যার ফলে লোহার কুঠারের কাঠ কাটার ক্ষমতা যদিও ছিলনা, তবুও তার পশ্চাতে লাগানো ঐ কাঠেরই জাত-ভাই বঁট’ সেজে বড় ঠাটবাটের সাথে চোখ বুজে আপন স্বজাতি নিধন করে চলেছে। আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও একক মাবুদ আমাদেরকে সতর্ক করে বলেন, “নিশ্চয় কাফেরদল তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা নিসা ১০১ আয়াত) “তুমি যখন তাদের দিকে তাকাও, তখন ওদের চেহারা তোমার নিকট প্রীতিকর মনে হয় এবং যখন ওরা কথা বলে, তখন আগ্রহভরে তুমি ওদের কথা শ্রবণ করে থাক। যদিও ওরা দেওয়ালে ঠেকানো কাষ্টসদৃশ। প্রত্যেক শোরগোলকে ওরা নিজেদের বিরুদ্ধে মনে করে। ওরাই শত্রু, অতএব ওদের সম্পর্কে সতর্ক হও। আল্লাহ ওদেরকে ধ্বংস করুন। ওরা বিভ্রান্ত হয়ে কোথায় চলেছে?” (সূরা মুনাফিকূন ৪ আয়াত)।
“তোমাদেরকে কাবু করতে সক্ষম হলে ওরা তোমাদের শত্রু হবে এবং হাত ও জিভ দ্বারা তোমাদের অনিষ্ট সাধন করবে, আর চাইবে যে, কোনরূপে তোমরাও কাফের হয়ে যাও।” (সূরা মুমতাহিনাহ ২ আয়াত)
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না; তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ত্রুটি করে না, তোমরা কষ্ট্রে থাক -তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতা-প্রসূত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বের হয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে আছে, তা আরো জঘন্য। তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করে দেওয়া হল, যদি তোমরা অনুধাবন করতে সক্ষম হও। দেখ! তোমরাই তাদেরকে ভালোবাস, কিন্তু তারা তোমাদেরকে মোটেও ভালোবাসে না, আর তোমরা সমস্ত (ঐশী) কিতাবে বিশ্বাস রাখ। (অথচ তারা তা রাখে না।)
তারা যখন তোমাদের সাথে এসে মিশে তখন বলে, 'আমরা ঈমান এনেছি। পক্ষান্তরে তারা যখন নির্জনে যায় তখন তোমাদের প্রতি রোষবশতঃ আঙ্গুল কামড়াতে থাকে। বল, তোমরা আক্রোশে মরতে থাক। আল্লাহ মনের কথা ভালোভাবেই জানেন। তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয় তাহলে তাদের মনঃকষ্ট হয়, আর যদি তোমাদের কোন অমঙ্গল হয়, তাহলে তারা আনন্দবোধ করে। অবশ্য যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং পরহেযগার হও, তবে তাদের চক্রান্ত তোমাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। তারা যা কিছু করে, সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে।” (সূরা আলি ইমরান ১১৮- ১২০ আয়াত)
“ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানগণ কখনই তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না তুমি তাদের মতবাদ মেনে নিয়েছ। তুমি বল, আল্লাহর প্রদর্শিত পথই প্রকৃত সুপথ। আর তোমার নিকট যে জ্ঞান উপনীত হয়েছে তার পরও যদি তুমি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহর কবল থেকে রক্ষা পেতে তোমার কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী নেই।” (সূরা বাক্বারাহ ১২০)।
“ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানদের অনেকেই তাদের নিকট সত্য সুপ্রকাশিত হওয়ার পরেও তাদের মনের প্রতিহিংসাবশতঃ চায় যে, মুমিন হওয়ার পর তোমাদেরকে কোন রকম কাফের বানিয়ে দেয়। (ঐ ১০৯ আয়াত)
“ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানদের একদল তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করার আশা পোষণ করে। অথচ প্রকৃত প্রস্তাবে তারা কেবল নিজেদেরকেই ভ্রষ্ট করে, কিন্তু তারা তা বুঝতে পারে না।” (সূরা আ-লি ইমরান ৬৯)
