী হোক, ধনবতী হোক, উচ্চবংশীয়া তথা মর্যাদাসম্পন্না হোক। কিন্তু তবুও দেখা যায় বহু যুবক নীচ-বংশীয়া কুৎসিত নারীর প্রেম-জালে ফেঁসে তার দায়ে জীবন দিতেও প্রস্তুত হয়। আর তার কারণ হল এই যে, উদার ও উন্মুক্ত মনে প্রথমে যার প্রেম এসে বাসা বেঁধে নেয়, সুন্দরীর সহিত সাক্ষাৎ হওয়ার আগে আকৃষ্যমান মনে অসুন্দরীই বিশ্বসুন্দরীরূপে আত্মপ্রকাশ করে। ফলে সমস্ত বাধা উল্লংঘন করে তাকেই তুলে নেয় জীবন-তরীতে। অথচ ঐ অবসরে যুবক নিজে অথবা তার অভিভাবক যদি সুন্দর-অসুন্দরের মাঝে পার্থক্য নির্বাচন করতে পারে, সুন্দর লাভের সুফল ও অসুন্দর লাভের কুফল যুবকের মনে বদ্ধমূল করে দিতে পারে, সত্যের রূপরেখা তার মানসপটে প্রদীপ্ত রাখতে পারে এবং অসত্যের বাহ্যিক ও কৃত্রিম রূপের ভুয়ো বাহারে যাতে ধোকা না খায় সে বিষয়ে চেষ্টা রাখে, তাহলে অবশ্য এমন দুর্ঘটনা ঘটে না।
রেডিও, টিভি যাই বল না কেন, এ সবে প্রচারিত অধিকাংশ বিষয়-বস্তুই হল চিত্তবিনোদন। এতে যা লাভ হয় তার চাইতে ক্ষতির পরিমাণ অনেক গুণ বেশী। মুসলিম জাতি-গঠনমূলক তো কোন বিষয়ই নেই বললেই চলে। বরং ইসলামের আদর্শ মান হয় এ সবে, কলঙ্কিত হয় মুসলিমের চরিত্র। কোন কোন প্রোগামে ইসলাম নাম থাকলেও আসলে তা প্রকৃত ইসলামবিরোধী। অমুসলিম স্টুডিওতে ইসলামের নামে কথা বলে কোন কাদিয়ানী অথবা বাহায়ী অথবা ভ্ৰষ্ট কোন দলনেতা। তাদের মুখে বিকৃত হয় ইসলামের আসল ভাবমূর্তি। মুসলিম স্টুডিওতেও জোরে-শোরে প্রদর্শিত হয় গান-বাজনা সহ ঈদ-মীলাদুন্নাবী, মুহারর্ম, শবেবরাত প্রভৃতি বিদআতী পর্বের প্রোগাম। তাছাড়া বহুলাংশে পাশ্চাত্য সমাজ ও সভ্যতার এ্যাডভার্টাইজম্যান্ট’ চলে।
কিছুতে থাকে ইসলাম-বিরোধী প্রকাশ্য ও সরাসরি আক্রমণ এবং কিছুতে থাকে সময়বিনাশী রঙ-তামাশা ও যৌন-অনুভূতি জাগরণকারী সুড়সুড়ি। মান। করা হয় চরিত্রবাণদের চরিত্র। আর অম্লান ও প্রশংসিত হয় লম্পট ও বেশ্যাদের চরিত্র। বেশ্যাদেরকে যৌনকর্মী বলে সমাজকল্যাণমূলক কর্মতালিকায় নাম চড়িয়ে তাদেরকে সমাজের বন্ধুরূপে মর্যাদা দিতে ধৃষ্টতা প্রকাশ করে। আর এতে সহায়তা করে শুড়ির সাক্ষী মাতালরা, লম্পট ও বেশ্যা, যোনী ও যৌন-স্বাধীনতাবাদী কুপ্রবৃত্তির তাবেদাররা। সিনেমা থেকে যুবক কি লাভ করে? যে সিনেমার কোন ফিল্মই অবৈধ প্রেমমুক্ত নয়। অপসংস্কৃতি ও যৌনপ্রবৃত্তির সহজ প্রচার-কেন্দ্র এই প্রেক্ষাগৃহ। ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়স্কা। ২৫২ জন তরুণীকে নিয়ে এক জরিপে দেখা গেছে যে, এদের মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগ তরুণী সিনেমা দেখার ফলে অবৈধ যৌন-মিলনে লিপ্ত হয়েছে। আর এদের মধ্যে শতকরা ৩৮ ভাগ।
তরুণী অবৈধ পথে পা না বাড়ালেও তারা বিভিন্ন কুচিন্তা ও মানসিক অশান্তির মাঝে কালাতিপাত করে থাকে। (আল-ইফফাহ ৫৫পৃঃ)
এরপর রয়েছে নোংরা পত্র-পত্রিকার ভূমিকা। টাইম পাশ করার জন্য বহু যুবকই এর সাহারা নিয়ে থাকে। এদের হাতে থাকে প্রচুর সময়। এমনি বসে থাকতে ভালো লাগে না। তাই উপন্যাস পড়ে, পড়ে বিভিন্ন প্রেম ও যৌন-নিবেদনমুলক কাল্পনিক কাহিনী। কিন্তু এর মাঝে তার ঈমানী হৃদয় কতরূপে ঝাঝরা হয়ে যায়, তা হয়তো অনেকে টেরও পায় না।
আসল কথা বলতে কি? আজ মুসলিম বিশ্ব ও বিশেষ করে তার যুবশক্তি মিডিয়া আগ্রাসনের শিকার। ‘আধিপত্য বিস্তারে যুদ্ধ জয় এক সময় অপরিহার্য ছিল। যুদ্ধ জয় অপরিহার্য ছিল মূলতঃ তিনটি কারণে। (এক), বিজিত দেশে অর্থনৈতিক লুটপাট, বাজার দখল ও রাজস্ব আয়। (দুই), রাজনৈতিক প্রভুত্ব। (তিন), শত্রুর চেতনায় পঙ্গুত্বসাধন, সাংস্কৃতিক আধিপত্য, নৈতিক বিপর্যয়সাধন ও এভাবে শত্রুর পুনর্জাগরণের সম্ভাবনা রোধ। কিন্তু এখন যুদ্ধ জয় ছাড়াও এসব সম্ভব। আধুনিক প্রযুক্তির ফলে প্রচারের সামর্থ্য এখন প্রচুর, কোন দেশের সীমানাই আজ আর অগম্য বা দুর্গম্য নয়। সুউচ্চ পর্বত বা বিস্তৃত মহাসাগর কোন কিছুই প্রচারের কাছে অনতিক্রম্য নয়। বিশ্বের ঘরে ঘরে যা কিছু বলার তা এখন অনায়াসেই বলা যায়, বাহিরের কথা ঘরে প্রবেশের এখন আর কোনই বাধা নেই। কিন্তু মুসলমানদের সমস্যা হল, এ কাজে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য, এর কোনটিই তাদের নেই।
শত্রুরা যখন এ ময়দানে বীরদর্পে খেলছে, সেখানে তারা প্রায় নীরব দর্শক হয়ে দাড়িয়ে আছে। প্রচারমাধ্যমের প্রায় সবই এখন অমুসলিমদের দখলে। ফলে মুসলমানেরা কি শুনবে বা দেখবে সেটিও এখন অন্যের নিয়ন্ত্রণে। চিন্তার প্রভাব প্রতিফলনে প্রচার-যন্ত্রের চেয়ে সফল মাধ্যম আর নেই। নিরেট মিথ্যাও সত্যরূপে প্রতিষ্ঠা পায় প্রচারের ফলে। প্রযুক্তির বদৌলতে শত্রুর মাইক্রোফোন এখন ঘরে ঘরে, এমনকি বেডরুমেও অনাকাঙ্খিত শত্রু হাজির ও সোচ্চার। ফলে সংকট বেড়েছে মুসলমানদের, এমনকি মুসলমান থাকা নিয়েও। শত্রুর প্রচারের বানে ভেসে গেছে অনেক মুসলমানই, এমনকি বিনষ্ট তো হয়েছে অনেকেই। ইসলামের প্রতি তাদের নেই ন্যুনতম ঈমান-আকীদা, যা মুসলিম পরিচিতির জন্য অপরিহার্য। প্রায় দুই শত বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের যাতাকলে মুসলমানদের যে ক্ষতি হয়েছে, প্রচারের প্রভাবে তার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি হয়েছে বিগত তিরিশ বা চল্লিশ বছরে। (তথ্য সন্ত্রাস ১৩৮ পৃঃ)
প্রায় সকল প্রকার শক্তিশালী প্রচারমাধ্যম হল পাশ্চাত্যের হাতে। জাতিসংঘের হিসাব মত দেখা গেছে যে, আমেরিকা শুধু ইউরোপের জন্য বাৎসরিক ২২ লক্ষ ঘন্টা টিভি সম্প্রচার করে থাকে। ইউনিস্কোর এক জরিপে বলা হয়েছে যে, সারা বিশ্বে যে টেলিভিশন প্রোগ্রাম চলছে, তার মধ্যে শতকরা ৭৫ ভাগই হল আমেরিকার উৎপাদন। তাছাড়া ইন্টারনেট জগতের ৮৮% বিষয়বস্তু হল ইংরেজী ভাষায়। আসলে টিভি যোগে পৃথিবীটা এখন চারিপাশে আয়না বসানো সেলুনের মত হয়ে গেছে। অন্য কথায় গোটা বিশ্বটাই এখন এক রঙ্গমঞ্চে পরিণত হয়ে পড়েছে। যাতে রয়েছে সকল প্রকার সভ্যতা ও সংস্কৃতি ধংস ও বিলীন করে পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে একাকার হওয়ার প্রতি আহ্বান। আমেরিকা আজ সারা বিশ্বের মাটি দখল না করলেও সারা বিশ্বের মানুষের মন-মানসিকতা ও নৈতিকতা দখল করতে চলেছে। দুর্নিবার গতিতে তাদের সেই অপসংস্কৃতির বিভিন্ন কর্মকান্ড এই ‘গ্লোবোলাইজেশন’-এর যুগে সারা বিশ্বমনে উঁকিয়ে বসতে চলেছে।
বর্তমানের শিশু জন্মের পরে সামান্য জ্ঞান লাভ করার পর হতেই টিভির সঙ্গে পরিচিত হতে থাকে। তাছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে যে, কচি-কাচা শিশুমনে অনুকরণের মাত্রা রয়েছে খুব উচ্চ। শিশুরা দেখা ছবির নায়ক-নায়িকার প্রায় ৬৭% অনুকরণ করে থাকে। (আল-ইফফাহ ৫৪পৃঃ)।
আজকাল প্রায় ঘরে ঘরে টিভি। কারো ঘরে না থাকলে পাশের ঘরে গিয়ে দেখে আসতে শিশুদেরকে বাধা দেওয়া বড় শক্ত। একটা শিশুর জীবনে বর্তমানে টিভির চিয়ে অধিক প্রিয় খেলনা বা খেলার সাথী আর অন্য কিছু নেই। ফলে এই সাথীর সম্পূর্ণ প্রভাব যে তার কাঁচা মনে পড়েই থাকে, তা বলাই বাহুল্য। সাথীর অনুকরণে নিজেকেও গড়ে তুলতে চায় এক হিরো বা হিরোইন রূপে। তার স্বভাব ও আচরণ হয় প্রায় নায়ক-নায়িকার মত। আর প্রায় ছবিতেই নায়ক-নায়িকার অভিনয় ও চরিত্র হল, অপরাধ, যৌনতা, প্রেম-ভালোবাসা, অপরাধ-রহস্য, যুদ্ধ, শৈশব, ইতিহাস, ভ্রমণ, কমেডি অথবা সামাজিক প্রোপাগান্ডা নিয়ে। এর মধ্যে পনের শ’ ছবির তিন চতুর্থাংশই নির্মিত হয়েছে অপরাধ, যৌনতা ও প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে। ফলে এসব ছবি দেখার কারণেই অঙ্কুর থাকতেই উক্ত শিশুদের নৈতিক চরিত্র বিনষ্ট হতে শুরু করে।
এরা পড়াশোনা করতে চায় না। পড়তে মন পায় না। সহপাঠী ও খেলার সাথীদের সঙ্গে মারামারি করে জিততে চায়। খেলাধুলা, পোশাক-পরিচ্ছদ, চুল আঁচড়ানোর। ধরন ও কথাবার্তার রীতি পাল্টে যায়। পর্দায় যা দেখে, শিশুমন তার সবটারই অনুকরণ করার চেষ্টা করে। শিক্ষক ও মা-বাপ যা শিক্ষা দিতে পারেন না, সিনেমা তা পারে। শিশুর মনে ছবির নায়কনায়িকাদের অঙ্গ-ভঙ্গি, তাদের রুচিহীন আলাপন, ক্রোধ ও অপরাধ সংঘটনে কৌশল সবই দাগ কাটে। তখন শিশু আর শিশু থাকে না। ইচর-পাকা হয়ে তার মধ্যে ফুটে ওঠে বয়স্ক অপরাধীর ভয়ঙ্কর অভিব্যক্তি। ছবির নায়কের মত সে কোমরে হোলষ্টার বাধে অথবা পকেটে পিস্তল রেখে হঠাৎ তার প্রতিপক্ষকে গুলি করতে চায়। চলচ্চিত্রে অভ্যস্ত একটি শিশুর আচরণ থেকে ফুলের পাপড়ির মত ঝরে পড়তে থাকে সুকুমার বৃত্তিগুলো। শৈশবেই সে পা বাড়ায় অপরাধ জগতের অন্ধকার গলিতে। (তথ্য সন্ত্রাস ১৩৬পৃঃ)।
যান্ত্রিক সভ্যতার এই যুগে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির এক অনন্য উপহার হল এই টিভি। যন্ত্রের এই যাদুকাঠির মাধ্যমে মানুষ যেন পুরো বিশ্বটাকে শোবার ঘরে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। সকল দেওয়াল, দরজা ও প্রহরীর বাধা উল্লংঘন করে যেমন শিশু-কিশোরদের মন কেড়ে নিতে পেরেছে, তেমনি সকল সতর্কতা ও পর্দা সত্ত্বেও অন্তঃপুরের মহিলাদেরকে ‘চোখ মারতে এবং সতী-সাধ্বীদের সতীত্ব হনন করতে প্রয়াস পেয়েছে। এমনকি স্যাটালাইটের মাধ্যমে সারা বিশ্বে প্রচারিত এই যন্ত্র-মন্ত্র যে মু’মিনের ঈমানও ছিনিয়ে নিতে চলেছে, তা বলা নিষ্প্রয়োজন। ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরমাণু বোমার চাইতেও অধিক শক্তিশালী অস্ত্র এই টেলিভিশনকেই পশ্চিমা-বিশ্ব ব্যবহার করছে। বিশ্ব-জনমতে
প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইসলাম ও মুসলিমদের খামাখা বদনাম করার সুযোগ। প্রয়োগ করছে এরই মাধ্যমে। ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও বিভিন্ন অপবাদকে এক শ্রেণীর মানুষ ঘরের ভিতরে নরম বিছানায় শুয়ে শুয়ে লুফে নিচ্ছে! পশ্চিমা-সভ্যতার নৈতিকতাবিবর্জিত চরিত্রহারী বিভিন্ন রঙ-তামাশায় চমৎকৃত হয়ে ভাবতে শুরু করেছে, তারাই হল উন্নত ও সভ্য মানুষ। আর বিবেক যখন মেরে ফেলা হয়, তখন সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য, সভ্যতাকে বর্বরতা এবং বর্বরতাকে সভ্যতারপে বিবেচনা করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিবেক ধ্বংস করার মত যত মাধ্যম আছে, তার মধ্যে টেলিভিশন হল সবচাইতে বেশী বিপজ্জনক। ইউনিস্কোর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, মানুষ তার ৯০% জ্ঞান লাভ করে থাকে দর্শন-শক্তির মাধ্যমে। আর ৮% লাভ করে শ্রবণ-শক্তির মাধ্যমে। বিভিন্ন আকারআকৃতি ও ভাব-ভঙ্গিমা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যে জ্ঞান দান করে কোন ভাষা বা বা শব্দ তা পারে না। (আল-ইফফাহ ৫১পৃঃ) সুতরাং এই যন্ত্র যে ছয়কে নয় এবং নয়কে ছয় করার কাজে কত বেশী উপযোগী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
হক-নাহক বা ন্যায়-অন্যায় ও সত্য-অসত্যের দ্বন্দ্ব অতি পুরাতন। হক’ যেখানেই মাথা তুলে দাড়িয়ে সোচ্চার হয় নাহক’ সেখানেই তাকে পরাভূত করার উদ্দেশ্যে অধিক শক্তিশালীরূপে তৎপর হয়। যখনই সত্যের সূর্য বিশ্বজগৎকে আলোকমন্ডিত করতে চায় তখনই অসত্যের মেঘমালা তাকে আড়াল করার জন্য বিশ্বব্যাপী ঝড়-তুফান সৃষ্টি করে। ঐতিহাসিকভাবে এটাই চির সত্য।
