যে জাতি শিক্ষা দিতে এসেছিল পৃথিবীর সকল জাতিকে, যে জাতি ছিল পূর্ণ মানবতার মুর্ত-প্রতীক, যে জাতি ছিল বিশ্ব-জনমন্ডলীর জন্য একক আদর্শ, সে জাতির অবস্থা এই যে, নিজের স্বাতন্ত্র্য, স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্য হারিয়ে অপর জাতির মাঝে একাকার হয়ে বিলীন হয়ে পড়েছে। অন্য জাতির পার্থিব সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তার ভালো-মন্দ সকল বিষয়ে চক্ষু বন্ধ করে অনুকরণ করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। নিজের আচার-আচরণ, নৈতিকতা ও চরিত্র তথা লেবাস-পোশাকও নিজের কাছে অপছন্দনীয় হয়ে দেখা দিয়েছে। নিজের চোখে নিজেকে দেখেছে দীন-হীন-ক্ষীণরূপে। তাই তো এ জাতির এমন অবস্থা।
এ জাতির কাছে দুনিয়া না থাকলেও দ্বীন আছে আসল রূপে। অর্থ না থাকলেও আছে। নৈতিকতা, যা মুসলিমের অমূল্য ধন এবং মানবের আসল মানবতা। যাদের দ্বীন নেই, নৈতিকতা নেই তাদের পার্থিব সৌন্দর্য দেখে চমৎকৃত হয়ে, তাদের প্রতি মুগ্ধ হয়ে ঝুঁকে পড়া। অবশ্যই উচিত নয় কোন মুসলিমের। মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা সীমা লংঘনকারীদের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ো না, অন্যথায় অগ্নি তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। আর এই অবস্থায় আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু থাকবে না এবং তোমরা সাহায্যও পাবে না।” (সূরা হুদ ১ ১৩)
সুতরাং বিজাতীয় চাল-চলন, আচার-আচরণ ও বেশভূষায় আকৃষ্ট হয়ে বিজাতির সভ্যতার প্রতি ঝুঁকে পড়ার মানেই হল নিজের স্বরূপতা ও স্বকীয়তা বিকিয়ে সত্যকে না চিনে অথবা অপছন্দ করে অসত্যকে লুফে নেওয়া, আর তা হল দোযখবাসীদের কাজ। তাছাড়া সমাজ-বিজ্ঞানী প্রিয় নবী মুক্তি বলেন, “যে ব্যক্তি যে জাতির আনুরূপ্য অবলম্বন করে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই দলভুক্ত।” (আহমাদ ২/৫০, আবু দাউদ ৪০৩১, সহীহুল জামে’ ৬০২৫ নং)
ভালো-মন্দ বাচ-বিচার না করে অন্ধভাবে অপরের ভঙ্গিমা নকল করে চলা, কোন কোন অথবা সকল কাজে অপরের হুবহু অনুকরণ করা মানুষের জন্য নিন্দনীয়। কারণ, এমন স্বভাব হল বানরের। এই জাতিই কোন প্রকার বিচার না করেই চোখ বুজে অপরের অনুকরণ করে তৃপ্তি পেয়ে থাকে। কিন্তু মানুষ, বিশেষ করে কোন মুসলিম পারে না বিজাতির কোন অসভ্য ভঙ্গিমা নকল করে চলতে। কারণ, মুসলিমের আছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। আর তা বিনাশ করে অপরের বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করার মানেই হল, নিজেকে ধ্বংস ও বিলীন করা। কবি বলেন,
‘পরের মুখে শেখা বুলি পাখীর মত কেন বলিস,
পরের ভঙ্গি নকল করে নটের মত কেন চলিস?
আপনারে যে ভেঙ্গে-চুরে গড়তে চাহে পরের ছাঁচে,
অলীক, ফাঁকি, মেকী সেজন, নামটা তার ক’দিন বাঁচে?
