ফির্‌কাহ নাজিয়া তাগুত হতে সাবধান আবদুল হামীদ ফাইযী ২ টি

প্রত্যেক সেই পূজ্যমান উপাস্য যে আল্লাহর পরিবর্তে পূজিত হয় এবং সে তার এই পূজায় সম্মত থাকে অথবা আল্লাহ ও তদীয় রসূলের অবাধ্যতায় প্রত্যেক অনুসৃত বা মানিত ব্যক্তিকেই তাগুত বলা হয়।

আল্লাহ যুগে যুগে রসূল (সা.) প্রেরণ করেছেন; যাতে তারা তাদের স্ব-স্ব সম্প্রদায়কে আল্লাহর ইবাদত করতে এবং তাগুত হতে দূরে থাকতে আদেশ করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ

অর্থাৎ, অবশ্যই আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রসূল (সা.) প্রেরণ করেছি এই প্রত্যাদেশ দিয়ে যে, “তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে দূরে থাক।” (সূরা নাহল ৩৬ আয়াত)

তাগুত বহু প্রকার। এদের প্রধান হল পাঁচটি -

১। শয়তান ও যে গায়রুল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহবানকারী। এর দলীল আল্লাহ তাআলার এই বাণী,

أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي آدَمَ أَن لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ ۖ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ

অর্থাৎ, হে আদম সন্তান! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ প্রদান করিনি যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করো না। কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা ইয়াসীন-৬০ আয়াত)

২। আল্লাহর বিধান বিকতকারী অত্যাচারী শাসক ও যেমন ইসলাম পরিপন্থী আইনপ্রণেতা। এর দলীল, আল্লাহ সম্মত ও সন্তুষ্ট নন এমন বিধান-রচয়িতা মুশরিকদের প্রতিবাদ করে তার বাণী,

أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَن بِهِ اللَّهُ

অর্থাৎ, ওদের কি এমন কতক অংশীদার আছে, যারা বিধান দেয় এমন দ্বীনের যার উপর আল্লাহ অনুমতি দেননি? (সূরা শুরা-২১ আয়াত)

৩৷ আল্লাহর অবতীর্ণকৃত বিধান ছেড়ে অন্য বিধানানুসারে বিচারকর্তা শাসক ও যে আল্লাহর অবতীর্ণকৃত সংবিধানকে অচল মনে করে অথবা ভিন্ন সংবিধান অনুযায়ী বিচার ও শাসন করা বৈধ মনে করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ

অর্থাৎ, এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না তারাই তো কাফের। (সূরা মায়েদাহ ৪৪ আয়াত)

৪। আল্লাহ ব্যতীত ইলমে গায়েব (গায়েবী বা অদৃশ্য খবর জানার) দাবীদার। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেন,

قُل لَّا يَعْلَمُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ

অর্থাৎ, বল, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কেউই গায়েব (অদৃশ্যের) খবর জানে না।' (সূরা নামল ৬৫ আয়াত)।

৫। আল্লাহর পরিবর্তে (নযর-নিয়ায, মানত, সিজদা প্রভৃতি দ্বারা) যার পূজা করা ও যাকে (বিপদে) আহবান করা হয় এবং সে এতে সম্মত থাকে। এর দলীল আল্লাহ তাআলার এই বাণী,

وَمَن يَقُلْ مِنْهُمْ إِنِّي إِلَٰهٌ مِّن دُونِهِ فَذَٰلِكَ نَجْزِيهِ جَهَنَّمَ ۚ كَذَٰلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ

অর্থাৎ, ওদের মধ্যে যে বলবে, 'তাঁর (আল্লাহর) পরিবর্তে আমিই মাবুদ তাকে আমি জাহান্নামের শাস্তি প্রদান করব। এভাবে আমি সীমালংঘনকারীদেরকে শাস্তি প্রদান করে থাকি। (সূরা আম্বিয়া ২৯ আয়াত)

জেনে রাখুন যে, তাগুতের সাথে কুফরী করা (তাকে অমান্য ও অস্বীকার করা) মুমিনের জন্য ওয়াজেব। এ ছাড়া সে সরল-সঠিক মুমিন হতে পারে না।। এর দলীল আল্লাহ তাআলার এই বাণী,

فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

অর্থাৎ, সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখবে সে অবশ্যই এমন এক সুদৃঢ় হাতল ধারণ করবে যা কখনো ভাঙ্গার নয়। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, প্রজ্ঞাময়। (সূরা বাক্বারাহ ২৫৬ আয়াত)

উক্ত আয়াত এ কথারই দলীল যে, যাবতীয় গায়রুল্লাহ (বাতিল) উপাস্যের ইবাদত থেকে না বাচা পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদত কোন ফল দেবে না। এই অর্থের প্রতিই ইঙ্গিত করে রসূল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই) বলে এবং আল্লাহর পরিবর্তে পূজ্য যাবতীয় উপাস্যকে প্রত্যাখ্যান করে তার জান ও মাল অবৈধ হয়ে যায়। (অর্থাৎ সে ইসলামী রাষ্ট্রে নিরাপত্তা লাভ করে।)” (মুসলিম)

মুখে ইসলাম প্রকাশ করা এবং হৃদয় ও মনে কুফরী বিশ্বাস (গুপ্ত) রাখাকে নিফাকে আকবর (বড় মুনাফেকী) বলা হয়। এই নিফাক কয়েক প্রকারেরঃ

১। রসূল (সা.)-কে অথবা তাঁর আনীত কিছু বিষয়কে মিথ্যাজ্ঞান করা।

২। রসূল (সা.) অথবা তার আনীত কিছু বিষয়ের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করা।

৩ ইসলামের পরাজয়ে আনন্দবোধ অথবা তার বিজয়ে কষ্টবোধ করা।

কাফেরদের অপেক্ষা মুনাফেকদের শাস্তি ও আযাব অধিকতর কঠিন এবং তাদের ধ্বংসোন্মুখ অবস্থা অধিকতর মারাত্মক। আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ

অর্থাৎ, অবশ্যই মুনাফিকরা জাহান্নামের আগুনের) সর্বনিম্নস্তরে থাকবে। (সূরা নিসা ১৪৫ আয়াত)

এ জন্যই আল্লাহ তাআলা সূরা বাক্বারার শুরুতে মাত্র দুটি আয়াতে কাফেরদের অবস্থা বর্ণনা করেন এবং মুনাফিকদের অবস্থা বর্ণনা করেন তেরটি আয়াত জুড়ে।

অনুরূপ, সূফীপন্থীদেরকে আমরা মুসলিম মনে করি। তারা নামায পড়ে, রোযাও রাখে; কিন্তু তাদের দ্বারা সংঘটিত বিপদ অতি সাংঘাতিক। কারণ তারা মুসলিমদের আকীদা ও বিশ্বাস বিকৃত করে গায়রুল্লাহকে ডাকা ও তার নিকট প্রার্থনা করাকে বৈধ মনে করে, যা এক প্রকার শির্কে আকবর। তারা মনে করে, ‘আল্লাহ সর্বস্থানেই বিদ্যমান (বিরাজমান) এবং কুরআন ও হাদীসের বিরুদ্ধাচরণ করে আল্লাহর আরশে সমারূঢ় থাকাকে অস্বীকার ও খন্ডন করে।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২ পর্যন্ত, সর্বমোট ২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে