এক পাপ অপর এক পাপকে আকর্ষণ ও আহ্বান করে। দেহ-মিলন যখন ঘটবে তখন প্রকৃতিকে তো আর সব সময় বাধা দেওয়া যায় না। উভয়ের অলক্ষ্যে অবৈধ সন্তান জন্ম নেয়। এ অযাচিত ও অবাঞ্ছিত লাঞ্ছনার সন্তানকে আসতে না দিয়ে ভ্রণ অবস্থায় হত্যা করা হয়। অনেকে সঠিক সময়ে পরিস্থিতির সামাল দিতে না পেরে প্রাণ হত্যা করে। জ্বণে জীবন আসার পর তা নষ্ট করা প্রান হত্যার শামিল। কিন্তু লাগামছাড়া সমাজে তারও প্রচলন বেড়েই চলেছে। আইন করে প্রাণ-হত্যা ও গর্ভপাত বৈধ করা হচ্ছে। এমন হত্যার উপায় ও উপকরণ বড় সহজলন্ধ করা হচ্ছে।
যার প্রেক্ষিতে ব্যভিচার আরো বেড়েই চলছে। আবার মজার কথা এই যে, ঐ নিপাতকৃত প্রাণ থেকে ফ্রান্সের এক কোম্পানী মহিলাদের অতি প্রিয় প্রসাধন ও অঙ্গরাগ ‘লিপষ্টিক’ বা ‘ঠোট-পালিশ’ প্রস্তুত করে থাকে। আর এইভাবে ব্যভিচার ও প্রাণ-হত্যা এক অর্থকরী ব্যবসাতেও পরিণত হয়েছে! ব্যাংককে প্রতি বছরে ২ লাখের উপর গর্ভপাত হয়। তন্মধ্যে ৫০ ভাগ কুমারী, ৩৭ ভাগ ছাত্রী এবং বাদবাকী গৃহিণীরা এই গর্ভপাত ঘটিয়ে থাকে (অপসংস্কৃতির বিভীষিকা ৯৩পৃঃ দ্রঃ)।
পক্ষান্তরে জন্মের পর অনেকে সেই সদ্যপ্রসূত অযাচিত শিশুকে নিষ্ঠুরভাবে ডাসবিনে অথবা নদী-জঙ্গলে ফেলে আসে!! শুধু জ্বণ হত্যাই নয়, এই অবৈধ প্রণয়-ঘটিত কারণে মানুষ খুনও হয়ে থাকে। প্রেমে বাধা পড়লে পথের কাঁটা দূর করতে বাধাদানকারীকে খুন, প্রেমিকার প্রেমের ভিখারী অন্য কেউ আছে জানতে পেরে ঈর্ষায় সেই শরীক প্রেমিককে খুন, অথবা প্রেমিকা অন্যকেও প্রেম নিবেদন করে জানতে পেরে রাগ ও ঈর্ষায় নিজ হাতে প্রেমিকাকেই খুন করা হয়ে থাকে। অপেক্ষাকৃত ছোট পাপ করতে করতে পরিশেষে এত বড় মহাপাপ করে ফেলে প্রেমের পাগলরা, যে পাপের শাস্তি (আল্লাহ মাফ না করলে) দোযখ ছাড়া কিছু নয় পরকালে। মহান আল্লাহ বলেন, “আর যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম, সেখানেই সে চিরকাল থাকবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাকে অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত করে রাখবেন।” (সূরা নিসা ৯৩ আয়াত)
অবৈধ প্রেম-ঘটিত কারণে অনেকের সোনার সংসার ধংস হয়ে যায়। অপর এক নারীকে ভালোবাসতে গিয়ে নিজের বিবাহিতা স্ত্রীর প্রতি অবিচার ও অত্যাচার করা হয়। অথবা কোন কুলবধুর প্রেমে পড়ে অথবা তার প্রেমকে প্রশ্রয় দিয়ে, তাকে প্রেমপত্র লিখে বা গায়ে-পড়া হয়ে সাক্ষাতে অথবা ফোনে মধুর কথা বলে প্রেমজালে আবদ্ধ করার চেষ্টা করে তার স্বামীর সংসারে অশান্তির মহাপ্রলয় আনয়ন করা হয়। লম্পট হলেও কোন স্বামীই চায় না যে, তার স্ত্রী অন্যাসক্তা হোক, যেমন কোন স্ত্রীও চায় না যে, তার স্বামী অন্যাসক্ত হোক বা দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করুক। সুতরাং উভয় প্রকার ধ্বংসই যে মহাধংস তা বলাই বাহুল্য।