মুসলমানরা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে পিছিয়ে আছে একথা ঠিক, কিন্তু চারিত্রিক সম্পদে আজও বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম জাতি। প্রযুক্তিগত উন্নতিতে পাশ্চাত্যে ভোগ-বিলাসের জোয়ার বইলেও নৈতিকতার মানদন্ডে তারা পশুর পর্যায়ে নেমে গেছে। পশুর কাছে মনুষ্যত্ব যেমন অকাম্য, তেমনি ভোগবাদী ও জড়বাদী পাশ্চাত্যের কাছে তাওহীদবাদী মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্বও অসহ্য। যুদ্ধ করে অথবা অস্ত্র দিয়ে কারো চরিত্র ধ্বংস করা যায় না। চরিত্র ধ্বংসের জন্য হানা দিতে হয় মানুষের মনোজগতে। এজন্য প্রয়োগ করতে হয় মনস্তাত্ত্বিক অস্ত্র। আর প্রচারমাধ্যমই হচ্ছে সেই অস্ত্র, যা পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি অত্যন্ত কার্যকরভাবে প্রয়োগ করছে মুসলিম বিশ্বের দেশে দেশে।
যে ঔপনিবেশিক শক্তি তাদের পূর্বপুরুষকে দিয়েছে গোলামীর জিঞ্জির এবং তাদের দিয়েছে ব্লু-ফিল্ম ও হেরোইন উপহার, সেই পাশ্চাত্যের শক্তির বিরুদ্ধে তাদের কোন অভিযোগ নেই। আশীর্বাদকে তারা অভিশাপ আর অভিশাপকে তারা আশীর্বাদ মনে করছে কেন? সঙ্গত কারণেই অনুসন্ধিৎসু মনে এসব প্রশ্নের উদয় হতে পারে। এসব প্রশ্নের জবাব দেয়াও কোন কঠিন কাজ নয়, মুসলিম তরুণ-তরুণীদের জীবন থেকে ইসলামী পরিচয় মুছে দিতে যে। প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে দায়ী করা যায়, তা হচ্ছে পাশ্চাত্য পরিচালিত প্রচারমাধ্যম। (তথ্য সন্ত্রাস ১৩৪পৃঃ) ‘প্রচার-যন্ত্রের উপর মুসলিম-মালিকানা যে নেই, তা নয়। তবে ব্যাপ্তি ও ব্যাপকতার তুলনায় পাশ্চাত্যের প্রচারমাধ্যমকে সূর্য বললে মুসলিম প্রচারমাধ্যমকে মোমবাতির চেয়ে বেশী কিছু বলা যায় না। প্রচার-যন্ত্রের প্রায় সব ক’টি আবিষ্কৃত হয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকায়। ধনকুবের, লেখক ও বুদ্ধিজীবীদেরও অভাব নেই সেখানে। এ মৌলিক সুবিধার জন্য পাশ্চাত্য জগৎ মুসলিম বিশ্বসহ বাদবাকি পৃথিবীতে আধিপত্য কায়েম করতে পেরেছে। ঔপনিবেশিকতার যুগ শেষ হয়ে গেলেও প্রচারমাধ্যমের কল্যাণে শুরু হয়েছে এক নয়া ঔপনিবেশিকতার যুগ। সাবেক ঔপনিবেশিক শাসনকে চোখে দেখা যেত, কিন্তু বর্তমান।
ঔপনিবেশিক আধিপত্যকে দেখা যায় না। মুসলিম দেশগুলোর প্রশাসনিক পদগুলোয় দেশীয় মুসলমানরাই রয়েছে। তবে এসব দেশের আত্মার শাসক পাশ্চাত্য। এটা এমন এক মানসিক দাসত্ব, যা অন্যের নজরে আসে না এবং যে তার শিকার, সে নিজেও বোঝে না। ঔপনিবেশিক শাসনের কুফলস্বরূপ মুসলিম দেশগুলোয় এ মানসিক দাসত্ব বিস্তার লাভ করছে। স্বাধীনতা লাভ করেও আমরা নিজেদের ভাষায় কথা বলি না, নিজেদের পোশাক পরিধান করি না, নিজের ধর্ম ও সংস্কৃতিকে ভালোবাসি না। ঘরে থেকেও আমরা যেন বিলেতী। ইংরেজীতে কথা না বললে অভিজাত হওয়া যায় না। মাকে ম্যাম্মি, বাবাকে ড্যাডি, চাচাকে আংকেল, চাচীকে আন্টি বলে না ডাকলে জাতে উঠা যায় না। আমাদের এ মানসিক বৈকল্যের জন্য কে দায়ী? দায়ী আমরাই। চিত্তবিনোদন ও জ্ঞানার্জনের জন্য যেসব মাধ্যমকে আমরা মোক্ষম বলে মনে করি, সেগুলোর স্বরূপ কি আমরা কখনো তলিয়ে দেখেছি?
এ দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সর্বনাশ ডেকে আনছে। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, ফুল থেকে যেমন মধু আহরণ করা যায়, তেমনি বিষও আহরণ করা যায়। আমরা মধুর পরিবর্তে যেন বিষ আহরণ করছি। সে জন্য পুঁজিবাদীরা আমাদের চারপাশের পৃথিবীতে ছড়িয়ে রেখেছে চোখ ধাধানো উপকরণ। টিভি, রেডিও, সিনেমা, উপগ্রহ, ডিশ এ্যান্টিনা, ভিসিআর, ব্লু-ফিল্ম, পর্নো পুস্তক-পত্রিকা ইত্যাদি। এগুলো আধুনিক জীবনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার বাহ্যত আমাদের জীবনকে করেছে সুন্দর ও সহজ, একথা যেমন সত্য, তেমনি এসব উপকরণকে কাজে লাগিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে মেতেছে, একথাও সমান সত্য।' (ঐ১৩৩পৃঃ)
কিন্তু কেন তারা এ পথ বেছে নেয়? প্রথম কথা হল, নিজ নিজ জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের প্রয়োজনে। তারা মনে করে, শত্রুর উন্নত মাথা অবনত করার জন্য এ অস্ত্রের চেয়ে অধিকতর মারাত্মক অস্ত্র আর কিছু হতে পারে না। সম্মুখসমরে যেতে হয় না, কৌশলে কর্ম সারা যায়। ধরা পড়ার ভয় থাকে না। কাটা দিয়ে কাঁটা তোলা যায় অনায়াসে। সবচেয়ে বড় দুশমনকে কাবু করার জন্য তারা এই শক্তিকেই পারমাণবিক বোমার চেয়েও অধিকতর শক্তিশালী মনে করে। মুসলমানই তাদের প্রধান শত্রু। তারা জানে, মুসলমানদের হাতে শক্তিশালী কোন মিডিয়া নেই এবং তাদের ‘ইনট্রিগ্রিটি অব কারেক্টারও নেই। তাই মিডিয়া সন্ত্রাসের অস্ত্রের মাধ্যমে তাদের দুর্বল করে রাখলে কখনো আর তারা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। যদি তারা অতীতের মত আর একবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে, তাহলে দুনিয়ার বাদশাহী আবার তাদের হাতে চলে যাবে। তাই তারা বিশ্বের সবচেয়ে বেশী শক্তিশালী অস্ত্র এই মিডিয়ার সম্রাট হয়ে গোটা বিশ্বকে বিশেষ করে মুসলিম দুনিয়াকে পঙ্গু করে রেখেছে। প্রধানতঃ এই উদ্দেশ্যেই তারা এ পথ বেছে নিয়েছে।' (তথ্য সন্ত্রাস)
অবশ্য মুসলিম ছাড়া অমুসলিমরা যে উক্ত যন্ত্রের ক্ষতির থাবাতে পরিণত হয় না, তা নয়। তাদের ধর্মীয় ও নৈতিক মাথাব্যথা ততটা না থাকলেও সাংসারিক জীবনে সুখ কে না চায়?
