(১) জাবের বিন আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর বলেন, আমার আববাকে অঙ্গহানি করা অবস্থায় কাপড়ে ঢেকে নিয়ে আসা হয়। তখন আমি বারবার কাপড় উঠিয়ে তাকে দেখছিলাম আর কাঁদছিলাম। লোকেরা এতে আমাকে নিষেধ করে। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) আমাকে নিষেধ করেননি। এসময় তিনি চিৎকার দানকারিণী কোন মহিলার কণ্ঠ শোনেন। তাঁকে বলা হ’ল, ইনি আমরের মেয়ে অথবা বোন (অর্থাৎ নিহত আব্দুল্লাহর বোন অথবা ফুফু)। তখন তিনি বলেন, ابْكُوهُ أَوْ لاَ تَبْكُوهُ مَا زَالَتِ الْمَلاَئِكَةُ تُظِلُّهُ بِأَجْنِحَتِهَا حَتَّى دَفَنْتُمُوهُ ‘তোমরা কাঁদ বা না কাঁদ, ফেরেশতারা তাকে তাদের ডানা দিয়ে ছায়া করবে, যতক্ষণ না তোমরা তাকে দাফন করবে’।[1]
(২) ওহোদ থেকে ফেরার পথে রাসূল (ছাঃ) আনছারদের বনু আব্দিল আশহাল ও বনু যাফর গোত্রের মহিলাদের স্ব স্ব নিহতদের জন্য কান্নার রোল শুনতে পেলেন। তাতে তাঁর দু’চোখ অশ্রুসিক্ত হ’ল এবং তিনি কাঁদতে লাগলেন। এক পর্যায়ে তিনি বললেন, সবাই কাঁদছে। কিন্তু আজ হামযার জন্য কাঁদবার কেউ নেই(وَلَكِنَّ حَمْزَةَ لاَ بَوَاكِىَ لَهُ)। অতঃপর যখন গোত্রনেতা সা‘দ বিন মু‘আয ও উসায়েদ বিন হুযায়ের সেখানে এলেন, তারা মহিলাদের বললেন, রাসূলের চাচার শোকে কান্নার জন্য। সেমতে তারা সবাই কাঁদতে কাঁদতে রাসূল (ছাঃ)-এর বাসগৃহের সামনে এসে পৌঁছে গেল। তখন রাসূল (ছাঃ) বেরিয়ে এসে তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, اِرْجِعْنَ يَرْحَمُكُنَّ الله ‘তোমরা ফিরে যাও। আল্লাহ তোমাদের উপর রহম করুন! এদিন থেকে কান্নার রোল (النَّوْحُ) নিষিদ্ধ করা হয়’।[2]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ ، وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ ‘সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে (মৃতের শোকে) নিজের মুখ চাপড়ায়, জামা ছিঁড়ে এবং জাহেলী যুগের ন্যায় চিৎকার দিয়ে কাঁদে’। মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَنَا بَرِىءٌ مِمَّنْ حَلَقَ وَسَلَقَ وَخَرَقَ আমি দায়মুক্ত ঐ ব্যক্তি থেকে, যে শোকে মাথা মুন্ডন করে, চিৎকার দিয়ে কাঁদে এবং কাপড় ছিঁড়ে’।[3] উল্লেখ্য যে, জাহেলী যুগের এটা রীতি ছিল যে, যার মৃত্যুতে যত বেশী মহিলা কান্নাকাটি করবে, তিনি তত বেশী মর্যাদাবান বলে খ্যাত হবেন। তবে চিৎকার বিহীন সাধারণ কান্না নিষিদ্ধ নয়। যেমন ওছমান বিন মাযঊন (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর রাসূল (ছাঃ) তাকে চুমু খান। এ সময় তাঁর দু’চোখ দিয়ে অবিরল ধারে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল।[4]
[2]. ইবনু হিশাম ২/৯৯; ইবনু মাজাহ হা/১৫৯১, সনদ হাসান।
[3]. বুখারী হা/১২৯৪; মুসলিম হা/১০৪; মিশকাত হা/১৭২৫-২৬ ‘মৃতের জন্য ক্রন্দন’ অনুচ্ছেদ।
[4]. তিরমিযী হা/৯৮৯; মিশকাত হা/১৬২৩ ‘জানাযা’ অধ্যায়।