তবে কাফেরদের সর্ববিষয়ে সব রকম কাজেই যে অনুকরণ নিন্দনীয়, তা নয়। নিন্দনীয় হল সেই সব কাজের অনুকরণ করা, যা তাদের কল্পনা-প্রসূত, অমূলক ধারণা বা বিশ্বাসজনিত। যা তাদের অশ্লীলতাময় আচরণ ও অভ্যাস এবং যা নৈতিকতা-বর্জিত। যা তাদের মনগড়া উপাসনামূলক ধর্মীয় আচার। যা তাদের ধর্মীয় বা জাতীয় প্রতীক এবং অন্য জাতি থেকে পার্থক্য নির্বাচনকারী পৃথক বৈশিষ্ট্য। আর যে বিষয়ে আমাদের শরীয়তে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। কারণ, তা করলে অসত্যকে সমর্থন করা হয়, যাতে হয় সত্যের অপলাপ।
এ ছাড়া নিছক পার্থিব জ্ঞান-বিজ্ঞান; যার সম্পর্ক মুসলিমের আকীদা, দ্বীন ও নৈতিকতার সাথে নেই, বরং পার্থিব উপকার আছে, তাতে যে কোন ব্যক্তির অনুকরণ অবৈধ নয়। কারণ, এ বৈশিষ্ট্য কোন জাতীয় বা ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য নয়। বরং মুসলিমই তার অধিক হকদার। অতএব মুসলিমকেই এ বিষয়ে অগ্রণী হওয়া উচিত। তবে তা তার প্রধান লক্ষ্য নয়, যেমন আমরা পুর্বেই জেনেছি। বিজাতির অনুকরণ নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করলে আমরা জানতে পারি যে, যেহেতু তাদের প্রায় সকল কর্ম হল ভিত্তিহীন, ভ্রষ্টতাপূর্ণ ও পন্ড, সেহেতু অনুকরণে ভ্রষ্টতায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ বিজাতির অনুকরণ মানেই হল, স্বজাতির আচরণকে অপছন্দ বা ঘৃণা করা অথবা মন্দ জানা। যাতে রয়েছে পথের দিশারী মহানবী , এর বিরুদ্ধাচরণ। আর মহান। আল্লাহ বলেন, “সুপথ প্রকাশিত হওয়ার পর কেউ যদি রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায়, আমি সেই দিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব এবং দোযখে তাকে নিক্ষেপ করব, আর তা কতই নিকৃষ্ট আবাস!” (সূরা নিসা ১১৫ আয়াত)
তৃতীয়তঃ অনুকরণে রয়েছে অনুকৃত জাতির প্রতি আন্তরিক আকর্ষণ ও ভালোবাসা; যা ঈমানের পরিপন্থী। চতুর্থতঃ অনুকরণ হল এক ধরনের মানসিক পরাজয় স্বীকারের নামান্তর। কারণ, অনুকরণকারী তখনই অপরের অনুকরণ করে, যখন সে অপরকে বড় ও সবল এবং নিজেকে ছোট ও দুর্বল মনে করে। আর এতে রয়েছে মুমিনের জন্য লাঞ্ছনা ও অপমান।
মুসলিম জাতি হল পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি; যে জাতির অনুকরণ করে মানুষ ধন্য হয়ে থাকে। অতএব মুসলিম কেন বিজাতির অনুকরণ করবে? যে জাতির আদর্শ হলেন নবীকুলশিরোমণি সৃষ্টির সেরা মানুষ মুহাম্মাদ (সা.) সে জাতির অনুসরণীয় আদর্শ পৃথিবীতে আর কে আছে? কিন্তু তবুও সে জাতি বিজাতির গুণে মুগ্ধ, বিজাতীয় সভ্যতা নিয়ে গর্বিত, বিজাতীয় আচরণে অভ্যস্ত, এর কারণ কি?