১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে ২০ হাজার লোকের উপর চালানো একটি জরিপে দেখা গেছে যে, ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী সুখী দম্পতির সংখ্যা ৪৪% থেকে ৩২% এ নেমে গেছে। এর কারণ স্বরূপ যা বলা হয়েছে তা হল দু’টি প্রথমতঃ বহু যুবতীর চাকরী-প্রবণতা এবং দ্বিতীয়তঃ স্বামী-স্ত্রীর চরিত্র-ব্যবহারে টিভি ও সিনেমা তথা চলচ্চিত্র জগতের বিপুল প্রভাব। কারণ, এ জগৎ থেকেই পাওয়া যায় স্বামীর অধীনে থেকেও স্বাধীন হয়ে চলার শিক্ষা। স্ত্রী থাকতেও গার্লফ্রেন্ড’ রাখার আধুনিক ফ্যাশন!
তদনুরূপ অপরাধ জগতেও চলচ্চিত্রের অবদান বড়। স্পেনের এক জরিপ মতে দেখা গেছে যে, ৩৯% অপরাধ (খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ ইত্যাদি) অপরাধীরা সিনেমা ও টিভির বিভিন্ন সিরিজ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সম্পন্ন করেছে। (আল-ইফফাহ ৫২ পৃঃ) ব্যাপক হারে গুপ্ত হত্যা, বিমান ছিন্তাই, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও সাম্প্রদায়িকতার পশ্চাতেও রয়েছে এই সর্বনাশীর সক্রিয় ভূমিকা। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে একশ’ ভাগ অপরাধ-প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এ দুর্যোগপূর্ণ সময়ে ১৯৬৮ সালে সহিংসতার কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিরোধের উপায় নির্ধারণে এক নির্বাহী আদেশে প্রেসিডেন্ট জনসন একটি জাতীয় কমিশন গঠন করেন। কমিশন তদন্ত করে দেখতে পায় যে, এবিসি, এনবিসি ও সিবিএস টেলিভিশন নেটওয়ার্কে প্রচারিত অপরাধ-বিষয়ক অনুষ্ঠানই এসব দাঙ্গা-হাঙ্গামার জন্য দায়ী।
ঐ মার্কিন মুলুকের হাল অবস্থা এই যে, সে দেশে প্রতি ৭ মিনিটে একটি করে নারী ধর্ষণ এবং প্রতি ২৪ মিনিটে একটি করে হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। প্রতি দু’টো বিয়ের একটি এক বছরের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়। সে দেশে ১৪ বছরের কুমারী মেয়ে খুঁজে পাওয়া যায় না। দেশটি যে সব কারণে এত কলঙ্কিত হয়েছে তা আমাদের দেশে চালান দিয়ে আমাদের তাই বানাতে চায়। ভাবখানা এই যে, আমরা তো মরেছি, এবার তোমরাও মর। আমরাও দু’বাহু বাড়িয়ে তা বরণ করে নিয়েছি। এই আগ্রাসী কালচার’ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে গণমাধ্যমগুলো। এটা করা হচ্ছে অত্যন্ত সুকৌশলে।
রেডিও-টিভি বিশেষ কায়দায় সে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কারণ, ওখানে বসে যারা কলকাঠি নাড়েন, তাদের অনেকেই ডিস্কো চরিত্রের। নানাভাবে গণমাধ্যমগুলো তরুণদের জীবন-বিচ্ছিন্ন সংস্কৃতি চর্চায় অনুপ্রাণিত করছে, কখনো বিজ্ঞাপনের আবরণে, কখনো সংগীতের আবহে, কখনো বিদেশী চলচ্চিত্র প্রদর্শন করে, কখনোও সরাসরি এই কাজটি করে যাচ্ছে। (অপসংস্কৃতির বিভীষিকা ১৭পৃঃ) সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে যে, প্রতি ৮ সেকেন্ডে একজন মার্কিন মহিলা ধর্ষিতা হয়। এ হিসেবে বছরে সাড়ে ৩৯ লাখ মহিলা ধর্ষিতা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা ২৬ কোটি। এর মধ্যে মহিলার সংখ্যা ৮ কোটির কাছাকাছি। বছরে যদি সাড়ে ৩৯ লাখ মহিলা ধর্ষিতা হয়, তাহলে এ পর্যন্ত তাদের মহিলার শতকরা কত ভগ্নাংশ মহিলা ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পায়। সেটাই প্রশ্ন। হিলারী ক্লিনটন বাংলাদেশে এসে এখানকার নির্যাতিত মহিলাদের জন্য চোখের পানি ফেলেছেন।
চোখের পানি তো ফেলার কথা তার জন্য আমাদের। যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ষণের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে মনে প্রশ্ন জাগে, হিলারীদের কত জন ধর্ষণের হাত থেকে অক্ষত থাকতে পারছেন? কাউকে পোড়াতে গেলে নিজেই পুড়ে মরতে হয়। মুসলমানদের বিনাশের জন্য যে যুক্তরাষ্ট্র অবাধ তথ্য-প্রবাহের নামে বিকৃত প্রচার-যন্ত্রগুলোর মুখ উন্মুক্ত করে দিয়েছে, সে যুক্তরাষ্ট্রে কারো শান্তি নেই। ঘুম হয় না; ঘুমের বড়ি খেয়ে ঘুমাতে হয়। অনেকের বাড়িতেও কাজ হয় না।
গায়ের জোরে মুসলিম দেশগুলোকে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র বলে গালি দেয়া হচ্ছে। অথচ পৃথিবীতে সন্ত্রাসের আদি জন্মদাতাই হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশ। সন্ত্রাসের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ডিশ এ্যান্টিনার মাধ্যমে পাশ্চাত্যের টিভি নেটওয়ার্কগুলো। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব পাশ্চাত্যের টিভি নেটওয়ার্কগুলো কিভাবে এড়াবে? স্টার টিভিতে প্রচারিত অনুষ্ঠানমালার ৯০ শতাংশই অপরাধ বিষয়ক। এসব ছবিতে আছে র্যাম্বো
স্টাইলে ফাইটিং, মারদাংগা, মারামারি। শিল্পকলা হচ্ছে জীবনের প্রতিচ্ছবি। অথচ পাশ্চাত্য ছবিতে মানুষের জীবনে মারামারি, গোলাগুলি ছাড়া আর কিছু নেই। এদের টিভি অনুষ্ঠানমালায় জীবনের সুকুমারবৃত্তির প্রতিফলন নেই, নৈতিক উন্নয়নের উপযোগী শিক্ষণীয় কিছু নেই। এটা কেন? প্রচারণার জোরে নাৎসীবাদ যেমন টিকে থাকতে পারেনি, তেমনি পাশ্চাত্যের ঘৃণিত পুঁজিবাদও প্রচারণা চালিয়ে টিকে থাকতে পারবে না। সত্যকে কিছুদিনের জন্য আড়াল করে রাখা যায়, চিরদিনের জন্য নয়। ইতিহাসের অমোঘ বিধানে ভেসে গেছে হিটলার মুসোলিনী। একই পথে হারিয়ে যাবে ইংগ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। বিশ্বের অগণিত মানুষের মনের মণিকোঠায় চিরভাস্বর হয়ে জেগে থাকবে সত্যের আলো। (শাহাদাত হোসেন খান, তথ্যসন্ত্রাস ১৩৭পৃঃ)
চলচ্চিত্র জগতের যে সব সিরিজ আমরা নিয়মিত দর্শন করে চলেছি তা আসলে আমাদের। শত্রুরা সরবরাহ করে থাকে, সে কথা হয়তো আমার বহু যুবক বন্ধু জানে না। সিনেমা বা ভিডিও হলের টিকিট কেটে অথবা টিভির পর্দায় চোখ ফেলে রেখে ছেলে-মেয়ে নিয়ে অথবা গুরুজনদের পাশে বসে যে ছবি দর্শন করে তৃপ্তি লাভ করা হয়, তা আসলে আমাদের কত বড় ক্ষতি করছে এবং সারা দুনিয়াকে কোন পথে নিয়ে যাচেছু ঐ শত্রুপক্ষ, তা হয়তো অনেকে তলিয়ে দেখতেও চায়না। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ইহুদীরা সারা দুনিয়াতে সন্ত্রাস এবং চরিত্রবিধ্বংসী বিষ ছড়াচ্ছে। চলচ্চিত্র জগতে ‘হলিউড’ই হলো বিশ্বের এক নম্বর প্রধান শহর, সেখানকার চলচ্চিত্র সারা দুনিয়াতে সরবরাহ হয়ে থাকে। হলিউডের চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রধান অংশ ইহুদী।
হলিউড হতে প্রচুর অশ্লীল ছবি নির্মিত হয়ে পুরো বিশ্বে তা ছড়িয়ে পড়ে অবশ্য টিভি সিরিজের নিমাতারাও অশ্লীল সিনেমা নির্মাণ করে থাকে। অত্যন্ত বড় মাপের পাঁচটি টিভি কোম্পানী ছাড়াও আরো ২টি আমেরিকান টিভি কোম্পানী রয়েছে, যেগুলোর নাম হলো কেনিন এবং ইটিভি। এরা বিভিন্ন অশ্লীল সিরিজ নির্মাণ করে এবং পুরো দুনিয়ায় সাপ্লাই করে। শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই এদের ৪২টি শাখা রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে আমেরিকা, লন্ডন ও ফ্রান্সে তৈরী ব্লু ফিল্মও তারা ব্যাপকভাবে প্রচার করে থাকে। এ হল আমেরিকার মিডিয়া জগতের মোটামুটি চিত্র। আমেরিকান মিডিয়ার পুরোটাই