“তাদের মনোবাসনা এই যে, তারা যেমন কাফের আছে, তেমনি তোমরাও কাফের হয়ে যাও; যাতে তোমরা এবং তারা সকলে একাকার হয়ে যাও।” (সূরা নিসা ৮৯ আয়াত)
“বস্তুতঃ তারা তো সর্বদাই তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকবে। যাতে করে তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে -যদি তা সম্ভব হয়। তোমাদের মধ্যে যারা নিজ দ্বীন থেকে ফিরে যাবে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর তারাই হবে দোযখবাসী। তাতে তারা চিরকাল বাস করবে।” (সূরা বাক্বারাহ ২১৭ আয়াত)
অতএব হে মুসলিম যুবকদল! “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানদের কোন গোষ্ঠীর কথা মেনে নাও, তাহলে ঈমান আনার পর তারা তোমাদিগকে কাফেরে পরিণত করে ফেলবে।” (সূরা আ-লি ইমরান ১০০ আয়াত)
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি কাফেরদের কথা শোন, তাহলে ওরা তোমাদেরকে পেছনে ফিরিয়ে দেবে এবং তাতে তোমরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়বে।” (ঐ ১৪৯ আয়াত) হে ভাই যুবক! জেনে রেখো, “ওরা দোযখের দিকে আহ্বান করে। আর আল্লাহ স্বীয় ইচ্ছায় ক্ষমা ও বেহেস্তের দিকে আহ্বান করেন এবং মানবমন্ডলীর জন্য স্বীয় নিদর্শন বর্ণনা করেন, যেন তারা তা হতে শিক্ষা গ্রহণ করে। (সূরা বাক্বারাহ ২২১ আয়াত)
আর মনে রেখো যে, “যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের অভিভাবক, তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কাফের তাদের অভিভাবক হল তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।” (ঐ ২৫৭ আয়াত)
হ্যাঁ, আর বিজাতীয় প্রচারমাধ্যমগুলোতে যা দেখ বা শোন অথবা পড়, তাই বিশ্বাস করে তুমি নিজের বা স্বজাতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠো না। কারণ, বুঝতেই তো পারছ, তারা কোনদিন ইসলামের স্বার্থে কিছুও গাইবে না। মহান আল্লাহর সতর্কবাণী সর্বদা মনের মণিকোঠায় তুলে রেখো, তিনি বলে, “হে মুমিনগণ! যদি কোন ফাসেক (পাপাচারী) ব্যক্তি। তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে। যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।” (সূরা হুজুরাত ৬ আয়াত)
হ্যাঁ, ফাসেকের সংবাদ হলে তা পরীক্ষা করে না দেখা পর্যন্ত বিশ্বাস করো না। সুতরাং বলাই বাহুল্য যে, কোন কাফের বা ইসলাম-বিদ্বেষী কোন সংবাদ পরিবেশন করলে তা নিশ্চয়ই অবতীর্ণ ‘অহী’র মত বিশ্বাস করতে পার না।
হে মুসলিম যুবকবৃন্দ! “শয়তান তোমাদের শত্রু, অতএব তাকে শত্রুরূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে আহ্বান করে, যাতে তারা জাহান্নামী হয়।” (সূরা ফাত্বির ৬ আয়াত)
“আর আল্লাহ তোমাদিগকে শান্তিনিকেতন (বেহেস্তের) দিকে আহ্বান করেন, যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।” (সূরা ইউনুস ২৫ আয়াত) সুতরাং দুই দিকে এই দুই শ্রেণীর আহ্বান। এদিকে আহ্বান হল, মানুষের মত সুশ্রী ও সভ্য জীবন গড়ার প্রতি। পক্ষান্তরে ওদিকের আহ্বান হল, পশুর মত স্বেচ্ছারিতার জীবন গড়ার প্রতি। এবারে জীবনের মূল্যায়ন ও নিজের কদর নিজেই করা জ্ঞানীর জন্য অবশ্য-কর্তব্য।