এর কারণ প্রথমতঃ এই যে, এ জাতি নিজের সভ্যতা বিষয়ে অজ্ঞ, নিজের কৃষ্টি ও কালচার বিষয়ে উদাসীন, দ্বীন ও তার শিক্ষা থেকে বহু দূরে। তাই তো অপরের সৌন্দর্য তার চোখে ধরেছে। দ্বিতীয়তঃ জাতির দিকে তাকালে যেন গোটা জাতিকে কাঠের গড়া একটা পুতুল মনে হয়। এ জাতি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অন্যান্য জাতির তুলনায় বহু দুর্বল, মানসিক দিক দিয়ে আগ্রাসন ও পরাজয়ের শিকার, আর অস্ত্র-শস্ত্র ও যুদ্ধ-সামগ্রীর ব্যাপারেও বড় কমজোর। তাই বিজাতির প্রভুত্ব তার মনে-প্রাণে অনায়াসে বিস্তার লাভ করেছে এবং বিজাতীয় আচরণ প্রাধান্য পেয়েছে তার জীবনের পদে পদে।
পাশ্চাত্য-সভ্যতার ছোয়া লাগা মানুষ হীনম্মন্যতার শিকার হয়ে পশ্চিমা-বিশ্বের অনুকরণ করে। কাফেরদের বিভিন্নমুখী বিভব ও প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং পার্থিব উন্নয়ন দেখে মুসলিম। নিজেদেরকে হেয় ও তুচ্ছজ্ঞান করে বসেছে। ভেবেছে, দুনিয়ায় ওরা যখন এত উন্নত, তখন ওদের সভ্যতাই হল প্রকৃত সভ্যতা। সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণে এটাই ধরে নিয়েছে যে, ওরা যেটা করে, সেটাই উত্তম ও অনুসরণীয়। ওদের মত করতে পারলে তারাও ঐরূপ উন্নতির পরশমণি হাতে পেয়ে যাবে। মনে করেছে যে, ওদের ঐ ছন্নছাড়া, লাগামছাড়া, বাধনহারা যৌন-স্বাধীনতাপূর্ণ জীবনই হল ওদের উন্নতির মূল কারণ এবং প্রগতির মূল রহস্য।
তৃতীয়তঃ ইসলামকে দুনিয়ার বুক থেকে মুছে দেওয়ার জন্য বিশ্বজুড়ে পরিকল্পিত প্রচেষ্টার যে কুফল, তা বহু সংখ্যক মুসলিমদের মাঝে প্রকাশ পেয়েছে। অর্থ ও নারী পেয়ে মানুষ মনুষ্যত্ব ভুলে যায় এবং পশুত্ব বরণ করে পশুবৃত্তি চালিয়ে যেতে এতটুকুও দ্বিধা করে। মুর্তাদ্দ, মুনাফিক, ও ফাসিক মুসলিমদল সে জালে ফেঁসে কাফেরদেরকে সর্বতোভাবে সহায়তা করছে। অর্থ ও নারী তথা যৌন-স্বাধীনতার স্বর্গে বসে অপরকেও ঐ স্বর্গগামী রথে চড়ে বসতে আহ্বান জানাচ্ছে। মানবতার নামে পশুত্বের পূজারীরা পশুবৃত্তিকে সুশোভিত করে সমাজে উচ্ছলতার বন্যা আনয়ন করছে। আর তৃপ্তি সহকারে ধৃষ্টতা ও গর্বের সাথে ঐ অধোগতিকে প্রগতি’ বলে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। কাফেররা এ কথা খুব ভালোভাবে জানে যে, ইসলাম তাদের তথাকথিত ঐ প্রগতির পথে বাধ সাধবে।
তাই মুসলিমের জীবন থেকে ইসলামের আদর্শকে অথবা ইসলামের পরশ থেকে মুসলিম ও সারা বিশ্বকে পাকেপ্রকারে দুরে সরাতে না পারলে কোন শান্তি নেই, স্বস্তি নেই। তাই তো ঐ প্রচেষ্টায় ওদের এক দক্ষ নেতার দুরভিসন্ধিমূলক বক্তব্য হল, শারাবের পেয়ালা ও নারী মহামেডানদের মাঝে সেই কাজ করবে যা এক হাজার তোপেও করতে পারে না। অতএব ওদেরকে অর্থলোলুপতা ও যৌনচারিতার সাগরে ডুবিয়ে দাও। চরিত্রবিনাশী ইয়াহুদী প্রটোকল সংকল্পবদ্ধ যে, আমরা ওদেরকে নানা প্রকার মনমাতানো বিষয়-বস্তু ও খেলাধুলা দ্বারা বিভোর করে রাখব। ----আমাদের সবচেয়ে বড় কর্তব্য হল, নৈতিকতা ধ্বংস করা। যৌন-সম্পর্ক সূর্যের আলোতে প্রকাশ পাবে।
