নবীদের কাহিনী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাদানী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি
ওহোদ যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ- ১২. চলমান শহীদ (الشهيد الماشى على الأرض)

(ক) ত্বালহা বিন ওবায়দুল্লাহ : কাফিরদের বেষ্টনীতে পড়ার সংকটকালীন সময়ে রাসূল (ছাঃ)-কে রক্ষাকারী নয় জনের মধ্যে ৭ জন আনছার ছাহাবী শহীদ হওয়ার পর সর্বশেষ দু’জন মুহাজির ছাহাবী হযরত সা‘দ বিন আবু ওয়াকক্বাছ ও ত্বালহা বিন ওবায়দুল্লাহ অতুলনীয় বীরত্বের সাথে লড়াই করে কাফিরদের ঠেকিয়ে রাখেন। দু’জনেই ছিলেন আরবের সেরা তীরন্দায। তাদের লক্ষ্যভেদী তীরের অবিরাম বর্ষণে কাফির সৈন্যরা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে ভিড়তে পারেনি। এই সময় রাসূল (ছাঃ) স্বীয় তূণ হ’তে তীর বের করে সা‘দকে দেন ও বলেন ارْمِ فِدَاكَ أَبِى وَأُمِّى ‘তীর চালাও! তোমার উপরে আমার পিতা-মাতা উৎসর্গীত হউন’। তার বীরত্বের প্রতি রাসূল (ছাঃ) কতবড় আস্থাশীল ছিলেন, একথাই তার প্রমাণ। কেননা আলী (রাঃ) বলেন, সা‘দ ব্যতীত অন্য কারুর জন্য আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) স্বীয় পিতা-মাতা উৎসর্গীত হউন, এরূপ কথা বলেননি।[1]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি তার জন্য দো‘আ করে বলেন,اللَّهُمَّ سَدِّدْ رَمْيَتَهُ، وَأَجِبْ دَعْوَتَهُ ‘হে আল্লাহ! তুমি তার নিক্ষিপ্ত তীরকে লক্ষ্যভেদী কর এবং তার দো‘আ কবুল কর’।[2]

দ্বিতীয় মুহাজির ছাহাবী হযরত ত্বালহা বিন ওবায়দুল্লাহ সম্পর্কে হযরত জাবের বিন আব্দুললাহ (রাঃ) বলেন যে, ঐদিন তিনি একাই এগারো জনের সঙ্গে লড়াই করেন। এইদিন তিনি ৩৫ বা ৩৯টি আঘাত পান। তাঁর শাহাদাত ও মধ্যমা অঙ্গুলী কেটে যায় ও পরে তা অবশ হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার সম্পর্কে বলেন,مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى شَهِيدٍ يَمْشِى عَلَى وَجْهِ الأَرْضِ فَلْيَنْظُرْ إِلَى طَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللهِ ‘যদি কেউ ভূপৃষ্ঠে চলমান কোন শহীদকে দেখতে চায়, তবে সে যেন ত্বালহা বিন ওবায়দুল্লাহকে দেখে’।[3] বস্ত্ততঃ তিনি শহীদ হন হযরত আলীর খেলাফতকালে ‘উটের যুদ্ধে’র দিন কুচক্রীদের হামলায়। আবুবকর (রাঃ) ওহোদ যুদ্ধের প্রসঙ্গ উঠলে বলতেন,ذَاكَ يَوْمٌ كُلُّهُ لِطَلْحَةَ ‘ঐ দিনটি ছিল পুরোপুরি ত্বালহার’ (আল-বিদায়াহ ৪/২৯)। অর্থাৎ নিঃসঙ্গ রাসূলকে বাঁচানোর জন্য সেদিন যে ত্যাগ তিনি স্বীকার করেছিলেন, তা ছিল তুলনাহীন।

[1]. ইবনু হিশাম ২/৮২; বুখারী হা/৪০৫৫; উল্লেখ্য যে, বুখারী হা/৪০৫৯ হাদীছে সা‘দ বিন মালেক বলা হয়েছে। মূলতঃ সা‘দ বিন আবু ওয়াকক্বাছ-এর মূল নাম হ’ল সা‘দ বিন মালেক। আবু ওয়াকক্বাছ হ’ল তাঁর কুনিয়াত বা উপনাম। মুসলিম হা/২৪১১; মিশকাত হা/৬১০৩।

[2]. হাকেম হা/৪৩১৪, সনদ ছহীহ।

[3]. ইবনু হিশাম ২/৮০; তিরমিযী হা/৩৭৩৯, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৬১১৩। প্রসিদ্ধ আছে যে, এই সময় রাসূল (ছাঃ) বলেছিলেন, دُونَكُمْ أَخَاكُمْ فَقَدْ أَوْجَبَ ‘তোমাদের ভাইকে ধর, সে জান্নাতকে ওয়াজিব করে নিয়েছে’ (আর-রাহীক্ব ২৭০ পৃঃ)। কথাটি যঈফ। মুশরিক বাহিনী কর্তৃক ঘেরাওকালীন সংকট মুহূর্তে সর্বপ্রথম আবুবকর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে এসেছিলেন বলে আয়েশা (রাঃ) প্রমুখাৎ ছহীহ ইবনু হিববান-এর বর্ণনাটিও (আর-রাহীক্ব ২৭০ পৃঃ) ‘যঈফ’ (ঐ, তা‘লীক্ব ১৪৭ পৃঃ)। তবে أَوْجَبَ طَلْحَةُ (‘ত্বালহা জান্নাতকে ওয়াজিব করে নিয়েছে’) কথাটি ‘ছহীহ’ (আলবানী, ছহীহাহ হা/৯৪৫)।