মহানবী (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন বিবাহিতা মহিলাকে তার স্বামীর পক্ষে নষ্ট করে ফেলে, সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়।” (আহমাদ ২/৩৯৭, আবু দাউদ ৭৫৯, হাকেম ২/১৯৬)।
আল্লাহর রসূল (সা.) আরো বলেন, “সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে আমানতের কসম খায়। আর যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা কোন দাসকে তার প্রভুর বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে সে ব্যক্তিও আমাদের দলভুক্ত নয়।” (আহমদ ৫/৩৫২, বাযযার, ইবনে হিব্বান, হাকেম ৪/২৮৯, সহীহহুল জামে’ ৫৪৩৬নং)।
তাছাড়া অবৈধ প্রেম সৃষ্টি করার ব্যাপারে যেমন শয়তানের বড় হাত থাকে, তেমনি বৈধ প্রেম ধ্বংস করা এবং স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা হল তারই কাজ। শয়তান পানির উপর সিংহাসন পেতে বিভিন্ন মহাপাপ সংঘটিত করার জন্য নিজের চেলাদল পাঠিয়ে থাকে। প্রত্যহ হিসাব নেওয়ার সময় তার নিকট সব থেকে বেশী প্রশংসাই হয় সেই চেলাটি, যে কোন স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করতে পেরেছে। সিংহাসন ছেড়ে উঠে এসে এমন চেলাকে জড়িয়ে ধরে সাবাসী ও বাহাদুরীও দেয় ইবলীস! (আহমাদ, মুসলিম ২৮ ১৩ নং)
শুধু স্বামী-স্ত্রীর মাঝেই নয়, বরং এই অশান্তির ঝড় নেমে আসে তাদের আত্মীয়দের মাঝেও। বিশেষ করে তাদের সন্তান থাকলে তাদের জীবনে যে চরম সর্বনাশী পরিণতি নেমে আসে তা অনুমেয়। কোলের ছেলে জলে ফেলে যৌবন সাজিয়ে স্বামীর সংসার ছেড়ে নতুন রসিক নাগরের সাথে গোপনে বের হয়ে সংসার ও ব্যভিচার করলে ঐ ছেলের অবস্থা যা হয় তা দেখে পথের শিয়াল-কুকুরও কাঁদে! আশ্রয়হীন হয়ে উপযুক্ত অভিভাবক বিনা মানুষ হতে গিয়ে অনেক সময় দুশ্চরিত্র ও অসৎরূপে গড়ে ওঠে। আর এর ফলে যত ক্ষতি হয়, তার মূল কারণ হল ঐ সংসার-বিনাশী মানবরূপী শয়তান রসিক নাগর। অবৈধ প্রণয় প্রণয়ীকে নিজ মা-বাপের স্নেহ-দুআ থেকে দূরে সরিয়ে ফেলে। যে যুবতীকে নৈতিক কারণে মা-বাপ পছন্দ করে না, সে যুবতীর প্রেমে ফেঁসে প্রেম অনির্বাণ রাখতে গিয়ে সংসার-জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস মা-বাপকে ছাড়তে হয়। আর এ কাজে সে মা বাপের অবাধ্য সন্তানরূপে পরিচিত হয়; যে অবাধ্য সন্তান মা-বাপের অসন্তুষ্টি অবস্থায়। বেহেশু প্রবেশের অনুমতি থেকে বঞ্চিত থাকবে।