যাতে যুবকের মনে পবিত্রতা ও সচ্চরিত্রতা বলে কিছু অবশিষ্ট না থাকে এবং তার যেন প্রধান চিন্তা ও লক্ষ্য হয়, কেবল যৌনক্ষুধা নিবারণ করা। এইভাবে আমরা নৈতিকতা বিনাশ সাধনে সমর্থ হব।' (আলইফফাহ ৬২প দ্রঃ)
ওদের প্রধান লক্ষ্য হল, যাতে মুসলিম ইয়াহুদী, খ্রীষ্টান অথবা অন্য কোন ধর্মে ধর্মান্তরিত হোক। আর তা না হলেও অন্ততঃপক্ষে সে যেন ইসলাম থেকে বহু দুরে সরে যায়। দ্বীনী তা'লীমের ব্যাপারে তার যেন বিতৃষ্ণা জন্মে। যথাসম্ভব সে যেন পাশ্চাত্য সভ্যতাগ্রহণে উদ্বুদ্ধ হয়। মগজ ধোলাই করার উদ্দেশ্যে সে যেন পশ্চিমে পড়াশোনা বা চাকুরীর সুযোগ পায়।
ইসলামী সংস্কৃতি ধ্বংস করার সবচাইতে বড় উপায় হল যৌনতা এবং প্রধান মাধ্যম হল নারী-দেহ। অতএব প্রচারমাধ্যমগুলোর সিংহভাগ বিষয়বস্তু হোক নারী, প্রেম ও যৌনতা। নারীকে পুরুষের পাশাপাশি বসিয়ে দেওয়া হোক। বেশ্যালয়গুলো সরকারী অনুমোদন পাক।
বেশ্যাদেরকে ‘বেশ্যা’ না বলে ‘যৌনকর্মী’ (?) বলা হোক। বিভিন্ন নারী-আন্দোলনমূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হোক, সে সংগঠনগুলো নারী-স্বাধীনতার দাবী নিয়ে যৌন-স্বাধীনতার কাজ চালিয়ে যাক। চাকুরী দেওয়ার লোভ দেখিয়ে নারীকে বাইরে বের করে আনা হোক। সভ্য লেবাসের অন্তরাল থেকে বের করে এনে তাদেরকে ‘আলোকপ্রাপ্তা করা হোক। যাতে যুবকদল লালায়িত হয়ে নৈতিকতার বাধ ও বেড়া ভেঙ্গে যৌনতার তুফান নিয়ে আসে।
বিভিন্ন নাইট ক্লাব’ তৈরী হোক। অবাধ মিলামিশার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন বিলাসকেন্দ্র ও মিলনক্ষেত্র নির্মিত হোক। সুন্দরী-প্রতিযোগিতা এবং ফ্যাশন-ডিজাইনের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হোক। যুবক-যুবতীর সকল পার্থক্য দুরীভূত হোক। দূর হোক গতানুগতিক সামাজিক বিবাহ-প্ৰথা। নারীকে সুযোগ দেওয়া হোক তার ইচ্ছামত মডেল ও সংখ্যার জীবনসঙ্গী খুঁজে ও বেছে নিতে। গর্ভপাত আইনতঃ বৈধ করা হোক এবং তার সকল উপায়-উপকরণ সহজ ও সুলভ করা হোক; যাতে ব্যভিচার করতে যেন কেউ মান যাওয়া বা অযাচিত সন্তান নেওয়ার ভয় না করে।
ভাই যুবক! আর কত উল্লেখ করব? তুমি জ্ঞানী ছেলে, পৃথিবীর দিকে একবার জ্ঞানচক্ষু খুলে তাকিয়ে দেখ, তোমার পশ্চাতে কত শত্রু লেগে আছে, তা অনায়াসে বুঝতে পারবে। কিন্তু তখনও কি তুমি সচেতন হবে?
