শ্রেষ্ঠ সমাজ-বিজ্ঞানী নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন, “আল্লাহ সেই পুরুষকে অভিশাপ করেন, যে নারীর পোশাক পরিধান করে এবং সেই নারীকে অভিশাপ করেন, যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে।” (আবু দাউদ, হাকেম, সহীহুল জামে ৫০৯৫ নং) তিনি বলেন, “পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, মেড়া পুরুষ এবং পুরুষের বেশধারিণী মহিলা জান্নাতে যাবে না।” (নাসাঈ, বাযযার, হাকেম ১৭২, সহীহুল জামে’ ৩০৬৩ নং) তিনি নিজেও পরস্পরের বেশধারী নারী-পুরুষকে অভিশাপ করেছেন। (বুখারী ৫৮৮৫ নং, প্রমুখ) এবং আরো বলেছেন যে, “সে পুরুষ আমাদের দলভুক্ত নয়, যে কোন নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করে। অনুরূপ সে নারীও আমাদের দলভুক্ত নয়, যে কোন পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করে।” (আহমাদ, সহীহুল জামে ৫৪৩৩ নং)

আমাদের সমাজের যুবকদলের মনকে যে শ্রেণীর মানুষ অধিকরূপে জয় ও আকৃষ্ট করতে পেরেছে, তারা হল ফিল্মী দুনিয়ার তারকা নায়ক-নায়িকারা। কাল্পনিক কাহিনীর অভিনয়ের মাধ্যমে তারা অধিকাংশ তরুণ-তরুণীর হৃদয়-কোণে বাসা বেঁধে নিয়েছে। এরা তাদেরকে এত ভালোবাসে যে, তাদের ছবি দিয়ে নিজেদের ঘর সাজায়, প্রাইভেট এ্যালবামে রাখে, তাদের ছবি ও খবর প্রকাশক পত্র-পত্রিকা সংগ্রহ করে সাগ্রহে পড়ে মনে আমেজ নিয়ে থাকে। জীবনের প্রতি পদক্ষেপে তাদের অনুকরণ করার চেষ্টা করে। যৌন-জীবনে তো বটেই, এছাড়া সামাজিক জীবনেও তারা হয় এদের একমাত্র আদর্শ। তারা চলচ্চিত্র জগতের তারা, এদের মনের আকাশের তারা, এদের চোখেরও তারা। আর সেই তারা দেখেই রাতের আঁধারে পথ নির্ণয় করে। তাদেরই অনুগ্রহ ও অনুকরণে তৈরী হয় মস্তান যুবক-যুবতী।

এক শ্রেণীর যুবক নজরে পড়ে, যাদের শার্ট বা পাঞ্জাবীর বুকের বোতাম খোলা, ফুলহাতা জামার হাত গুটানো, হাতে বালা বা সূতো বাধা, মাথায় এক ঝাকা চুল। তাদের পরনের লুঙ্গি, পায়জামা বা প্যান্ট রাস্তায় ঝাড়ু মেরে যায়। পিছন থেকে দেখে মনে মনে প্রশ্ন জাগে, ওটা ছেলে না মেয়ে? সামনে না এলে হয়তো বুঝাও যায় না। এদেরকে নাকি মস্তান’ বলে। মস্তান। হল ফার্সী শব্দ; যার অর্থ পাগল। তাহলে এরা কি আসলে পাগল? হ্যা ফিল্মের দেওয়ানা ও হিরো-হিরোইনের প্রেমে পাগল। অথবা তারা অন্যান্যদেরকে পাগল ভাবে। তাদের ঐ হিরোহিরো ভাবের মন বলে, আমাদের বুকে পাটা আছে, তাই বুক খুলে চলি। আমরা কোন নিয়ম বা আদব-কায়দা মানি না, কাউকে আদৌ ভয় করি না। খোলা বুকই তার প্রমাণ। বাহুতে আছে। প্রবল শক্তি, তার প্রমাণ হল হাতে বাধা সুতো অথবা লোহার বালা। চিত্র-তারকাদেরকে তারা এত ভালোবাসে যে, মাথা থেকে পা পর্যন্ত তাদেরই অনুকরণে গঠিত। তাদের নামে চুলের কাট, শার্টের কাট, প্যান্টের কাট, প্রভৃতি বড়ই প্রচলিত এদের কাছে।

তাদের প্যান্টের নীচ অংশ হাই হীল জুতার নীচ পর্যন্ত গড়ায়, পথের ময়লা প্যান্টের কাপড়ে সাফ হয়। তারা চক্কর-মক্কর রংগীন কাপড়ে জামা তৈরী করে সার্কাসের রংবাজ সাজে। মহিলাদের ব্লাউজের কাপড় ওরা দখল করেছে বলে মহিলারা এক রংগা কাপড়ে সংক্ষিপ্ত ব্লাউজ তৈরী করে মনের দুঃখে পেট বের করে চলেন। সোনা মানিকরা বুক উদাম করে চলে, আর তাদের সম-মনা মহিলারা পেট বের করে চলেন। তাদের কেউ কেউ স্বদেশী গান পরিবেশনের স্টাইল ছেড়ে দিয়ে পশ্চিমা কায়দায় কোমর দুলিয়ে গান করে বেড়ায়। ওরা পুরুষ হয়ে কোমর দুলিয়ে যখন গান গায়, তখন নাচনেওয়ালীরাও শরমে মুখ লুকায়। আসলে তারা বহুরূপী, তাই বিশেষ কোন এক রূপে তাদের দেখা যায় না।

অনুকরণে সোনামানিকরা বানরকেও লজ্জা দিয়েছে। এ জন্য স্বদেশী বানরকুলকে আমেরিকা নিতে চাইলেও ওদের নিতে চায় না। মাথার পিছনের দিকে তারা চুল এতই লম্বা রাখতে শুরু করেছে, যে জন্য ওদের সম-মনা মহিলারা সোনা-মানিকদের উপর রাগ করে লম্বা চুল কেটে বব কাটিং চুল রাখতে শুরু করেছে। হাতের নখ লম্বা রেখে ওরা বাঘ-ভাল্লুক সাজতে চাচ্ছে। তাদের এ অবস্থা দেখে আমরা যেমন ভয় করি, তেমনি মানবজাতির একাংশের পশুজীবনে ফিরে যেতে দেখে মনে দুঃখও পাই। (অপসংস্কৃতির বিভীষিকা ২৯পৃঃ)। এদের নাদুস-নুদুস চেহারা ও ভাব-ভঙ্গিমা দেখে মনে হয়, ওরা যেন কোন আমীরজাদা।

অথচ অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয় যে, বাহিরে কেঁাচার পত্তন, ভিতরে ছুঁচোর কিত্তন। যৌবনের উন্মাদনায় এরা ধরাকে সরাজ্ঞান করে। বেপরোয়া হয়ে বুক ফুলিয়ে চলে, বগলে রেডিও বা টেপ, গাড়িতে টেপ অথবা বাড়িতে টেপ, রেডিও বা টিভির শব্দে পার্শ্ববর্তী লোকদের ঘুম ও ইবাদত নষ্ট করে, জ্বালাতনে মন তিক্ত করে। বিড়ি-সিগারেট খায় বড় সাহেবী স্টাইলে। কাউকে কিছু বলতে গেলে মুখের উপরে ধুয়ো ছেড়ে লাল চোখে তাকিয়ে শাসিয়ে থাকে! মস্তানীবশে অনেকের উপর অন্যায় স্বেচ্ছাচারিতা চালায়। জোর-যুলুম করে নারীর সতীত্বনাশ, শ্লীলতাহানি, মানী-গুনীর অপমান, কারো জায়গা জবরদখল, চাঁদাবাজি অথবা সেলামী’ আদায় করে থাকে।