ইহুদীদের দখলে এবং সেই মিডিয়ার মাধ্যমে ইহুদীরা আমেরিকার ছত্রছায়ায় সংঘাত, দাঙ্গাহাঙ্গামা ও বিশৃঙ্খলা ঘটিয়ে পুরো বিশ্বেই যেন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। (তথ্য সন্ত্রাস ১৩১পৃঃ)। আমাদেরকে মুসলিম হিসাবে একটা কথা খুব সতর্কতার সাথে খেয়াল রাখতে হবে যে, এই সব প্রচার-অভিযানের বিরাট একটা অংশের পশ্চাতে রয়েছে ইসলামী পুনর্জাগরণের। আন্দোলনসমূহকে বানচাল করার আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা। পৃথিবীর সকল ইসলাম-বিদ্বেষী শক্তি নিজেদের যাবতীয় মতবিরোধ সত্ত্বেও ইসলামী পুনর্জাগরণের বিশ্বময় আন্দোলনসমূহকে বানচাল করে দেয়ার উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ ও একমত। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য ওরা এক দিকে যেমন মুসলিম-বিশ্বের পুতুল সরকারগুলোকে সুকৌশলে ব্যবহার করছে, অপর দিকে বিষাক্ত অপপ্রচারণার মাধ্যমে মুসলমানদের মাঝে শ্রেণী বিরোধকে। উৎসাহিত করছে এবং উস্কানি দিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। (ঐ ১১০পৃঃ)।
ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিশ্বের অন্যান্য জাতিকে উত্তেজিত করে লেলিয়ে দিয়ে মুসলিমদের আসল পরিচয় বিকৃত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। তাদেরকে সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করে সকল জাতির নিকটে ‘হিংস্র-জীব’ রূপে তাদের পরিচয় প্রচার করা হচ্ছে! বিশ্বজুড়ে রাজনীতির চাবিকাঠি হাতে নেওয়ার যে ইয়াহুদী পরিকল্পনা কাজ করছে তা তাদের প্রটোকল’-এ স্পষ্টভাবেই উল্লেখ রয়েছে। তাদের কর্মসূচিতে রয়েছে যে, আমরা ইহুদীরা দুনিয়ার সকল আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমগুলো সংবাদ-সংস্থাসমূহের মাধ্যমে কন্ট্রোল করব; যাতে করে দুনিয়াবাসীকে আমরা যে চিত্র দেখাতে চাই সে চিত্রই দেখবে।
অপরাধ-জগতের খবরগুলো আমরা এমন সূক্ষভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরব, যাতে পাঠকদের ব্রেন ওয়াশ হয়ে উল্টো অপরাধীদের প্রতিই তারা সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে। বলা নিষ্প্রয়োজন যে, ইহুদীরা তাদের জন্য ঘৃণ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মিডিয়ার সাহায্যে প্রথমতঃ তারা নিজেদের প্রকৃত চরিত্র তথা সন্ত্রাসী তৎপরতা, দাঙ্গাবাজি, অসভ্যতার লোভ-লালসা, লাঞ্ছনা, হৃদয়ের কঠোরতা, হৃদয়হীনতা এবং মানবতা-বিরোধী জঘন্য চরিত্র ঢেকে রেখে ইহুদী জাতিকে মজলুম জাতি হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছে। ইহুদী মিডিয়া তাদের শ্বেতী চেহারাকে প্লাস্টিক সার্জারীর মাধ্যমে মেকআপ দ্বারা সুন্দর করে দুনিয়ার সামনে তুলে ধরেছে।
ইসলামের ফজর থেকেই ইয়াহুদী-চক্রান্ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে সমভাবে কাজ করে আসছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ হয়েছে সুদী ইত্যাদি কারবারে অর্থনৈতিক ময়দানে অভাবনীয় সফলতা অর্জন করার পর। অর্থ যেখানে, স্বার্থ ও সাফল্য সেখানে৷ অবশেষে তারা ইউরোপ ও আমেরিকার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় এক ইয়াহুদী রাষ্ট্র কায়েম করতে সক্ষম হল। বিভিন্ন মুসলিম দেশ জয় করে নীলনদ থেকে ফোরাতের অববাহিকা পর্যন্ত প্রায় গোটা আরব-বিশ্বকে গ্রাস করে একটি বৃহত্তর ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা আজও কাজ করে যাচ্ছে এবং তাদের প্রসিদ্ধ আন্তর্জাতিক নেতা দাজ্জাল আসা পর্যন্ত করতেই থাকবে।
এরা জানে, তাদের এ কাজে বিশেষ সহায়ক হবে প্রচারমাধ্যম। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা গড়ে তুলেছে। তাদের সংস্থার পক্ষ থেকে সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে রয়েছে হাজার হাজার সাংবাদিক ও রিপোর্টার। যাদের প্রধান দায়িত্ব হল, বিশ্বের সকল স্থান হতে সংবাদ সংগ্রহ করে তা প্রচার-সংস্থাগুলোর কাছে পৌছে দেওয়া এবং তাদের অনুমোদন নিয়ে তা প্রচার করা। বিশ্বের অন্যতম প্রধান সংবাদ সংস্থা হল রয়টার। দুনিয়ার এমন কোন সংবাদপত্র, রেডিও সেন্টার ও টিভি সেন্টার নেই, যারা রয়টার থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে না। বর্তমান বিশ্বের প্রধান দু’টো প্রচারমাধ্যম বিবিসি এবং ভয়েস অব আমেরিকা প্রায় ৯০% সংবাদ রয়টার থেকে সংগ্রহ করে। এ রয়টার ছাড়া দুনিয়ার সমস্ত সাংবাদিকতা যেন অচল। রয়টার হচ্ছে। আকাশ সংবাদ-সংস্থার মহারাজাধিরাজ। আর তা হল ইয়াহুদীদের নিয়ন্ত্রণে।
এ ছাড়া এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), ইউনাইটেড প্রেস (ইউপি), এজেন্সী ফ্রাস্ প্রেস (এ এফ পি) -এ সবই ইয়াহুদীদের। বর্তমান বিশ্বে সব চাইতে প্রসিদ্ধ সংবাদ প্রচারমাধ্যম হল বিবিসি। এখান হতে ৪৩টি ভাষায় সংবাদ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়ে থাকে এবং এর খবরকে অধিকাংশ লোকে ‘অহী’ বলে ধারণা ও বিশ্বাস করে। মনে করে, এই প্রচার কেন্দ্রের খবর হল নির্ভুল সত্য এবং নিরপেক্ষও। অথচ তারা যে দ্বীনদার মুসলিমদের প্রতি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি রাখে না, তা হয়তো দ্বীনদাররাই বোঝেন এবং পাশাপাশি আরবী, উর্দু, হিন্দী ও বাংলা অনুষ্ঠান যারা।
শোনেন তারাও একথা নিশ্চয়ই অনুধাবন করে থাকবেন। আসলে এই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রটিও ইয়াহুদী পরিচালিত। এর পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে তারাই। ওদিকে স্টার টিভি যখন থেকে। বিশ্বকে তা প্রোগ্রামের সেবাদাস বানিয়ে ফেলেছে, তখন থেকে ইহুদীদের প্রচার-প্রোপাগান্ডা আরো অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রিটেনের সংবাদপত্রের উপর ইহুদীদের প্রভাব প্রায় শত ভাগ। ধীরে-ধীরে তারা সবই দখল করে নিয়েছে। ব্রিটেনের নেতৃস্থানীয় ১৫টি দৈনিকের মালিকই তারা। (তথ্য সন্ত্রাস ১২১-১২৬পৃঃ)
ভাই যুবক! এই দীর্ঘ আলোচনায় বিরক্ত না হয়ে হয়তো বুঝতে পেরেছ যে, বিধর্মীদের অধর্ম প্রচারে যে জোর, মুসলিমদের ইসলাম প্রচারে সামান্যও সে জোর নেই। বিজাতির প্রচারমাধ্যম ও শক্তির কাছে মুসলিম প্রচারমাধ্যম ও শক্তি নেহাতই দুর্বল। তাদের সে আলো-ঝলমল সুশোভিত, সুরঞ্জিত বিভিন্ন প্রোগ্রাম ছেড়ে ধর্ম-নিয়ন্ত্রিত সাদা-মাঠা প্রোগ্রাম আর কেই বা দেখে অথবা কেই বা শোনে? ঢাকের শব্দের মাঝে মোহন বাঁশীর সুর বিলীন হওয়ারই কথা। তাছাড়া ইসলামী সে প্রচারমাধ্যম আছেই বা ক'টা? থাকলেও সঠিক ও শুদ্ধ ইসলাম প্রচার হয়ই বা কোনটায়?