অবৈধ প্রেম করে বিয়ে করা বউ নিয়ে গঠিত সংসার অধিকাংশ টিকে না। কারণ, বিয়ের পূর্বে ভালোবাসায় অতিরঞ্জন ও অভিনয় থাকে, প্রেমের প্রবল উচ্ছ্বাসে দূরকে ভালো মনে হয়, দুরে-দুরে থাকলে প্রেম গাঢ় হয়, অতিরঞ্জিত প্রেম পাওয়া যায়, ত্রুটি নজরে পড়ে না। দুরে থেকে কেবল প্রেমের সোহাগ নেওয়া যায়, শাসনের বাধা পাওয়া যায় না। তাছাড়া নতুন নতুন সবকিছুই ভালো লাগে, অসুন্দরীকে আচমকা-সুন্দরী লাগে। দুর থেকে সরষে ক্ষেত ঘন লাগে। দুর থেকে উত্তপ্ত মরুভূমিকেও পানির সাগর মনে হয়। আর দুর বলেই-
নদীর এ পাড় কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস,
ও পাড়েতে যত সুখ আমার বিশ্বাস।---
বিবাহের পূর্বে দুরে দুরে থাকলে প্রণয়িণী কেবল হৃদয়ে থাকে, বিবাহের পর সংসারে এলে, সর্বক্ষণের জন্য একান্ত কাছে এলে অনেক সময় তার বিপরীত দেখা যায়। (আর এ জন্যই নিজের স্ত্রী চাইতে অপরের স্ত্রী বেশী ভালো মনে হয়। যেমন স্ত্রীকেও অন্যের স্বামী অধিক ভালো লেগে থাকে।) অতঃপর হয় এই যে, কাছে এসে একটি আঘাত খেলেই প্রেমের সে শিশমহল ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। কপট প্রেমকে ভিত্তি করে মাকড়সা বা তাসের ঘরের মত যে ঘর-সংসার গড়ে ওঠে, তা সামান্য প্রতিকূল বাতাসেই বিধ্বস্ত হয়ে যায়। পশ্চিমা দেশগুলোতে তালাকের আধিক্য এ কথার স্পষ্ট সাক্ষ্য বহন করে। যেখানে ফুল তুলে তার গন্ধ ও সৌন্দর্য লুটে নিয়ে ঝলসে গেলে ছুঁড়ে ফেলা হয়।
নামমাত্র বিবাহ হলেও অল্প কয়েক দিনে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। তাছাড়া ঐ শ্রেণীর অনেক বিবাহ কোন চাপে পড়ে করতে হয়, মন থেকে নয়; বরং অনেক সময় সমাজ ঐ বিবাহকে প্রেমিক-প্রেমিকার ঘাড়ে শাস্তি স্বরূপ (?) চাপিয়ে দেয়। অথবা গর্ভ হয়ে গেলে প্রেমিকা অথবা তার কর্তৃপক্ষের চাপে বা কেবল লজ্জা ঢাকার জন্য প্রেমিক বিবাহ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু সর্বশেষ ফল দাঁড়ায়, যুবতীর লাবণ্য ধ্বংস ও পরে বিবাহ-বিচ্ছেদ। সুতরাং এত সব ক্ষতি জেনে-শুনেও এমন ফাঁদে পা দিয়ে লাভ কি বন্ধু!
অনির্বাণ প্রেম-পীড়িত দোস্ত আমার? সুস্বাস্থ্য তোমার জন্য আল্লাহর দেওয়া এক বড় নেয়ামত ও আমানত। প্রেমের দুশ্চিন্তায় পড়ে তা হারিয়ে ফেলায় তোমার কোন অধিকার নেই। ভালো মানুষ প্রেমে পড়ে অনেক সময় রোগক্লিষ্ট হয়ে পড়ে। যেখানে দূরত্ব ও বাধা বেশী, সেখানেই প্রেমের বাড় বেশী। কারণ, অবৈধ প্রেম বাড়াতে শয়তান সহায়ক কুটনা হয়। যার ফলে নানা অশুভ চিন্তা, অবৈধ বাসনা, অবাস্তব কল্পনা এবং প্রিয়তমা হারিয়ে যাওয়া বা প্রেম অসফল হওয়ার বিভিন্ন আশঙ্কা হৃদয়-কোণে এসে বাসা বাঁধে। ফলে কখনো খাওয়াতে অরুচি জন্মে, অনিদ্রা দেখা দেয়। কখনো বা মানসিক চাপে শারীরিকভাবে ব্যাধিগ্রস্ত ও দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে।
‘আসক্তির ছয় চিহ্ন জেনো হে তনয়,
দীর্ঘশ্বাস, মুনমুখ, সিক্ত অক্ষিদ্বয়।
জিজ্ঞাসিলে, অন্য তিন লক্ষণ কোথায়,
