নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি

কিন্দার নেতা আশ‘আছ বিন ক্বায়েস ৬০ অথবা ৮০ জনের একটি দল নিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে আসেন। অতঃপর তারা মসজিদে প্রবেশ করেন। এমতাবস্থায় তাদের পোষাকে রেশমের ঝালর ছিল। রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে বললেন, তোমরা কি ইসলাম কবুল করোনি? তারা বলল, হ্যাঁ। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তাহ’লে তোমাদের পোষাকে রেশমী ঝালর কেন? এগুলি ছিঁড়ে ফেল। অতঃপর তারা এগুলি ছিঁড়ে দূরে নিক্ষেপ করল। আশ‘আছ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা ‘জঙ্গলের মিরার বৃক্ষ ভক্ষণকারী’ হারেছ বিন ‘আমর বিন কিন্দার বংশধর। আর আপনি ‘মিরার বৃক্ষ ভক্ষণকারীদের’ সন্তান’(نَحْنُ بَنُو آكِلِ الْمِرَارِ وَأَنْتَ ابْنُ آكِلِ الْمِرَارِ)। একথা শুনে রাসূল (ছাঃ) হেসে ফেললেন’... (ইবনু হিশাম ২/৫৮৫)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আশ‘আছ বলেন, কওমের লোকেরা আমাকে তাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলে মনে করে। ফলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল!أَلَسْتُمْ مِنَّا؟ قَالَ لاَ، نَحْنُ بَنُو النَّضْرِ بْنِ كِنَانَةَ لاَ نَقْفُو أُمَّنَا وَلاَ نَنْتَفِي مِنْ أَبِينَا ‘আপনি কি আমাদের বংশধর নন? তিনি বললেন, না। আমরা নযর বিন কিনানাহর বংশধর। আমরা আমাদের মায়ের উপর তোহমত দেই না এবং পিতা থেকে বিচ্ছিন্ন হই না’। রাবী বলেন, একথা শোনার পর থেকে আশ‘আছ বলতেন, যে ব্যক্তি কুরায়েশ বংশের কোন লোককে নযর বিন কিনানাহর বংশধর নয় বলবে, আমি তাকে মিথ্যা অপবাদের শাস্তি হিসাবে বেত্রাঘাত করব’।[1]

উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অন্যতম দাদী উম্মে কিলাব বিন মুর্রাহ(أُمُّ كِلاَبِ بْنِ مُرَّةَ) এই বংশের মহিলা ছিলেন। সেকারণ আশ‘আছ তাঁকে নিজেদের বংশের সন্তান বলে দাবী করেছিলেন। অথচ মায়ের দিক দিয়ে বংশ সাব্যস্ত হয় না। তাছাড়া এই বংশের লোকেরা ‘সম্রাট বংশ’(أَنَّ كِنْدَةَ كَانُوا مُلُوكًا) ছিল (ইবনু হিশাম ২/৫৮৫)

[শিক্ষণীয় : (১) কওমের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি আপনা থেকেই নেতা হন। (২) নযর বিন কিনানাহর বংশধরই মাত্র কুরায়েশ বংশ হিসাবে গণ্য। (৩) মায়ের দিক থেকে বংশধারা সাব্যস্ত হয় না। সেকারণ কিন্দাগণ কুরায়েশ বংশের বলে রাসূল (ছাঃ) স্বীকৃতি দেননি। যদিও তাঁর একজন দাদী এই বংশের মহিলা ছিলেন। (৪) ইসলাম কবুলের পর মুসলিম পুরুষের জন্য সর্বাবস্থায় রেশমের পোষাক নিষিদ্ধ। (৫) হারাম মাল বিনষ্ট করা সিদ্ধ। যেমন এদের রেশমী পোষাক ছিঁড়ে দূরে নিক্ষেপ করতে বলা হ’ল।]

[1]. যাদুল মা‘আদ ৩/৫৩৯-৪০; ইবনু হিশাম ২/৫৮৫, হাদীছ ‘হাসান’ সনদ ‘মুরসাল’; তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৯৭২; ইবনু মাজাহ হা/২৬১২; ছহীহাহ হা/২৩৭৫।