অথচ যুলুম হল কিয়ামতের দিনের অন্ধকার। মযলুমের হৃদয় থেকে বিষ-জ্বালায় যে আঃ বা ‘উঃ শব্দ বের হয়ে আসে, তা যে মস্তানের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনে তা হয়তো অনেকেই জানে না। মহানবী বলেন, “তোমরা মযলুমের বন্দুআ থেকে সাবধান থেকোযদিও সে কাফের হয়। কারণ, ঐ দুআ ও আল্লাহর মাঝে কোন অন্তরাল থাকে না।” (সহীহুল জামে ২৬৮২ নং) অর্থাৎ, সেই বদুআ যালেমের হক্কে সত্বর লেগে যায়। হে মস্তান বন্ধু যে অহংকার তুমি আজ প্রদর্শন করছ, যে গর্বের সাথে মাটির বুকে চলাফেরা করছ, জানো কি, তা তোমার জন্য পরকালে কত বড় সর্বনাশ ডেকে আনবে? যে হৃদয়ে সরিষা-দানা পরিমাণ অহংকার থাকে, সে হৃদয়ের মানুষ বেহেশ্ব যেতে পারবে না। অহংকারবশে যে সত্য প্রত্যাখ্যান এবং মানুষকে ঘৃণা করে, তাকে সাজা ভুগতে হবে দোযখে। (আহমাদ, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, সহীহুল জামে ৭৬৭৪ নং)

যে মানুষ অহংকারবশে পরনের কাপড় গাটের নীচে ঝুলিয়ে পরে মাটিতে হেঁচড়ে নিয়ে বেড়ায়, আল্লাহ তাআলা কাল কিয়ামতের দিন সে মানুষের দিকে তাকিয়েও দেখবেন না, তার সহিত কথাও বলবেন না, তাকে গোনাহমুক্ত বা ক্ষমাও করবেন না। আর তার জন্য হবে কঠিন শাস্তি। (মুসলিম ১০৬নং, আসহাবে সুনান) হে বন্ধু! উপদেশ গ্রহণ কর,“(অহংকারবশে) মানুষের প্রতি বিমুখ হয়ো না, (কাউকে অবজ্ঞা করো না) এবং পৃথিবীতে গর্বভরে চলো না। কেন না, আল্লাহ গর্বিত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” (সূরা লুকমান ১৮ আয়াত)

হ্যা, তোমার মস্তানীর ফলে কিছু লোক হয়তো তোমাকে বাহাদুরী দেবে। কিছু লোক দেবে সম্মান। কিন্তু তা কি তাদের অন্তর থেকে? না কি তোমার অনিষ্টের ভয়ে? দুশমনকে উচু পিঁড়ে দেওয়ার মত লোক তোমাকেও সম্মান করে না কি? যদি তাই হয় তাহলে শোন, প্রিয় নবী (সা.) বলেন, “সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক তারা, যাদের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য তাদের তোয়া করা হয়।” (আবু দাউদ, সহীহুল জামে’ ৭৯২৩ নং)

আর “আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক কঠোর-হৃদয় দাম্ভিককে ঘৃণা করেন, যে বাজারে হৈ-হাল্লা ও গলাবাজি করে বেড়ায়, যে রাত্রে মড়ার মত ঘুমায় এবং দিনে গাধার মত মেহনত করে, যে পার্থিব জ্ঞান রাখে, কিন্তু পরকাল বিষয়ে অজ্ঞ থাকে।” (বাইহাকী ১০/ ১৯৪, সহীহুল জামে’ ১৮৭৮ নং) “শ্রেষ্ঠ তো সেই ব্যক্তি, যে তার আখলাক-চরিত্রে শ্রেষ্ঠ।” (ইবনে মাজাহ হাকেম, সহীহুল জামে ১১২৮ নং) “শ্রেষ্ঠ মানুষ হল সেই ব্যক্তি, যে অপরের সাথে মিশতে পারে এবং অপরেও তার সাথে মিশতে পারে।” (সহীহুল জামে' ২৩১ নং) অতএব তুমি কি চাও না সেইরূপ শ্রেষ্ঠ মানুষ হতে?

এক বন্ধু বলল, হুযুর! আমি মনে করি, আমরা অন্যায় করি না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। জানেন না, লোহা দিয়ে লোহা কাটে? আমরা পড়ে থাকা ঋণ আদায় করে দিই, উপেক্ষিতা। নারীকে তার স্বামীর ঘরে বসিয়ে দিয়ে আসি; স্বামী তাকেই নিয়ে সংসার করতে বাধ্য হয়। জোর করে চাঁদা নিই ঠিকই, কিন্তু সেই টাকা দিয়ে অনেক গরীবদের খিদমত করি। বিধবাদের দেখাশোনা করি, গরীব মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিই। --- ইত্যাদি।

আমি বললাম, কিন্তু বন্ধু! পেশাব দিয়ে পায়খানা ধুয়ে লাভ কি? পায়খানার গন্ধ গেলেও পেশাবের দুর্গন্ধ ও নাপাকী তো আর কম নয়। উল্লেখিত ভালো কাজগুলোর জন্য যাকাত ও দান-খয়রাতের অর্থ আদায় করে ফান্ড তৈরী কর।

বলল, হুযুর। লোকে যাকাত দিলে ও দান-খয়রাত করলে কি আর আমাদেরকে মস্তানী করতে হত? সমাজই তো মস্তান তৈরী করে। পরিস্থিতির চাপে পড়েই অনেকে চোর-গুন্ডাবদমাশ হয়। বললাম, যা অন্যায় তা অন্যায়। কোনও সৎ উদ্দেশ্যে অন্যায় করা যেতে পারে না। যদিও বহু মস্তান অনুরূপ সৎ উদ্দেশ্য প্রকাশ করে অধিকাংশে নিজেদেরই প্রবৃত্তি-পূজা করে থাকে।

অতএব হে যৌবনমদে মত্ত মস্তান ভাই আমার। অসংযত চরিত্রকে সংযত করে মস্তানি ছাড়, যাতে পরে পস্তানি না হয়। উদ্ধৃঙ্খল চরিত্র ও দৈহিক বলের জোরে পাড়ায় পাড়ায় সরদারি করার নামে উপদ্রব ও যুলুম করে বেড়ায়ো না। কারণ, জেনে রেখো যে, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর পাকড়াও বড় শক্ত। যখন ধরা খাবে, তখন জান ছুটানো দায় হয়ে পড়বে। একথা সুনিশ্চিত।

হে প্রাণচঞ্চল প্রাচী-র তরুণ, কর্মবীর!’ পরোপকারে ব্রতী হও, তবে নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে। কর্ম-বিমুখ হয়ে পরের ধনে পোদ্দারি বা সর্দারি করে নয়। হে ‘বগাহীন শৃঙ্খল-ছেড়া প্রিয় তরুণ! তুমি তোমার জীবনে শৃঙ্খলতা ফিরিয়ে এনে চেষ্টা কর, যাতে সমাজে খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতি, অরাজকতা প্রভৃতির যুলুমবাজির সকল দরজা যেন চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যায়। যেন বন্ধ হয়ে যায় দখলতন্ত্র বা লাঠি যার, মাটি তার’-এর নীতি। হে ‘অভয়-চিত্ত ভাবনা-মুক্ত’ যুবক বন্ধু আমার শান্তি ও শৃঙ্খলা কোথায় আছে জানো? শান্তি আছে সত্য বিশ্বাসে৷

শৃঙ্খলা আছে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণে ও তার আনুগত্যে। শান্তির ধর্ম ইসলামের ছায়াতলে। দ্বীনের আশ্রয় নাও, তোমার সকল সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে যাবে। সমাজের আকাশ থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নেবে পাপ-ঝড়ে বয়ে আনা। অশান্তির বজ্ৰবাহী কালো মেঘ। অন্ধানুকরণের কথা ছাড়ার পূর্বে নায়িকাদের দেখাদেখি সাজা মস্তান যুবতীদের কথা আর বলে পারছি না। এ কথা বিদিত যে, ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা অধিক অনুকরণ-প্রিয়। একটা মডেল বা ফ্যাশন বাজারে নামলে তা ধরার জন্য ধৈর্য হারিয়ে ফেলে মেয়েরা।

বিশেষ করে আধুনিকারা অনুকরণ করে তথাকথিত প্রগতিবাদিনীদের; অর্থাৎ, যাদের নৈতিকতার গতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে তাদের। অনুকরণ করে যৌন-স্বাধীনতাকামীদের; অর্থাৎ, যারা উপচীয়মান যৌবনকে কেবল এক জনের অধীন করে রাখে না তাদের। তাই তো এমন যুবতীর কেশবিন্যাস সাধনার মত সাধনা কাটের অথবা বাবরের মত বাবরী কাটের। মালবিকার ন্যায় সিঁথিতে সিন্দুর, বিন্দিয়ার ন্যায় কপালে টিপ, কানে লম্বা বা রথের চাকার মত বড় দুল, কোন অভিনেত্রীর মত কপালের ভ্রু চিকন করে চাঁছা, এ ছাড়া চোখের জন্য, চোখের পাতার জন্য, গালের জন্য, ঠোটের জন্য পৃথক পৃথক ‘মেকআপ তো আছেই। পরনে আছে ইউ’ বা ‘ভি’ কাটিং-এর নকশা করা খাটো ব্লাউজ। পাতলা শাড়ির কেঁাচার থাক গোজা আছে নাভির নীচে। বুকের আঁচল খানাও বেশ থাক করে সুবিন্যস্তরূপে লম্বালম্বি বাম কাঁধে চাপানো আছে; যাতে সাইড থেকে বুকে-পেটে-পিঠে হাওয়া ও আলো পায় এবং ব্লাউজের ‘কাম’ দেখিয়ে চেংড়া’দের মনে কাম সৃষ্টি করা যায়। অথবা পরিধানে আছে আধুনিক কাটিং-এর শেলোয়ার-কামিস। ওড়না খানা ‘ফর শো’ বুকে থাকানো আছে।

আর এর চাইতে বেশী আলোকপ্রাপ্তা হলে উপর দিকে থাকে আধুনিক টাইট-ফিট অর্ধ বুক খোলা গেঞ্জি অথবা ব্লাউজ এবং নীচের দিকে চোস্ত প্যান্ট অথবা সংকীর্ণ স্কার্ট; যা হাঁটু অবধি খোলা। তার পরেও পিছন দিক হতে ইঞ্চি তিনেক কাটা! পক্ষান্তরে আরো অত্যাধুনিকা হলে পরে সিন্থিয়ার মত বগল-কাটা ব্লাউজ অথবা গেঞ্জি। হাতের আঙ্গুলগুলোতে আছে হ্যালেনের মত লম্বা-লম্বা নখ, তার উপর পুরু নখ-পালিশ। পায়ে আছে উচু পেনসিল-হিল জুতো।

এরপর চুলে আছে শ্যাম্পুর সুগন্ধ, গালে আছে ক্রিমের সুবাস, গলায় ও বুকে আছে পাওডারের সুঘ্রাণ, আর লেবাসে তো পারফিউম স্প্রে করা আছেই। অতঃপর কাধে একটি ভ্যানিটি ব্যাগ ঝুলিয়ে বাড়ির খাঁচা থেকে যখন বের হয়, তখন কি জানি কোন কাজে যায়, নাকি কারো বাসরে?

পক্ষান্তরে বিভিন্ন বাহারের অঙ্গসজ্জা করে আবেদনময়ী মস্তানা চলন ও অঙ্গভঙ্গি চুম্বকের আকর্ষণে পুরুষের দৃষ্টি ও মন লোহা যে আকৃষ্ট হবে, তা বলাই বাহুল্য। ফুল বর্ষণ হবে যৌনদৃষ্টি ও কুমন্তব্যের। অবশ্য এমন প্রসাধিকার এটাই তো আকাঙ্খা, এটাই তো লাভ। প্রগতির ঘোড়ায় চড়ে এরা চায় ভাব দেখিয়ে লাভ করতে যৌন আবেদন থাকে এদের চেহারা ও চরিত্রে, চলনে ও বলনে, আচরণ ও চাহনিতে, পোশাকে ও প্রসাধনে, ভাবে ও ভঙ্গিতে। এখানেই ঘায়েল হয়ে যায় বহু যুবক অথবা ঘায়েল হয় বহু এমন প্রসাধিকা আধুনিকারা। শুরু হয় প্রেম অথবা ঘটে যায় ধর্ষণ ও বলাৎকার।