পক্ষান্তরে মানুষের মন হল মন্দ-প্রবণ, প্রবৃত্তিপরায়ণ। ভালো-মন্দ উভয়ই পাশাপাশি সুসজ্জিত থাকলে বেশীর ভাগ মানুষের মন মন্দের দিকেই আকৃষ্ট হতে থাকে, ধাবিত হয় ভালো ছেড়ে ঐ নোংরার দিকে। কিন্তু পূর্ব হতেই যদি প্রতিষেধক ঈমানী ও ইসলামী টিকা বা ভ্যাকসিন নেওয়া থাকে, তাহলে ঐ সংক্রমণের ভয় আর থাকে না। সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ে পূর্ব-সতর্কতা থাকলে তার সংস্পর্শ ও ছোয়াচ থেকে সুদুরে থাকলেও সে ব্যাধির কবল থেকে
নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। আজ বর্তমান বিশ্বে আমরা শত্রুর তরফ থেকে পাতা ফাদের মাঝে বাস করছি। শত্ৰুদল আমাদেরকে নখে কাটতে পারলে আর তরবারি চায় না। তারা চায় যে,মুসলিমরা তাদের ধর্ম মত অবলম্বন করুক। নতুবা তা না করলেও অন্ততঃ পক্ষে মুসলিমরা যেন মুসলিম না থাকে বরং তারা ধর্মান্ধত্ব (?) থেকে বেড়িয়ে এসে ধর্মহীনতার আলোয় (?) আলোক-শোভিত হোক। অবশ্য বিজাতিরা একাজে বড় কৌশল ও অতি সন্তর্পণে সহায়ক হিসাবে ব্যবহার করছে আমাদেরই জাত-ভাইকে। তাই ইসলামের প্রদীপ, রহমানের আলোকবর্তিকা হয়েও ইসলাম ও রহমানের উজ্জ্বল নামকে মানকে করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। রহমান ও কাদেরের বন্ধু ও দাস হয়েও তার শত্রুতা করতে মোটেই দ্বিধা করে না। আর এ ব্যাপারে প্রতিবেদন তৈরী করার জন্য ব্যবহার করা হয় তথাকথিক কতক মুসলিম চিন্তাবিদ ও কবি-লেখককে।
যার ফলে লোহার কুঠারের কাঠ কাটার ক্ষমতা যদিও ছিলনা, তবুও তার পশ্চাতে লাগানো ঐ কাঠেরই জাত-ভাই বঁট’ সেজে বড় ঠাটবাটের সাথে চোখ বুজে আপন স্বজাতি নিধন করে চলেছে। আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও একক মাবুদ আমাদেরকে সতর্ক করে বলেন, “নিশ্চয় কাফেরদল তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা নিসা ১০১ আয়াত) “তুমি যখন তাদের দিকে তাকাও, তখন ওদের চেহারা তোমার নিকট প্রীতিকর মনে হয় এবং যখন ওরা কথা বলে, তখন আগ্রহভরে তুমি ওদের কথা শ্রবণ করে থাক। যদিও ওরা দেওয়ালে ঠেকানো কাষ্টসদৃশ। প্রত্যেক শোরগোলকে ওরা নিজেদের বিরুদ্ধে মনে করে। ওরাই শত্রু, অতএব ওদের সম্পর্কে সতর্ক হও। আল্লাহ ওদেরকে ধ্বংস করুন। ওরা বিভ্রান্ত হয়ে কোথায় চলেছে?” (সূরা মুনাফিকূন ৪ আয়াত)।
“তোমাদেরকে কাবু করতে সক্ষম হলে ওরা তোমাদের শত্রু হবে এবং হাত ও জিভ দ্বারা তোমাদের অনিষ্ট সাধন করবে, আর চাইবে যে, কোনরূপে তোমরাও কাফের হয়ে যাও।” (সূরা মুমতাহিনাহ ২ আয়াত)
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না; তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ত্রুটি করে না, তোমরা কষ্ট্রে থাক -তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতা-প্রসূত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বের হয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে আছে, তা আরো জঘন্য। তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করে দেওয়া হল, যদি তোমরা অনুধাবন করতে সক্ষম হও। দেখ! তোমরাই তাদেরকে ভালোবাস, কিন্তু তারা তোমাদেরকে মোটেও ভালোবাসে না, আর তোমরা সমস্ত (ঐশী) কিতাবে বিশ্বাস রাখ। (অথচ তারা তা রাখে না।)
তারা যখন তোমাদের সাথে এসে মিশে তখন বলে, 'আমরা ঈমান এনেছি। পক্ষান্তরে তারা যখন নির্জনে যায় তখন তোমাদের প্রতি রোষবশতঃ আঙ্গুল কামড়াতে থাকে। বল, তোমরা আক্রোশে মরতে থাক। আল্লাহ মনের কথা ভালোভাবেই জানেন। তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয় তাহলে তাদের মনঃকষ্ট হয়, আর যদি তোমাদের কোন অমঙ্গল হয়, তাহলে তারা আনন্দবোধ করে। অবশ্য যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং পরহেযগার হও, তবে তাদের চক্রান্ত তোমাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। তারা যা কিছু করে, সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে।” (সূরা আলি ইমরান ১১৮- ১২০ আয়াত)
“ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানগণ কখনই তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না তুমি তাদের মতবাদ মেনে নিয়েছ। তুমি বল, আল্লাহর প্রদর্শিত পথই প্রকৃত সুপথ। আর তোমার নিকট যে জ্ঞান উপনীত হয়েছে তার পরও যদি তুমি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহর কবল থেকে রক্ষা পেতে তোমার কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী নেই।” (সূরা বাক্বারাহ ১২০)।
“ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানদের অনেকেই তাদের নিকট সত্য সুপ্রকাশিত হওয়ার পরেও তাদের মনের প্রতিহিংসাবশতঃ চায় যে, মুমিন হওয়ার পর তোমাদেরকে কোন রকম কাফের বানিয়ে দেয়। (ঐ ১০৯ আয়াত)
“ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানদের একদল তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করার আশা পোষণ করে। অথচ প্রকৃত প্রস্তাবে তারা কেবল নিজেদেরকেই ভ্রষ্ট করে, কিন্তু তারা তা বুঝতে পারে না।” (সূরা আ-লি ইমরান ৬৯)
“তাদের মনোবাসনা এই যে, তারা যেমন কাফের আছে, তেমনি তোমরাও কাফের হয়ে যাও; যাতে তোমরা এবং তারা সকলে একাকার হয়ে যাও।” (সূরা নিসা ৮৯ আয়াত)
“বস্তুতঃ তারা তো সর্বদাই তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকবে। যাতে করে তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে -যদি তা সম্ভব হয়। তোমাদের মধ্যে যারা নিজ দ্বীন থেকে ফিরে যাবে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর তারাই হবে দোযখবাসী। তাতে তারা চিরকাল বাস করবে।” (সূরা বাক্বারাহ ২১৭ আয়াত)
অতএব হে মুসলিম যুবকদল! “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানদের কোন গোষ্ঠীর কথা মেনে নাও, তাহলে ঈমান আনার পর তারা তোমাদিগকে কাফেরে পরিণত করে ফেলবে।” (সূরা আ-লি ইমরান ১০০ আয়াত)
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি কাফেরদের কথা শোন, তাহলে ওরা তোমাদেরকে পেছনে ফিরিয়ে দেবে এবং তাতে তোমরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়বে।” (ঐ ১৪৯ আয়াত) হে ভাই যুবক! জেনে রেখো, “ওরা দোযখের দিকে আহ্বান করে। আর আল্লাহ স্বীয় ইচ্ছায় ক্ষমা ও বেহেস্তের দিকে আহ্বান করেন এবং মানবমন্ডলীর জন্য স্বীয় নিদর্শন বর্ণনা করেন, যেন তারা তা হতে শিক্ষা গ্রহণ করে। (সূরা বাক্বারাহ ২২১ আয়াত)
আর মনে রেখো যে, “যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের অভিভাবক, তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কাফের তাদের অভিভাবক হল তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।” (ঐ ২৫৭ আয়াত)
হ্যাঁ, আর বিজাতীয় প্রচারমাধ্যমগুলোতে যা দেখ বা শোন অথবা পড়, তাই বিশ্বাস করে তুমি নিজের বা স্বজাতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠো না। কারণ, বুঝতেই তো পারছ, তারা কোনদিন ইসলামের স্বার্থে কিছুও গাইবে না। মহান আল্লাহর সতর্কবাণী সর্বদা মনের মণিকোঠায় তুলে রেখো, তিনি বলে, “হে মুমিনগণ! যদি কোন ফাসেক (পাপাচারী) ব্যক্তি। তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে। যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।” (সূরা হুজুরাত ৬ আয়াত)
হ্যাঁ, ফাসেকের সংবাদ হলে তা পরীক্ষা করে না দেখা পর্যন্ত বিশ্বাস করো না। সুতরাং বলাই বাহুল্য যে, কোন কাফের বা ইসলাম-বিদ্বেষী কোন সংবাদ পরিবেশন করলে তা নিশ্চয়ই অবতীর্ণ ‘অহী’র মত বিশ্বাস করতে পার না।
হে মুসলিম যুবকবৃন্দ! “শয়তান তোমাদের শত্রু, অতএব তাকে শত্রুরূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে আহ্বান করে, যাতে তারা জাহান্নামী হয়।” (সূরা ফাত্বির ৬ আয়াত)
“আর আল্লাহ তোমাদিগকে শান্তিনিকেতন (বেহেস্তের) দিকে আহ্বান করেন, যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।” (সূরা ইউনুস ২৫ আয়াত) সুতরাং দুই দিকে এই দুই শ্রেণীর আহ্বান। এদিকে আহ্বান হল, মানুষের মত সুশ্রী ও সভ্য জীবন গড়ার প্রতি। পক্ষান্তরে ওদিকের আহ্বান হল, পশুর মত স্বেচ্ছারিতার জীবন গড়ার প্রতি। এবারে জীবনের মূল্যায়ন ও নিজের কদর নিজেই করা জ্ঞানীর জন্য অবশ্য-কর্তব্য।
হে যুবক বন্ধু! ঈমানের প্রদীপ্ত জ্যোতি তোমার হৃদয়কে জ্যোতির্ময় করে রাখলে বিজাতীয় মিডিয়া তা নির্বাপিত করার চেষ্টা করছে বুঝতে পেরে তোমার মন ব্যথায় টনটন করে উঠবে। সে সময় প্রয়োজন হবে ধৈর্যের। অতএব প্রচার-যুদ্ধের ঐ বাক-তরবারির আঘাতে ধরাশায়ী হয়ে অধৈর্যের সাথে ঈমানত্যাগী হয়ে যেও না। “অবশ্যই ধন-সম্পদে তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হবে এবং অবশ্যই শুনবে পূর্ববর্তী আহলে-কিতাব (ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টান) ও মুশরিক (পৌত্তলিকদের নিকট থেকে বহু অশোভন উক্তি। কিন্তু যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং পরহেযগারী অবলম্বন কর, তবে তা হবে একান্ত সৎসাহসের ব্যাপার।” (সূরা আ-লি ইমরান ১৮৬)
“আর তাদের কথায় দুঃখ নিও না। আসলে সমস্ত ক্ষমতা আল্লাহর। তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা।” (সূরা ইউনুস ৬৫ আয়াত)
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে সারা অমুসলিম সম্প্রদায় ঐক্যবদ্ধ। দুনিয়ার সকল জাতি যেন কেবল মুসলিম জাতিকেই কোণঠাসা করে রাখতে চায়। সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী, ধর্মান্ধ গোড়া, মৌলবাদী, মোল্লাতন্ত্র প্রভৃতি বলে বদনাম দিয়ে, ভৌগলিকভাবে তাদের দেশ জবরদখল করে, মানসিকভাবে আগ্রাসন সৃষ্টি করে, তাদের মৌলিক অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করে; বরং তাদের যথাসর্বস্ব লুটে নিয়ে তাদেরকে সর্বহারা করতে চায় সকলেই।
এক ভবিষ্যৎ-বাণীতে এ কথার কারণ উল্লেখ করে মহানবী (সা.) বলেন যে, “অদুর ভবিষ্যতে চতুর্দিকের সকল জাতি পরস্পরকে আহ্বান করে তোমাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে যেমন ভোজনকারীরা ভোজনপাত্রের উপর একত্রিত হয়ে এক সাথে মিলে ভোজন করে থাকে। কোন এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, তখন কি আমরা সংখ্যায় কম থাকব, হে আল্লাহর রসূল? তিনি বললেন, “না, কিন্তু তোমরা হবে স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মত। তোমাদের শত্রুদের হৃদয় থেকে তোমাদের প্রতি ত্রাস ও ভীতি তুলে নেওয়া হবে এবং তোমাদের হৃদয়ে দুর্বলতা প্রক্ষিপ্ত হবে। আর সে দুর্বলতা হল, দুনিয়াকে ভালোবাসা ও মরণকে অপছন্দ করা।” (আহমাদ, আবুদাউদ, সহীহুল জামে’ ৮১৮৩ নং)
পক্ষান্তরে এ কথায় কোন সন্দেহ নেই যে, এইভাবে মনঃকষ্ট পাওয়া এক বড় মসীবত। তবে সে মসীবত কেবল সেই মুসলিমের জন্য, যে তার নবী মা কে ভালোবাসে। আর যে তার নবী (সা.)-কে ভালোবাসে না, তার তো কোন ইসলাম-বিদ্বেষী প্রচার-প্রোপাগান্ডায় কোন প্রকার
মাথাব্যথা হওয়ার কথা নয়। মহানবী (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসে সে ব্যক্তির নিকট মসীবত গন্তব্যস্থলের দিকে ধাবমান স্রোতের চেয়েও বেশী দ্রুতবেগে উপস্থিত হয়ে থাকে।” (সহীহুল জামে ১৫৯২ নং)
প্রত্যেক জাতির মেরুদন্ড হল তার যুব-সমাজ। যুবকের মাঝে আছে সুউচ্চ আকাঙ্খা, দৃঢ় মনোবল এবং দৈহিক শক্তিও। যুবকের মাঝে আছে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধতা, আছে কোন কিছু মানা বা না মানার উচ্চ প্রবণতা। নৈতিকতার শত্রুরা তা ভালোভাবে জেনেই যুবকদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য ঐ সকল প্রচারমাধ্যমগুলোতে এমন টোপ ব্যবহার করছে, যা যুবকদল
গিলে পারে না। অভিনেতা-অভিনেত্রী, শিল্পী, খেলোয়াড় প্রভৃতির প্রেম সৃষ্টি করে এবং পরম নৈতিকতাকে মৌলবাদ’, ‘রক্ষণশীলতা’ প্রভৃতি বদনাম দিয়ে যুবকদের মন লুটেছে ও তাদের ঈমান কেড়েছে ওরা। ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমেই তারা সুন্দরকে ঘৃণ্য এবং ঘৃণ্যকে সুন্দর নাম দিয়ে সুশোভিত করে ঘৃণ্যদলকেই সাবাসী দিয়ে পৃথিবীর নেতৃত্ব তুলে দিয়েছে ও দিতে চলেছে তাদের হাতে!
