নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
মিসর রাজ মুক্বাউক্বিসের নিকটে পত্র (الكتاب إلى المقوقس ملك مصر)

মিসর ও আলেকজান্দ্রিয়ার (الْإِسكَندَرِيَّة) খ্রিষ্টান সম্রাট জুরায়েজ বিন মীনা(جُرَيْج بنُ مِيْنَاء) ওরফে মুক্বাউক্বিস (الْمُقَوقِس)-এর নিকটে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি পত্র লেখেন। যার বাহক ছিলেন হযরত হাতেব বিন আবু বালতা‘আহ (রাঃ)। পত্রটি ছিল নিম্নরূপ:

بِسْمِ اللهِ الرّحْمَنِ الرّحِيمِ، مِنْ مُحَمّدٍ عَبْدِ اللهِ وَرَسُوْلِهِ إلَى الْمُقَوْقِسِ عَظِيمِ الْقِبْطِ سَلاَمٌ عَلَى مَنْ اتّبَعَ الْهُدَى أَمّا بَعْدُ فَإِنّي أَدْعُوْكَ بِدِعَايَةِ الْإِسْلاَمِ أَسْلِمْ تَسْلَمْ وَأَسْلِمْ يُؤْتِكَ اللهُ أَجْرَكَ مَرّتَيْنِ فَإِنْ تَوَلّيْتَ فَإِنَّ عَلَيْكَ إثْمَ الْقِبْطِ – يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلاَّ نَعْبُدَ إِلاَّ اللهَ وَلاَ نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلاَ يَتّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُوْنِ اللهِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوْا اشْهَدُوْا بِأَنَّا مُسْلِمُوْنَ-

‘করুণাময় কৃপানিধান আল্লাহর নামে’- ‘আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদের পক্ষ হ’তে ক্বিবতীদের সম্রাট মুক্বাউক্বিসের প্রতি’। শান্তি বর্ষিত হৌক তাঁর প্রতি, যিনি হেদায়াতের অনুসরণ করেন। অতঃপর আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন। নিরাপদ থাকুন। ইসলাম গ্রহণ করুন। আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ পুরস্কার দান করবেন। কিন্তু যদি মুখ ফিরিয়ে নেন, তাহ’লে ক্বিবতীদের (অর্থাৎ মিসরীয়দের ইসলাম গ্রহণ না করার) পাপ আপনার উপরে বর্তাবে। (আল্লাহ বলেন,) ‘হে কেতাবধারীগণ! তোমরা এস...’ (আলে ইমরান ৩/৬৪)

হযরত হাতেব বিন আবু বালতা‘আহ (রাঃ) পত্রখানা সম্রাটের হাতে অর্পণ করার পর বললেন, আপনার পূর্বে এই মিসরে এমন একজন শাসক গত হয়ে গেছেন, যিনি বলতেন,أَنَا رَبُّكُمُ الْأَعْلَى، فَأَخَذَهُ اللهُ نَكَالَ الْآخِرَةِ وَالْأُوْلَى ‘আমিই তোমাদের বড় পালনকর্তা’। ‘অতঃপর আল্লাহ তাকে পরকালের ও ইহকালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলেন’ (নাযে‘আত ৭৯/২৪-২৫)। হাতেব (রাঃ) বলেন,فَاعْتَبِرْ بِغَيْرِكَ وَلاَ يَعْتَبِرُ غَيْرُك بِكَ ‘অতএব আপনি অন্যের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন এবং অন্যেরা যেন আপনার থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করে’। জওয়াবে মুক্বাউক্বিস বললেন,إنَّ لَنَا دِيْنًا لَنْ نَدَعَهُ إلاَّ لِمَا هُوَ خَيْرٌ مِنْهُ ‘নিশ্চয়ই আমাদের একটি দ্বীন রয়েছে। আমরা তা ছাড়তে পারি না, যতক্ষণ না তার চাইতে উত্তম কিছু পাই’। হাতেব (রাঃ) বললেন, আমরা আপনাকে ইসলামের দিকে আহবান জানাচ্ছি। যার মাধ্যমে আল্লাহ বিগত দ্বীনসমূহের অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দান করেছেন। আমাদের নবী সকল মানুষকে আহবান জানিয়েছেন। কুরায়েশরা শক্তভাবে বিরোধিতা করে, ইহূদীরা শত্রুতা করে। কিন্তু নাছারাগণ নিকটবর্তী থাকে। আমার জীবনের কসম! ঈসার জন্য মূসার সুসংবাদ ছিল যেমন, মুহাম্মাদের জন্য ঈসার সুসংবাদও ছিল তেমন। কুরআনের প্রতি আপনাকে আমাদের আহবান ঐরূপ, যেমন ইনজীলের প্রতি তাওরাত অনুসারীদেরকে আপনার আহবান। যখন কোন নবীর আবির্ভাব ঘটে, তখন সেই যুগের সকল মানুষ তাঁর উম্মত হিসাবে গণ্য হয়। তখন তাদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় তাঁর আনুগত্য করা। আপনি তাদের মধ্যেকার একজন, যিনি বর্তমান নবীর যামানা পেয়েছেন। আমরা মসীহের দ্বীন থেকে আপনাকে নিষেধ করছি না। বরং আমরা তাঁর দ্বীনের প্রতিই আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি’।

