মু‘জেযা সমূহ মূলতঃ নবুঅতের প্রমাণ স্বরূপ। যা দু’ভাগে বিভক্ত। (১) আধ্যাত্মিক (معنوية) এবং (২) বাহ্যিক (حسية)। আধ্যাত্মিক বিষয়গুলির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মু‘জেযা হ’ল তাঁর উপরে কুরআন নাযিল হওয়া। অতঃপর তাঁর মাধ্যমে কুরআনের ব্যাখ্যা হিসাবে হাদীছ বর্ণিত হওয়া।[1] অন্যান্য মু‘জেযা সমূহ তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথে বিলুপ্ত হ’লেও কুরআন ও হাদীছ ক্বিয়ামত পর্যন্ত জীবন্ত মু‘জেযা হিসাবে অব্যাহত থাকবে। কুরআনের মত অনুরূপ একটি গ্রন্থ প্রণয়নের জন্য বা অনুরূপ একটি আয়াত আনয়নের জন্য জিন ও ইনসানের অবিশ্বাসী সমাজের প্রতি মক্কায় পাঁচবার ও মদীনায় একবার চ্যালেঞ্জ করে আয়াতসমূহ নাযিল হয়।[2] কিন্তু কেউ সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেনি। বস্ত্ততঃ কুরআনের প্রতিটি বাক্য, শব্দ ও বর্ণ আল্লাহ কর্তৃক সুরক্ষিত। ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা নিরাপদ থাকবে।
আধ্যাত্মিক মু‘জেযার দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ বিষয়টি হ’ল রাসূল (ছাঃ)-এর জীবন ও চরিত্র। যা অন্য যেকোন মানুষ থেকে অনন্য এবং সকল মানুষের জন্য অনুকরণীয়।[3]
তাঁর নবুঅতের বাহ্যিক প্রমাণ সমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম হ’ল, চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া এবং মে‘রাজের ঘটনা।[4] এছাড়াও অন্যতম আসমানী প্রমাণ হ’ল, তাঁর দো‘আ করার সাথে সাথে মদীনা শহরে বৃষ্টি বর্ষিত হওয়া। অতঃপর লোকদের দাবীর প্রেক্ষিতে পুনরায় দো‘আ করার সাথে সাথে বৃষ্টি বন্ধ হওয়া।[5]
অতঃপর ইহজাগতিক মু‘জেযা সমূহের মধ্যে কিছু রয়েছে (ক) জড় জগতের সাথে সম্পর্কিত। যেমন পানির পাত্রে হাত দেওয়ার মাধ্যমে পানির প্রবাহ নির্গত হওয়া। খাদ্যের তাসবীহ পাঠ করা। বৃক্ষ হেটে আসা ও ছায়া করা। গাছ ও পাথর সিজদা করা। খাদ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হওয়া। মরা খেজুর গাছের খুঁটি ক্রন্দন করা ইত্যাদি।
অতঃপর (খ) প্রাণী জগতের সাথে সম্পর্কিত মু‘জেযা সমূহের মধ্যে রয়েছে বাচ্চা বকরীর পালানে দুধ আসা, নেকড়ের কথা বলা, উট কর্তৃক অভিযোগ পেশ করা ও সিজদা করা ইত্যাদি। এমনকি তাঁর ভক্ত গোলামের প্রতিও আল্লাহর হুকুমে ‘কারামত’ প্রকাশিত হয়েছে। যেমন তাঁর মৃত্যু পরবর্তীকালে রোমকদের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধে তাঁর মুক্তদাস সাফীনাহ বন্দী হ’লে সেখান থেকে পালিয়ে এসে অথবা যেকোন কারণে মূল বাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হ’লে নিজের সেনাবাহিনীর সন্ধানে তিনি গভীর জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলেন। এমন সময় একটি বাঘ তাঁর দিকে ধেয়ে আসে। তখন তিনি বলেন, হে আবুল হারেছ! ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর গোলাম। আমি এই এই সমস্যায় আছি’। তিনি বলেন, একথা শুনে বাঘটি মাথা নীচু করল এবং আমার পাশে এসে গা ঘেঁষতে লাগল। অতঃপর সে আমাকে পথ দেখিয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে সেনাবাহিনীর নিকট পৌঁছে দিল। বিদায়ের সময় সে হামহুম শব্দের মাধ্যমে আমাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল’।[6] যুগে যুগে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসারী প্রকৃত আল্লাহভীরু মুমিনগণকে আল্লাহ এভাবে হেফাযত করবেন ও সম্মানিত করবেন ইনশাআল্লাহ।
[2]. মক্কায় পাঁচবার হ’ল, সূরা ইউনুস ১০/৩৮; হূদ ১১/১৩; ইসরা ১৭/৮৮; ক্বাছাছ ২৮/৪৯; তূর ৫২/৩৪। মদীনায় একবার হ’ল, সূরা বাক্বারাহ ২/২৩।
[3]. আল্লাহ বলেন, إِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ ‘নিশ্চয় তুমি মহান চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত’ (ক্বলম ৬৮/৪)। তিনি আরও বলেন,لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيُ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসকে কামনা করে ও অধিকহারে আল্লাহকে স্মরণ করে’ (আহযাব ৩৩/২১)।
[4]. বুখারী হা/৩৮৬৮-৬৯; মুসলিম হা/২৮০০; মিশকাত হা/৫৮৫৪-৫৫; বুখারী হা/৩৮৮৭; মুসলিম হা/১৬২; মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৬।
[5]. বুখারী হা/১০১৩; মুসলিম হা/৮৯৭ (৯); মিশকাত হা/৫৯০২।
[6]. হাকেম হা/৪২৩৫, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৫৯৪৯ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, ‘কারামত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৮।