স্বপ্নহার, অল্পভাষ, বঞ্চিত নিদ্রায়।
পরিবেশের হাওয়া যখন প্রেমের প্রতিকূলে চলে, তখনই প্রেমিকের মনের আকাশে দুঃখের কালো মেঘ ছেয়ে আসে, কষ্ট পায় নানাভাবে। প্রেমিক অথবা প্রেমিকার হিতাকাঙ্খী অথবা শত্রু এমন প্রেমে বাধা দিতে চায়। ব্যথিত হৃদয় না-পাওয়ার আক্ষেপ জানিয়ে দেয় প্রেমিকার কাছে
--- ভুলি নাই তবু তোমারেই ভালোবেসেছি
কখনো জীবনে কাল বোশেখীর ঝড়
এসেছে গোপনে, ভেঙ্গে গেছে বাধা ঘর।
কত হারানোর ব্যথারে ভুলিতে নীরবে গোপনে কেঁদেছি।
অগ্নি-শিখায় কভু এই মন নিজেরে করেছি ছাই,
কত অশ্রুর ধারায় এ বুক ভাসিয়েছি আমি হায়।---
প্রেম হল ক্ষণিকের মানসিক সুখ। মানুষকে বাঁচতে হলে একটা নেশা নিয়ে বাঁচতে হয়। আর সেই নেশাতে সে মনের মাঝে চরম তৃপ্তি লাভ করে থাকে। অবশ্য অবুঝ মন তখন বৈধ-অবৈধের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করতে সক্ষম হয় না। কিন্তু উভয়ের মাঝেই যেন বেহেস্তী সুখের আমেজ অনুভব করে থাকে। যত ব্যথা আসে, সকল ব্যথা যেন প্রিয়ার সাক্ষাতে অথবা স্মরণে দূরীভূত হয়ে যায়।
‘সাবাস বলি পিরীত-নেশা হেতু তুমি সকল সুখের,
যতই ভুগি রোগে শোকে, বদ্যি তুমি সকল দুখের।
প্রেমের সবকিছুই অতিরঞ্জিত। অতিরঞ্জন করেই অনেকে বলে থাকে,
‘প্রেম-খাতাতে একবার যে
লিখিয়া দিয়াছে নামটি তার,
নাই প্রয়োজন স্বর্গে তাহার
নরক গিয়াছে দুরের পার!!
প্রেমিক বন্ধু আমার! এমন ভুয়ো বুলিতে ধোকা খেয়ে দুনিয়াতেই কল্পিত বেহেশু খোজার অবৈধ বৃথা চেষ্টা করো না। কারণ, প্রেম ক্ষণিকের স্বর্গ হলেও মনে রেখে যে, প্রেমের আনন্দ থাকে স্বল্পক্ষণ, আর তার বেদনা থাকে সারাটি জীবন। প্রেম মানুষকে শান্তি দেয়, কিন্তু স্বস্তি দেয় না। প্রেম হল ধূপের মত; যার আরম্ভ হয় জ্বলন্ত আগুন দিয়ে, আর শেষ পরিণতি হয় ছাই দিয়ে।
ভালোবাসা করার অর্থ হল, তুষে আগুন দেওয়া; যা একেবারে দপ করে জ্বলেও ওঠে না, আর চট করে নিভাতেও চায় না। বরং ভিতরে ভিতরে গোপনে পুড়ে ছাই হতে থাকে। হৃদয়ে আনন্দের অনুভূতি যতটা হয়, তার চেয়ে বেশী হয় ব্যথার অনুভূতি। প্রেমে আনন্দের তুলনায় ব্যথা থাকে অধিক ও নিদারুণ। আর সে ব্যথার কোন অব্যর্থ ঔষধও নেই। মোট কথা ভালোবাসা যা দেয়, তার চেয়ে বহুগুণ বেশী কেড়ে নেয়।
পক্ষান্তরে কপট প্রেমে প্রেমিক যখন ধোকা খায়, তখন মনের গহিন কোণে হা-হুতাশ তাকে অস্থির করে তোলে। মনের মানসপটে স্মৃতি জাগরিত হয়ে উঠলে প্রাণে মোচড় দিয়ে ওঠে। যখন পদ্মফুল চলে যাবে এবং তার কাটার জ্বালা মনকে অতিষ্ঠ করে তুলবে তখন অপমান ও শোকে শ্বাসরোধ হবে। আর মন গেয়ে উঠবে,
--- আজ আমি মরণের বুক থেকে কাঁদি
অকরুণা! প্রাণ নিয়ে একি মিথ্যা অকরুণ খেলা!
এত ভালোবেসে শেষে এত অবহেলা।
কেমনে হানিতে পার নারী!