আজ যেন মহানবীর মহাবাণী বাস্তব রূপ নিতে চলেছে। তিনি বলেন, “অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথ অনুসরণ করবে বিঘত-বিঘত এবং হাত-হাত (সম) পরিমাণ। এমনকি তারা যদি গো-সাপের (সান্ডা)র গর্তে প্রবেশ করে, তাহলে তোমরাও তাদের পিছনে পিছনে যাবে। (এবং তাদের কেউ যদি রাস্তার উপর প্রকাশ্যে সঙ্গম করে, তাহলে তোমরাও তা করবে!)” সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি ইয়াহুদ ও নাসারার অনুকরণ করার কথা বলছেন? তিনি বললেন, “তবে আবার কার?” (বুখারী, মুসলিম ২৬৬৯, হাকেম, আহমাদ, সহীহুল জামে ৫০৬৭ নং) সাহাবী হুযাইফা বিন ইয়ামান বলেন, 'তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথ অবলম্বন করবে জুতার মাপের মত (সম্পূর্ণভাবে)। তোমরা তাদের পথে চলতে ভুল করবে এবং তারাও তোমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে চলতে ভুল করবে না। এমন কি তাদের কেউ যদি শুকনো অথবা নরম পায়খানা খায়, তাহলে তোমরাও (তাদের অনুকরণে) তা খেতে লাগবে!' (আল-বিদাউ অন-নাহয়ু আনহা, ইবনে অযযাহ ৭ ১পৃঃ)।
প্রিয় নবী (সা.) বলেন, “পূর্ববর্তী জাতির সকল আচরণ এই উম্মত গ্রহণ করে নেবে।” (সহীহুল জামে ৭২১৯ নং) কিন্তু তিনি মুসলিম জাতিকে সতর্ক করে বলেন, “সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি আমাদেরকে ছেড়ে অন্য কারো সাদৃশ্য অবলম্বন করে। তোমরা ইয়াহুদীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না, আর খ্রীষ্টানদেরও সাদৃশ্য অবলম্বন করো না।” (তিরমিযী, সহীহুল জামে ৫৪৩৪নং) যে ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টান তথা পশ্চিমা বিশ্বকে আমরা উন্নত-বিশ্ব বলি, যাদের হাতে আজ বিশ্বের নেতৃত্ব-ডোের রয়েছে, যাদেরকে নিয়ে ও যাদের মত হতে পেরে অনেকে গর্ববোধ করে থাকে, তাদের সেই বিশ্বের মানুষকে চরম যৌন ও জরায়ু-স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, আইন করে ব্যভিচার, সমকামিতা ও বেশ্যাবৃত্তিকে বৈধ করা হয়েছে। যে বিশ্বে পয়দা হয় লাখোলাখো জারজ সন্তান, হত্যা করা হয় লাখো-লাখো জ্বণ। যেখানে লাখো-লাখো রয়েছে কুমারী মাতা। যৌবন আসার পূর্বেই বা প্রারম্ভেই যেখানে নারীর মূলধন সতীত্ব ও পবিত্রতাকে বিলিয়ে দেওয়া হয়। যেখানে পশুর মত পথে-ঘাটে চোখের সামনে মানুষের যৌন-মিলন। ঘটতে দেখা যায়। যেখানে অসভ্য যৌন-স্বাধীনতাই হল প্রকৃত সভ্যতা।