আলোকপ্রাপ্তা যুবতীদের ছ্যাবলা পোশাক ও চাঞ্চল্য-ভরা আকর্ষণময় চলন নজরে পড়লে প্রিয় নবী (সা.) এর এক নবুয়ত-বাণী মনে পড়ে যায়; তিনি বলেন, “যদি তোমার লজ্জা না থাকে, তাহলে যা মন তাই করতে পার।” (আহমাদ, বুখারী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, সহীহুল জামে’ ২২৩০ নং) অর্থাৎ, কেবল নির্লজ্জরাই এমন বেহায়ামী প্রদর্শন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে এমন নারীদের জন্য আরো কয়েকটি মহাবাণী উল্লেখ করে এ প্রসঙ্গের ইতি টানব। মহানবী ও বলেন, 'প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচার করে থাকে। আর মহিলা যদি (কোন প্রকার) সুগন্ধ ব্যবহার করে কোন (পুরুষদের) মজলিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, তবে সে বেশ্যা মেয়ে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ প্রমুখ, সহীহুল জামে’ ৪৫৪০ নং)

তিনি বলেন, “দুই শ্রেণীর মানুষ দোযখবাসী হবে, যাদেরকে এখনো আমি দেখিনি। এদের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ হল, সেই মহিলা দল; যারা কাপড় পরা সত্ত্বেও যেন উলঙ্গ থাকবে, এরা (পরপুরুষকে নিজেদের প্রতি) আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও (তাদের প্রতি) আকৃষ্ট হবে। (চুলের খোপার কারণে) তাদের মাথা হবে হিলে যাওয়া উটের কুঁজের মত। তারা বেহেশু প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধ পর্যন্তও পাবে না; অথচ তার সুগন্ধ বহু বহু দূরবর্তী স্থান থেকে পাওয়া যাবে।” (মুসলিম ২ ১২৮ নং) তিনি বলেন, “তোমাদের সবচাইতে জঘন্যতম নারী হল তারা, যারা বেপর্দা, যারা অহংকারের সাথে অন্যের অনুকরণে নিজেদের অঙ্গসজ্জা ও বহুরূপ প্রদর্শন করে থাকে। ওরাই হল কল্পট নারী। এদের মধ্যে কিঞ্চিৎই কেউ বেহেস্তে যেতে পারবে।” (বাইহাকী ৭/৮২, সিলসিলাহ সহীহাহ ১৮৪৯ নং)

আর বন্য-সুন্দরী বাঘিনীদের উদ্দেশ্যে বলি যে, লম্বা নখ রাখা মানব-প্রকৃতির বিরোধী কর্ম। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, “পাঁচটি কর্ম হল মানব প্রকৃতির স্বভাবসুলভ কর্ম; খতনা করা, লজ্জাস্থানের লোম চেঁছে ফেলা, মোছ ঘেঁটে ফেলা, নখ কেটে ফেলা এবং বগলের লোম দূর কর।” (বুখারী, মুসলিম, প্রভৃতি, সহীহুল জামে’ ৩২৫০ নং)

“আল্লাহর রসূল (সা.) মোছ ছাটা, নখ কাটা, বগলের লোম তুলে ফেলা এবং গুপ্তাঙ্গের লোম চেঁছে ফেলার ব্যাপারে সময় নির্ধারিত করেছেন; যাতে ৪০ দিনের বেশী সময় তা রেখে না দেওয়া হয়।” (আহমাদ ১২২, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ)।

আর পরিবারের মুরব্বী ও বাড়ির গুরুজন তথা অভিভাবকদেরকে মহানবী (সা.) এর এক মহাবাণী স্মরণ করিয়ে দিই। তিনি বলেন, “অবশ্যই আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তির নিকট থেকে তার দায়িত্ব বিষয়ে (কিয়ামতে) কৈফিয়ত নেবেন; সে কি তা যথার্থ পালন করেছে, নাকি অবহেলা করে দায়িত্বে দেওয়া জিনিসকে নষ্ট করেছে? এমন কি পুরুষকে তার পরিবারের সকল সদস্যের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।” (নাসাঈ, ইবনে হিব্বান, সহীহুল জামে' ১৭৭৪নং)