হে যুবক বন্ধু! ঈমানের প্রদীপ্ত জ্যোতি তোমার হৃদয়কে জ্যোতির্ময় করে রাখলে বিজাতীয় মিডিয়া তা নির্বাপিত করার চেষ্টা করছে বুঝতে পেরে তোমার মন ব্যথায় টনটন করে উঠবে। সে সময় প্রয়োজন হবে ধৈর্যের। অতএব প্রচার-যুদ্ধের ঐ বাক-তরবারির আঘাতে ধরাশায়ী হয়ে অধৈর্যের সাথে ঈমানত্যাগী হয়ে যেও না। “অবশ্যই ধন-সম্পদে তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হবে এবং অবশ্যই শুনবে পূর্ববর্তী আহলে-কিতাব (ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টান) ও মুশরিক (পৌত্তলিকদের নিকট থেকে বহু অশোভন উক্তি। কিন্তু যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং পরহেযগারী অবলম্বন কর, তবে তা হবে একান্ত সৎসাহসের ব্যাপার।” (সূরা আ-লি ইমরান ১৮৬)
“আর তাদের কথায় দুঃখ নিও না। আসলে সমস্ত ক্ষমতা আল্লাহর। তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা।” (সূরা ইউনুস ৬৫ আয়াত)
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে সারা অমুসলিম সম্প্রদায় ঐক্যবদ্ধ। দুনিয়ার সকল জাতি যেন কেবল মুসলিম জাতিকেই কোণঠাসা করে রাখতে চায়। সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী, ধর্মান্ধ গোড়া, মৌলবাদী, মোল্লাতন্ত্র প্রভৃতি বলে বদনাম দিয়ে, ভৌগলিকভাবে তাদের দেশ জবরদখল করে, মানসিকভাবে আগ্রাসন সৃষ্টি করে, তাদের মৌলিক অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করে; বরং তাদের যথাসর্বস্ব লুটে নিয়ে তাদেরকে সর্বহারা করতে চায় সকলেই।
এক ভবিষ্যৎ-বাণীতে এ কথার কারণ উল্লেখ করে মহানবী (সা.) বলেন যে, “অদুর ভবিষ্যতে চতুর্দিকের সকল জাতি পরস্পরকে আহ্বান করে তোমাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে যেমন ভোজনকারীরা ভোজনপাত্রের উপর একত্রিত হয়ে এক সাথে মিলে ভোজন করে থাকে। কোন এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, তখন কি আমরা সংখ্যায় কম থাকব, হে আল্লাহর রসূল? তিনি বললেন, “না, কিন্তু তোমরা হবে স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মত। তোমাদের শত্রুদের হৃদয় থেকে তোমাদের প্রতি ত্রাস ও ভীতি তুলে নেওয়া হবে এবং তোমাদের হৃদয়ে দুর্বলতা প্রক্ষিপ্ত হবে। আর সে দুর্বলতা হল, দুনিয়াকে ভালোবাসা ও মরণকে অপছন্দ করা।” (আহমাদ, আবুদাউদ, সহীহুল জামে’ ৮১৮৩ নং)
পক্ষান্তরে এ কথায় কোন সন্দেহ নেই যে, এইভাবে মনঃকষ্ট পাওয়া এক বড় মসীবত। তবে সে মসীবত কেবল সেই মুসলিমের জন্য, যে তার নবী মা কে ভালোবাসে। আর যে তার নবী (সা.)-কে ভালোবাসে না, তার তো কোন ইসলাম-বিদ্বেষী প্রচার-প্রোপাগান্ডায় কোন প্রকার
মাথাব্যথা হওয়ার কথা নয়। মহানবী (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসে সে ব্যক্তির নিকট মসীবত গন্তব্যস্থলের দিকে ধাবমান স্রোতের চেয়েও বেশী দ্রুতবেগে উপস্থিত হয়ে থাকে।” (সহীহুল জামে ১৫৯২ নং)
প্রত্যেক জাতির মেরুদন্ড হল তার যুব-সমাজ। যুবকের মাঝে আছে সুউচ্চ আকাঙ্খা, দৃঢ় মনোবল এবং দৈহিক শক্তিও। যুবকের মাঝে আছে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধতা, আছে কোন কিছু মানা বা না মানার উচ্চ প্রবণতা। নৈতিকতার শত্রুরা তা ভালোভাবে জেনেই যুবকদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য ঐ সকল প্রচারমাধ্যমগুলোতে এমন টোপ ব্যবহার করছে, যা যুবকদল
গিলে পারে না। অভিনেতা-অভিনেত্রী, শিল্পী, খেলোয়াড় প্রভৃতির প্রেম সৃষ্টি করে এবং পরম নৈতিকতাকে মৌলবাদ’, ‘রক্ষণশীলতা’ প্রভৃতি বদনাম দিয়ে যুবকদের মন লুটেছে ও তাদের ঈমান কেড়েছে ওরা। ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমেই তারা সুন্দরকে ঘৃণ্য এবং ঘৃণ্যকে সুন্দর নাম দিয়ে সুশোভিত করে ঘৃণ্যদলকেই সাবাসী দিয়ে পৃথিবীর নেতৃত্ব তুলে দিয়েছে ও দিতে চলেছে তাদের হাতে!