যে পাশ্চাত্য ভোগবাদী পরিবেশের অবস্থা এই যে, ডানা বের হলেই বাচ্চা (ছেলে-মেয়ে) উড়ে যায় বাসা ছেড়ে, মা-বাপ ছেড়ে। বুড়ো-বুড়ী একাকীই মরে বাড়িতে। কেউ বা বাস করে কুকুর বা বিড়াল নিয়ে। পরিশেষে অনেকে বাড়ি-ঘর, টাকা-পয়সা উইল করে যায় কুকুর বা বিড়ালের নামে! মালিক হয় কুকুর বা বিড়ালের খাদেমরা। অবিশ্বাস্য মনে হলেও বাস্তব এ কথা।
যে বিশ্বের সংসারে আত্মীয়তার বেহেস্তী পরিবেশ বিলীনা বংশ-পরিচয়ের সূত্র নিখোঁজ। নেই স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র বন্ধন। নেই পিতা-মাতার সহিত শালীনতাপূর্ণ আচরণ এবং আমরণ সহাবস্থান। হৃদয়ে-হৃদয়ে যৌন ছাড়া পবিত্র প্রেমের যোগসুত্র বিরল। যেখানে পবিত্রতাকামীদেরকে রক্ষণশীল ও সেকেলে এবং যৌনতাকামী অশ্লীল মানুষদেরকে সংস্কারপন্থী ও প্রগতিশীল বলে আখ্যায়ন করা হয়। যেখানে পর্দা ও সতীত্ব হল উপহসনীয়।
এই হইল পাশ্চাত্য সমাজের সামান্যতম প্রতিচ্ছবি। এই হইল ধর্মহীন সমাজ ও বিকৃত যৌনাচারের অবাধ মিলামিশার ফসল। নৈতিক মূল্যবোধের এহেন অবস্থায় উগ্র যৌনস্বাধীনতাকামীদের কাছে Wife হইতেছে Wonderful instrument for enjoyments অর্থাৎ, উপভোগের এক বিস্ময়কর যন্ত্রবিশেষ। ফলে আজ তাহাদের প্রাসাদ আছে, কিন্তু গৃহ নাই। জন্মদাতা আছে, কিন্তু পিতা নাই। পরিধান আছে, কিন্তু আব্র নাই। বুদ্ধি আছে, কিন্তু বিবেক নাই। মানুষের আকৃতি আছে, কিন্তু মনুষ্যত্ব নাই।' (গণতন্ত্র কি একটি শিরকী ও কুফরী মতবাদ? মাজহারুল আনোয়ার ২২পৃঃ দ্রঃ) ।
এখানেই শেষ নয়, কুমারী মায়ের হারাম সন্তানরা আবার বাপের পরিচয় না থাকার ফলে গর্ববোধও করে থাকে। কারণ, তাদের মত যীশু খ্রীষ্টেরও পিতা পরিচিত ছিল না তাই!! তবুও ঐ সমাজকে নিয়েই আমরা গর্ব করি। তাদের চরিত্রেই আমরা মুগ্ধ হই। বলা বাহুল্য, ঐ সমাজেরই জীবাণু আমাদের দেশেরও তথাকথিত বহু বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ ও কবিসাহিত্যিকদের মাঝে সংক্রমণ করেছে। বরং বহুলাংশে তা আমদানী করেই আনা হয়েছে। পাশ্চাত্যের শিক্ষা-পদ্ধতি, রেডিও-টিভি, পত্র-পত্রিকা প্রভৃতিতেও প্রভাবান্বিত হয়ে সকলের ক্ষেত্রে যৌনসুখ ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান করে যে যৌন-বিপ্লব এ শ্রেণীর মানুষেরা আনতে চায়, তা তাদের ছেলে-মেয়েদের লেবাসে-পোশাকে, আচার ও আচরণে প্রকাশ পায়। যার চরম সহযোগিতা করে দেশে নির্মিত ও প্রদর্শিত বিভিন্ন ফিল্ম। যাতে পশ্চিমী অবাধ যৌন-সংসর্গ ও অবৈধ প্রেম ছাড়া অন্য কোন বিষয় স্থান পায় না। আর তাতে উদ্বুদ্ধ করে পশ্চিমের ঐ ইন্দ্রিয়পরায়ণ ভোগবাদীরা। ওরা এদেরকে সংস্কারপন্থী বলে প্রশংসা করে! কিন্তু আসলে যে ওরা অপসংস্কার ও বিনাশপন্থী তা হয়তো বুঝেও বুঝে না।
