রসূল (সা.)-এর প্রতি সম্বদ্ধ (তার নিকট হতে বর্ণিত) হাদীস সমুদয়ের কিছু তো সহীহ ও হাসান এবং কিছু দুর্বল ও জাল। ইমাম মুসলিম তার কিতাব (সহীহ মুসলিম)এর ভূমিকায় যা উল্লেখ করেছেন তাতে যয়ীফ ও দুর্বল হাদীস ব্যবহার করতে সাবধান করা হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রত্যেক শ্রুত হাদীস বর্ণনা করা নিষিদ্ধ হওয়ার পরিচ্ছেদ।” আর এর দলীল স্বরূপ এই হাদীস উল্লেখ করেন,

নবী (সা.) বলেন, “মানুষের মিথ্যা বলার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে তাই বর্ণনা করে।”

ইমাম নওবী সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যা-গ্রন্থে উল্লেখ করেন, “দুর্বল বর্ণনাকারীদের নিকট হতে হাদীস বর্ণনা নিষিদ্ধ হওয়ার পরিচ্ছেদ।” এতে তিনি নবী (সা.)-এর এই বাণীকে দলীল স্বরূপ পেশ করেনঃ

“শেষ যুগে আমার উম্মতের মধ্যে এমন কতক লোক হবে যারা তোমাদেরকে সেই হাদীস বর্ণনা করবে যা তোমরা এবং তোমাদের পিতৃপুরুষরাও শ্রবণ করেনি সুতরাং তোমরা তাদের হতে সাবধান থেকো।” (মুসলিম)

ইমাম ইবনে হিব্বান তাঁর ‘সহীহ’ গ্রন্থে বলেন, যে ব্যক্তি বিশুদ্ধতা ও সঠিকতা না জেনে কোন কিছু মুস্তফা (সা.)-এর প্রতি সম্বন্ধ করে, তার জন্য জাহান্নাম প্রবেশ অনিবার্য - এই উপস্থাপনার অধ্যায়। অতঃপর তার নিজ বর্ণনাসূত্র দ্বারা রসূল - এর এই বাণী উল্লেখ করেনঃ

“যে ব্যক্তি আমি যা বলিনি তা আমার নামে বলবে, সে যেন নিজের বাসস্থান। জাহান্নামে করে নেয়।” (হাসান, মুসনাদে আহমদ) জাল ও গড়া হাদীস থেকেও রসূল (সা.) সতর্ক করেছেন; তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি আমার নামে ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বলে সে যেন নিজের বাসস্থান জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।” (বুখারী ও মুসলিম) কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, বহু উলামা ও বুযুর্গদেরকে তাদের মযহাব ও বিশ্বাসের সমর্থনে ঐ (জাল ও গড়া) হাদীস উল্লেখ করতে দেখা যায়।

শত-সহস্র জাল হাদীসের একটি হাদীস আমার উম্মতের মতবিরোধিতা এক কৃপা (আপোসের ইখতিলাফ রহমত!) আল্লামা ইবনে হাযম বলেন, ‘এটা হাদীস নয়, বরং তা বাতিল ও মিথ্যা কথা। কারণ মতদ্বৈধ যদি কৃপা হয়। তাহলে মতৈক্য ক্রোধ (গযব) হবে। যে কথা কোন মুসলিম বলতে পারে না।

তদনুরূপ এক গড়া হাদীস, “তোমরা যাদু শিক্ষা কর তবে তার দ্বারা কর্ম (আমল) করো না।” যেমন, “যদি তোমাদের কেউ কোন পাথরে বিশ্বাস রাখে, তবে তা তাকে উপকৃত করে।” অবশ্য প্রচলিত হাদীস “তোমাদের মসজিদ থেকে তোমাদের শিশু ও পাগলদেরকে দুরে রাখ।” এর প্রসঙ্গে ইবনে হাজার বলেন, দুর্বল। ইবনুল জওযী বলেন, 'শুদ্ধ নয়। আব্দুল হক বলেন, এর কোন ভিত্তি নেই।”