সুতরাং মুসলিম যুবকের উচিত, চারার গন্ধে ছুটে গিয়ে চটকদার টোপ না গিলা। কারণ, ঐ। টোপের আড়ালে আছে বড় ধারালো বঁড়শী; যা একবার মুখে গেঁথে গেলে টেনে ছাড়ানো হবে বড় মুশকিল কাজ।
মুসলিমের যুবকের উচিত, তাদের চরিত্র ও জীবন-কাহিনীর খবর হৃদয়-মন দিয়ে শোনা ও পড়া, যাদের খবরে রয়েছে তার পারলৌকিক মঙ্গল। আজ পৃথিবীতে যে যাকে ভালোবাসবে, কাল কিয়ামতে তার তারই সাথে হাশর হবে। সুতরাং নবী ও সাহাবাকে ভালোবাসলে তাদের সাথে, নচেৎ কোন শিল্পীকে ভালোবাসলে তারই সাথে কিয়ামতে অবস্থান করবে। কোন ফাসেক ও কাফেরকে নিয়ে মুসলিমের গর্ব করা উচিত নয়। উচিত নয় তাদের অনুকরণ, অনুসরণ ও সাদৃশ্য অবলম্বন করা। কারণ, “যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে তাদেরই একজন।” (আবু দাউদ, সহীহুল জামে’ ৬১৪৯ নং)
ভাই ইসলাম-দরদী যুবক! তুফান দেখে ভয়ের কারণ নেই। কারণ তুমিও যে মহাবীর। তোমার আছে ইতিহাস ও অতীত। তোমার আছে ভবিষ্যত ও বিজয়। সুতরাং যে তুফানে তুমি ভেসে যাওয়ার ভয় করছ সে তুফানের চেয়ে আরো বড় তুফান সৃষ্টি কর। তবে মন্দের মোকাবেলায় মন্দ দিয়ে এবং পেশাব দিয়ে পায়খানা ধোয়ার মাধ্যমে কারো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করো না। নচেৎ বাত ভালো করতে গিয়ে কুষ্ঠরোগ সৃষ্টি করে কি লাভ? বরং তোমার মাঝে যে উৎকৃষ্ট শক্তি নিহিত আছে তা ব্যয় কর। শক্তিপ্রার্থীকে শক্তি যোগাও, দাও উৎসাহ ও মনোবল। দুর্নিবার ঐ মহাপ্লাবনের সম্মুখে তুমিও নির্বিচল পর্বতসম প্রাচীর খাড়া করে। দাও। প্রতিহত হোক প্লাবনের সে গতি। “তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যথাসাথ্য শক্তি প্রস্তুত কর, প্রস্তুত রাখ অশ্বদল। তার দ্বারা আল্লাহর শত্রুকুলকে ভীতি-প্রদর্শন ও সন্ত্রস্ত কর, তাছাড়া অন্যদেরকেও যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ তাদেরকে জানেন।” (সূৱ আনফাল ৬০)
আর ঘরের চেঁকি কুমীর’ সাংবাদিক ও উপস্থাপকদের উদ্দেশ্যে মহানবী (সা.) এর একটি মহাবাণীর নজরানা পেশ করি। তিনি জিবরীল মারফৎ বর্ণনা করে বলেন, “মধ্যজগতে এক শ্রেণীর লোক নিজ নিজ কশা চিরে নিজেদেরকে শাস্তি দিচ্ছে। আর ঐ শ্রেণীর অপরাধী হল তারা, যারা ছিল এমন মিথ্যাবাদী, যাদের মিথ্যা দিকচক্রবালে পৌছে যেত। তাদের এমন শাস্তি কিয়ামত পর্যন্ত হতে থাকবে।” (বুখারী ১৩৮৬নং) পরন্তু কিয়ামত হওয়ার পর তাদের যে কি শাস্তি হবে তা আল্লাহই জানেন।