যে দেশের সুখ ও সংস্কৃতি দেখে আমরা অবাক হই, তা কি আসলেই সংস্কৃতি? যুগ পাল্টে গেছে, পাল্টে গেছে মানুষের পরিবেশ ও ধ্যান-ধারণা। যুগের চাহিদা অনুযায়ী অপসংস্কৃতি সংস্কৃতির আকার ধারণ করেছে। কিন্তু যুগ কোন চিড়িয়ার নাম নয়। যুগ সৃষ্টি করে মানুষ। মানুষ যেমন হবে, ঠিক তেমনি হবে যুগ। মানুষ যদি নোংরা অপসংস্কৃতির চাহিদা সৃষ্টি না করে, তাহলে যুগের চাহিদার কোন প্রশ্নই ওঠে না। মানুষের মনে চিত্তজ্বালা সৃষ্টি হয়েছে। ভোগের নেশা তীব্র থেকে তীব্র হওয়ার কারণে। যেখানে ভোগের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, সেখানে চিত্তবিনোদনের উপায়-উপকরণের সীমাই বা কি করে থাকে? ভোগের নেশা যত বেড়ে চলে, ততই বেড়ে চলে আরো ভোগের আকাঙ্খা। উদ্ভব হয় নতুন নতুন বিনোদনের কেন্দ্র, উপাদান ও যন্ত্র।
যারা যত বেশী চিত্তজ্বালায় জ্বলে, তারা তত বেশী চিত্তবিনোদনের প্রয়োজন বোধ করে থাকে। তাই বিনোদনের উপাদান-উপকরণ তালাশ করে এবং বিনোদনের নতুন নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। অভাব যেখানে যত তীব্র, প্রাপ্তির হাহাকারও তত বেশী। পশ্চিমা সমাজে সেই চিত্তজ্বালা প্রায় প্রতি জনে, প্রতি ঘরে, প্রতি পরিবারে প্রবেশ করে অগ্নিজ্বালার দাবদাহ সৃষ্টি করেছে। তাই তো এত অস্থিরতা। এই অস্থিরতা দুর করার জন্যই চিত্তবিনোদনের এত বৈচিত্র সৃষ্টি করা হয়। মাজা-ঘষা, পালিশ আর বার্ণিশ করা তাদের সমাজের বহিদৃশ্য নয়ন জুড়ায়; কিন্তু মাকাল ফলের মত অন্তর বিস্বাদ। যে সমাজে আমাদের মত সামাজিকতা নেই। স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, চাচা-চাচী, দাদা-দাদী নিয়ে সেই সমাজে কোন পরিবার গড়ে ওঠে না। স্বনির্ভরতার পাখনা উঠলেই কে কোথায় উড়ে যায় কেউ কারো খবর রাখে না। যেখানে দুই বিয়াই-এ কখনো খোশ আলাপ হয় না। যে সমাজের কোন মা পিঠা তৈরী করে মেয়ের বাড়ি পাঠান না। ----- যেখানে লায়েক সন্তানেরা বুড়ো মা-বাবাকে 'ওল্ড এজ হোম’ নামক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বন্দি খোয়াড়ে’ পাঠিয়ে দেয় অথবা নিজ বাড়িতে বুড়া-বুড়ী সরকারী চেরিটি বা লিল্লাহ খেয়ে নিঃসঙ্গ অবস্থায় ধুকেধুকে মরেন। মৃত্যুর সময় স্বজনদের কেউ পাশে থাকে না।