অতঃপর অগ্রসর হয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ওহোদ পাহাড়ের পাদদেশে অবতরণ করেন ও সেখানে শিবির স্থাপন করেন। শত্রুসেনারা যাতে পিছন দিক থেকে হামলা করতে না পারে, সেজন্য তিনি দক্ষিণ-পূর্বে প্রায় ১৫০ মিটার দূরে সংকীর্ণ ও স্বল্পোচ্চ গিরিপথে আউস গোত্রের বদরী ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু জুবায়ের আনছারীর নেতৃত্বে ৫০ জনের একটি তীরন্দায দলকে নিযুক্ত করেন’ (আর-রাহীক্ব ২৫৫ পৃঃ)। যে স্থানটি এখন ‘জাবালুর রুমাত’(جَبَلُ الرُّمَاةِ) বা ‘তীরন্দাযদের পাহাড়’ বলে পরিচিত। তাদেরকে বলে দেওয়া হয় যে, জয় বা পরাজয় যাই-ই হৌক, তারা যেন পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত ঐ স্থান ত্যাগ না করে এবং শত্রুপক্ষ যেন কোনভাবেই এপথ দিয়ে প্রবেশ করতে না পারে। তিনি বলেন, إِنْ رَأَيْتُمُونَا تَخْطَفُنَا الطَّيْرُ، فَلاَ تَبْرَحُوا مَكَانَكُمْ هَذَا حَتَّى أُرْسِلَ إِلَيْكُمْ، وَإِنْ رَأَيْتُمُونَا هَزَمْنَا الْقَوْمَ وَأَوْطَأْنَاهُمْ فَلاَ تَبْرَحُوا حَتَّى أُرْسِلَ إِلَيْكُمْ ‘এমনকি তোমরা যদি আমাদের মৃত লাশে পক্ষীকুলকে ছোঁ মারতে দেখ, তথাপি আমি তোমাদের কাছে কাউকে না পাঠানো পর্যন্ত তোমরা উক্ত স্থান ছেড়ে আসবে না। যদি তোমরা দেখ যে, আমরা তাদেরকে পরাজিত করেছি এবং তাদের পদদলিত করছি, তথাপি তোমরা উক্ত স্থান ছেড়ে আসবে না। যতক্ষণ না আমি তোমাদের কাছে কাউকে পাঠাই’।[1] কেননা শত্রুপক্ষ পরাজিত হ’লে কেবলমাত্র এপথেই তাদের পুনরায় হামলা করার আশংকা ছিল। দূরদর্শী সেনানায়ক রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেটা বুঝতে পেরেই তাদেরকে এমন কঠোর হুঁশিয়ারী প্রদান করেন। তিনি পাহাড়কে আড়াল করে পিছন ও দক্ষিণ বাহুকে নিরাপদ করেন। আর যে গিরিপথ দিয়ে শত্রুপক্ষের প্রবেশের আশংকা ছিল, সেপথটি তীরন্দাযদের মাধ্যমে সুরক্ষিত করে নেন। অতঃপর শিবির স্থাপনের জন্য একটি উঁচু জায়গা নির্বাচন করেন। যাতে পরাজিত হ’লেও শত্রুপক্ষ সেখানে পৌঁছতে না পারে এবং তেমন কোন ক্ষতি করতে না পারে। এভাবে তিনি অত্যন্ত দূরদর্শিতার সাথে শিবির সন্নিবেশ করেন। অতঃপর তিনি মুনযির বিন ‘আমরকে ডান বাহুর এবং যুবায়ের ইবনুল ‘আওয়ামকে বাম বাহুর অধিনায়ক নিযুক্ত করেন। মিক্বদাদ ইবনুল আসওয়াদকে তার সহকারী নিয়োগ করেন। বাম বাহুর প্রধান দায়িত্ব ছিল কুরায়েশ অশ্বারোহী বাহিনী ও তাদের অধিনায়ক খালেদ বিন অলীদকে ঠেকানো। তিনি বড় বড় যোদ্ধাদের সম্মুখ বাহিনীতে রাখেন’ (আর-রাহীক্ব ২৫৬ পৃঃ)। অতঃপর নয়জন দেহরক্ষী নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পিছনে অবস্থান নেন ও যুদ্ধ পরিস্থিতি অবলোকন করতে থাকেন, যাদের মধ্যে ৭ জন ছিলেন আনছার ও ২ জন ছিলেন মুহাজির’।[2]
[2]. মুসলিম হা/১৭৮৯ (১০০); আর-রাহীক্ব ২৬৪ পৃঃ।