এক শ্রেণীর খেল-তামাশায় উন্মত্ত মানুষদের জন্য আল্লাহ বলেন, “(হে নবী!) তুমি তাদের সঙ্গ ত্যাগ কর, যারা তাদের দ্বীনকে ক্রীড়া-কৌতুকরূপে গ্রহণ করে এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে প্রতারিত করে। আর এর দ্বারা তাদেরকে উপদেশ দাও, যাতে কেউ নিজ কৃতকার্যের জন্য ধংস না হয়। যখন আল্লাহ ব্যতীত তার কোন অভিভাবক ও সুপারিশকারী থাকবে না এবং বিনিময়ে সবকিছু দিলেও গৃহীত হবে না। এরাই স্বীয় কৃতকার্যের জন্য ধ্বংস হবে। তাদের অবিশ্বাস হেতু পানীয়ের জন্য উত্তপ্ত পানি ও যন্ত্রণাপ্রদ শাস্তি আছে।” (সূরা আনআম ৭০ আয়াত)। তিনি আরো বলেন, “জনপদসমুহের অধিবাসীরা কি ভয় করে না যে, আমার শাস্তি তাদের উপর আসবে চাশতের সময়, যখন তারা ক্রীড়ারত থাকবে?” (সূরা আরাফ ৯৮ আয়াত)

সমাজবিজ্ঞানী নবী (সা.) বলেন, “আমার উম্মতের মধ্যে কিছু সম্প্রদায় এমন হবে, যারা পান-ভোজন ও খেল-তামাশার মাধ্যমে রাত্রিযাপন করবে। অতঃপর সকাল হলে তারা বানর ও শুকরদলে রূপান্তরিত হয়ে যাবে।” (ত্বাবারানী, সহীহুল জামে’ ৫৩৫৪ নং)

যে সব খেলায় একতরফাভাবে আর্থিক ক্ষতি বিদ্যমান, ইসলামে সে সব খেলাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন মদ ও মূর্তিপূজার পাশাপাশি জুয়া খেলাকে করা হয়েছে অবৈধ। মহান আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, মুর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য-নিৰ্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা থেকে দূরে থাক, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর সারন ও নামায থেকে বিরত রাখতে চায়। অতএব তোমরা কি নিবত্ত হবে না?” (সূরা মাইদাহ ৯০-৯১ আয়াত)

আর এই আইনের আওতায় পড়ে সেই সকল খেলা, যাতে আছে অনুরূপ একতরফা আর্থিক ক্ষতি এবং একপক্ষের বিনা মেহনতে অসঙ্গতভাবে অর্থলাভ। যেমন লটারী, ডাইস, বিমা, বাজি রেখে তাস খেলা ইত্যাদি।

যে সব খেলায় আছে বৈষয়িক, সাংসারিক, ও দৈহিক ক্ষতি এবং যা অনর্থক সময় নষ্ট করে, সে সব খেলাও ইসলামে বৈধ নয়। যেমন দাবা ও পাশা জাতীয় সকল খেলা মুসলিমের জন্য হারাম। আল্লাহর নবী (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি পাশা-জাতীয় খেলা খেলল, সে যেন নিজ হাতকে শুয়োরের রক্তে রঞ্জিত করল।” (আহমাদ, মুসলিম ২২৬০, আবু দাউদ ৪৯৩৯ ইবনে মাজাহ ৩৭৬৩ নং)

তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি পাশা-জাতীয় খেলা খেলল, সে আল্লাহ ও তার রসুলের নাফরমানী করল।” (মালেক, আবু দাউদ ৪৯৩৮, ইবনে মাজাহ ৩৭৭৬২, হাকেম ১/৫০, সহীহুল জামে’ ৬৫২৯ নং)

আর এ পর্যায়ের খেলা হল, তাস, লুডু কেরামবোর্ড ও গুটি খেলা, পায়রা উড়িয়ে খেলা। ইত্যাদি। এ সব খেলায় অযথা সময় নষ্ট হয় এবং তাতে শারীরিক কোন উপকার লাভ তো হয়ই না, বরং অপকার হয়ে থাকে। এ সবে মানুষকে কুঁড়ে, অলস ও অকর্মণ্য করে তোলে। পক্ষান্তরে এ সবে কিছু বাজি থাকলে জুয়াতে পরিণত হয়ে থাকে। পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগবে যে, তাহলে ইসলামে কি খেলার নাম-গন্ধই নেই? জবাবে বলা যায় যে, হ্যাঁ, ইসলামে কোন খেলার গন্ধই নেই। কারণ মুসলিমদের খেলা খেলার কোন সময়ই নেই। খেলা হল প্রত্যেক লক্ষ্যহীন কাজের নাম; যে কাজের পিছনে শুদ্ধ বা অশুদ্ধ। কোন লক্ষ্যই থাকে না, নিছক সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে করা হয়। আর মুমিনের প্রত্যেক কাজের পিছনে লক্ষ্য আছে। তার এমন কোন সময় নেই, যা কাটাতে হয়। তার প্রতিটি মুহূর্ত হয় ইবাদতে কাটে, নচেৎ ইবাদতে সহায়ক কোন পার্থিব কাজে।

অতএব তার সময় কাটে না। নয়, বরং সে সময়ই পায় না। সুতরাং মুসলিম যদি কোন নির্দিষ্ট কাজ থেকে কিছু ফুরসৎ পায় এবং তাকে সে অবকাশ বলে। মনে করে, তবে সেই অবকাশকেও কাজে লাগিয়ে ‘অবসর-বিনোদন’-এর কাজ নিতে পারে। এতে কাজের একঘেয়েমি কেটে যাবে এবং নতুনভাবে ঐ কাজে মনের উদ্যম ফিরে পাবে। এর জন্য ঐ অবসর সময়ে গঠনমূলক সবান্ধব বৈঠক করে এবং যুবশিবির স্থাপন করে দ্বীনী ও সাধারণ জ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে তার মাধ্যমে সময় কাটাতে পারে।

পক্ষান্তরে যে খেলায় মুসলিমের উপকার আছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণােদিত, যাতে আছে দ্বীন, প্রাণ ও স্বাস্থ্য রক্ষার অনুশীলন, সংসার ও স্বামী-স্ত্রীর প্রেম-বন্ধন দৃঢ় করার উপায়, যে খেলায় অর্থের অপচয় নেই, সময়ের অপব্যয় নেই, যাতে কোন প্রকার শরীয়ত-বিরোধী কর্ম করতে হয় না, এমন খেলা মুসলিমের জন্য অবশ্যই বৈধ। শরীয়তে এ বিষয়ে সংকীর্ণতা নেই। (সিলসিলাহ সহীহাহ ১৮২৯ নং দ্রঃ)।

যেমন দৌড়-প্রতিযোগিতা, বিশেষ করে নিরালায় স্ত্রীর সাথে দৌড়-প্রতিযোগিতা করা ইসলামের এক সাংসারিক আদব। মহানবী (সা.) স্বয়ং নিজ স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) এর সহিত এমন। প্রতিযোগিতা করে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রেম ও আনন্দ প্রকাশের এক সুন্দর নজীর রেখে গেছেন। (আবু দাউদ, নাসাঈ, ত্বাবারানী, ইবনে মাজাহ, ইরওয়াউল গালীল ১৪৯৭ নং দ্রঃ)।

স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের প্রেমকেলি করা, মিলনের পূর্বে ভূমিকা স্বরূপ বিভিন্ন আচার ও শৃঙ্গার ইসলামে বৈধ। এতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক মধুর থেকে মধুরতম হয় এবং উভয়ে ব্যভিচার থেকে বাচতে পারে। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা বৈধ। যেমন বৈধ তীরন্দাজি খেলা। কারণ, এতে মুসলিমের ঈমান, জান, ধন ও মান রক্ষার উদ্দেশ্যে জিহাদী অনুশীলন হয়। আর জান রক্ষার তাকীদেই সঁতার খেলাও ইসলামে বৈধ। (নাসাঈ, ত্বাবারানী, সিলসিলাহ সহীহাহ ৩১৫নং দ্রঃ)

আধুনিক বিশ্বের ফুটবল, হাডুডু ইত্যাদি স্বাস্থ্যরক্ষামূলক খেলাধূলাও কিছু শর্তের সাথে বৈধ। যেমন এই খেলা খেলতে গিয়ে যেন জাং বের না হয়। কারণ, জাং হল লজ্জাস্থানের অংশ। এ খেলা যেন যথাসময়ে জামাআতে নামায বা অন্যান্য ইবাদত থেকে উদাসীন ও গাফেল করে না রাখে এবং এতে যেন শরীয়ত-বিরোধী কোন বিষয় বা বস্তু শামিল না থাকে। বলা বাহুল্য, ইসলাম যে খুশী ও আনন্দ প্রকাশকে হারাম করেছে তা নয়। তবে ইসলামের প্রত্যেক কাজ হল সীমাবদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত। লাগামছাড়া ও বাঁধনহারা নয়। যে খুশীতে আল্লাহ খুশী, সে খুশী ইসলামের কাম্য। যে আনন্দে আল্লাহ সন্তুষ্ট, সে আনন্দ মুসলিমের কর্ম ও ধর্ম। শুধু নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধি ও প্রবৃত্তিপুজার জন্য নয়, বরং যে আনন্দে সৃষ্টির মনে আনন্দের ঢেউ আনা যায়, সেই আনন্দই মুসলিমের পরম আনন্দ। তাই তো সে পোলাও নিজে খেয়ে যে আনন্দ পায়, তার চেয়ে বেশী আনন্দ পায় তা অপরকে খাইয়ে। নিজে ভালো পরে যে খুশী। অনুভব করে, অপরকে তা পরিয়ে অনুভব করে তার চাইতে বেশী খুশী। যে আনন্দের মাঝে। বেদনা লুকিয়ে থাকে, তা মুসলিমের কাম্য নয়।

কাম্য হল নির্মল আনন্দ। বরং যে বেদনার মাঝে আনন্দ লুকিয়ে আছে, তাও তার কাম্য। সুতরাং যুবক বন্ধু! খেল, খুশী কর। কিন্তু তাতে তোমার মহান প্রভুকে নাখোশ করো না। এতো গেল খেলোয়াড়দের কথা। এবার দর্শকদের কথায় আসা যাক। যে খেলার পাগলরা খেলা দর্শন করে, তারাও আসলে তাদের মনের মাঠে হাত-পা নেড়ে খেলে থাকে। মনেমগজে খেলার বিভিন্ন দিক বিচার করে, ভুল ধরে, কখনো খেলোয়াড়কে আবার কখনো বা রেফারীকে ভৎসনা ও গালিমন্দ করে থাকে। অথচ তারা জানে যে, কল্পনা করা ও মুখে বলা যত সহজ, কাজে পরিণত করা তত সহজ নয়।

কিন্তু এতে লাভ কি হয়? মনে মনে এক প্রকার তৃপ্তিকর আনন্দ অনুভব ও সময় কাটানো ছাড়া আর কিছু হয় কি? এতে শারীরিক কোন উপকার হয় কি? বিধায় তা বৈধ কি?

বৈধ কি দূর-দূরান্তে সফর করে টিকিট কিনে, কখনো ৫ টাকার টিকিট ৫০০ টাকায় কিনে ঘন্টার পর ঘন্টা রৌদ্রতাপে অথবা বৃষ্টির নিচে অথবা কনে শীতে বসে থেকে হাততালি দেওয়া অথবা দাঁড়িয়ে ড্যান্স করতে করতে মুখে নানা মন্তব্য করা?

অনুরূপ বৈধ কি ঐ খেলা টিভির পর্দায় ঘন্টার পর ঘন্টা দেখে যাওয়া? তদ্রুপ কানের গোড়ায় রেডিও লাগিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কেবল খেলার হৈচৈ ও ফলাফল শুনে যাওয়া?! সংসারের কাজ, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ইত্যাদি কর্তব্য ছেড়ে সময় নষ্ট করে চিত্তবিনোদনে কি ইসলাম অনুমতি দেয়?

যদি কেউ বলেন, বৈধ খেলা দেখা বৈধ। কারণ স্বয়ং আল্লাহর নবী , এবং তার অল্প বয়স্কা পত্নী হযরত আয়েশা (রাঃ) তার পশ্চাতে পর্দায় থেকে মসজিদে হাবশীদের যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলা দেখেছেন। তাহলেও এ শর্ত স্বীকার করতেই হবে যে, তা যেন অধিক সময় নষ্ট

করে, নামায ও তার জামাআত নষ্ট না করে। কারো উরর দিকে যেন তাকানো না হয়। (পুরুষ দেখলে) সে খেলা যেন কোন মহিলার না হয়। তাতে যেন কোন প্রকার অর্থের অপচয় ঘটে। ইত্যাদি। আমাদের দেশে মেলা হল নানা খেলার আখড়া। কোন কোন মেলা আবার শির্কের (মুর্তি বা কবরপূজা ও উরসের) উৎসব-কেন্দ্র। এ সব উৎসবে কোন মুসলিমের অংশগ্রহণ করা নিশ্চয়ই বৈধ নয়। তাছাড়া মেলা হল প্রেমিক-প্রেমিকার মিলন-ক্ষেত্র, 'চুম্মা কা ওয়াদা পূরণের স্থান। রঙ-তামাশার রঙ্গমঞ্চ। সাধারণতঃ জুয়ারী, শারাবী, লম্পট ও অসদাচারীদের সমাবেশস্থল। এখানে কোন চরিত্রবান যুবক-যুবতীর যাওয়ার অর্থই হল অসৎচরিত্রতাকে পছন্দ করা এবং নিজের সচ্চরিত্রতাকে বিনষ্ট করা।

খেলার নেশায় অনেকে আবার খেলার খবর রাখতেও এত অতিরঞ্জন করে যে, শুধু খেলার খবর নেওয়ার জন্যই রেডিও-টিভি বা পত্রিকা ক্রয় করে। যেমন এই শ্রেণীর যুবকদের মন যোগাতে ঐ সব প্রচারমাধ্যমে খবরের একটা বড় অংশ খেলার জন্য নির্ধারিত করা হয়; বরং শুধু খেলাধুলা নিয়েই বিশেষ পত্রিকা বাজারে প্রকাশিত হয়ে থাকে। আর খেলার পাগল যুবকরা কেবল মাত্র খেলার খবরটি শোনার জন্য উদ্বিগ্ন থাকে এবং পত্র-পত্রিকার পাতা উল্টে খেলার খবরই আগে পড়ে থাকে! কত যুবক-যুবতী তো তার দেশে বিশ্বকাপ হবে অথবা তার দেশ তাতে খেলতে সুযোগ পাবে শুনে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে কয়েক দিন ধরে এ নিয়ে খুশী ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রোড জাম করে, সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিয়ে নেচে-গেয়ে বেড়ায়!!

কি জানি এতে তারা কি লাভ বা তৃপ্তি পায়? শুধু যুব-সমাজই নয় বরং দেশের বৃদ্ধ নেতা-নেত্রীরাও তাতে গর্ববোধ করে থাকে। কারণ, খেলাধুলার উন্নয়নে নাকি জাতির মর্যাদা ও অম্লন গৌরব আছে!!! একদা আমার এক বন্ধু এক মজলিসে খেলার কথা চলতে চলতে বিশ্বকাপের সেমিফাইন্যালে কোন্ কোন্ দেশ উঠল তা বলতে না পারলে আমাকে বলে ফেলল, তুমি দেখছি কিছুরই খবর রাখ না! আমি অন্য কিছু না বলে তাকে শুধু বললাম যে, আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিন ইলমিল লায়্যানফা।' (অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমি সেই জ্ঞান থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যা কোন উপকার সাধন করে না।)

পরিশেষে যুবক বন্ধুদেরকে এই অনুরোধ করি যে, ক্লাবগুলোকে শুধুমাত্র হৈচৈ ও খেলার জন্য ‘কিলাব’-ঘর করে রেখো না। বরং ঐ ক্লাবকে জাতির কূলব’ ও প্রাণকেন্দ্র করে গড়ে তোল। যুবশক্তি ‘মেন-পাওয়ার’-এ পরিণত হোক ইসলামের স্বার্থে, মুসলিম জাতির স্বার্থে।

উপসংহারে যুবক বন্ধুর জন্য এক আধ্যাত্মিক ব্যায়ামের কথা বলি, যাতে তার ঈমান ও দ্বীন মজবুত হতে পারে। পূর্ণ মু'মিন যুবকের নিজ মন ও প্রবৃত্তির সহিত সাত পর্যায়ের নিয়মিত ব্যায়াম ও অনুশীলন হওয়া উচিতঃ

প্রথমতঃ নিজের আত্মার সহিত এই পরামর্শ হওয়া উচিত যে, সে আগামীতে কোন্ ধরনের নেক কাজ করবে? যে কাজ তার ভবিষ্যতে কাজে দেবে সে কাজের পরিকল্পনা করবে, ক্ষয়শীল আয়ু ও লয়শীল জীবনের কয়টা দিনে আল্লাহর কোন অবাধ্যতা করবে না। হেলায় সুযোগ না হারিয়ে পরবর্তীতে লাঞ্ছিত হওয়ার কাজ কখনই করবে না।

দ্বিতীয়তঃ খুব সতর্কতার সহিত লক্ষ্য ও খেয়াল রাখবে, যাতে কোন প্রকার পাপ ও ত্রুটি ঘটে বসে। প্রবৃত্তি যেন কোন প্রকার কু’-এর দিকে ঝুঁকে না বসে। সর্বদা মনের মাঝে এই অনুভুতি রাখবে যে, আল্লাহ তাআলা সুক্ষদর্শী, সর্বদ্রষ্টা। তিনি তার সকল কাজ সুক্ষভাবে দর্শন করছেন। তাঁর ফিরিস্তা সকল ভালোমন্দ নোট করে রাখছেন। যার আলোকে তার সামনে একদিন জবাবদিহি করতে হবে।

তৃতীয়তঃ আত্মার কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করবে। মানুষের মন অধিকাংশ মন্দপ্রবণ, মনের প্রকৃতি হল দেহের আরাম-প্রিয়তা, আলস্য ও স্বেচ্ছাচারিতা। কারো বাধ্য হয়ে থাকা মনের প্রকৃতি নয়, কোন শক্ত কাজ করা মনের স্বভাব নয়। অতএব মনের এই স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে লড়তে হবে। কারণ, এমনও হতে পারে যে, প্রবৃত্তিবশে “তোমরা যা পছন্দ কর না, তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং তোমরা যা পছন্দ কর, তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর (কোটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর তা) আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না।” (সূরা বাক্বারাহ ২১৬ আয়াত)

এ জিহাদে বিজয় লাভ করলে মানুষ প্রকৃত মানুষ’ ও ‘মানব’ হতে পারে। নচেৎ মনের কাছে পরাজিত হলে সে পশুত্বে অবতরণ করে। আল্লাহর ওয়াদা হল, “যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে তাদেরকে আমি আমার পথে পরিচালিত করে থাকি। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে থাকেন।” (সূরা আনকাবুত ৬৯ আয়াত)

চতুর্থতঃ আত্মসমালোচনা করবে। সারা দিনের কৃত আমলের উপর নিজ আত্মার হিসাব নেবে। ভালো কাজ করে থাকলে আল্লাহর শুকর করবে এবং মন্দ কাজ করে থাকলে লজ্জিত হয়ে অনুতাপের সাথে তার নিকট তওবা করবে। আর আগামীতে যেন সে ত্রুটি না হয় তার জন্য যথার্থ খেয়াল রাখবে।

পঞ্চমতঃ ত্রুটি হলে নিজের মন ও আত্মাকে ভৎসনা ও তিরস্কার করবে। ঔদাস্য ও অবজ্ঞার জন্য নিজেকে ধিক্কার জানাবে। কৃত ভুলের জন্য মনকে আক্ষেপ-জ্বালায় দগ্ধীভূত করবে।

ষষ্ঠতঃ কৃত পাপের জন্য নিজের মনকে শাস্তি প্রদান করবে। মনের পছন্দনীয় কিছু জিনিস ত্যাগ করে শাস্তির কথা নিজের মনের মণিকোঠায় আন্দোলিত করে রাখবে।

আর সপ্তমতঃ ভালো কাজ করে থাকলে তার জন্য মনকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করবে। ভালো কাজ করলে এমনিতেই মুমিনের হৃদয় হর্ষোৎফুল্ল হয়ে ওঠে। তা সত্ত্বেও বৈধ কোন উপায়ে মনকে আরো চাঙ্গা করা, মনের মাঝে একঘেয়েমি দূরীভূত করা এবং পুনঃপুনঃ মনের উদ্যম ফিরিয়ে আনা কর্তব্য। যাতে ইহকালের বৈধ খুশী ব্যবহার করে পরকালের পরম খুশী লাভের অধিক সুযোগ লাভ হয়। আল্লাহর আনুগত্য ও ছাত্র-জীবনে এমন আত্মসমীক্ষা বড় ফলপ্রসূ।