সুতরাং মুসলিম যুবকের উচিত, চারার গন্ধে ছুটে গিয়ে চটকদার টোপ না গিলা। কারণ, ঐ। টোপের আড়ালে আছে বড় ধারালো বঁড়শী; যা একবার মুখে গেঁথে গেলে টেনে ছাড়ানো হবে বড় মুশকিল কাজ।
মুসলিমের যুবকের উচিত, তাদের চরিত্র ও জীবন-কাহিনীর খবর হৃদয়-মন দিয়ে শোনা ও পড়া, যাদের খবরে রয়েছে তার পারলৌকিক মঙ্গল। আজ পৃথিবীতে যে যাকে ভালোবাসবে, কাল কিয়ামতে তার তারই সাথে হাশর হবে। সুতরাং নবী ও সাহাবাকে ভালোবাসলে তাদের সাথে, নচেৎ কোন শিল্পীকে ভালোবাসলে তারই সাথে কিয়ামতে অবস্থান করবে। কোন ফাসেক ও কাফেরকে নিয়ে মুসলিমের গর্ব করা উচিত নয়। উচিত নয় তাদের অনুকরণ, অনুসরণ ও সাদৃশ্য অবলম্বন করা। কারণ, “যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে তাদেরই একজন।” (আবু দাউদ, সহীহুল জামে’ ৬১৪৯ নং)
ভাই ইসলাম-দরদী যুবক! তুফান দেখে ভয়ের কারণ নেই। কারণ তুমিও যে মহাবীর। তোমার আছে ইতিহাস ও অতীত। তোমার আছে ভবিষ্যত ও বিজয়। সুতরাং যে তুফানে তুমি ভেসে যাওয়ার ভয় করছ সে তুফানের চেয়ে আরো বড় তুফান সৃষ্টি কর। তবে মন্দের মোকাবেলায় মন্দ দিয়ে এবং পেশাব দিয়ে পায়খানা ধোয়ার মাধ্যমে কারো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করো না। নচেৎ বাত ভালো করতে গিয়ে কুষ্ঠরোগ সৃষ্টি করে কি লাভ? বরং তোমার মাঝে যে উৎকৃষ্ট শক্তি নিহিত আছে তা ব্যয় কর। শক্তিপ্রার্থীকে শক্তি যোগাও, দাও উৎসাহ ও মনোবল। দুর্নিবার ঐ মহাপ্লাবনের সম্মুখে তুমিও নির্বিচল পর্বতসম প্রাচীর খাড়া করে। দাও। প্রতিহত হোক প্লাবনের সে গতি। “তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যথাসাথ্য শক্তি প্রস্তুত কর, প্রস্তুত রাখ অশ্বদল। তার দ্বারা আল্লাহর শত্রুকুলকে ভীতি-প্রদর্শন ও সন্ত্রস্ত কর, তাছাড়া অন্যদেরকেও যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ তাদেরকে জানেন।” (সূৱ আনফাল ৬০)
আর ঘরের চেঁকি কুমীর’ সাংবাদিক ও উপস্থাপকদের উদ্দেশ্যে মহানবী (সা.) এর একটি মহাবাণীর নজরানা পেশ করি। তিনি জিবরীল মারফৎ বর্ণনা করে বলেন, “মধ্যজগতে এক শ্রেণীর লোক নিজ নিজ কশা চিরে নিজেদেরকে শাস্তি দিচ্ছে। আর ঐ শ্রেণীর অপরাধী হল তারা, যারা ছিল এমন মিথ্যাবাদী, যাদের মিথ্যা দিকচক্রবালে পৌছে যেত। তাদের এমন শাস্তি কিয়ামত পর্যন্ত হতে থাকবে।” (বুখারী ১৩৮৬নং) পরন্তু কিয়ামত হওয়ার পর তাদের যে কি শাস্তি হবে তা আল্লাহই জানেন।
ভিডিও, টিভি, ফিল্ম প্রভৃতির ডাইরেক্টর, প্রযোজক, তারকা, হলের মালিক, প্রচারক, নোংরা পত্র-পত্রিকার লেখক, প্রকাশক, এজেন্ট, বিক্রেতা ও পাঠক প্রভৃতি যারা মানবতা ও নারী স্বাধীনতার নামে তাদের প্রচারমাধ্যমগুলোকে উদ্ধৃঙ্খলতা ও যৌনচারিতা প্রচার কাজে ব্যবহার করছে এবং এই চাচ্ছে যে, চরিত্রবাণ মুসলিম পরিবার ও পরিবেশেও যৌনতা, অশ্লীলতা ও নোংরামী প্রবেশ করুক, তাদের উদ্দেশ্যে মহান প্রতিপালকের একটি সতর্কবাণী ঘোষিত রয়েছে, যা পাঠ করে অন্ততঃপক্ষে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী মুসলিমকে সাবধান হওয়া উচিত। তিনি বলেন, “যারা কামনা ও পছন্দ করে যে, ঈমানদার (মুসলিমদের) মাঝে। অশ্লীলতা (ও ব্যভিচার) প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্য রয়েছে ইহকাল ও পরকালে মর্মন্তুদ শাস্তি।” (সরা নর ১৯ আয়াত)
আর মানবমন্ডলী তথা মুসলিম জাতির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “হে মানুষ! তোমরা পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তুসামগ্রী ভক্ষণ কর। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তো তোমাদেরকে এ নির্দেশই দেবে যে, তোমরা অন্যায় ও অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়ে পড় এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন সব কথা বল, যা তোমরা জান না।” (সূরা বাক্বারাহ ১৬৮ ১৬৯ আয়াত)
এমন সাংবাদিকদল রয়েছে, যারা কোন নৈতিকতা বা আদর্শভিত্তিক খবর প্রচার করে না। অথচ যৌনতা, চরিত্রহীনতা প্রভৃতির খবর শোভনীয় ও লোভনীয় ভঙ্গিমাতে প্রচার করে থাকে; যারা মুসলিম হয়েও প্রভাবশালী অমুসলিম কোন সম্প্রদায়ের নিকট সম্মান বা অর্থ লাভের আশায় ইসলাম ধংসের পশ্চাতে উঠে-পড়ে গর্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছে, যারা চায় মুসলিমরাও কাফেরদের মত কুফরীতে একাকার হয়ে যাক, যারা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিষাক্ত কলম ও লাগামহীন জিহ্বা ব্যবহার করে, তারা যে মুসলিমদের কাছে মানবরূপী শয়তান তাতে কোন সন্দেহ নেই। এমন শয়তানদল থেকেও পানাহ চাওয়া মুসলিমের কর্তব্য। মহান আল্লাহ বলেন, “বল আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের প্রতিপালকের, মানুষের অধিপতির, মানুষের উপাস্যের কাছে, তার অনিষ্ট হতে, যে কুমন্ত্রণা দিয়ে আত্মগোপন করে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, (সে কুমন্ত্রণাদাতা) জ্বিনের মধ্য থেকে (হোক) অথবা মানুষের মধ্য থেকে।” (সূরা নাস)।