নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
ওহোদ যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ- ৩৩. মদীনা ফেরার পথে মহিলাদের আকুতিপূর্ণ ঘটনাবলী (أحداث مةضرعة من النساء عند الرجوع إلى المدينة)

(ক) হামনাহ বিনতে জাহশ : মদীনায় ফেরার সময় পথিমধ্যে হামনাহ বিনতে জাহ্শের সাথে সাক্ষাৎ হ’লে তাকে প্রথমে তাঁর ভাই আব্দুল্লাহ বিন জাহ্শ, অতঃপর মামু হামযাহ বিন আব্দুল মুত্ত্বালিবের শাহাদাতের খবর দেওয়া হয়। উভয় খবরে তিনি ইন্নালিল্লাহ পাঠ করেন ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এরপর তাঁকে তাঁর স্বামী মুছ‘আব বিন ওমায়ের-এর শাহাদাতের খবর শুনানো হ’লে তিনি চীৎকার দিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন(فَصَاحَتْ وَوَلْوَلَتْ)।[1] উল্লেখ্য যে, মুছ‘আবকে রাসূল ভেবে হত্যা করেছিল আব্দুল্লাহ বিন ক্বামিআহ লায়ছী (ইবনু হিশাম ২/৭৩)

(খ) বনু দীনার গোত্রের এক মহিলাকে তার স্বামী, ভাই ও পিতার শাহাদাতের খবর শুনানো হ’লে তিনি ইন্নালিল্লাহ পাঠ করেন ও তাদের জন্য ইস্তিগফার করেন। অতঃপর তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর খবর কি? বলা হ’ল, তিনি ভাল আছেন যেমন তুমি চাচ্ছ হে অমুকের মা’। তখন তিনি অস্থির চিত্তে বলে উঠলেন, أَرُونِيهِ حَتّى أَنْظُرَ إلَيْهِ ‘আমাকে দেখিয়ে দাও। যাতে আমি তাঁকে স্বচক্ষে দেখতে পারি’। তারপর তাকে দেখিয়ে দিতেই তিনি খুশী হয়ে রাসূল (ছাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন, كُلُّ مُصِيبَةٍ بَعْدَكَ جَلَلٌ ‘আপনাকে পাওয়ার পর সব বিপদই তুচ্ছ’। হিন্দ নাম্মী এই মহিলা ছিলেন ল্যাংড়া শহীদ ‘আমর ইবনুল জামূহ আনছারী (রাঃ)-এর স্ত্রী।[2]

[1]. প্রসিদ্ধ আছে যে, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إنّ زَوْجَ الْمَرْأَةِ مِنْهَا لَبِمَكَانِ ‘নিশ্চয়ই স্বামীর জন্য স্ত্রীর নিকটে রয়েছে এক বিশেষ স্থান’ (ইবনু হিশাম ২/৯৮; আর-রাহীক্ব ২৮৩ পৃঃ; সীরাহ ছহীহাহ ২/৩৯৫)। বর্ণনাটি ‘যঈফ’ (আর-রাহীক্ব, তা‘লীক্ব ১৫৫ পৃঃ)।

[2]. ইবনু হিশাম ২/৯৯, সনদ ‘মুরসাল’ ঐ, তাহকীক ক্রমিক ১১৮০; যুরক্বানী ৬/২৯০; সীরাহ ছহীহাহ ২/৩৯৫।

প্রসিদ্ধ আছে যে, এ সময় আউস গোত্রের নেতা সা‘দ-এর মা দৌড়ে আসেন। তখন তার পুত্র সা‘দ বিন মু‘আয রাসূল (ছাঃ)-এর ঘোড়ার লাগাম ধরে চলছিলেন। কাছে এলে সা‘দ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, ইনি আমার মা। রাসূল (ছাঃ) তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বললেন, ‘মারহাবা’। অতঃপর তিনি থেমে যান এবং তাঁকে তার পুত্র ‘আমর বিন মু‘আযের শাহাদাতের জন্য সমবেদনা জানান ও ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেন। তখন উম্মে সা‘দ বলেন, إذْ رَأَيْتُك سَالِمًا، فَقَدْ أَشْوَتِ الْمُصِيبَةُ أمّا ‘যখন আমি আপনাকে নিরাপদ দেখেছি, তখন সকল মুছীবত নগণ্য হয়ে গেছে’। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ওহোদ যুদ্ধের সকল শহীদের জন্য দো‘আ করেন এবং উম্মে সা‘দকে উদ্দেশ্য করে বলেন, يَا أُمَّ سَعْدٍ، أَبْشِرِي وَبَشِّرِي أَهْلِيهِمْ أَنَّ قَتَلاَهُمْ قَدْ تَرَافَقُوا فِي الْجَنَّةِ جَمِيعًا وَشَفَعُوا فِي أَهْلِيهِمْ جَمِيْعًا- ‘হে উম্মে সা‘দ! সুসংবাদ গ্রহণ কর এবং শহীদ পরিবারগুলিকে সুসংবাদ শুনিয়ে দাও যে, তাদের শহীদগণ সকলে জান্নাতে একত্রে রয়েছে এবং তাদের পরিবারবর্গের ব্যাপারে তাদের সবারই শাফা‘আত কবুল করা হবে’। উম্মে সা‘দ বললেন, رَضِينَا يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَنْ يَبْكِي عَلَيْهِمْ بَعْدَ هَذَا؟ ‘আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি হে আল্লাহর রাসূল! এরপরে আর কে তাদের জন্য কান্নাকাটি করবে? অতঃপর তিনি বললেন, اُدْعُ يَا رَسُولَ اللهِ لِمَنْ خُلّفُوا ‘হে আল্লাহর রাসূল! তাদের উত্তরাধিকারীদের জন্য দো‘আ করুন’। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দো‘আ করলেন, اللَّهُمَّ أَذْهِبْ حُزْنَ قُلُوبِهِمْ وَاجْبُرْ مُصِيبَتَهُمْ، وَأَحْسِنْ الْخَلَفَ عَلَى مَنْ خُلِّفُوا- ‘হে আল্লাহ! তুমি তাদের অন্তরের দুঃখ দূর করে দাও। তাদের বিপদ উত্তরণ করে দাও এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের উত্তমরূপে তদারকী কর’ (আর-রাহীক্ব পৃঃ ২৮৩; ওয়াক্বেদী, মাগাযী ১/৩১৫; সীরাহ হালাবিইয়াহ ২/৪৭)। বর্ণনাটি সনদবিহীন।