ভিডিও, টিভি, ফিল্ম প্রভৃতির ডাইরেক্টর, প্রযোজক, তারকা, হলের মালিক, প্রচারক, নোংরা পত্র-পত্রিকার লেখক, প্রকাশক, এজেন্ট, বিক্রেতা ও পাঠক প্রভৃতি যারা মানবতা ও নারী স্বাধীনতার নামে তাদের প্রচারমাধ্যমগুলোকে উদ্ধৃঙ্খলতা ও যৌনচারিতা প্রচার কাজে ব্যবহার করছে এবং এই চাচ্ছে যে, চরিত্রবাণ মুসলিম পরিবার ও পরিবেশেও যৌনতা, অশ্লীলতা ও নোংরামী প্রবেশ করুক, তাদের উদ্দেশ্যে মহান প্রতিপালকের একটি সতর্কবাণী ঘোষিত রয়েছে, যা পাঠ করে অন্ততঃপক্ষে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী মুসলিমকে সাবধান হওয়া উচিত। তিনি বলেন, “যারা কামনা ও পছন্দ করে যে, ঈমানদার (মুসলিমদের) মাঝে। অশ্লীলতা (ও ব্যভিচার) প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্য রয়েছে ইহকাল ও পরকালে মর্মন্তুদ শাস্তি।” (সরা নর ১৯ আয়াত)
আর মানবমন্ডলী তথা মুসলিম জাতির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “হে মানুষ! তোমরা পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তুসামগ্রী ভক্ষণ কর। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তো তোমাদেরকে এ নির্দেশই দেবে যে, তোমরা অন্যায় ও অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়ে পড় এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন সব কথা বল, যা তোমরা জান না।” (সূরা বাক্বারাহ ১৬৮ ১৬৯ আয়াত)
এমন সাংবাদিকদল রয়েছে, যারা কোন নৈতিকতা বা আদর্শভিত্তিক খবর প্রচার করে না। অথচ যৌনতা, চরিত্রহীনতা প্রভৃতির খবর শোভনীয় ও লোভনীয় ভঙ্গিমাতে প্রচার করে থাকে; যারা মুসলিম হয়েও প্রভাবশালী অমুসলিম কোন সম্প্রদায়ের নিকট সম্মান বা অর্থ লাভের আশায় ইসলাম ধংসের পশ্চাতে উঠে-পড়ে গর্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছে, যারা চায় মুসলিমরাও কাফেরদের মত কুফরীতে একাকার হয়ে যাক, যারা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিষাক্ত কলম ও লাগামহীন জিহ্বা ব্যবহার করে, তারা যে মুসলিমদের কাছে মানবরূপী শয়তান তাতে কোন সন্দেহ নেই। এমন শয়তানদল থেকেও পানাহ চাওয়া মুসলিমের কর্তব্য। মহান আল্লাহ বলেন, “বল আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের প্রতিপালকের, মানুষের অধিপতির, মানুষের উপাস্যের কাছে, তার অনিষ্ট হতে, যে কুমন্ত্রণা দিয়ে আত্মগোপন করে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, (সে কুমন্ত্রণাদাতা) জ্বিনের মধ্য থেকে (হোক) অথবা মানুষের মধ্য থেকে।” (সূরা নাস)।