এ আঘাত পুরুষের,
হানিতে এ নির্মম আঘাত, জানিতাম, মোরা শুধু পুরুষেরা পারি।
আফশোষ ও আক্ষেপে মন-প্রাণ দগ্ধীভূত হবে এবং গাইবে-
‘ভুল করেছি সারা জীবন তোমায় ভালোবেসে,
জানি নাই যে, কাদতে হবে আমায় অবশেষে।
স্বার্থপরতার প্রেমে স্বার্থে আঘাত লাগলে অথবা স্বার্থে সিদ্ধিলাভ হয়ে গেলে প্রেম আর প্রেম থাকে না বন্ধু! অতএব ওদেরই একটি অভিজ্ঞতার কথা মনে রেখো
‘ভালোবাসার এমনি মজা যেমন নাকি ঘি,
যাবৎ Hot তাবৎ Good, Cold হলেই ছি।”
পক্ষান্তরে ধোকাবাজি, প্রবঞ্চনা, প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা এমন পাপকাজ, যা মানুষকে দোযখে টেনে নিয়ে যায়। (সহীহুল জামে ৬৭২৬ নং) একজনকে তোমাকে ছাড়া বিয়েই করব না’ বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে, তার যথাসর্বস্ব লুটে নিয়ে তাকে ধোকা দেওয়া, অথবা তার চেয়ে আরো ভালো কেউ নজরে পড়লে প্ৰথমকে বর্জন করে দ্বিতীয়কে গ্রহণ করা, ইত্যাদি প্রতারণা ও প্রবঞ্চনা ঐ কপট প্রেমের আগা-গোড়াই অমানবিক কর্ম।
প্রেমের অভিনয়ে ধোকা খেয়ে গেলে আক্ষেপের সাথে নিজেকে ধিক্কারে ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে হয়। তখন আত্মহত্যা করা কঠিন মনে হয় না। প্রিয়তমা ফাকি দিলে, অথবা গাঢ় প্রেমের পর কোন কারণে উভয়ের মাঝে বিবাহে বাধা পড়লে এবং এ জগতে একমাত্র চাওয়া ও পাওয়া মন-প্রাণ দিয়ে চেয়েও না পাওয়া গেলে, জীবন রাখায় যে লাভ আছে, তা মনে করে না অনেকে। মার্কিন মুলুকে প্রতি বছর ছয় হাজারেরও বেশী তরুণ আত্মহত্যা করে শুধু ঐ অবৈধ প্রণয়-ঘটিত কারণে। (অপসংস্কৃতির বিভীষিকা ৯২ পৃঃ দ্রঃ)
সুতরাং মুসলিম যুবককে সতর্কতার সাথে জেনে রাখা উচিত যে, এমন প্রণয় মহাপাপের কাজ। পক্ষান্তরে যদি কোন প্রকারে প্রেম হয়ে গিয়ে প্রেমিকা তাকে ধোকা দিয়েই ফেলে, তাহলে তার জন্য আত্মহত্যা করতে হবে কেন? আত্মহত্যা যে আর এক মহাপাপ। সুতরাং এ ক্ষেত্রে ধৈর্যের সাথে আল্লাহর প্রশংসা করা উচিত। কারণ, তিনি তাকে এমন দ্বিচারিণী নারী থেকে রক্ষা করেছেন। যে নারী অতি সংগোপনে তার প্রেমে অন্যকেও শরীক করেছিল, সে নারীকে তার জীবন থেকে দূর করে দিয়েছেন।
আর এ কথাও মনে করা ঠিক নয় যে, দুনিয়াতে কেবল তার উপযুক্ত প্রেমময়ী মাত্র একটা লায়লাই জন্ম নিয়েছিল এবং এ জগতে আর এমন কোন নারী নেই, যে তাকে ঐ হারিয়ে যাওয়া লায়লার মত ভালোবাসবে। বরং বাস্তব কথা এই যে, অভিনীত ও অতিরঞ্জিত অবৈধ প্রেমের চাইতে বৈবাহিক-সূত্রে সৃষ্ট পবিত্র প্রেম আরো প্রগাঢ়, আরো নির্মল। কারণ, তা হল আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি। তিনি বলেন, “তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পেতে পার। আর তিনি তোমাদের মাঝে পারস্পরিক প্রেম ও স্নেহ সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা রূম ২১ আয়াত)
সুতরাং আত্মহত্যার মাধ্যমে নিজের দ্বীন-দুনিয়া ধ্বংস করে দুর্বল মনের পরিচয় দেওয়া কাপুরুষের কাজ। পক্ষান্তরে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে সবল মনে নতুন করে পবিত্র জীবন গড়ে তোলাই হল সুপুরুষের কাজ।