মুক্বাউক্বিস বললেন, আমি এ নবীর বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করেছি। আমি তাকে পেয়েছি এভাবে যে, তিনি কোন অপছন্দনীয় কাজের নির্দেশ দেন না। আমি তাঁকে ভ্রষ্ট জাদুকর বা মিথ্যুক গণৎকার হিসাবে পাইনি। আমি তাঁর সাথে নবুঅতের এই নিদর্শন পাচ্ছি যে, তিনি গায়েবী খবর প্রকাশ করছেন এবং পরামর্শের (মাধ্যমে কাজ করার) নির্দেশ দিচ্ছেন। অতএব আমি ভেবে দেখব’। অতঃপর তিনি পত্রখানা সসম্মানে হাতীর দাঁত দ্বারা নির্মিত একটি মূল্যবান বাক্সে রাখলেন এবং সীলমোহর দিয়ে যত্নসহকারে রাখার জন্য দাসীর হাতে দিলেন। অতঃপর আরবী জানা একজন কেরানীকে ডেকে নিম্নোক্ত জওয়াবী পত্র লিখলেন-

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ، لِمُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللهِ مِنَ الْمُقَوْقِسِ عَظِيمِ الْقِبْطِ سَلاَمٌ عَلَيْك أَمَّا بَعْدُ : فَقَدْ قَرَأْتُ كِتَابَك وَفَهِمْتُ مَا ذَكَرْتَ فِيهِ وَمَا تَدْعُو إلَيْهِ وَقَدْ عَلِمْتُ أَنَّ نَبِيًّا بَقِيَ وَكُنْتُ أَظُنُّ أَنّهُ يَخْرُجُ بِالشَّامِ وَقَدْ أَكْرَمْتُ رَسُوْلَك وَبَعَثْتُ إلَيْك بِجَارِيَتَيْنِ لَهُمَا مَكَانٌ فِي الْقِبْطِ عَظِيمٌ وَبِكِسْوَةٍ وَأَهْدَيْتُ إلَيْك بَغْلَةً لِتَرْكَبَهَا وَالسَّلاَمُ عَلَيْك-

‘করুণাময় কৃপানিধান আল্লাহর নামে’ ‘মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহর জন্য ক্বিবতী সম্রাট মুক্বাউকিবসের পক্ষ হ’তে- আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হউক! অতঃপর আমি আপনার পত্র পাঠ করেছি এবং সেখানে আপনি যা বর্ণনা করেছেন ও যেদিকে আহবান জানিয়েছেন, তা অনুধাবন করেছি। আমি জানি যে, একজন নবী আসতে বাকী রয়েছেন। আমি ধারণা করতাম যে, তিনি শাম (সিরিয়া) থেকে আবির্ভূত হবেন। আমি আপনার দূতকে সম্মান করেছি। আমি আপনার জন্য দু’জন দাসী পাঠালাম। ক্বিবতীদের মধ্যে যাদের উচ্চ মর্যাদা রয়েছে। আপনার জন্য এক জোড়া পোষাক এবং বাহন হিসাবে একটি খচ্চর উপঢৌকন স্বরূপ পাঠালাম। আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক!’

মুক্বাউক্বিস এর বেশী কিছু লেখেননি, ইসলামও কবুল করেননি। দাসী দু’জন ছিল মারিয়াহ(مَارِيَةُ بنتِ شَمْعُونَ) ও তার বোন সীরীন (سِيْرِينُ)। মারিয়া ক্বিবতিয়ার গর্ভে রাসূল (ছাঃ)-এর শেষ সন্তান ইবরাহীমের জন্ম হয়। সীরীনকে কবি হাসসান বিন ছাবিত আনছারীকে দেওয়া হয়। ‘দুলদুল’ নামক উক্ত খচ্চরটি মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর যামানা পর্যন্ত জীবিত ছিল’।[1]

[1]. যাদুল মা‘আদ ৩/৬০৪; হায়ছামী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৬৭৫১, সনদ ছহীহ।