পক্ষান্তরে সহীহ হাদীসে প্রমাণিত যে, নবী (সা.) বলেন, “তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হলে তাদেরকে নামায শিক্ষা দাও এবং দশ বছর হলে তার (নামাযের) উপর তাদেরকে প্রহার কর।” (সহীহ বাযযার, সহীহুল জামে)

আর এই শিক্ষা মসজিদে দেওয়া হয়, যেমন রসূল (সা.) সু তাঁর সাহাবার্গকে মিম্বরের উপর থেকে নামায শিক্ষা দিয়েছেন এবং শিশুরা এমন কি নির্বোধ শিশুরাও তাঁর মসজিদে থাকত।

১। হাদীস (বলার বা লিখার) শেষে এটুকু বলা যথেষ্ট নয় যে, হাদীসটিকে তিরমিযী বা অন্য কেউ বর্ণনা করেছেন। যেহেতু তিনিও কখনো কখনো অশুদ্ধ (যয়ীফ ইত্যাদি) হাদীস বর্ণনা করে থাকেন। সুতরাং হাদীসের মান সহীহ’, ‘হাসান’ বা ‘যয়ীফ উল্লেখ করা জরুরী।

অবশ্য আমাদের এই বলা যে, হাদীসটিকে বুখারী অথবা মুসলিম বর্ণনা করেছেন’ এতটুকুই যথেষ্ট। কারণ উভয়ের বর্ণিত হাদীসগুলি সহীহ।

২। দুর্বল হাদীসের বাচনিক সম্বন্ধ -তার বর্ণনা-সুত্রে অথবা মূল বক্তব্যে কোন এটি বর্তমান থাকার কারণে- রসূল (সা.) প্লঃ-এর প্রতি প্রতিপাদিত নয়। আমাদের কেউ যদি যবেহর পশু ক্রয় করতে বাজারে গিয়ে একটি মাংসল সুস্থ এবং অপরটি ক্ষীণ দুর্বল দেখে, তবে নিশ্চয়ই সে মোটাতাজা মাংসল পশুটাকেই পছন্দ করে গ্রহণ এবং দুর্বলটিকে বর্জন করে। কুরবানীর জন্য মোটাতাজা। মাংসল পশু যবেহ করতে এবং রুগ্ন ও দুর্বল ত্যাগ করতে ইসলাম

আমাদেরকে আদেশ করে। সুতরাং দ্বীনের ব্যাপারে বিশেষ করে সহীহ হাদীসের বর্তমানে দুর্বল হাদীস গ্রহণ ও ব্যবহার করা কিরূপে বৈধ হতে পারে?

হাদীস-বিশেষজ্ঞগণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, হাদীস যয়ীফ বা দুর্বল হলে তা ‘রসূল (সা.) বলেছেন’ একথা বলা হবে না। যেহেতু এ পরিভাষা সহীহ হাদীসের জন্য ব্যবহৃত। দুর্বল হাদীসের ক্ষেত্রে বর্ণনা করা হয়েছে, বর্ণনা করা হয়ে থাকে, কথিত আছে ইত্যাদি কর্মবাচ্য- মুলক শব্দ ব্যবহার করতে হবে। যাতে উভয়ের (সহীহ ও যয়ীফের) মাঝে পার্থক্য নিরূপিত হয়।

৩। পরবর্তী কোন কোন উলামা কিছু শর্তের সাথে যয়ীফ হাদীস ব্যবহার করা বৈধ মনে করেন, যেমনঃ

ক। হাদীস যেন ‘ফাযায়েলে আমালে’ (কোন শুদ্ধভাবে প্রমাণিত আমলের ফযীলত বর্ণনায়) হয়।

খ। তা যেন সুন্নাহর সহীহ ভিত্তির অন্তর্ভুক্ত হয়।

গ। তার দুর্বলতা যেন খুব বেশী না হয়।

ঘ। তা ব্যবহার করার সময় তা শুদ্ধ প্রমাণিত বলে যেন বিশ্বাস না রাখা হয়।

কিন্তু বর্তমানে লোকেরা কদাচিৎ এই সব শর্তের অনুবর্তিতা করে থাকে।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে